মাত্র ১৪ বছর বয়সে মার্কিন বিলিয়নিয়ার ইলন মাস্কের মহাকাশবিষয়ক প্রতিষ্ঠান স্পেসএক্স-এ সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে চাকরি পেয়ে ইতোমধ্যেই বিশ্বজুড়ে হইচই ফেলে দিয়েছে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত আমেরিকান কিশোর কাইরান কাজী।
কিন্তু আগামী মাস থেকে স্পেসএক্স-এর স্টারলিংক-এ যোগদান করতে হবে কাইরানকে। কিন্তু স্পেসএক্স এর মতো প্রতিষ্ঠানে চাকরি পেলেও, সকল নিয়মকানুনের উর্ধ্বে যেতে পারছে না সে। তাই একটি নির্দিষ্ট বয়সের আগে গাড়ি চালানোর লাইসেন্সও পাবে না কাইরান।
চলতি সপ্তাহে সান্তা ক্লারা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সর্বকনিষ্ঠ গ্র্যাজুয়েট হিসেবে ডিগ্রি অর্জনের পরপরই তাকে ইলন মাস্কের কোম্পানিতে যোগদানের প্রস্তুতি নিতে হবে।
কাইরান বলে, আমি গাড়ি চালানো শুরু করার আগপর্যন্ত আমার মা আমাকে কর্মস্থলে পৌঁছে দিবে।
কাইরানের কাছ থেকে জানা যায়, ইলন মাস্কের কোম্পানিতে যোগ দেওয়ার জন্য আসছে জুলাইয়ে মায়ের সাথে ক্যালিফোর্নিয়ার প্লেজেন্টন থেকে ওয়াশিংটনের রেডমন্ডে স্থানান্তরিত হবে সে।
কাইরান আরও জানায়, একজন 'হাই-অ্যাচিভার' বা অল্প বয়সেই অনেক কিছু অর্জন করে ফেলেছে, এমন মানুষ হিসেবে সে কখনো কোনো চাপ অনুভব করে না, কারণ তার পরিবারের কখনোই তার গ্রেড নিয়ে মাথাব্যথা ছিল না। কিন্তু সে নিজের জন্য যা উপযুক্ত মনে করেছে, সেই গতিতেই জ্ঞানার্জন করেছে।
কাইরান আরও জানায়, আমি যেসব বিষয় নিয়ে কাজ করছি সেগুলো আমি খুবই উপভোগ করি। আমার কখনোই মনে হয়নি যে এটা আমার ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। এমন কিছু নিয়ে কাজ করি যে ব্যাপারে আমি খুবই আগ্রহ বোধ করি, বিশেষ করে স্পেসএক্স-এ কাজ করার বিষয়টি নিয়ে।
স্পেসএক্স কাইরানের কাছে একটি আকর্ষণীয় কাজের জায়গা মনে হয়েছে, কারণ এটা প্রযুক্তি নিয়ে তার 'ইউটিলিটারিয়ান ডিজায়ার' এর সঙ্গে মিলে যায়। অর্থাৎ, প্রযুক্তি সম্পর্কিত বিষয়ে কাইরানের যা যা জানার ও অর্জনের ইচ্ছা, স্পেসএক্স সে কাজটিকে সহজ করে তুলতে পারে এবং একইসঙ্গে মানবসেবাও করা সম্ভব হবে।
বাংলাদেশি-আমেরিকান কিশোর কাইরান কাজী ইন্টেল ল্যাবস-এ একজন এআই রিসার্চ কো-অপ ফেলো হিসেবে ইন্টার্নশিপ করে এবং মাত্র ১১ বছর বয়সে সে কম্পিউটার সায়েন্স এবং ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্সে ভর্তি হয়।
কাইরান কাজীর লিংকডইন প্রোফাইলের তথ্যানুসারে, গত বছর সে ব্ল্যাকবার্ড ডট এআই নামের এক সাইবার ইন্টেলিজেন্স ফার্মে চার মাস মেশিন লার্নিংয়ের ইন্টার্ন হিসেবে কাজ করে। সেখানে সে সামাজিক মাধ্যমের আধেয় ভিন্ন উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হচ্ছে কি না, তা শনাক্তের পরিসংখ্যানগত পদ্ধতি তৈরি করে।
কাইরান মনে করে, উল্লিখিত দুটি কোম্পানি এবং স্পেসএক্স-এর মধ্যে একটি মিল রয়েছে। আর তা হলো, তাদের নেতৃত্ব প্রদান সংক্রান্ত মূল্যবোধ এবং নিয়োগ নীতির মধ্যে বিচ্ছিন্নতা নেই।
উল্লেখ্য, কাইরান কাজীর জন্ম ২০০৯ সালের ২৭ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের সান ফ্রান্সিসকো বে এরিয়াতে। কাইরান জন্মসূত্রে একজন বাংলাদেশি-আমেরিকান। তার বাবার নাম মুস্তাহিদ কাজী এবং মা জুলিয়া কাজী।
এরই মধ্যে বিশ্বখ্যাত প্রতিষ্ঠানে যোগদানের চিঠি হাতে পেয়ে গেলেও, কাইরান জানায়, তার এখনও কিছু কিছু বিষয়ে কমতি রয়েছে। যেমন, হাতের লেখা, বানান এবং নোট নেওয়ার মতো কাজগুলো। বিদেশি ভাষা শেখাও তার কাছে একটি চ্যালেঞ্জ।
কাইরান জানিয়েছে, সে তার মা-বাবার কাছ থেকে বাংলা ভাষা এবং শিক্ষক মিস ভিয়েনার নির্দেশনা অনুযায়ী মান্দারিন ভাষা শিখছে। সে তার ভাষা শেখার এই প্রচেষ্টার জন্য সবার শুভ কামনা চেয়েছে।
কাইরান কাজীর বাবা মুস্তাহিদ কাজী একজন সাবেক কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার। কাইরানের কোনো ভাই-বোন নেই, সে তার মা-বাবার একমাত্র সন্তান।
জানা যায়, অবসর সময়ে কাইরান ভিডিও গেমস খেলতে পছন্দ করে, যেমন- 'অ্যাসাসিন'স ক্রিড' এর মতো ঐতিহাসিক ফিকশনধর্মী সিরিজ। এ ছাড়াও সে ফিলিপ কে ডিক এর সাই-ফাই ছোটগল্প এবং সাংবাদিক মাইকেল লুইসের লেখা পড়তে পছন্দ করে।
কাইরান তার নিজের জীবনের গল্প বলতেও পছন্দ করে, কারণ ১৪ বছরের জীবনে নিজের বুদ্ধিমত্তা ও নিজের চরিত্র সম্পর্কে বিভিন্ন কর্তৃপক্ষকে বুঝিয়ে মানাতে গিয়ে বিচিত্র সব অভিজ্ঞতা হয়েছে তার।
কাইরানের লিংকডইন বায়ো বলছে, সে এমন একটা ক্যারিয়ারের স্বপ্ন দেখে যা 'চ্যালেঞ্জিং বিষয়গুলো মোকাবিলা করে এবং সাধারণের সেবায় গুরুত্বপূর্ণ উদ্ভাবনকে উৎসাহিত করে'।
সান্তা ক্লারা ইউনিভার্সিটির স্কুল অব ইঞ্জিনিয়ারিং থেকে স্নাতক সম্পন্ন করার আগেআগেই স্পেসএক্স-এর মতো প্রতিষ্ঠানে চাকরি পেয়ে গিয়েছে কাইরান। জানা গেছে, স্পেসএক্স-এ কাজ শুরু করার জন্য মায়ের সঙ্গে প্লেজেন্টন থেকে ওয়াশিংটনের রেডমন্ডে চলে আসবে কাইরান।
এ বছরের শুরুর দিকে কাইরান তার ইনস্টাগ্রাম পোস্টে জানিয়েছিল যে সে একটি 'বড় ধরনের' চাকরির সাক্ষাৎকারের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। কয়েক সপ্তাহ পরেই সে স্পেসএক্স থেকে জব একসেপ্টেন্স চিঠির স্ক্রিনশট পোস্ট করে সোশ্যাল মিডিয়ায়।