ডাকসু নির্বাচন: নিষিদ্ধদের নিয়ে নীরবই থাকছে ঢাবি প্রশাসন
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ(ডাকসু) নির্বাচনে প্যানেল করার পর প্রকাশ্য প্রচারণা চালাচ্ছে নিষিদ্ধ সংগঠনগুলো। তবে এসব নিয়ে অনেকটাই নীরব ভূমিকা পালন করছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
সরেজমিনে বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিন কলাভবন, কার্জন হল, আইবিএ, বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণসহ বেশ কিছু জায়গায় হিজবুত তাহরীর, ইসলামী শাসনতন্ত্র ছাত্র আন্দোলন, জাতীয় ছাত্র সমাজের প্রায় অর্ধশতাধিক পোস্টার, ব্যানার দেখা গেছে।
এদের মধ্যে ছাত্র সমাজ ও ইসলামী ছাত্র আন্দোলনের প্রার্থীরা সরাসরি নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। সংগঠন দুটি এরই মধ্যে প্যানেল ঘোষণা করেছে। প্রকাশ্যেই সাংগঠনিকভাবে প্রচারণায় অংশ নিচ্ছে।
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বলছে, নিরাপত্তাকর্মী ও প্রক্টরিয়াল বডির চোখ ফাঁকি দিয়ে হিজবুত তাহরীরের কর্মীরা রাতের আঁধারে এসব পোস্টার লাগাচ্ছে। আর ছাত্র সমাজ ও ইসলামী শাসনতন্ত্র ছাত্র আন্দোলনের অনুসারীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হিসেবে প্রার্থী হয়েছেন, সাংগঠনিকভাবে নয়।
হিজবুত তাহরীরের পোস্টারে ‘খিলাফত মুক্তির একমাত্র পথ’ শিরোনামে সরকার বিরোধী বিভিন্ন কথা লেখা রয়েছে। এছাড়াও পোস্টারে ‘ডাকসু নির্বাচন এই যুলুমের শাসন এবং জনগণের ভাগ্যের কোনও পরিবর্তন আনবে না’ এমন কথা লেখা রয়েছ।
জানা গেছে, ২০০১ সাল থেকে বাংলাদেশে আনুষ্ঠানিকভাবে এ দলটি তাদের কার্যক্রম শুরু করে। ২০০৯ সালের অক্টোবর মাসে (২২ অক্টোবর) স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জননিরাপত্তার স্বার্থের কারণ দেখিয়ে এ দলটিকে নিষিদ্ধ করা হয়।
অন্যদিকে, স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে বিতর্কিত ভূমিকার জন্য ১৯৯০ সালে জাতীয় ছাত্রসমাজকে ক্যাম্পাসে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ পরিষদ। একইসময়ে ধর্মকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করে-এমন সংগঠনগুলোও ক্যাম্পাসে নিষিদ্ধ করা হয়।
সম্প্রতি ডাকসু নির্বাচন নিয়ে আলোচনা শুরু হওয়ার পর নিষিদ্ধ সংগঠনগুলোর কার্যক্রম নিয়ে ক্ষোভ জানায় ছাত্রলীগ ও বামপন্থী ছাত্রসংগঠনগুলো।
এ বিষয়ে ছাত্রলীগের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক ও ডাকসুতে ছাত্রলীগের প্যানেল থেকে সহসাধারণ সম্পাদক (এজিএস) প্রার্থী সাদ্দাম হোসেন আরটিভি অনলাইনকে বলেন, সাধারণ শিক্ষার্থীদের প্রতি নিষিদ্ধ সংগঠনগুলোকে প্রতিহত করার আহ্বান জানাই। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে আমরা ধর্মভিত্তিক সংগঠন ও সামরিক স্বৈরাচারের সহযোগীদের গঠনতান্ত্রিকভাবে নিষিদ্ধ করার দাবি জানিয়েছিলাম। কিন্তু সেটি করা হয়নি। ডাকসুতে নির্বাচিত হলে গঠনতন্ত্রে এসব সংগঠনকে নিষিদ্ধ করার বিষয়টি সংযোজন করব।
ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক ও ডাকসুর ভিপি প্রার্থী লিটন নন্দী বলেন, প্রশাসনের মদদেই জাতীয় ছাত্রসমাজ ও ইশা ছাত্র আন্দোলন নির্বাচনে অংশ নেয়ার সুযোগ পাচ্ছে। এটি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ পরিষদের সিদ্ধান্তের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। তাদের প্রতিহত করা হবে।
ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক আকরাম হোসেন আরটিভি অনলাইনকে বলেন, প্রশাসন ও ছাত্রলীগের সহযোগিতায় ছাত্র সমাজ ক্যাম্পাসে কার্যক্রম চালাচ্ছে। অন্য নিষিদ্ধ সংগঠনগুলোর ছাত্রলীগের প্রশ্রয়ে প্রচারণা চালাচ্ছেন
ছাত্র সংগঠনগুলোর ক্ষোভ নিয়ে জানতে চাইলে প্রক্টর গোলাম রাব্বানী আরটিভি অনলাইনকে বলেন, ছাত্র সমাজ ও ইসলামী শাসনতন্ত্র ছাত্র আন্দোলন সংগঠনগতভাবে ডাকসু নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না। কিন্তু তাদের কেউ চাইলে ব্যক্তিগতভাবে নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন। সংগঠনগতভাবেও তারা প্রচারণায় অংশ নিতে পারবে না। কেউ লিখিত অভিযোগ দিলে আমরা ব্যবস্থা নেব।
আগামী ১১ মার্চ ডাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এদিন সকাল ৮টা থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনে ভোট গ্রহণ চলবে।
আরও পড়ুন
এমসি/এসএস
মন্তব্য করুন