ঢাকাশনিবার, ১৪ জুন ২০২৫, ৩১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

হানি ট্র্যাপ কী, টার্গেটে আছেন যারা

আরটিভি নিউজ

শনিবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৫ , ০২:০৬ পিএম


loading/img
ছবি: কোলাজ

আগে মাঝেমধ্যে শোনা গেলেও সম্প্রতি মডেল, অভিনেত্রী ও মিস আর্থ বাংলাদেশ-২০২০ বিজয়ী মেঘনা আলম ইস্যুতে ‘হানি ট্র্যাপ’ শব্দটি এখন রীতিমতো আলোচনায়। তবে অনেকেই জানেন না বিষয়টি আসলে কী, আর টার্গেটেই বা কারা?

বিজ্ঞাপন

বিশ্বখ্যাত জেমস বন্ড সিরিজের একাধিক চলচ্চিত্রসহ দুনিয়াব্যাপী বহু সিনেমা, ওয়েব ও টিভি সিরিজ ‘হানি ট্র্যাপ’-কে উপজীব্য করে নির্মিত হলেও সাহিত্যে শব্দটি প্রথম ব্যবহৃত হয় ১৯৭৪ সালে। ব্রিটিশ-আইরিশ লেখক জন লে ক্যারের ‘টিঙ্কার, টেইলর, সোলজার, স্পাই’ নামে এক গোয়েন্দা উপন্যাসে এই শব্দটি প্রথম ব্যবহৃত হয়েছিল বলে বিভিন্ন লেখায় পাওয়া যায়।

এখন মনে প্রশ্ন জাগতে পারে ‘হানি ট্র্যাপ’ আদতে কী? এটি মূলত এক ধরনের অপকৌশল। বাংলা অনুবাদ করলে যার অর্থ দাঁড়ায় মধুর ফাঁদ। অনেকে একে ‘ভালোবাসার ফাঁদ’ নামেও অভিহিত করেন। কারণ, এই পদ্ধতিতে যৌনতা ও শারীরিক সম্পর্কের প্রলোভন দেখিয়ে ব্ল্যাকমেল করে বিপক্ষ শিবির থেকে তথ্য ও মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়। 

বিজ্ঞাপন

হানি ট্র্যাপের টার্গেট আসলে কারা
যেহেতু নিছক মজা করার জন্য এই ফাঁদ পাতা হয় না, সেহেতু এই তালিকায় ঠাঁই পায় বিভিন্ন দেশের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি, কূটনৈতিক, রাষ্ট্রদূত, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, সরকারি উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, গোয়েন্দা, ব্যবসায়ী ও ধনাঢ্য ব্যক্তি। 

সাধারণ এই চক্রের সদস্যরা ওত পেতে থাকেন অভিজাত এলাকার নামিদামি বার ও হোটেলে। সেখানে আসা-যাওয়া ব্যক্তিদের ওপর নজরদারি করে তারা তাদের গতিবিধি লক্ষ্য করেন। পরে সুযোগ বুঝেই পাতেন ‘হানি ট্র্যাপ’। আর সেই ট্র্যাপেই পা দিয়ে ধরাশায়ী হন অনেকে।

বাংলাদেশে সম্প্রতি ঢাকায় নিযুক্ত এক বিদেশি রাষ্ট্রদূত ও ঝিনাইদহ-৪ আসনের সাবেক এমপি আনোয়ার আজীম আনার এই হানি ট্র্যাপের শিকার হন।

বিজ্ঞাপন

হানি ট্র্যাপের অতীত-বর্তমান
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ এবং এর পরবর্তী সময়ে স্নায়ুযুদ্ধকালে হানি ট্র্যাপে ফেলে তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন পশ্চিমাদের কাছ থেকে গোপন তথ্য জানার চেষ্টা করেছে। একইভাবে মস্কোর কাছ থেকে তথ্য হাতিয়ে নিতে এই পদ্ধতি অবলম্বন করেছে পশ্চিমারাও।

বিজ্ঞাপন

এর বাইরে হানি ট্র্যাপের সঙ্গে বিভিন্ন সময়ে এসেছে ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের নাম। পরমাণু শক্তিধর আমাদের দুই প্রতিবেশী দেশ ভারত ও পাকিস্তানের সামরিক গোয়েন্দাদের বিরুদ্ধেও হানি ট্র্যাপে ফেলে পরস্পরের তথ্য হস্তগত করার অভিযোগ আছে। 

সময়ের বিবর্তনে এখন হানি ট্র্যাপের ধরন পাল্টেছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের এই যুগে অ্যাডাল্ট ডেটিং সাইটগুলো হয়ে উঠেছে এই ফাঁদের মোক্ষম জায়গা। বড় ব্যবসায়ী, পদস্থ কর্মকর্তা, রাজনীতিক, সাংবাদিক কিংবা শিল্পীদের সঙ্গে অ্যাডাল্ট সাইটের প্রেমিক-প্রেমিকারা অন্তরঙ্গ, কিংবা নগ্ন ভিডিও চ্যাট করে পরে তা ফাঁস করার ভয় দেখিয়ে অর্থ দাবি করছেন। কিংবা কখনও তারা কোনো পক্ষের এজেন্ট হিসেবে কাজ করে টার্গেট ব্যক্তিকে ফাঁসিয়ে দিচ্ছেন।

এ বিষয়ে দেশের শীর্ষস্থানীয় অপরাধ বিশেষজ্ঞ ও মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিমিনোলজি অ্যান্ড পুলিশ সায়েন্স বিভাগের চেয়ারম্যান মুহাম্মদ উমর ফারুক গণমাধ্যমকে বলেন, হানি ট্র্যাপ অবশ্যই প্রতারণামূলক অপরাধ। সংঘবদ্ধ অপরাধীরা সাধারণত এমন প্রতারণার ফাঁদ বেশি পাতে। রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক শক্তি এদের পেছনে কাজ করে। যাদের মধ্যে আত্মনিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা কম, তারাই এ ধরনের প্রতারণার শিকার বেশি হয়।

তিনি আরও বলেন, এ ধরনের মধুর ফাঁদ থেকে রক্ষা পাওয়ার অন্যতম উপায় হলো সচেতনতা বাড়ানো। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এই সচেতনতার কাজ করতে পারে।

প্রসঙ্গত, হানি ট্র্যাপের মধ্য দিয়ে কখনও কখনও সত্য বেরিয়ে এলেও নিরপরাধ মানুষরা ক্ষণিকের ভুলে ফেঁসে গিয়ে হন চরমভাবে ধরাশায়ী।

আরটিভি/আইএম/এস

আরটিভি খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

বিজ্ঞাপন
Advertisement
Advertisement


© স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৬-২০২৫ | RTV Online |