শয়তানের বাঁধন ছিঁড়ে মুক্তির উপায় ফজরের নামাজ
ইহজগতে মানুষের সবচেয়ে বড় শত্রু শয়তান। সে সর্বদা ফাঁদ পেতে বসে থাকে মানুষকে ধোঁকা দেওয়ার জন্য। মানুষকে পাপাচারে লিপ্ত করতে সব সময় ফাঁদ পেতে বসে থাকে সে। আদম সৃষ্টির পর আল্লাহর কাছ থেকে কেয়ামত পর্যন্ত মানুষকে সঠিক পথ থেকে দূরে সরিয়ে রাখার এবং ভুল পথে পরিচালিত করার ক্ষমতা চেয়ে নিয়েছে শয়তান। পরকালের বিনিময়ে দুনিয়াতে এ ক্ষমতাপ্রাপ্ত হয়েছে সে। তাই শয়তানের ধোঁকা থেকে বাঁচতে আল্লাহ তাআলা মানুষের জন্য সতর্কবার্তা জারি করেছেন। দিয়েছেন সঠিক দিকনির্দেশনা। ঠিক করে দিয়েছেন ইসলামের ৫টি স্তম্ভ, যার মধ্যে অন্যতম নামাজ। এই ইবাদত ছাড়া কিছুতেই সম্ভব না শয়তানকে পরাস্ত করা।
আর শয়তানের বাঁধন ছিঁড়ে দিন শুরুর একমাত্র উপায় ফজর নামাজ। এ ছাড়াও ফজর নামাজের আছে আরও বহু ফজিলত। এই নামাজ আদায় করলে বহু সওয়াব ও পুরস্কারের কথা উল্লেখ হয়েছে হাদিসে। নিম্নে ফজরের নামাজ পড়ার পুরস্কারের কথা আলোচনা করা হলো-
রাসুল (সা.) হাদিসে বলেছেন, যে ব্যক্তি ফজরের নামাজ আদায় করল সে মহান আল্লাহর রক্ষণাবেক্ষণের অন্তর্ভুক্ত হলো...। (মুসলিম, হাদিস : ১৩৭৯)
আরেক হাদিসে নবী করিম (সা.) বলেন, ‘তোমাদের কেউ ঘুমিয়ে পড়লে, শয়তান তার ঘাড়ের পেছনে তিনটি গিঁট দেয়। প্রতি গিঁটে সে এই কথা বলে, তোমার সামনে দীর্ঘ রাত অপেক্ষা করছে; অতএব তুমি শুয়ে থাকো। অতঃপর সে যদি জাগ্রত হয়ে আল্লাহকে স্মরণ করে একটি গিঁট খুলে যায়। অজু করলে আরেকটি গিঁট খুলে যায়। অতঃপর নামাজ আদায় করলে আরেকটি গিঁট খুলে যায়। তখন তার সকাল হয় উত্ফুল্ল চিত্তে ও প্রফুল্ল মনে। না হয়, সে সকালে কলুষ কালিমা ও আলস্য নিয়ে ওঠে।’ (বুখারি, হাদিস : ১১৪২)
আল্লাহর রাসুল (সা.) আরও বলেছেন, ‘ফজরের দুই রাকাত নামাজ দুনিয়া ও দুনিয়ার সবকিছুর চেয়ে উত্তম।’ (মুসলিম, হাদিস : ১৫৭৩)
আরেকটি হাদিসে রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি জামাতের সঙ্গে এশার নামাজ আদায় করল, সে যেন অর্ধেক রাত পর্যন্ত (নফল) নামাজ আদায় করল। আর যে ব্যক্তি ফজরের নামাজ জামাতের সঙ্গে আদায় করল, সে যেন সারা রাত জেগে নামাজ আদায় করল।’ (মুসলিম, হাদিস : ১৩৭৭)
বুখারি শরীফে বর্ণিত আছে, রাসুল পাক (সা.) বলেন, ‘মুনাফিকদের জন্য ফজর ও এশার নামাজের চেয়ে অধিক ভারী কোনো নামাজ নেই। এ দুই নামাজের ফজিলত যদি তারা জানত, তাহলে হামাগুড়ি দিয়ে হলেও মসজিদে উপস্থিত হতো।’ (বুখারি, হাদিস : ৬৫৭)
আরেক হাদিসে বিশ্বনবী (সা.) বলেন, ‘এমন কোনো ব্যক্তি জাহান্নামে যাবে না, যে সূর্যোদয়ের ও সূর্যাস্তের আগের নামাজ আদায় করে।’ অর্থাৎ ফজর ও আসরের নামাজ। (মুসলিম, হাদিস : ১৩২২)
বুখারির আরেকটি হাদিসে আছে, রাসুল (সা.) বলেন, ‘ফেরেশতারা পালাবদল করে করে তোমাদের মাঝে আসেন; একদল দিনে আসে, আরেক দল আসে রাতে। আসর ও ফজরের নামাজে উভয় দল একত্রিত হন। অতঃপর তোমাদের মাঝে রাত যাপনকারী দলটি আসমানে চলে যান। তখন আল্লাহ তাআলা তাদের জিজ্ঞেস করেন, আমার বান্দাদের কোন অবস্থায় রেখে এলে? অথচ তিনি তাদের ব্যাপারে সর্বাধিক অবগত। জবাবে তারা বলেন, আমরা তাদের নামাজে রেখে এসেছি। আর আমরা যখন তাদের কাছে গিয়েছিলাম, তখনো তারা নামাজরত ছিলেন।’ (বুখারি, হাদিস : ৫৫৫)
মন্তব্য করুন