চলতি বছরের এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষা শুরু হয় ৬ নভেম্বর (রোববার)। এদিন ছিল বাংলা প্রথম পত্র পরীক্ষা। সারাদেশের শিক্ষার্থীরা তাদের পরীক্ষার হলে গিয়েছে পরীক্ষা দিতে, দিয়েছেও। তবে, ঢাকা বোর্ডের অধীনে পরীক্ষার্থীদের প্রশ্নপত্র নিয়ে সৃষ্টি হয় বিতর্ক। প্রশ্নপত্রের সৃজনশীল অংশের ১১ নম্বর প্রশ্নে সনাতন ধর্মের দুই ভাইয়ের জমি নিয়ে বিরোধের বিষয় তুলে ধরা হলেও সেখানে রয়েছে ‘সাম্প্রদায়িক উসকানি’।
প্রশ্নে দেখানো হয়, ‘নেপাল ও গোপাল নামের দুই ভাইয়ের জমি নিয়ে বিরোধের জেরে ছোট ভাই নেপাল তার বড় ভাইকে শায়েস্তা করতে আবদুল নামের একজনের কাছে একাংশ জমি বিক্রি করে দেন। আবদুল সেই জমিতে বাড়ি করে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন এবং কোরবানির ঈদে সেখানে গরু কোরবানি দেন। এতে জমি বিক্রেতা ভাইয়ের মন ভেঙে যায়, তিনি জমি-জমা সব ফেলে সপরিবারে ভারতে চলে যান।’
বিষয়টি নিয়ে রোববারই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়। সরকার যেখানে অসাম্প্রদায়িক চেতনাকে গুরুত্ব দিচ্ছে, এই প্রশ্ন তার সঙ্গে কতটা সঙ্গতিপূর্ণ, সেই প্রশ্ন ওঠে।
যদিও বিষয়টি জানার পর ৭ নভেম্বর (সোমবার) শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেছেন, ‘বাংলাদেশ অসাম্প্রদায়িক গণতন্ত্রের দেশ। দেশে কোনো পরীক্ষার প্রশ্নপত্রে সাম্প্রদায়িক উসকানির মতো কিছু থাকবে, তা খুবই দুঃখজনক। এটি একেবারেই গ্রহণযোগ্য নয়।’
তিনি আরও বলেছেন, ‘শিক্ষার্থীদের মনে যারা সাম্প্রদায়িক উসকানির বীজ বপন করতে চায়, তাদের ভবিষ্যতে এসব কাজের সঙ্গে (প্রশ্নপত্র সেটিং-মডারেটিং) আর সম্পৃক্ত করা হবে না। একইসঙ্গে প্রশ্নপত্রে যারা সাম্প্রদায়িক উসকানি দিয়েছে, তাদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
এখন কথা হলো, রোগী মারা যাওয়ার পর ডাক্তার আসলেই কি সমস্যার সমাধান! যারা প্রশ্নটি তৈরি করেছেন, সেটি তারা আগেই একাধিকবার দেখেছেন এবং পড়েছেন। তখনও চাইলে সেই মনগড়া গল্পের পরিবর্তন, পরিবর্ধন করতে পারতেন। কেন করেননি? তার মানে দাঁড়ায়, একটা শ্রেণি বা চক্র চাইছে দেশে অরাজকতার সৃষ্টি হোক! কেননা, এসব ছেলে-মেয়ের বয়সকে বলা হয় ‘টিনএজ’। এই বয়সে কোনো বিষয় ওদের মাথায় ঢুকে গেলে তা সহজেই বের হওয়ার নয়। আর দেশকে অস্থিতিশীল করতে সাম্প্রদায়িক উসকানির বিকল্প কিছুই নেই।
৮ নভেম্বর (মঙ্গলবার) সংবাদপত্রে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী- সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষমূলক প্রশ্নপত্রটি প্রণয়ন করেছে যশোর শিক্ষা বোর্ড। প্রশ্নপত্র প্রণয়ন করেছেন ঝিনাইদহের মহেশপুরের ডা. সাইফুল ইসলাম ডিগ্রি কলেজের সহকারী অধ্যাপক প্রশান্ত কুমার পাল।
এছাড়া, প্রশ্নপত্র মডারেট করেছেন, নড়াইলের সরকারি ভিক্টোরিয়া কলেজের সহযোগী অধ্যাপক সৈয়দ তাজউদ্দিন শাওন, সাতক্ষীরা সরকারি মহিলা কলেজের সহযোগী অধ্যাপক মো. শফিকুর রহমান, নড়াইলের মির্জাপুর ইউনাইটেড কলেজের সহকারী অধ্যাপক শ্যামল কুমার ঘোষ এবং কুষ্টিয়ার ভেড়ামরা আদর্শ কলেজের সহকারী অধ্যাপক মো. রেজাউল করিম।
বলা হয়ে থাকে, ‘শিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড, যে জাতি যত বেশি শিক্ষিত সে জাতি তত বেশি উন্নত। উল্লেখিত কথার বিবেচনা করলে দেখা যাবে- অন্যান্য দেশের তুলনায় শিক্ষা-দীক্ষার দিক দিয়ে বাংলাদেশও এগিয়েছে অনেকখানি। প্রকৃত অর্থে আমরা কতটুকু শিক্ষিত হতে পেরেছি! কথায় আছে- গ্রন্থগত বিদ্যা আর পরহস্তে ধন, নহে বিদ্যা নহে ধন হলে প্রয়োজন। আসলে এমন শিক্ষার কি প্রয়োজন আছে- যে শিক্ষার আলোয় আলোকিত না হয়ে বরং অন্ধকারে ধাবিত হবে পরবর্তী প্রজন্ম!
লেখক : সাংবাদিক
Email : s.m.s.journalist.bd@gmail.com