গত ২৩ মে অনলাইন লাইভে এসে চাকরি না পাওয়ার ক্ষোভে নিজের একাডেমিক সকল সনদ পুড়িয়ে ফেসবুক আলোচনার জন্ম দিয়েছিলেন ইডেন মহিলা কলেজের শিক্ষার্থী মুক্তা সুলতানা। পরবর্তীতে সেই ভিডিও তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের দৃষ্টিগোচর হলে সরকারি একটি প্রোজেক্টে ‘কনটেন্ট ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড সোশ্যাল কমিউনিকেশন অফিসার’ পদে ৩৫ হাজার টাকা বেতনে ওই নারীর হাতে চাকরির নিয়োগপত্র তুলে দেওয়া হয়।
তাকে অনুসরণ করে পরবর্তীতে আরও অনেকেই বিভিন্নভাবে নজরে আসতে চাইলেও চাকরি নামক সোনার হরিণটির দেখা তারা পায়নি। কেননা, এমন লাখ লাখ বেকার শিক্ষিত তরুণদের কর্মসংস্থান দেওয়া সরকারেরও ক্ষমতার বাইরে। কিন্তু এসব উচ্চশিক্ষিত বেকার যুবকদের ভবিষ্যৎ কী তাহলে? এরা তো প্রত্যেকে বাংলাদেশেরই সন্তান!
এমন কঠিন অথচ সময়োপযোগী প্রশ্নের উত্তরে রীতিমতো যেন চমকে দিলেন শিক্ষক ও ক্যারিয়ার পরামর্শক এ টি এম মাহমুদ যিনি এ টি এম স্যার নামেও পরিচিত। বেকারত্ব শব্দটি নিয়েও যথেষ্ট আপত্তি রয়েছে এই মানুষটির। তিনি বলেন, বেকারত্বকে আমি জাদুঘরে রাখতে চাই। কিন্তু যে দেশে লাখ লাখ যুবক একটি চাকরির জন্য হন্যে হয়ে ঘুরছে, সেই দেশে বেকারত্বকে চাইলেই কি জাদুঘরে পাঠানো সম্ভব?
এই বিষয়ে তিনি বলেন, বেকারত্ব সমস্যা সমাধানের আগে আমাদের জানা উচিত আসলে বেকারত্ব কি? যে সেক্টরে কাজ কম কিন্তু প্রতিযোগিতা কয়েক গুণ বেশি সেখানে গিয়েই কাজের চেষ্টা করা আমার কাছে বোকামি মনে হয়! এটা আসলে বেকারত্ব নয়, এক ধরনের অজ্ঞতা। কেননা, আমাদের দেশে এমন হাজার সেক্টর বা কাজের যথেষ্ট অপরচুনিটি আছে যেগুলো নিয়ে জেনেও আমরা মাথা ঘামাই না। যেখানে কর্মসংস্থানের সুযোগ কম, প্রতিযোগিতা বেশি সেখানেই জোর করে ঢুকতে চেয়ে শেষ পর্যন্ত কাজ না পেয়ে আমরা হতাশা প্রকাশ করি।
আমাদের সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে কাজ করে যাচ্ছে৷ অথচ এই দেশের ছেলে-মেয়েরা নিজেদের মানসিকতাকে আধুনিক করতে পারছে না। ডিজিটাল মার্কেটিং, কনটেন্ট রাইটিং, নিত্যনতুন মার্কেটিং টুলস এসব নিয়ে কতজন বিষদ ধারণা পোষণ করে বলেন তো? একটা উন্নয়নশীল দেশে সরকারি চাকরির সুযোগ সবার হবে না, এই বাস্তবতাকে আমাদের মেনে নিতে হবে। একটা মাস্টার্স পাস তরুণ বিসিএস কিংবা সরকারি চাকরির পিছনে যে সময় ব্যয় করে তার অর্ধেক যদি ডিজিটাল মার্কেটিং শিখতে সময় দিত, আমি চ্যালেঞ্জ করে বলতে পারি সেই তরুণ অনেক আগেই বেকারত্বকে জাদুঘরে পাঠাতে পারতো।
বছর কয়েক আগে আমার কাছে মাস্টার্স পাস এক যুবক এসেছিল। সরকারি চাকরির জন্য দীর্ঘসময় চেষ্টা করেও শেষ পর্যন্ত তা সে পায়নি! আমার কাছে মূলত সে এসেছিল একটি চাকরির জন্য৷ আমি তাকে তৎক্ষণাৎ আমার চলমান একটি ডিজিটাল মার্কেটিং কোর্সে ভর্তি করে দেই। হ্যাঁ, সে হয়তো এখনও মাসে লক্ষাধিক টাকা আয় করতে পারেনি, কিন্তু সে তার বেকার জীবনকে জাদুঘরে পাঠাতে পেরেছে।
তিনি আরও বলেন, প্রতিযোগিতার পেছনে না ছুটে স্কিল বাড়াতে হবে। আপনার স্কিলই হবে আপনার জীবনের সবচেয়ে বড় নিরাপত্তা। আমি আমার তরুণ বন্ধুদের উদ্দেশ্যে বলব, স্কিল ডেভলপ করুণ, নিজের ভিতরকার সৃজনশীলতাকে জাগিয়ে তুলুন, যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে শিখুন, বেকার ও বেকারত্ব দুটোকে আপনিও জাদুঘরে পাঠাতে পারবেন।