ফজরের নামাজের পর যেসব আমলে রয়েছে মহাপুরস্কার
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ফজরের নামাজ আদায় করল, সে আল্লাহর নিরাপত্তা লাভ করল।’ (মুসলিম, হাদিস : ১৩৮০)
তাই পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের মধ্যে ফজর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নামাজ। বাকি ওয়াক্তগুলোর চেয়ে ফজরের নামাজের গুরুত্ব ও ফজিলত বেশি। ফজরের নামাজের সওয়াব ও ফজিলত নিয়ে বহু হাদিস বর্ণিত হয়েছে।
আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, রাতের বেলা ও দিনের বেলা ফেরেশতাদের এক দলের পর আর এক দল তোমাদের কাছে এসে থাকে এবং তাদের উভয় দল ফজর ও আসর নামাজের সময় একত্রিত হয়। অতঃপর যারা তোমাদের সঙ্গে রাত্রি যাপন করেছে তারা উঠে যায়। তখন তাদের প্রভু মহান আল্লাহ তাদেরকে জিজ্ঞেস করেন, তোমরা আমার বান্দাদের কিরূপ অবস্থায় রেখে আসলে? যদিও তিনি তাদের সম্পর্কে সম্যক অবগত। ফেরেশতারা তখন বলেন, আমরা যখন তাদের ছেড়ে চলে আসছিলাম তখন তারা নামাজ আদায় করছিল। আবার তাদের কাছে আমরা যখন গিয়েছিলাম তখনও তারা নামাজ আদায় করছিল। (মুসলিম, হাদিস : ১৩১৮)
আনাস ইবনে মালিক (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি ফজরের নামাজ জামাতে আদায় করে, তারপর সূর্য উঠা পর্যন্ত বসে বসে আল্লাহ তাআলার জিকির করে, তারপর দুই রাকাত নামাজ আদায় করে তার জন্য একটি হজ ও একটি ওমরার সাওয়াব রয়েছে। আনাস (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, পূর্ণ, পূর্ণ, পূর্ণ (হজ ও ওমরার সাওয়াব)। (তিরমিজি, হাদিস : ৫৮৬)
ফজরের পর পড়ার মতো ফজিলতপূর্ণ আমল
আয়াতুল কুরসি পাঠ করা
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি প্রত্যেক ফরজ নামাজের পর আয়াতুল কুরসি পাঠ করবে, তার জান্নাতে প্রবেশের পথে মৃত্যু ছাড়া আর কোনো অন্তরায় থাকবে না।’ (শুআবুল ঈমান, হাদিস : ২৩৯৫)
আয়াতুল কুরসি: আল্লাহু লা ইলাহা ইল্লা হুওয়াল হাইয়্যুল কায়্যূম, লা তা’খুযুহু সিনাতুওঁ ওয়ালা নাউম। লাহু মা ফিস্ সামাওয়াতি ওয়ামা ফিল্ আরদি, মান জাল্লাজি ইয়াশফাউ ইনদাহু ইল্লা বি ইজিনহি। ইয়া’লামু মা বাইনা আইদিহিম ওয়ামা খলফাহুম, ওয়ালা ইউহিতুনা বিশাইয়িম্ মিন ইলিমহি ইল্লা বিমা শা-আ। ওয়াসিআ কুরসিয়্যুহুস্ সামাওয়াতি ওয়াল আরদা, ওয়ালা ইয়াঊদুহু হিফজুহুমা,ওয়াহুওয়াল আলিয়্যুল আজিম। (সুরা বাকারা, আয়াত : ২৫৫)
আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের দোয়া
হাদিসে আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি সকাল-সন্ধ্যা তিনবার নিম্নের দোয়া পাঠ করবে, কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাকে সন্তুষ্ট করবেন।’ (তিরমিজি, হাদিস : ৩৩৮৯)
দোয়াটি হলো : রাজিতু বিল্লাহি রব্বাওঁ ওয়াবিল ইসলামী দ্বিনাওঁ ওয়াবি মুহাম্মাদিন নাবিয়্যা।
অর্থ : আমি আল্লাহকে রব হিসেবে, ইসলামকে দ্বিন হিসেবে ও মুহাম্মাদ (সা.)-কে নবী হিসেবে পেয়ে সন্তুষ্ট।
সাইয়্যিদুল ইস্তিগফার পাঠ করা
আল্লাহর রাসুল (সা.) হাদিসে উল্লেখ করেছেন যে, ‘যদি কেউ দৃঢ় বিশ্বাসের সঙ্গে সকাল-সন্ধ্যা নিম্নের ইস্তিগফারটি পড়ে এবং ওই দিনে বা রাতে ইন্তেকাল করে, তবে সে জান্নাতি হবে। (বুখারি, হাদিস : ৬৩০৬)
আল্লাহুম্মা আন্তা রাব্বি, লা ইলাহা ইল্লা আন্তা, খালাকতানি, ওয়া আনা আব্দুকা, ওয়া আনা আলা আহিদকা ওয়া ওয়া’দিকা মাস্তাতা’তু, আউজু বিকা মিন শাররি মা সানা’তু, আবুউ লাকা বিনি’মাতিকা আলাইয়্যা, ওয়া আবুউ বিজাম্বি ফাগফিরলী ফাইন্নাহু লা ইয়াগিফরুজ জুনুবা ইল্লা আন্তা।
অর্থ : হে আল্লাহ! আপনি আমার প্রতিপালক। আপনি ছাড়া আর কোনো উপাস্য নেই। আপনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন। আর আমি আপনার গোলাম। আমি আপনার ওয়াদা-প্রতিশ্রুতির ওপর যথাসাধ্য আছি। আমি আমার কৃতকর্মের অনিষ্টতা থেকে আশ্রয় চাচ্ছি। আমি আমার ওপর আপনার অনুগ্রহ স্বীকার করছি। আবার আমার গুনাহের কথাও স্বীকার করছি। অতএব, আমাকে ক্ষমা করে দিন। কেননা আপনি ছাড়া আর কেউ গুনাহসমূহ ক্ষমা করতে পারবে না।
রোগব্যাধি থেকে রক্ষার দোয়া
রোগব্যাধি থেকে হেফাজতের জন্য নবীজি (সা.) নিম্নের দোয়াটি পড়তেন। (আবু দাউদ, হাদিস : ১৫৫৪)
দোয়া : আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিনাল বারাসি, ওয়াল জুনুনি, ওয়াল জুজামি, ওয়া মিন সাইয়্যিল আসকাম।’ অর্থ—হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে আশ্রয় চাই শ্বেত, উন্মাদনা, কুষ্ঠ এবং সব দুরারোগ্য ব্যাধি থেকে।
জাহান্নাম থেকে মুক্তির দোয়া
হাদিসে এসেছে, ‘যে ব্যক্তি ফজর ও মাগরিবের পর সাতবার নিম্নের দোয়াটি পাঠ করে এবং ওই দিনে বা রাতে তার মৃত্যু হয় তাহলে সে জাহান্নাম থেকে মুক্তি লাভ করবে।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ৫০৭৯)
উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা আজিরনি মিনান্ নার।
অর্থ : হে আল্লাহ! আমাকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দান করুন।
মন্তব্য করুন