ঢাকাবৃহস্পতিবার, ২৯ মে ২০২৫, ১৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

আবার কবে চাঁদের মাটিতে পা রাখবে মানুষ

আরটিভি নিউজ

বৃহস্পতিবার, ২৪ আগস্ট ২০২৩ , ০৮:০১ পিএম


loading/img
চাঁদে মানুষের প্রথম অবতরণ। ছবি : সংগৃহীত

চাঁদ শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে মানুষের কল্পনাকে বিমোহিত করেছে। তবে চাঁদের রহস্য উন্মোচিত হয় বিগত শতকেই। একের পর এক চন্দ্রাভিযানে ধারাবাহিকতায় পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল ছাড়িয়ে চাঁদের পাথুরে পৃষ্ঠে পা রাখে মানুষ। নাসার অ্যাপোলো স্পেস মিশন চাঁদের মাটিতে রেখে আসে মানুষের পদচিহ্ন।

বিজ্ঞাপন

সবশেষ চন্দ্রাভিযানে সাফল্যের মুখ দেখে ভারতের নভোযান ‘চন্দ্রযান ৩’। মহাকাশে দীর্ঘ এক মাস নয় দিনের যাত্রা শেষে ভারতের মহাকাশযান চন্দ্রযান-থ্রি চাঁদের বুকে অবতরণ বা ‘সফট ল্যান্ডিং’য়ের প্রথম লক্ষ্য সফলভাবে অর্জন করছে, যা ভারতকে বিশ্বের এলিট ‘স্পেস ক্লাবে’ জায়গা করে দিয়েছে।

বুধবার (২৩ আগস্ট) ভারতীয় সময় সন্ধ্যা ৬টা ৪ মিনিটে এই ঐতিহাসিক সাফল্যের মধ্যে দিয়ে বিশ্বের চতুর্থ দেশ হিসেবে ভারত এই গৌরব অর্জন করল, আর চাঁদের দক্ষিণ মেরু অঞ্চলে অবতরণের দিক থেকে তারাই হলো প্রথম দেশ। গত ১৪ জুলাই অন্ধ্রপ্রদেশের শ্রীহরিকোটায় সতীশ ধাওয়ান স্পেস সেন্টার থেকে চন্দ্রযান-থ্রির এই যাত্রা শুরু হয়েছিল। 

বিজ্ঞাপন

ইসরোর ভিডিও থেকে সফট ল্যান্ডিংয়ের মুহূর্তের স্ক্রিনগ্র্যাব। (গ্রাফিক্স) ছবি : বিবিসি

বিশ্বের চতুর্থ দেশ হিসেবে সফল চন্দ্রাভিযান পরিচালনা করল ভারত। এর আগে মাত্র ৩টি দেশ চাঁদে নভোযান পাঠাতে পেরেছে— যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া এবং চীন। তবে তারপরও ভারতের এই অভিযান অন্য ৩ দেশের চেয়ে স্বতন্ত্র। কারণ, ভারতের চন্দ্রযান ৩ প্রথম নভোযান, যেটি চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে সফলভাবে অবতরণ করতে পেরেছে।

চন্দ্রযান ৩ প্রস্তুত করতে ভারতের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইন্ডিয়ান স্পেস রিসার্চ অর্গানাইজেশনের (ইসরো) সময় লেগেছে ৪ বছর। এমনকি করোনা মহামারির সময়, বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো ভারতেও যখন দিনের পর দিন লকডাউন চলছে, তখনও থেমে থাকেনি চন্দ্রযান ৩ তৈরির কাজ। ইসরোর চেয়ারম্যান এস সোমনাথ ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভিকে জানিয়েছেন, প্রায় ১ হাজার প্রকৌশলী ও বিজ্ঞানীর নিরলস পরিশ্রমের ফসল এই চন্দ্রযান ৩ প্রস্তুত এবং সেটি চাঁদে পাঠানো বাবদ ব্যয় হয়েছে ৭০০ কোটি রুপি।

বিজ্ঞাপন
Advertisement

কতজন মানুষ চাঁদে হেঁটেছেন : চাঁদের মাটিতে প্রথম মানুষের পা পড়ে ১৯৬৯ সালের ২১ জুলাই। এরপর ১৯৭২ সাল পর্যন্ত তিন বছর বিভিন্ন সময় মোট ১২ জন মহাকাশচারী চাঁদের মাটিতে পায়চারি করতে সফল।সবকয়টা অভিযানই ছিল নাসার অ্যাপোলো প্রোগ্রামের অন্তর্গত। নীল আর্মস্ট্রং এবং বাজ অলড্রিন হলেন চাঁদে পা রাখা প্রথম ও দ্বিতীয় মানুষ। এরপর আরও ১০ জন চাঁদে গিয়েছেন। সবচেয়ে বেশি বয়সে চাঁদে পা রাখেন অ্যালান শেপার্ড। তখন তার বয়স ছিল ৪৭ বছর ৮০ দিন এবং সবচেয়ে কম বয়সে চাঁদে পা রাখার নজির গড়েন চার্লস ডিউক। মাত্র ৩৬ বছর ২০১ দিন বয়সেই এই কীর্তি গড়তে সফল ডিউক।

চাঁদে অ্যাপোলো মিশন : ১৯৬৯ এবং ১৯৭২-এর মধ্যে নাসার অ্যাপোলো প্রোগ্রাম চাঁদে মহাকাশচারীদের অবতরণের অসাধারণ কৃতিত্ব অর্জন করেছিল। অ্যাপোলো মিশনে মোট ছয়টি সফল উদ্যোগসহ মনুষ্যবাহী চন্দ্র অবতরণের একটি সিরিজ ছিল। অ্যাপোলো ১১, ১২, ১৪, ১৫, ১৬ এবং ১৭ নামে এই মিশনগুলো মহাকাশ অনুসন্ধান এবং মানব কৃতিত্বের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য মাইলফলক চিহ্নিত করেছে। 

অ্যাপোলো ১১: চাঁদে থাকাকালীন নীল আর্মস্ট্রং কখনই সঠিকভাবে ছবি তোলেননি। ছবি: গেটি ইমেজ

চাঁদে হাঁটা প্রথম ব্যক্তি: নীল আর্মস্ট্রং মানবজাতির ইতিহাসে প্রথম ব্যক্তি যিনি চাঁদে পা রেখেছিলেন। তিনি তার সহকর্মী এবং চাঁদে হাঁটার দ্বিতীয় ব্যক্তি, বাজ অলড্রিনের সঙ্গে ১৯৬৯ সালের ২১ জুলাই ইতিহাস সৃষ্টি করেছিলেন। তারা অন্য একজন সহকর্মী মাইকেল কলিন্সের সঙ্গে অ্যাপোলো ১১ লুনার মিশনে ভ্রমণ করেছিলেন যিনি কখনও চাঁদে পা রাখেননি। কারণ, তাকে অ্যাপোলো ১১-এ চাঁদকে প্রদক্ষিণ করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল।

অ্যাপোলো-১১ মিশন থেকে চাঁদের পৃষ্ঠে পা ফেলে নিল আর্মস্ট্রং বলেছিলেন, ‘মানুষের জন্য এটি ছোট একটি পদক্ষেপ, কিন্তু মানবজাতির জন্য এক বিরাট ঘটনা।’

চাঁদে হাঁটার শেষ ব্যক্তি : চাঁদে অবতরণকারী সর্বশেষ ব্যক্তিরা হলেন ইউজিন সারনান এবং হ্যারিসন স্মিট। তারা ১৯৭২ সালের ১১ ডিসেম্বর থেকে ১৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত তিন দিনের জন্য চাঁদের অন্বেষণ করেছিল। তারা চন্দ্রপৃষ্ঠ থেকে নমুনা সংগ্রহ করতে প্রতিদিন ৭ ঘণ্টা ব্যয় করেছিল একটি চন্দ্র রোভার গাড়িতে চালানোর সময়। তারা মোট ২২ ঘন্টা চাঁদে কাটিয়েছিলেন।

এখনও পর্যন্ত চাঁদে পা রেখেছেন যে মহাকাশচারীরা, তাদের তালিকা-

১. চাঁদে প্রথম পা রাখেন নীল আর্মস্ট্রং। মিশনের নাম ছিল অ্যাপোলো-১। আর্মস্ট্রং মারা যান ২৫ অগাস্ট ২০১২ সালে। নাসার পক্ষ থেকেই মিশনে গিয়েছিলেন তিনি। ১৯৬৯ সালের ২১ জুলাই চাঁদে পা রাখেন আর্মস্ট্রং।

২. চাঁদে পা রাখা দ্বিতীয় ব্যক্তির নাম বাজ অলড্রিন।এয়ারফোর্স অ্যাস্ট্রনট সার্ভিসের সদস্য ছিলেন তিনি।আর্মস্ট্রংয়ের সঙ্গেই চাঁদের উদ্দেশ্যে পাড়ি দিয়েছিলেন অলড্রিন।

৩. পিট কনরাড। মিশনের নাম অ্যাপোলো ১২। ১৯৬৯ সালের ১৯ নভেম্বর চাঁদের মাটিতে পা রাখেন তিনি।

৪. অ্যালান বিন। পিট কনরাডের সঙ্গেই চাঁদে যান তিনি।

৫. অ্যালান শেপার্ড। কনরাডদের দু’বছর পর ১৯৭১ সালের ৫-৬ ফেব্রুয়ারি চন্দ্রলোকে অভিযান করেন শেপার্ড।

৬. শেপার্ডের সঙ্গেই চাঁদে পাড়ি দিয়েছিলেন এডগার মিচেল।

৭. চাঁদে পা রাখা সপ্তম ব্যক্তি হলেন ডেভিড স্কট। মিশনের নাম ছিল অ্যাপোলো ১৫। এয়ারফোর্স অ্যাস্ট্রোনট স্কট চাঁদের সফরে যান ৩১ জুলাই-২ অগাস্ট ১৯৭১-এ।

৮. এয়ারফোর্সের সদস্য জেমস আর্ভিন স্কটের সঙ্গেই পাড়ি দেন চাঁদে।

৯. জন ইয়ং হলেন নবম ব্যক্তি যিনি চাঁদে পা রাখেন।

১০. ইয়ংয়ের সঙ্গেই চাঁদে পা রাখেন চার্লস ডিউক।

১১. জেনি কার্নান।

১২. চাঁদে পা রাখা এখনও পর্যন্ত সর্বশেষ ব্যক্তি হলেন নাসার হ্যারিসন স্কিমিট। ১৯৭২ সালের ১১-১৪ ডিসেম্বর চাঁদের উদ্দেশ্যে পাড়ি দেন তিনি।

চাঁদে সবশেষ মিশনটি পাঠানো হয় ১৯৭২ সালের ডিসেম্বর মাসে। তখন ভাবা হয়েছিল ভবিষ্যতে মানুষ ঘন ঘন চাঁদে যাবে এবং উপগ্রহটি মহাকাশ গবেষণায় নিয়মিত এক গন্তব্যে পরিণত হবে। কিন্তু সে রকম হয়নি। ১৯৭২ সালের ওই মনুষ্য-মিশনই ছিল শেষ অভিযান এবং চাঁদে পৃথিবীর শেষ অতিথি ছিলেন নভোচারী ইউজিন সারনান। তার পরে গত অর্ধশতাব্দী কাল ধরে আর কেউ চাঁদে অবতরণ করেননি। 

এক হিসেবে বলা হয়, পৃথিবীতে বর্তমানে যতো মানুষ আছে তাদের অর্ধেকেরও বেশি চাঁদের পিঠে কাউকে হাঁটতে দেখেনি।

নাসার আর্টেমিস মিশন : যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা চাঁদে আবার মানুষ পাঠাতে আগ্রহী হয়ে উঠেছে। এজন্য তাদের প্রস্তুতি চলছে প্রায় এক দশক ধরে। তাদের আর্টেমিস মিশনে এখনও পর্যন্ত খরচ হয়েছে ৪,০০০ কোটি ডলারেরও বেশি অর্থ। তৈরি করেছে এ যাবৎ কালের মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী রকেট এসএলএক্স। নাসার লক্ষ্য ২০২৫ সালের মধ্যে এই রকেটে করে চাঁদে আবার মানুষ পাঠানো। এই দৌড়ে নাসা এখন আর একা নয়। এই প্রতিযোগিতায় যোগ দিয়েছে আরও কয়েকটি দেশ।

এখন পর্যন্ত চাঁদের পৃষ্ঠে হাঁটার অবিশ্বাস্য সুবিধা পেয়েছেন মোট ১২ জন মহাকাশচারী, যাদের সবাই আমেরিকান। অ্যাপোলো মিশনের সময় তাদের ঐতিহাসিক প্রচেষ্টা ভবিষ্যতের মহাকাশ অনুসন্ধানের ভিত্তি স্থাপন করেছে, প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করেছে এবং মহাজাগতিক সম্পর্কে আমাদের জ্ঞান প্রসারিত করেছে। চন্দ্র অন্বেষণে নতুন করে বৈশ্বিক আগ্রহের সঙ্গে, আমরা আগামী বছরগুলোতে চাঁদে আরও বেশি লোকের পদচারণা দেখতে পাব।কারণ, মানবতা মহাকাশ অনুসন্ধান এবং বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারের সীমানাকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।

আরটিভি খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

বিজ্ঞাপন


© স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৬-২০২৫ | RTV Online |