• ঢাকা মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১
logo

চাঁদের নিজস্ব সম্পদ কাজে লাগিয়ে বসতি নির্মাণের পরিকল্পনা

ডয়েচে ভেলে

  ২৫ অক্টোবর ২০২৪, ১৩:০৩
চাঁদ
ছবি: সংগৃহীত

মানুষ ভবিষ্যতে চাঁদ ও অন্যান্য উপযুক্ত গ্রহ-উপগ্রহে বসতি স্থাপনের স্বপ্ন দেখে। কিন্তু নির্মাণ ও জ্বালানি উৎপাদনের উপকরণ পৃথিবী থেকে নিয়ে যাওয়া অবাস্তব হবে। তাই চাঁদের উপকরণ কাজে লাগানোর মহড়া চলছে।

চাঁদের ধূলিকণা কাজে লাগিয়ে কীভাবে কাঁচ বা ইট তৈরি করা সম্ভব, বার্লিনে গবেষকরা তা জানার চেষ্টা করছেন। কারণ পৃথিবী থেকে চাঁদে এমন উপকরণ নিয়ে যাওয়ার ব্যয় মারাত্মক রকম বেশি।

এয়ারোস্পেস ইঞ্জিনিয়ারিং বিশেষজ্ঞ হিসেবে প্রো. এনরিকো স্টল বলেন, অনেক সংস্থা সত্যি চাঁদে মালপত্র সরবরাহ করতে চায়। চাঁদে এক কিলো মাল পাঠানোর জন্য তারা দশ লাখ ইউরো মাসুল চাইছে। পৃথিবীর বুকে চাঁদের ধূলিকণার মতো পদার্থ সৃষ্টি করার জন্য প্রয়োজনীয় বেজাল্ট এবং ফেল্ডস্পারের মতো উপকরণ আগ্নেয়গিরির কাছে পাওয়া যায়। তবে সেগুলি যতটা সম্ভব শুকনা হতে হবে। এক ভ্যাকুয়াম চেম্বারের মধ্যে ১,৪০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় গরম করলে সেই উপকরণ অনেকটা লাভার মতো রূপ নেয়। গলানো সেই পদার্থের বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে।

বার্লিন প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিমন স্টাপারফেন্ড বলেন, এর বিশেষত্ব হলো, এর আগে কেউ এমনটা করেনি। আমরাই প্রথম ভ্যাকুয়ামের মধ্যে সেটা করতে পেরেছি। এটা সত্যি বড় সাফল্য৷ প্রাথমিক স্তরে আমরা বাসস্থান, অর্থাৎ, বাড়িঘর, সোলার সেলের কাঠামো ইত্যাদি গড়ে তুলতে চাই। তবে এর কোনো সীমা নেই। মুনডাস্ট আরো দানাদার৷ পৃথিবীর মতো সেই ধূলিকণা তত মিহি নয়।

বার্লিন প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইয়ুলিয়ান বাশ জানান, আমাদের হাতে দুটি মৌলিক উপাদান রয়েছে, অর্থাৎ, বেসাল্টিক উপাদান এবং অ্যানোর্টোসাইট উপাদান। কিন্তু দুইয়ের মিশ্রণে চাঁদের জন্য উপযুক্ত নির্দিষ্ট বেস সৃষ্টি করা যায়। মুনডাস্টের মধ্যে একেবারেই কোনো পানি নেই। তা সত্ত্বেও দেড় হাজার ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় সেটি দিয়ে ইট তৈরি করা সম্ভব।

বার্লিন প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টেফান লিংকে বলেন, যে চুলায় সেই ইট উৎপাদন করা হবে, সেটি আমাদের পৃথিবী থেকে নিয়ে যেতে হবে। এমন ওভেনের ওজন সম্ভবত ১০০ কিলোর মতো হবে। কিন্তু ভেবে দেখুন, সেটি কত টন উপাদান প্রক্রিয়াজাত ও উৎপাদন করতে পারবে। চাঁদের বুকে জ্বালানি উৎপাদনও অন্তত কাগজেকলমে সম্ভব। সেখানে সূর্যের আলো বেশ প্রখর, আকাশে কোনো মেঘ নেই৷ ফলে সোলার সেল ব্যবহার করে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যেতে পারে।

বার্লিনের ছাত্ররা ইটের পাশাপাশি কাঁচও সৃষ্টি করতে সফল হয়েছেন। সেই কাঁচের মধ্য দিয়ে যতটা সম্ভব আলো চলাচল জরুরি। সেটিকে তখন সোলার সেলে রূপান্তরিত করা যাবে। পট্সডাম বিশ্ববিদ্যালয়ে সেই কাজ চলছে৷ কাচ যতটা সম্ভব চিকন ও স্বচ্ছ হতে হবে।

সেখানকার পদার্থবিদ ফেলিক্স লাং বলেন, আমরা মুনগ্লাসের উপর পেরোভস্কাইট সোলার সেল তৈরি করতে চাই। অর্থাৎ সেখানেই উপাদান গলিয়ে কাঁচ উৎপাদন করা হবে এবং তার উপর শুধু এক মাইক্রো-মাইক্রোমিটার পেরোভস্কাইট স্তর বসানো হবে। পেরোভস্কাইট এমন এক কৃত্রিম স্ফটিকের মতো উপাদান, যা একটি দ্রাবকের মধ্যে দ্রবীভূত করা যেতে পারে। কোনো ভ্যাকুয়াম চেম্বারে সেটিকে কাচের উপর সমানভাবে স্প্রে করাও সম্ভব। তারপর আরো কম তাপমাত্রায় তামাও প্রয়োগ করা হবে। প্রচলিত সিলিকনের তুলনায় পেরোভস্কাইটের অনেক সুবিধা রয়েছে।

ফেলিক্স লাং বলেন, মহাকাশে মহাজাগতিক রশ্মি প্রতিবারই একটি পরমাণুকে তার অবস্থান থেকে ছিটকে বার করে দেয়। সেটা আসলে একটা ত্রুটি। এর ফলে সোলার সেল বিকল হয়ে যায়। পেরোভস্কাইট এতই নরম, যে একটি পরমাণু ছিটকে বেরিয়ে গেলেও আবার সেটি আগের অবস্থানে ফিরে আসে। ফলে মহাকাশে কয়েক দশক ধরে এর কার্যকারিতা অটুট থাকে।

চূড়ান্ত সোলার সেল দুটি কাচের প্লেট দিয়ে তৈরি, যার মাঝে পেরোভস্কাইটের একটা স্তর রয়েছে। এবার সেটির কার্যকারিতা পরীক্ষা করে দেখার পালা। ভ্যাকুয়ামের মধ্যে সেই সোলার সেল কৃত্রিম সূর্যের দিকে তাক করা হলো। কয়েক মূহূর্ত পর সেটি বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু করলো।

পট্সডাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিদ ফেলিক্স লাং বলেন, আমরা এক কিলো পেরোভস্কাইট চাঁদে নিয়ে যেতে পারলে, সেটা দিয়ে ৪০০ বর্গ মিটার বড় স্তর সৃষ্টি করা যাবে, যা তিনটি ভলিবল কোর্টের সমান। সেখানে ৫০০ কিলোওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যাবে। চাঁদের বুকে মানুষের প্রথম পদার্পণের প্রায় অর্ধ শতাব্দী পর মানুষ আরো বড় স্বপ্ন দেখছে। তারা চাঁদে বসবাস করতে চায়।

আরটিভি/এএইচ

মন্তব্য করুন

Bangal
rtv Drama
Radhuni
  • বিজ্ঞান এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
জাহাজে সাত জনকে হত্যার ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন
জাহাজে সাতজনকে হত্যা: কাগজে যা লিখেছেন বেঁচে থাকা জুয়েল
সেনা অভিযানে হত্যা মামলার আসামিসহ মাদক ও চাঁদাবাজ চক্রের ২৬ জন আটক
চাঁদপুরে থেমে থাকা জাহাজে দুর্বৃত্তদের হামলা, নিহত বেড়ে ৭