অপরাধ যখন ব্যক্তিপর্যায়ে থাকে তখন অধঃপতন ব্যক্তির মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে। ব্যাপক হারে যখন কোনো দেশ বা জাতি অপরাধে লিপ্ত হয়, তখন সে অপরাধের দায় সবাইকেই বহন করতে হয়।
ইবনে মাজাহ-এর এক হাদিসে আছে, কোনো দেশে পাঁচ ধরনের অপরাধ চলমান থাকলে, তারা কখনই উন্নতির শিখরে পৌঁছাতে পারবে না। তাদের অধঃপতন সুনিশ্চিত।
অশ্লীলতা :
আল্লাহ বলেন, হে মানুষ, ভূমণ্ডলে বিদ্যমান বস্তুগুলো থেকে হালাল উত্তম জিনিসগুলো খাও এবং শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করে চলো না, বস্তুত সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু। সে তোমাদেরকে শুধু অসৎ এবং অশ্লীল কাজের নির্দেশ দেয়, আর তোমাদেরকে নির্দেশ দেয় আল্লাহর সম্বন্ধে এমন কথা বলার যা তোমরা জান না। (সুরা বাকারা, আয়াত: ১৬৮-১৬৯)।
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যখনই কোনো জাতির মধ্যে প্রকাশ্যে অশ্লীলতা ছড়িয়ে পড়ে, (যেমন সুদ, ঘুষ, ব্যভিচার ইত্যাদি) তখন তাদের মধ্যে মহামারি আকারে প্লেগ ও এমন সব ব্যাধির জন্ম হয়, যা আগেকার লোকেদের মধ্যে কখনো দেখা যায়নি।
ওজনে কম দেওয়া :
ইসলামে বেচাকেনায় ওজন করার সময় সঠিকভাবে দাঁড়িপাল্লা ব্যবহারের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ওজনে কারচুপি করার অপরাধে পূর্বে এক জাতি ধ্বংসও হয়েছে। (সুরা বনি ইসরাইল, আয়াত: ৩৫)।
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যখন কোনো জাতি ওজন ও পরিমাপে কারচুপি করে, তখন তাদের ওপর নেমে আসে দুর্ভিক্ষ ও কঠিন বিপদ-মসিবত। আর তাদের ওপর শুরু হয় জালেম শাসকগোষ্ঠীর নিপীড়ন।
যাকাত না দেওয়া :
যাকাত হলো ধনীর সম্পদে গরিবের অধিকার। যাকাত না দিয়ে সম্পদ কুক্ষিগত করে রাখা গরিব-দুঃখীর সম্পদ আত্মসাৎ করারই নামান্তর। (সুরা জারিয়াত, আয়াত: ১৯)।
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, কোনো জাতি যখন সম্পদের যাকাত আদায় করা থেকে বিরত থাকে, তখন আসমান তাদের ওপর বৃষ্টি বর্ষণ বন্ধ করে দেয়। যদি ভূ-পৃষ্ঠে চতুষ্পদ জন্তু-জানোয়ার (গরু, ছাগল, ভেড়া, কুকুর, ঘোড়া ইত্যাদি) না থাকত তা হলে আর কখনো জমিনে বৃষ্টিপাত হতো না। (ইবনে মাজাহ, হাদিস: ৪০১৯)
অঙ্গীকার ভঙ্গ করা :
আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, এখানে অঙ্গীকার বলতে, আল্লাহতায়ালা বান্দার কাছ থেকে ঈমান ও ইবাদত সম্পর্কিত যেসব অঙ্গীকার নিয়েছেন অথবা তার নাজিলকৃত বিধি-বিধান হালাল ও হারাম সম্পর্কিত যেসব অঙ্গীকার নিয়েছেন, আয়াতে সেগুলোই উদ্দেশ্য। (তাফসিরে মাআরেফুল কুরআন)।
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে জাতি আল্লাহ ও তার রাসুল (সা.)-এর সঙ্গে কৃত অঙ্গীকার ভঙ্গ করে, আল্লাহ তাদের ওপর বিজাতীয় দুশমনকে ক্ষমতাসীন করে দেন। সে তাদের ধন-সম্পদসহ সবকিছু কেড়ে নেয়।
শরিয়াবহির্ভূত বিচারব্যবস্থা :
আল্লাহ বলেন, হুকুম বা কর্তৃত্বের মালিকানা আল্লাহ ছাড়া কারও কাছে নেই। তিনিই সত্যকথা বর্ণনা করেন, আর তিনিই সর্বোত্তম ফায়সালাকারী। (সুরা আনয়াম, আয়াত: ৫৭)।
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, শাসকবর্গ যখন আল্লাহর কিতাব মোতাবেক ফায়সালা করে না এবং বিচার বিভাগে আল্লাহর নাজিলকৃত বিধানকে অগ্রাহ্য করে, তখন তিনি তাদের পরস্পরের মধ্যে (যুদ্ধ) দাঙ্গা-হাঙ্গামা বাঁধিয়ে দেন। (ইবনে মাজাহ, হাদিস: ৪০১৯)
আরটিভি/একে