১৯৭১ সালের ৬ ডিসেম্বর, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ ও ঘটনাবহুল একটি দিন। এদিন প্রথম দেশ হিসেবে ভারত আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীন ও সার্বভৌম দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়।
ভারতের সংসদে দেশটির তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী এ ঘোষণা দেন। পরে তিনি বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদকে চিঠি দিয়ে এ সিদ্ধান্তের কথা জানান।
এদিন ইন্দিরা গান্ধী অধিবেশনে তার বক্তব্যে বলেন, বাংলাদেশের জনগণ পাকিস্তানি স্বৈরতান্ত্রিক ও গণহত্যা নির্যাতন নিপীড়নের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করলো।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের নতুন সরকার 'গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার' হিসেবে অভিহিত হবে। আমি বাংলাদেশের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও তাদের অন্যান্য সহকর্মীদের কাছে আমাদের ঐকান্তিক সংবর্ধনা ও আন্তরিক অভিবাদন পৌঁছে দিই।
ইন্দিরা গান্ধী আশা প্রকাশ করে বলেন, সময়ে আরও অনেক রাষ্ট্র বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেবে এবং শিগগির জাতিসংঘে বাংলাদেশ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হবে।
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদকে দেওয়া চিঠিতে ইন্দিরা গান্ধী লেখেন, আমি আনন্দের সঙ্গে জানাচ্ছি, বিদ্যমান পরিস্থিতির আলোকে ভারত সরকার স্বীকৃতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
ভারত বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়ার কিছুক্ষণ পরেই প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম ও প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ এক তারবার্তায় ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীকে ধন্যবাদ ও অভিনন্দন জানান।
সৈয়দ নজরুল ইসলাম তার তারবার্তায় বলেন, বাংলাদেশের জনগণ ও বাংলাদেশ সরকার ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীকে আন্তরিক কৃতজ্ঞতা ও অভিবাদন জানাচ্ছে। তার এই বলিষ্ঠ সিদ্ধান্ত আমাদের বিজয়ের পথে অনেকখানি পথ ধাবিত করলো। ভারত সরকার বাংলাদেশের ন্যায় সঙ্গত মুক্তি সংগ্রামে সমর্থন করায় ভারত ও বাংলাদেশ সরকারের মধ্যে বন্ধুত্ব শান্তি ও সহযোগিতার নতুন দ্বার উন্মোচিত হলো।
১৯৭১ সালের ৬ ডিসেম্বর ভারত বাংলাদেশকে প্রথম স্বীকৃতি দেয়ার ৫ ঘণ্টা পরে পাকিস্তান সরকার ভারতের সাথে সব ধরনের কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করে। এক ঘোষণায় পাকিস্তান সরকারের এক মুখপাত্র বলেন, পূর্ব পাকিস্তানকে ভারতের স্বীকৃতির কারণে আমরা ভারতের সঙ্গে সমস্ত সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করছি। ভারতের এই সিদ্ধান্তের ফলে পাকিস্তানের প্রতি ভারতের চরম বিদ্বেষ ও পাকিস্তানকে ধ্বংস করার ষড়যন্ত্রের পরিকল্পনাই বাস্তবায়িত হয়েছে। এই সিদ্ধান্ত জাতিসংঘের সনদের নীতি বিরুদ্ধ। জাতিসংঘে শিগগির পাকিস্তান এই বিষয়টি উত্থাপন করবে।'
এই একইদিনে ভারত স্বীকৃতি দেয়ার কয়েক ঘণ্টা পরেই ভুটান তারবার্তার মাধ্যমে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়।