ঢাকাবুধবার, ২৩ জুলাই ২০২৫, ৮ শ্রাবণ ১৪৩২

ষড়যন্ত্রের বিষদাঁত উপড়ে ফেলবে ছাত্রলীগ : শেখ ইনান

সজিব খান

শুক্রবার, ০৫ মে ২০২৩ , ০৫:৫০ পিএম


আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। এই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সব ষড়যন্ত্রের বিষদাঁত উপড়ে ফেলতে প্রস্তুত রয়েছে সংগঠনটির নেতাকর্মীরা। গত বছরের ২০ ডিসেম্বর দায়িত্ব পাওয়ার পর সংগঠনকে আরও সক্রিয়, শক্তিশালী ও বিতর্কমুক্ত করতে নানান কার্যক্রম হাতে নিয়েছে শীর্ষ দুই নেতা। খুব শিগগিরই সংগঠনটির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটি পূর্ণাঙ্গ করা হবে। এ ছাড়া সারাদেশের আংশিক ও মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটিগুলো নিয়েও কাজ চলছে। পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষিত স্মার্ট বাংলাদেশে বিনির্মাণে গড়ে তোলা হবে ‘স্মার্ট ছাত্রলীগ’। যারা আগামীর বাংলাদেশে নেতৃত্ব দেবে। আরটিভি নিউজকে দেওয়া এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে এমনটাই জানিয়েছেন সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন সজিব খান।

বিজ্ঞাপন

আরটিভি : দায়িত্ব পাওয়ার পর গত সাড়ে চার মাসে ছাত্রলীগে কী কী নতুনত্ব এনেছেন?

শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান : ছাত্রলীগ একটি ধারাবাহিক ও গঠনতান্ত্রিক সংগঠন। এটি সবসময়ই আধুনিকতাকে গ্রহণ করেছে। যুগের চাহিদার সঙ্গে তালমিলিয়ে সংগঠনে নানান পরিবর্তন ও নতুনত্ব এনেছে। বর্তমান সময়ে আমরা যুগের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাংলাদেশ ছাত্রলীগকে আধুনিক ও স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার পছন্দের একটি স্মার্ট সংগঠন হিসেবে গড়ে তুলতে কাজ করছি। এরই অংশ হিসেবে আমরা ইতোমধ্যে সময়োপযোগী আটটি সম্পাদকীয় পদ সংযোজন করেছি। এই সম্পাদকীয় পদগুলো সংযোজনের মাধ্যমে আমরা বর্তমান সময়ের চাহিদার সঙ্গে ছাত্ররাজনীতির যে প্রাসঙ্গিকতা, সেটির একটি মেলবন্ধন ঘটানোর চেষ্টা করেছি। সামনের দিনে আমরা আমাদের এই কার্যক্রমকে আরও বেগবান করব। আমরা আরও সময়োপযোগী-যুগোপযোগী বিজ্ঞানমনস্ক আধুনিক কর্মসূচি আমরা ঘোষণা করব।

বিজ্ঞাপন

আরটিভি : কৃষকের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ধানকাটার অনুপ্রেরণা কোথায় পেয়েছেন?

শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান : আমরা সবসময়ই মানবিক কাজে বিশ্বাস করি। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৪৮ সালে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ প্রতিষ্ঠার পর থেকেই এই সংগঠনটি দেশের নানান সংকটে, দুর্যোগ-দুর্বিপাকে, সংগ্রামে-সংশয়ে মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে। দেশরত্ন শেখ হাসিনা বরাবরই আমাদের মানুষের পাশে দাঁড়ানোর নির্দেশনা দিয়ে থাকেন। তিনি এবার আমাদের প্রত্যক্ষভাবে নির্দেশ দিয়েছেন সারাদেশে কৃষকের ধান কেটে ঘরে পৌঁছে দিতে সর্বাত্মক সহযোগিতা করার জন্য। তারই নির্দেশনায় আমরা সব জেলা-উপজেলা, মহানগর, পৌরসভা-ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ে কৃষকের পাকা ধান কেটে ঘরে পৌঁছে দিচ্ছি। তিনিই আমাদের অনুপ্রেরণার উৎস।

আরটিভি : স্মার্ট ছাত্রলীগের রূপরেখা কেমন হবে?

বিজ্ঞাপন

শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান : স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার চারটি স্তম্ভ রয়েছে। সেগুলো হচ্ছে- স্মার্ট সিটিজেন, স্মার্ট ইকোনমি, স্মার্ট সোসাইটি এবং স্মার্ট গভার্নেন্স। এর মধ্যে প্রধানতম শর্ত হলো ‘স্মার্ট সিটিজেন’। আজকে যারা শিক্ষার্থী তারাই আগামীর স্মার্ট বাংলাদেশের স্মার্ট সিটিজেন হবে। তাই শিক্ষার্থীদের কীভাবে উন্নত বিশ্বের সঙ্গে তালমিলিয়ে খাপ খাওয়ানো যায় সেই লক্ষ্যে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কাজ করছে।  দেশের শিক্ষাব্যবস্থাকে বিদ্যানন্দীনী শেখ হাসিনা ইতোমধ্যে ডিজিটালাইজড করে ফেলেছেন। বাংলাদেশ ছাত্রলীগ আগামীর স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রেখে স্মার্ট, গ্রিন, সেইফ এবং ক্লিন ক্যাম্পাস গড়ার লক্ষ্যে কাজ করে যাবে। 

বিজ্ঞাপন

আরটিভি : সাম্প্রতিক সময়ে ছাত্রলীগে বিশৃঙ্খলা দেখা দিয়েছিল।  চাঁদাবাজি, সন্ত্রাসীমূলক কর্মকাণ্ডসহ বিভিন্ন অভিযোগ উঠেছিল। এসব বন্ধে আপনারা কী পদক্ষেপ নিয়েছেন?

শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান : ছাত্রলীগ একটি বৃহৎ সংগঠন। প্রায় ৫০ লাখ নেতাকর্মীর এই পরিবার। এখানে অনেক সময় অনেকে ভুল-ত্রুটি করে থাকে বা সাংগঠনিক বিধি-বিধানের ব্যত্যয় ঘটে থাকে।  নৈতিক মূল্যবোধের অবক্ষয় অনেক সময় আমরা দেখে থাকি, যেটি আমাদের জন্য অত্যন্ত ব্রিবতকর ও লজ্জাজনক। আমি স্পষ্টভাবে বলতে চাই, এই সংগঠনের নাম ব্যবহার করে কোনো অপকর্ম, অপতৎপরতা বা অপরাজনৈতিক সংস্কৃতি চর্চার সুযোগ বাংলাদেশের ৫৬ হাজার বর্গমাইলের এক ইঞ্চি জায়গাতেও নেই।  আমরা এই সংগঠনটিকে বাংলাদেশের মানুষের কাছে একটি রোল মডেল হিসেবে দাঁড় করাতে চাই। ছাত্রলীগের নাম ব্যবহার করে বাংলাদেশের কোথাও কোনো অপকর্ম করা হলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 

আরটিভি : ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি কবে হবে এবং কাদের মূল্যায়ন করা হবে?

শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান : আমরা এ বিষয়ে কাজ করছি। অতিদ্রুতই বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটি পূর্ণাঙ্গ করা হবে। যারা সংগঠনে দীর্ঘদিন ধরে শ্রম, মেধা ও কর্মস্পৃহার সমন্বয় ঘটিয়ে কাজ করছে। এই সংগঠনে যাদের ত্যাগ রয়েছে, যারা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই সংগঠনকে আরও ভালো কিছু দিতে পারবে। যারা জাতির পিতার আদর্শের যথাযথ বাস্তবায়নে আরও ভালো কিছু করতে পারব। তাদের মতো নির্ভীক, নিরলস ও পরিশ্রমীদের আমরা মূল্যায়ন করার চেষ্টা করব। 

আরটিভি : একটি বিতর্কমুক্ত পূর্ণাঙ্গ কমিটি করতে কী কী পদক্ষেপ নিয়েছেন?

শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান : যারা কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগে পদপ্রত্যাশী তাদের অধিকাংশকেই আমি এবং সংগঠনের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন চিনি। তাদের সঙ্গে আমাদের ব্যক্তিগত সম্পর্ক ও যোগাযোগ রয়েছে। আমরা সবার ব্যাপারেই আরও খতিয়ে দেখছি। আমরা চেষ্টা করব যতটুকু নির্ভুলভাবে বিতর্কমুক্ত পূর্ণাঙ্গ কমিটি করা যায়। তারপরও মানুষ মাত্রই ভুল করে। যদি এমন কোনো ব্যত্যয় ঘটে থাকে তবে পরবর্তীতে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ রয়েছে।

আরটিভি : গতবারের মতো এবারও ছাত্রলীগে সহসম্পাদক হিসেবে গণহারে পদায়ন করা হবে কি না?

শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান : ছাত্রলীগের গঠনতান্ত্রিক একটি কাঠামো রয়েছে।  এতে কয়জনকে পদায়ন করা হবে, সেটিও নির্দিষ্টভাবে উল্লেখ রয়েছে। এর বাহিরে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের পর পরবর্তীতে বিভিন্ন সময়ে সংগঠনের ত্যাগী, পরিশ্রমী ও মেধাবীদের মূল্যায়নের জন্য গঠনতন্ত্র মোতাবেক কিছু লোককে পদায়ন করা হয়। কিন্তু এগুলো ঢালাওভাবে করার কোনো সুযোগ নেই। 

আরটিভি : সারাদেশে যেসব আংশিক ও মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি রয়েছে, সেগুলোর বিষয়ে আপনারা কী করছেন?

শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান : আমরা ইতোমধ্যে প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে সারাদেশের সকল ইউনিটকে তাদের পূর্ণাঙ্গ কমিটি জমা দেওয়ার জন্য নির্দেশনা দিয়েছি। ইতোমধ্যে অনেক পূর্ণাঙ্গ কমিটি আমাদের দপ্তর সেলে জমা হয়েছে। এগুলো আমরা খতিয়ে দেখছি, বিচার-বিশ্লেষণ করছি। আশা করছি, অন্যান্য ইউনিটগুলো তাদের পূর্ণাঙ্গ কমিটি অতিদ্রুতই জমা দেবে। এ ছাড়া যেখানে আমাদের কমিটি নেই, সেখানেও দ্রুতই কমিটি করে সংগঠনকে আরও গতিশীল করা হবে।

আরটিভি : দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে কোন বিষয়টিকে বেশি প্রাধান্য দিচ্ছেন ?

শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান : একটি বিষয়ে আজকে বাংলাদেশের তরুণ সমাজ ঐক্যবদ্ধ। সেটি হলো দেশরত্ন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলা। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা দেশের মানুষকে দিনবদলের স্বপ্ন দেখিয়েছেন, দেশের মানুষের দিনবদল হয়েছে, তাদের ভাগ্যোন্নয়ন হয়েছে। বঙ্গবন্ধুকন্যা ডিজিটাল বাংলাদেশের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, বাংলাদেশ আজকে ডিজিটালাইজড একটি দেশ হিসেবে সারা বিশ্বে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে। তিনি কথা দিয়ে কথা রেখেছেন। বঙ্গবন্ধুকন্যা আগামীর যেই স্মার্ট বাংলাদেশের স্বপ্ন আমাদের তরুণ প্রজন্মকে দেখিয়েছেন, সেই স্বপ্নে মাতোয়ারা হয়ে আমরা তরুণ সমাজকে সঙ্গে নিয়ে আগামী ২০২৪ সালের নির্বাচনী বৈতরণী মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের প্রধানতম শক্তি হিসেবে আমরা পার করতে চাই।

আরটিভি : নির্বাচনকে ঘিরে নানান দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রের কথা বলা হচ্ছে। এগুলো কী ধরনের ষড়যন্ত্র এবং তা মোকাবিলা করতে আপনারা কতটুকু প্রস্তুত?

শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান : স্বাধীনতার পর থেকেই বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা নিয়ে নানান ধরনের ষড়যন্ত্র চলছে। ১৯৭৫ পূর্ববর্তী এবং পরবর্তী সময়ে আমরা দেখেছি, দেশবিরোধী ইতিহাস বিকৃতি করার মতো ঘৃণ্যচেষ্টার নানানতম ষড়যন্ত্র। নানান ভৌগলিক কারণে, বৈশ্বিক কারণে, আন্তর্জাতিক রাজনীতির ধারায় এবং দেশীয় অপশক্তির অপতৎপরতায় এ ধরনের ষড়যন্ত্র অব্যাহত রয়েছে। এই ষড়যন্ত্রের বিষদাঁত আমরা অবশ্যই উপড়ে ফেলব। সব ষড়যন্ত্রকে নস্যাৎ করে দেশরত্ন শেখ হাসিনার চলার পথকে মসৃণ রাখাই আমাদের মূল লক্ষ্য।

আরটিভি : আমরা জাতীয় নির্বাচনগুলোতে দেখি দেশের রাজনৈতিক দলগুলো তাদের ছাত্রসংগঠনগুলোকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে। আগামী নির্বাচনে ছাত্রলীগের ভূমিকা কী থাকবে?

শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান : বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কোনো সংগঠনের হাতিয়ার নয়। ছাত্রলীগ এ দেশের শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ের হাতিয়ার, তাদের মৌলিক চাওয়া-পাওয়ার হাতিয়ার হিসেবে কাজ করে। বাংলাদেশ ছাত্রলীগ এদেশের শিক্ষার্থীদের সুখ, আনন্দ ও উৎফুল্লতা নিশ্চিত করার হাতিয়ার হিসেবে কাজ করে। ছাত্রলীগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার সুন্দর পরিবেশ বজায় রাখার জন্য কাজ করে।  আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন আমাদের জাতীয় জীবন, ছাত্ররাজনীতি ও ছাত্রদের ভবিষ্যৎ জীবনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, আগামী নির্বাচনেই ফয়সালা হবে দেশ কোন পথে যাবে, সমৃদ্ধির পথে যাবে না কি ধ্বংসের পথে যাবে। সুতরাং দেশকে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নিতে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ নিরলসভাবে কাজ করবে।

আরটিভি : জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ছাত্রলীগের সারাদেশের নেতাকর্মীকে কী বার্তা দিতে চান? 

শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান : সারাদেশের ছাত্রলীগের অর্ধকোটি নেতাকর্মীকে আহ্বান জানাই, আসুন সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্নাকে বিসর্জন দিয়ে জাতীয় নির্বাচনের যে কদিন বাকি রয়েছে, সেই সময়টাতে আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করি। শেখ হাসিনার চলার পথকে মসৃণ রাখি। যেন নৌকার সুনিশ্চিত বিজয় ছিনিয়ে এনে বাংলাদেশের অগ্রযাত্রাকে তরান্বিত করতে পারি।

আরটিভি খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

বিজ্ঞাপন
Advertisement
Advertisement


© স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৬-২০২৫ | RTV Online |