শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ আশরাফ উদ্দিনের একটি আপত্তিকর ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। ওই ভিডিওতে তার সঙ্গে এক নারীকে অন্তরঙ্গ অবস্থায় দেখা যায়। এ নিয়ে দেশজুড়ে চলছে আলোচনা-সমালোচনা। মোহাম্মদ আশরাফ উদ্দিন অভিযোগ করেছেন, তার কাছ থেকে টাকা আদায়ের জন্য ভিডিও ভাইরাল করা হয়েছে।
শুক্রবার (২০ জুন) বিকেলে আশরাফ উদ্দিন ওই নারীর উদ্দেশে আবেগঘন কিছু কথা বলছেন, এমন একটি ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে।
ভিডিওতে তিনি বলেন, অনেক প্রত্যাশা ছিল আজকে তোমার সঙ্গে আমার দেখা হবে। অনেক স্বপ্ন ছিল। আমি কথা কখনোই গুছিয়ে বলতে পারি না।
কিন্তু একথা নিশ্চিত করে বলতে পারি—তোমাকে ভালোবেসেছি। অন্তর থেকে, নিঃস্বার্থভাবে। সেটা ছিল কি ভণ্ডামি? ছলনা? শরীরের লোভে? টাকার লোভে? কে জানে! শুধু আল্লাহ জানেন।
যাই হোক কারও জানা না জানা আমার কাছে মুখ্য ছিল না, কিন্তু তোমার মতে আমি স্বার্থবাজ, লোভী, চরম অসৎ, ভণ্ড, প্রতারক একজন। তুমি সেরকম সার্টিফিকেট আমাকে দিয়েছো।
প্রতিবাদ কি করব? এগুলো প্রতিবাদ কি করা যায়? যেখানে বিশ্বাস নেই যেখানে তার প্রেমিক সম্পর্কে প্রেমিকার এই ধরনের ধারণা এই ধরনের মানসিকতা সেখানে প্রতিবাদ করতে গেলে আরও বেশি হেনস্তা শিকার হব আমি, আরও বেশি অপমানিত হবো। আমি নিশ্চিত আমার তো আসলে কিছুই নেই, না আছে টাকা, না আছে ক্ষমতা, না আছে তারুণ্য, কিছুই নেই আমার।
তোমার অফুরন্ত যৌব্ তোমার অনেক রূপ, অনেক টাকা-পয়সা। তোমার যেমন আছে, তোমার বাবা-মারও আছে, তোমার স্বামীর আছে, তোমার আত্মীয়-স্বজনেরও আছে, তোমার অনেক শুভাকাঙ্ক্ষী অনেক বন্ধু যারা তোমার সকল সমস্যা দূর করতে চায়। যারা তোমার শারীরিক চাহিদাসহ সকল চাহিদা মেটানোর জন্য প্রস্তুত। তুমি চাইলে যেদিকে হাত বাড়াও তুমি অগণিত পুরুষ পাবে।
তুমি চাইলে নেশা করতে পারো, চাইলে সিগারেট খেতে পারো, চাইলে ড্রাগস নিতে পারো। যেগুলো আমার খুবই অপছন্দের ছিল। আমার বারংবার নিষেধ সত্ত্বেও তুমি সেগুলো করেছো। সেখান থেকে বোঝা যায় আমার ব্যাপারে তুমি কতটা কেয়ারিং। যায় হোক, এসব কথা আর বলবো না। তুমি যেহেতু আমাকে ছেড়েই দিয়েছো, নতুন পুরুষ পেয়েছো। আমি জানি না সে কতটা কোয়ালিফাইড। হ্যাঁ, পৃথিবীর অধিকাংশ পুরুষ আমার চেয়ে বেশি কোয়ালিফাইড, এটা আমি মানি। তুমি কিসের টানে আমার কাছে থাকবে। ঠিকই আছে, তুমি আমাকে ছেড়ে দিয়েছো। একটা ভুলও তুমি করোনি।
তবে একটা কথা মনে রেখো উপরওয়ালা সাক্ষী আমি তোমার সঙ্গে কখনোই প্রতারণা করিনি, কখনোই না। সময় চাওয়াটা যদি প্রতারণা হয় তাহলে এর চাইতে বেশি দুঃখের আর কিছুই থাকবে না আমার কাছে। আমি তোমার কখনোই কোন ক্ষতি করবো না, কখনোই না। আমি বরং আমার নিজেকে তিলে তিলে শেষ করবো। এখন থেকে সেটা শুরু হবে। আমিও দেখবো কতটা অধঃপতন আমার হতে পারে। পৃথিবীর আর কেউ না জানলেও তুমি জেনে রেখো আমি যা কিছু করছি সব তোমার জন্য করছি। সবকিছু তোমার জন্য করছি। এই মুহূর্তে আমার কাছে হাতের কাছে খুব বেশি কিছু নেই।
আমার প্রাথমিক সম্বল হচ্ছে আমার ঘুমের ওষুধ। বাংলাদেশের সবচেয়ে পাওয়ারফুল ঘুমের ওষুধ। এই মুহূর্তে আমার কাছে যে কয়টা আছে? ছয়টা আছে এই মুহূর্তে। ছয়টা দিয়ে শুরু হবে। আমি আরও অর্ডার করছি চলে আসবে যে দুর্বিষহ যন্ত্রণা তুমি আমাকে দিচ্ছ তোমার কথা এবং কাজ দ্বারা সেটা আমি বুঝি এবং আল্লাহ জানেন আমি তোমাকে কোনো ধরনের দোষ দিচ্ছি না। আমি মেনে নিয়েছি আমার মতো অযোগ্য ভণ্ড, প্রতারক যোগ্যতাহীন একজন মানুষ কোনো যোগ্যতায় তোমার কাছে থাকবে? তুমি যে তাকে লাথি মেরে বের করে দাওনি সেটাই তো অনেক কিছু।
তুমি জেনে রেখো আমি তোমাকে যতটা ভালোবেসেছি আমি জানি না আর কোনো মানুষের পক্ষে আর কোনো পুরুষের পক্ষে এতটা গভীরে গিয়ে ভালোবাসা সম্ভব কি না। আমার বহিঃপ্রকাশ আমি ঘটাতে পারিনি সেটা বিভিন্ন বাস্তবতার কারণে, কিন্তু তোমার কাছে তার কোনো মূল্য নেই, তোমার কাছে সেটা নিছক ভণ্ডামি, নিছক প্রতারণা নিছক ছলনা। আমার আজকে তোমার সঙ্গে সময় দেওয়ার কথা ছিল, আমি সেরকম প্রস্তুতি নিয়ে আমি বের হয়েছিলাম। যাই হোক আমি বাসায় চলে এসেছি, বাসা এখন খালি বাসা। আমাকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল কখন ফিরবো আমি। আমি বলেছি দেরি হবে। বাসায় এখন কেউ নেই। অনেকটা সময় আমি পাচ্ছি এ সময়ের মধ্যে।
এদিকে জানা গেছে, ওই নারী (৩৬) টাঙ্গাইল সদরের বাসিন্দা এবং ডিসি আশরাফ উদ্দিনের শ্যালক মাজহারুল ইসলাম সংগ্রামের সাবেক স্ত্রী।
অভিযোগে তিনি বলেন, পারিবারিক সম্পর্কের সুযোগ নিয়ে ডিসি আশরাফ আমার সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলেন। বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে তিনি আমাকে স্বামীর সঙ্গে ডিভোর্স করান। এখন বিয়ের কথা বললে গালাগাল করছেন এবং প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছেন। তিনি আমাকে মানসিক ও শারীরিকভাবে নির্যাতনও করেছেন।
অন্যদিকে, শনিবার রাতে এক গণমাধ্যমে দেওয়া বক্তব্যে জেলা প্রশাসক আশরাফ উদ্দিন জানান, সম্পর্কটি পারিবারিক ঘনিষ্ঠতার সূত্রে গড়ে উঠেছিল। কিন্তু পরে ওই নারী আমাকে ফাঁদে ফেলে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে ছবি ও ভিডিও ধারণ করেন। এরপর ব্ল্যাকমেল করে অর্থ দাবি করতে থাকেন। প্রতি মাসে তাকে টাকা দিতে হয়েছে, যার ব্যাংক লেনদেনের প্রমাণ আমার কাছে রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ওই নারী তার স্বামীকে তালাক দিয়ে তাকে বিয়ে করতে চাপ দেন।
মোহাম্মদ আশরাফ উদ্দিন ২৭তম বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তা। তিনি ২০২৪ সালের ৩ নভেম্বর শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এর আগে নিউরো-ডেভেলপমেন্ট ট্রাস্টের পরিচালক ছিলেন।
এদিকে বিতর্কের প্রেক্ষিতে শনিবার (২১ জুন) জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়, জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আশরাফ উদ্দিনকে ওএসডি (বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা) করে মন্ত্রণালয়ে উপসচিব হিসেবে বদলি করা হয়েছে।
আরটিভি/এএএ/এস