• ঢাকা সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১
logo

বেসরকারি মেডিকেল শিক্ষায় অশনি সংকেত অটোমেশন, ক্ষুব্ধ অভিভাবকরা

আরটিভি নিউজ

  ২২ নভেম্বর ২০২৪, ১৫:৩০
ছবি: সংগৃহীত

দেশের বেসরকারি মেডিকেল কলেজে অটোমেশন বা স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে ভর্তি প্রক্রিয়া চালু হওয়ায় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়েছে। ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীরা পছন্দমতো মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। ফলে শিক্ষার্থীরা এই পেশায় আসতে নিরুৎসাহিত হচ্ছেন। এতে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা হতাশ ও সংক্ষুব্ধ।

বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলোর অনেক আসনই ফাঁকা থেকে যাচ্ছে অটোমেশন ভর্তি প্রক্রিয়ায়। অটোমেশনের নামে বেসরকারি মেডিকেল খাতকে ধ্বংস করার ষড়যন্ত্র চলছে বলে দাবি করেছেন সচেতন অভিভাবক ও বাংলাদেশ প্রাইভেট মেডিকেল কলেজ অ্যাসোসিয়েশন। ফলে অটোমেশন পদ্ধতিতে ভর্তি পক্রিয়া বাতিল করার দাবি জানিয়েছেন তারা।

স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, ২০২২-২০২৩ শিক্ষাবর্ষ থেকে মেডিকেল কলেজে এমবিবিএস ভর্তিতে অটোমেশন বা স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতি চালু হয়। এই পদ্ধতিতে সরকারি ও বেসরকারি মেডিকেল কলেজে মেধাতালিকার ভিত্তিতে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়। শিক্ষার্থীরা তাদের পছন্দের কলেজগুলো বেছে নিতে পারেন না। এতে প্রথমে শিক্ষার্থীদের ৫টি মেডিকেল কলেজে ভর্তির চয়েস রাখা হয়েছিল। পরবর্তীতে এই নীতি পরিবর্তন করে ছেলেদের জন্য ৬০টি মেডিকেল কলেজ ও মেয়েদের জন্য ৬৬টি চয়েস রাখা হয়েছে।

বেসরকারি মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষ বলছেন, বেসরকারি মেডিকেল সেক্টর ধ্বংস করার জন্য অটোমেশন চালু করা হয়েছে। বিগত সরকার বেসরকারি মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষ ও চিকিৎসা শিক্ষা বিশেষজ্ঞদের মতামত উপেক্ষা করে এই অটোমেশন চালু কার হয়েছে। শিক্ষার মান রক্ষার নামে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং বিএমএন্ডডিসির কর্মকর্তারা নিজেদের দোষ অন্যের ঘাড়ে চাপিয়ে দিয়েছে। সরকারই বেসরকারি মেডিকেল কলেজের অনুমোদন দিয়েছে এবং নীতিমালাও করে দিয়েছে। সেই নীতিমালা ও গাইডলাইন কেউ না মানলে ব্যবস্থা নেওয়ার এখতিয়ার রয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের। সরকারের পাশাপাশি অনেক নামীদামি বেসরকারি হাসপাতাল আন্তর্জাতিক মানের চিকিৎসাসেবা দিয়ে যাচ্ছে। মধ্যবিত্ত কিংবা বেশির ভাগ বিত্তশালী এখন দেশেই চিকিৎসাসেবা নিচ্ছেন। প্রাইভেট মেডিকেল সেক্টর ধ্বংস করে সবার স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা সরকারের একার পক্ষে সম্ভব নয়। মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের তৎকালিন অদক্ষ, অযোগ্য ও ঘুষখোর কর্মকর্তারা তাদের আয়ের উৎস বাড়াতে অটোমেশন পদ্ধতি চালু করেছে। নিজেদের অযোগ্যতা ঢাকতে তারা নতুন এই আইন চাপিয়ে দিয়েছে। এই পদ্ধতি চালু হওয়ার পরে প্রতি শিক্ষাবর্ষে অধিকাংশ বেসরকারি মেডিকেল কলেজের সকল আসন পূরণ হয়নি বরং সিংহভাগ আসনে শিক্ষার্থী শূন্য রয়েছে। এতে প্রতিষ্ঠানগুলো সংকটে পড়ছে এবং এর প্রভাব পড়ছে চিকিৎসা শিক্ষা কার্যক্রমেও।

অটোমেশন পদ্ধতির কারণে বিদেশি শিক্ষার্থীরাও বাংলাদেশে চিকিৎসা শিক্ষা গ্রহণে আগ্রহ হারাছেন। অটোমেশন চালু করার আগে ভারত, নেপাল, শ্রীলঙ্কাসহ বিভিন্ন দেশ থেকে পর্যাপ্ত শিক্ষার্থীরা ডাক্তারি পড়তে আসতেন। অটোমেশন কাউকেই তার ইচ্ছামতো খুশি করতে পারছে না। ফলে বিদেশি শিক্ষার্থীরাও বাংলাদেশে মেডিকেলে ভর্তি থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। সরকারি নীতিমালা অনুযায়ি, বিগত ২০২১-২০২২ এবং ২০২২-২০২৩ শিক্ষাবর্ষে বিদেশী শিক্ষার্থী ৪৫ শতাংশ সম্পূর্ণ হয়েছে। কিন্তু ২০২৩-২০২৪ শিক্ষাবর্ষ থেকে কাঙ্ক্ষিত শিক্ষার্থী পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে রাষ্ট্রীয় ভাবে মেডিকেল শিক্ষা খাত থেকে কাঙ্ক্ষিত বৈদেশিক মুদ্রা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে না।

মাহবুব রায়হান নামের এক অভিভাবক ক্ষুব্ধ হয়ে জানান, আমার মেয়ে দূরবর্তী জেলার একটি সরকারি মেডিকেলে চান্স পাওয়ায় মেয়েকে রাজধানীর কোনো একটি প্রাইভেট মেডিকেলে পড়ানোর সিদ্ধান্ত নেই। কিন্তু অটোমেশন পদ্ধতি চালুর কারণে আমার মেয়েকে সরকারি মেডিকেলে ভর্তি করতে ব্যর্থ হয়েছি। এই পদ্ধতির কারণে বেসরকারি মেডিকেলে আমার মেয়ের ভর্তির সুযোগ হাতছাড়া হয়ে গেছে। আর এখানেই শেষ হয়ে গেছে তার ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন। যেখানে মানুষের পছন্দ অপছন্দ বলে কিছু থাকে না সেই নিয়মের প্রয়োজন আছে বলে আমি মনে করি না। আমার মেয়ের মতো অনেকের সন্তানের স্বপ্ন ভঙ্গকারী এই অটোমেশন পদ্ধতি বাতিল করা হোক।

বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরিরত আরেক অভিভাবক জানান, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সরকারি মেডিকেল কলেজের ক্ষেত্রে ভর্তিতে অটোমেশন পদ্ধতি চালু করতে পারে কিন্তু বেসরকারিতে অটোমেশন মানেই মানুষের অধিকার হরণ করা। যারা বেসরকারিতে পড়বে তারা টাকা দিয়েই পড়বে, যেখাতে খুশি সেখানেই পড়বে। এটা নিয়ে সরকারের হস্তক্ষেপ করা উচিত নয়।

বাংলাদেশ প্রাইভেট মেডিকেল কলেজ অ্যাসোসিয়েশনের কোষাধ্যক্ষ হাবিবুল হক বলেন, অটোমেশন পদ্ধতিটি ভারত থেকে দেশ থেকে নেয়া হয়েছে। কিন্তু এটি নিজেদের ক্ষেত্রে প্রয়োগের বিষয়ে অন্য দেশের পরিস্থিতি আর আমাদের পরিস্থিতি বিবেচনা করা হয়নি। সেখানে অটোমেশন প্রয়োজন। আমাদের দেশে তো সে রকম না। এখানে কয়েকটা সিটের বিপরীতে একজন আগ্রহী।

তিনি আরও বলেন, একজন শিক্ষার্থী ঢাকায় বেড়ে উঠেছে, পড়াশোনা করেছে এবং ঢাকার যেকোনো একটি মেডিকেলে পড়তে তার সামর্থ্য আছে। তাকে তার পরিবার টাকা দিচ্ছে। তাকে দিয়ে দেওয়া হচ্ছে বরিশাল। এখন এই ঢাকার ছেলে কি বরিশাল গিয়ে অথবা অন্য কোনো জেলায় গিয়ে পড়বে? সে মেডিকেলে পড়ার জন্য বিদেশে চলে যাচ্ছে, নয়তো প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিতে অথবা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে যাচ্ছে।

অটোমেশন একটি বৈষম্যমূলক পদ্ধতি, এটি বাতিল করার দাবি জানিয়েছেন বেসরকারি মেডিকেল কলেজ মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ প্রাইভেট মেডিকেল কলেজ অ্যাসোসিয়েশন। চলতি বছরের ১৯ সেপ্টেম্বর সংগঠনটির পক্ষ থেকে স্বাস্থ্য উপদেষ্টা বরাবর চিঠি পাঠিয়েছেন। চিঠিতে তারা উল্লেখ করেছেন, বেসরকারি মেডিকেলের মতো ব্যয়বহুল শিক্ষায় যারা পড়তে ইচ্ছুক, তারা নিজেদের অর্থ ব্যয় করে নিজেদের পছন্দের কলেজে পড়তে চান। অটোমেশনের কারণে অর্থ থাকলেও পছন্দের কলেজে অনেকেই ভর্তি হতে পারছেন না। অটোমেশন পদ্ধতি বাতিল করে আগের ব্যবস্থায় ফিরে গেলে শিক্ষার্থী ও কলেজ কর্তৃপক্ষের সুবিধা হবে।

এ বিষয়ে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. মুহাম্মদ আব্দুস সবুর বলেন, অটোমেশনের নামে বেসরকারি মেডিকেল কলেজে শিক্ষার্থী ভর্তিতে বড় বোঝা চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এটা নিয়ে শিক্ষার্থী, অভিভাবক, মালিকপক্ষ এমনকি চিকিৎসকদের মধ্যেও অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। এই পদ্ধতি যেন বেসরকারি মেডিকেল সেক্টর ধ্বংসের হাতিয়ার না হয় সেটি লক্ষ্য রাখতে হবে।

তিনি আরও বলেন, অটোমেশন পদ্ধতিতে মেডিকেলে ভর্তি দীর্ঘ প্রক্রিয়া। অনেক মেধাবী পছন্দের কলেজ না পেয়ে দেশের বাইরে চলে যাচ্ছে। সুতরাং সকল পক্ষের সুবিধার জন্য পুরাতন পদ্ধতিতে ফিরে যাওয়া যেতে পারে বলে আমি মনে করি।

যদিও মেডিকেলে ভর্তির এ পদ্ধতি থেকে ‘সরে আসার সম্ভাবনা নেই’ বলছেন স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা।

আরটিভি/একে/এআর

মন্তব্য করুন

Bangal
rtv Drama
Radhuni
  • অন্যান্য এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
বেসরকারি মেডিকেলে ভর্তিতে কিস্তির সুবিধা চালু
গুচ্ছভুক্ত ২৪ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তিতে অনিয়ম তদন্তের নির্দেশ
রাবিতে ফল প্রকাশে অটোমেশন প্রক্রিয়ার উদ্বোধন