ঢাকারোববার, ২২ জুন ২০২৫, ৮ আষাঢ় ১৪৩২

বিমানের রুট পরিবর্তন করে পরিবেশের ক্ষতি কমানোর চেষ্টা

ডয়চে ভেলে

বুধবার, ০৭ মে ২০২৫ , ১১:৩৯ পিএম


loading/img
বিমানের রুট পরিবর্তন করে পরিবেশের ক্ষতি কমানোর চেষ্টা

জলবায়ু পরিবর্তনে অনেক বেশি নেতিবাচক প্রভাব রাখছে বিমান চলাচল খাত। একটি বিমান এক কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে যে পরিমাণ কার্বন নির্গমন করে, তা অন্য যে-কোনো বাহনের চেয়ে বেশি। এছাড়া বিমানের কনডেনসেশন ট্রেইল বা কনট্রেইলও পরিবেশের অনেক ক্ষতি করছে। বিমান চলার পথে কিছু পরিবর্তন এনে এই ক্ষতি কমানো সম্ভব হতে পারে। বিমান চলাচল খাত পরিবেশের যে ক্ষতি করে, তার এক-তৃতীয়াংশের জন্য দায়ী বিমানের জ্বালানি পোড়ানো থেকে নির্গত কার্বন ডাই-অক্সাইড, যা কনট্রেইল নামে পরিচিত।

বিজ্ঞাপন

একটি ফ্লাইটের অর্ধেকেরও বেশি গ্রিনহাউস প্রভাবের জন্য কনট্রেইল দায়ী। এগুলি মূলত প্রায় ১১ হাজার মিটার উচ্চতায় চলাচল করা বড় যাত্রী ও পণ্যবাহী বিমান থেকে নির্গত হয়। ঐ উচ্চতায় তাপমাত্রা খুব কম থাকে। যখন উচ্চ আর্দ্রতা প্রবর্তন করা হয়, তখন এলাকাটি বরফ-অতিসম্পৃক্ত অঞ্চলে পরিণত হয়। সেখানে, বিমানের নিষ্কাশনে নির্গত কণার সাথে জলীয় বাষ্প ঘনীভূত হয়ে কনট্রেইল তৈরি হয়, যা ১৭ ঘণ্টা পর্যন্ত দৃশ্যমান থাকতে পারে। এবং তারা একটি গ্রিনহাউসে কাচের প্যানেলের মতো কাজ করতে পারে।

এয়ারক্রাফট ডিজাইনার ডিটার শলৎস বলেন, কনডেনসেশন ট্রেইল বা কনট্রেইল মেঘের মতো আচরণ করে। দিনের বেলায় মেঘের শীতল প্রভাব থাকে, আর রাতে থাকে উষ্ণতা। শীতের তারা ভরা ও মেঘহীন রাত হিমশীতল হয়ে থাকে। জার্মান এয়ারোস্পেস সেন্টার ২০১১ সালে কনট্রেইলের উষ্ণতা ও শীতলতার প্রভাব পরিমাপ করে একটি মানচিত্র তৈরি করে। যেসব এলাকা বিমানের এড়িয়ে চলা উচিত সেগুলো লাল রঙে চিহ্নিত করা হয়েছে। কনট্রেইল এড়ানোর বিষয় বিবেচনায় নিয়ে ফ্লাইটের রুট তৈরি করা গেলে জলবায়ুর উপর বড় ধরনের ইতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। লাল অঞ্চলগুলো মূলত রাতে এবং শীতল অঞ্চলে দেখা যায়।

বিজ্ঞাপন

জার্মান এয়ারোস্পেস সেন্টারের পদার্থবিদ ক্রিস্টিয়ানে ফোইগ্ট জানান, মোট ফ্লাইটের মাত্র এক-পঞ্চমাংশ কনট্রেইল তৈরি করে, আর মাত্র পাঁচ শতাংশ ফ্লাইট উষ্ণ কনট্রেইল উৎপন্ন করে। এর অর্থ, কনট্রেইলের প্রভাব কমাতে মাত্র পাঁচ শতাংশ ফ্লাইটের রুট পরিবর্তন করতে হবে। জার্মান এয়ারোস্পেস সেন্টারের বিজ্ঞানীরা প্রথমে কনট্রেইল তৈরি সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করা যায় কিনা, সেই চেষ্টা করেছিলেন। এর জন্য তারা কনট্রেইল তৈরি হয়, বায়ুমণ্ডলের এমন ঠাণ্ডা ও স্যাঁতসেঁতে এলাকার উপর বা নীচ দিয়ে ফ্লাইট পরিচালনা করেছিলেন। তাদের গবেষণার সময় বিমানগুলি জোড়-সংখ্যার দিনে প্রচলিত উচ্চতায়, আর বিজোড়-সংখ্যার দিনে প্রচলিত উচ্চতা থেকে ৬০০ মিটার উঁচু বা নিচ দিয়ে উড়েছিল।

জার্মান এয়ারোস্পেস সেন্টারের পদার্থবিদ ড. ক্লাউস গিরেন্স বলেন, আমাদের গবেষণায় আমরা দেখাতে পেরেছি, বিমানগুলি যেদিন ভিন্ন পথে উড়েছিল, সেই দিনগুলিতে ফলাফল সত্যিই ভিন্ন ছিল। আমরা ৯৭.৫ ভাগ নিশ্চিত যে, কনট্রেইল এড়ানোর বিষয়ে আমরা একটি অর্থপূর্ণ পরিবর্তন এনেছি।

ভিয়েনার ফ্লাইটকিজ এর রাইমুন্ড সপ তা জানেন। তিনি একজন পাইলট এবং বিশ্বের বৃহত্তম ফ্লাইট পরিকল্পনাকারী কোম্পানিগুলির একটির সহ-প্রতিষ্ঠাতা। বর্তমানে ফ্লাইট পরিকল্পনা সাজানোর সময় বাতাস ব্যবহার করে দ্রুততম ও সবচেয়ে সাশ্রয়ী উপায়ে ফ্লাইট পরিচালনার বিষয় বিবেচনায় নেয়া হয়। আর এখন ফ্লাইটকিজ, কনট্রেইল কোথায় তৈরি হতে পারে, সেটি নির্ধারণ করে বিকল্প পথের পরামর্শ দিচ্ছে। ফ্লাইটকিজ সাড়ে আট হাজারেরও বেশি ফ্লাইট সিমুলেট করেছে। ফ্লাইট চলাচলের পথ পরিমাপের বিষয়টি এখনো চলমান থাকলেও এখন পর্যন্ত পাওয়া ফলাফল বেশ আশাব্যাঞ্জক। পরিবর্তন সবসময় লাভজনক।

বিজ্ঞাপন

ফ্লাইটকিজ এর প্রধান নির্বাহী রাইমুন্ড সপ বলেন, গবেষণার ফল দেখে আমরা সত্যিই অবাক হয়েছি। রুট পরিবর্তনের জন্য মাত্র ০.১১ শতাংশ বেশি জ্বালানির প্রয়োজন পড়েছে। অন্যান্য অনিশ্চয়তার বিষয়গুলো বিবেচনায় নিয়েই বলছি, অতিরিক্ত জ্বালানিতে বিনিয়োগ করে আমরা জলবায়ু পরিবর্তনের উপর কনট্রেইলের নেতিবাচক প্রভাব অনেকখানি কমাতে সক্ষম হবো। ফলে শিগগিরই আরও জলবায়ুবান্ধব বিমান রুট চালু হতে পারে। ১০০ ইউরোর একটি ফ্লাইটে কনট্রেইল এড়াতে অতিরিক্ত প্রায় আট সেন্ট খরচ হবে। অর্থাৎ প্রায় শূন্য খরচে জলবায়ুর উপর প্রভাব কমানো সম্ভব। তবে এখন প্রশ্ন হলো: কোন বিমান সংস্থা প্রথম এটি শুরু করবে।

বিজ্ঞাপন

আরটিভি/এএইচ

আরটিভি খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

বিজ্ঞাপন
Advertisement
Advertisement


© স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৬-২০২৫ | RTV Online |