ঢাকাবুধবার, ০৯ জুলাই ২০২৫, ২৫ আষাঢ় ১৪৩২

কী আছে তারেক জিয়ার ভিডিও বার্তার পেছনে?

ড. মোবারক হোসেন

শুক্রবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৩ , ০৬:০৫ পিএম


loading/img
ড. মোবারক হোসেন

পলাতক সাজাপ্রাপ্ত অপরাধী বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান লন্ডনে আছেন প্রায় ১৬ বছর। কোনো উপার্জন ছাড়া সেখানে তার বিলাসবহুল চোখ-ধাঁধানো জীবনযাপন অনেক প্রশ্নের জন্ম দেয়। তবু এসব প্রশ্নের কোনো পাত্তা না দিয়ে তিনি সেখানে আছেন। শুধু যে আছেন তাই নয়, নিজের স্বার্থে একটি বিরাট জনগোষ্ঠীকে বিপদগামী করার চেষ্টা করেছেন। অথচ, একটু পেছেনে ফিরলে আমরা দেখবো যুদ্ধাপরাধী, স্বাধীনতাবিরোধী চক্রের সঙ্গে জোট বেঁধে ২০০১ সালে সর্বশেষ ক্ষমতায় এসেছিল বিএনপি। সেবার বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সবচেয়ে চোখে পড়ার মতো অর্জন ছিল দুর্নীতি ও দুঃশাসন। যে দুঃশাসনের মূল পরিকল্পনায় ছিলেন তারেক রহমান। 

বিজ্ঞাপন

সেই সময় গণমাধ্যমের সুবাদে আমরা জানতে পারি রাষ্ট্রীয় দুর্নীতি, দুঃশাসন, সীমাহীন লুটপাটের মহানায়ক ছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার বড় সন্তান তারেক রহমান। সেই সময় লুটপাট, মানিলন্ডারিং, কমিশন বাণিজ্য পরিচালনার জন্য তারেক রহমানের নেতৃত্বে হাওয়া ভবনে প্যারালাল সরকার পরিচালিত হতো। এখন তিনি যখন দুর্নীতি নিয়ে কথা বলেন তখন আমাদের কি বলা উচিত, সেটা জাতির কাছে একট বড় প্রশ্ন?

গত ২০ ডিসেম্বর দুপুর ১২টার দিকে ফেসবুক লাইভে তারেক রহমান ‘এই মুহূর্ত থেকে সরকারের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক অসহযোগ’-এর ডাক দেন। তিনি সরকারি কর্মচারীদের সরকারের নির্দেশ না মানা, নির্বাচনী কর্মকর্তাদের দায়িত্ব পালন না করা, ভোটারদের কেন্দ্রে না যাওয়া, খাজনা-ট্যাক্স-ইউটিলিটি বিল না দেওয়া, ব্যাংকে টাকা না রাখা ও লেনদেন না করার নির্দেশ দেন। দলীয় নেতাকর্মীদের নির্দেশ দেন কেউ যেন আদালতে কোনো মামলায় হাজিরা না দেন।

বিজ্ঞাপন

তারেক রহমানের পরপরই ‘ডামি নির্বাচন’ বর্জন ও অসহযোগ আন্দোলন সফল করার আহ্বান জানান, বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। বৃহস্পতিবার (২১ ডিসেম্বর) অসহযোগ আন্দোলনের পক্ষে জনমত গঠনে রাজধানীর এলিফ্যান্ট রোড ও বেইলি রোড এলাকায় লিফলেট বিতরণ শেষে তিনি এ আহ্বান জানান। বিএনপি-জামায়াতের আমলে সংখ্যালঘুদের ওপর অমানবিক নির্যাতন, তাদের ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযোগ, নারী ও শিশুদের ধর্ষণ, লুটপাট, ২১ আগস্টের মর্মান্তিক গ্রেনেড হামলা, চট্টগ্রামে ১০ ট্রাক অস্ত্র খালাস, কিবরিয়া হত্যা, বগুড়ায় অস্ত্র ও গোলাবারুদ, আহসান উল্লাহ মাস্টারকে গুলি করে হত্যা তাদের সরকারের অর্জন ছিল।

বাংলাদেশের জনগণের নিশ্চয়ই মনে আছে ১৫ ফেব্রুয়ারির সেই বিতর্কিত ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কথা। যেখানে সব বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো ভোট বর্জন করলেও ১৯৯৬ সালে বিএনপি একতরফা নির্বাচন করে। আবার ২০০১-৬ বিএনপির দুঃশাসনের পরে নির্বাচন দিতে টালবাহানা করে। তখন তারা কৌশল করে ওয়ান-ইলেভেনের উদয় ঘটায়। সে সময়  বিএনপির ক্ষমতা লোভ সম্পর্কে জাতি জানতে পারে। সেই সময়ে ভুয়া ভোটার তালিকা সংশোধন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ও নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর আন্দোলনের মাধ্যমে তাদের ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য করা হয়। তারপর টানা আড়াই বছর আরেক যুদ্ধের মুখোমুখি হয়ে আসে ২০০৮ সালের নির্বাচন। নির্বাচনের আগেই আর রাজনীতি না করার মুচলেকা দিয়ে বিদেশে পালিয়ে যান। অথচ বাংলাদেশের ইতিহাসের একমাত্র ব্যক্তিত্ব বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা ২১ বছর পরে ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় এসেও ২০০১ সালে কোনো ঝামেলা ছাড়া নির্বাচনের মাধ্যমে বিএনপিকে ক্ষমতা হস্তান্তর করেন। তিনি কতটা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করেন আমরা সেই নির্বাচনে দেখেছি। ২০০৪ সালে শেখ হাসিনার জনসভায় গ্রেনেড হামলা করে বিএনপি সেই বিশ্বাসের প্রতিদান দিয়েছিল। দেশের মানুষ সেই ছবি মনে রেখেছিল। মানুষ সেদিনও যেমন বুঝেছিলেন, আজও বুঝতে পারছেন ক্ষমতালোভী তারেক রহমান বাংলাদেশের মানুষের প্রয়োজনীয় কোনো বিষয় নিয়ে আন্দোলন করেনি। আর এখন তিনি শুধু লাদেনীয় কায়দায় ভিডিও বার্তা দিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছেন। ক্ষমতায় আসার জন্য তিনি জনগণ ব্যবহার করার চেষ্টা করছেন।

অথচ তিনি বুঝতে পারছেন না, বাংলাদেশের মানুষ এতটা বোকা না যে, তারেক রহমান নিরাপদে বিদেশে অবস্থান করবেন আর দেশের মানুষকে তার মিথ্যা প্ররোচনায় আন্দোলন করতে বলবেন, আর তারা আন্দোলন করবে। আসলে তারেক রহমানেরই বোঝা উচিত শেখ হাসিনা বাংলাদেশের মানুষের অর্থনৈতিক ও সামাজিক মুক্তি দিয়েছেন। তিনি হাজারবার চাইলেও অগণতান্ত্রিক পথে তাকে হারাতে পারবেন না। তাকে হারাতে হলে গণতন্ত্রের পথে আসতে হবে। তিনি যতই নির্বাচনে না আসুন অথবা নাশকতার পায়তারা করুন। গণতন্ত্রের লেবাস নিয়ে পেছনের দরজা দিয়ে সরকারে আসার পথ বন্ধ করে দিয়েছেন শেখ হাসিনা। বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের মহাসড়কে। তার যাত্রাপথ এখন অতীতের যে কোন সময়েরে চেয়ে মসৃণ। 

বিজ্ঞাপন

ড. মোবারক হোসেন
সহযোগী অধ্যাপক, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

আরটিভি খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

বিজ্ঞাপন
Advertisement
Advertisement


© স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৬-২০২৫ | RTV Online |