যেভাবে এভারেস্ট জয়

খায়রুন্নেসা সুলতানা, আরটিভি নিউজ

রোববার, ১৯ মে ২০২৪ , ০৬:১৭ পিএম


যেভাবে হয় এভারেস্ট জয় 
ছবি : সংগৃহীত

নেপালে অবস্থিত আকাশচুম্বী এই পর্বতকে নেপালের স্থানীয়রা ‘সাগরমাথা’ বলে ডাকেন, যার অর্থ হলো ‘আকাশের দেবী।’ তিব্বতে এই পর্বতটিকে ‘চোমোলাংমা’ বলা হয়, যার অর্থ ‘মহাবিশ্বের মা’। কিন্তু বিশ্বের সর্বোচ্চ এ পর্বতশৃঙ্গ হিমালয় পর্বতমালা ‘মাউন্ট এভারেস্ট’ নামেই সবার কাছে পরিচিত। 

এশিয়ার নেপাল ও চীনের সীমানায় অবস্থান এ সর্বোচ্চ শৃঙ্গে আজ থেকে প্রায় ৫৭ বছর আগে মানুষের পায়ের প্রথম চিহ্ন পড়েছিল। ১৯৫৩ সালের ২৯ মে নিউজিল্যান্ডের স্যার এডমন্ড হিলারি এবং নেপালের শেরপা তেঞ্জিং দক্ষিণ দিক থেকে সর্বপ্রথম এভারেস্টের শীর্ষে আরোহণ করেন। 

বিজ্ঞাপন

১৮৪১ সালে জর্জ এভারেস্ট মাউন্ট এভারেস্ট আবিষ্কার করেন, ১৮৮৭ সালে ‘ব্রিটিশ সার্ভেয়ার অব ইন্ডিয়া অ্যান্ড্রু ওয়া মাউন্ট’ এভারেস্টের নামকরণ করেন। এভারেস্টের পূর্ব নাম ছিল পিক-বি, পরবর্তীতে পিক-১৫ নামকরণ করা হয়।   

বিশ্বের সর্বোচ্চ এ পর্বতশৃঙ্গের সঙ্গে জড়িয়ে আছে অনেক ঘটনা, কিছু ঘটনা মজার আবার কিছু আশ্চর্যজনক। রয়েছে কিছু লৌকিক মিথ বা কল্পকাহিনি। কিন্তু সব মিলিয়ে বেশ কিছু নিয়মের মধ্য দিয়ে যাওয়ার পরই জয় করা যায় এভারেস্ট। 

এভারেস্টে ভিন্ন ভিন্ন চলাচলের রুট রয়েছে ১৮টি। এভারেস্টে আরোহণের ক্ষেত্রে রয়েছে নির্দিষ্ট বয়সের পরিসীমা। নেপালের সীমান্ত দিক থেকে আরোহণ করতে গেলে সর্বনিম্ন ১৬ বছর বয়সী এবং চীনা সীমান্তের পাশ দিয়ে আরোহণ করতে হলে বয়স হতে হবে ১৮ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে। উচ্চতার কারণে শারীরিক ভারসাম্য বজায় রেখে এভারেস্ট শীর্ষে উঠতে ৪০ দিনের মতো সময় লাগে। এভারেস্টে আরোহণের জন্য জনপ্রতি খরচ হয় ৪০ হাজার ডলার, যা বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ৩৪ লাখ টাকার কাছাকাছি। কিন্তু সময় ও সিজনের ওপর ভিত্তি করে এই খরচের পরিবর্তন হতে পারে। 

এভারেস্টের পর্বতারোহীদের গাইড হিসেবে কাজ করে তাদেরকে ‘শেরপা’ নামে ডাকা হয়। ছোট থেকেই এভারেস্টের ঠান্ডা পরিবেশ ও কম অক্সিজেনে বড় হওয়ার কারণে তাদের কিছু শারীরিক পরিবর্তন হয়। আর এ কারণে এভারেস্টের শৃঙ্গে আরোহণের ক্ষেত্রে শেরপারাই সবচেয়ে এগিয়ে। লোকমুখে প্রচলিত একটি মিথ হলো, শেরপারা নিজেদের তাপমাত্রা বাড়াতে ও কমাতে পারেন। 

বিজ্ঞাপন

এভারেস্টের বেজ ক্যাম্পের পাশেই ছোট ছোট কিছু রঙিন কাপড় ঝুলতে দেখা যায়। এদের বলা হয়, ‘প্রেয়ার ফ্ল্যাগ’। প্রচলিত ঐতিহ্যমতে, পর্বত আরোহণের পূর্বে পর্বতারোহীরা নিজেদের মঙ্গল কামনা করে রঙিন সুতোয় কাপড় বাঁধাকে তাদের জন্য শুভ মনে করেন।

এভারেস্টের আরোহণের সঙ্গেই জড়িয়ে আছে মৃত্যুর ভয়। পর্বতের ৭ হাজার ৫০০ মিটার ওপরের অঞ্চলকে ‘মৃত্যু অঞ্চল’ হিসেবে অভিহিত করা হয়। কারণ এখানে বেশির ভাগ মানুষের মৃত্যু ঘটে ঠাণ্ডাজনিত রোগের কারণে। 

এভারেস্ট জয়ের লক্ষ্যে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মানুষের মধ্যে কৌতূহল কাজ করে। আর এ যাত্রায় পিছিয়ে নেই বাংলাদেশও। ২০১০ সালের ২৩ মে সর্বপ্রথম বাংলাদেশি হিসেবে মুসা ইব্রাহিম জয় করেন এই পর্বতশৃঙ্গ। তারই ধারাবাহিকতায় ২০১১ সালের ২১ মে এম এ মুহিত, ২০১২ সালের ১৯ মে প্রথম নারী বাংলাদেশি হিসেবে নিশাত মজুমদার, ২০১২ সালের ২৬ মে সবচেয়ে কম বয়সী বাংলাদেশি এবং দ্বিতীয় নারী হিসেবে ওয়াসাফিয়া নাজরিন, ২০১৩ সালের ২০ মে পঞ্চম বাংলাদেশি হিসেবে সজল খালেদ নামের একজন চলচ্চিত্রকার এভারেস্টের শীর্ষে ওঠেন কিন্তু পর্বত থেকে নামার সময় তার হঠাৎ মৃত্যু হয়।

আর আজ ষষ্ঠ বাংলাদেশি হিসেবে এভারেস্টের চূড়া জয় করলেন চট্টগ্রামের ছেলে বাবর আলী।

আরটিভি খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

Loading...


© All Rights Reserved 2016-2025 | RTV Online | It is illegal to use contents, pictures, and videos of this website without authority's permission | powered by TechnoNext Software Limited.