ঢাকাThursday, 24 April 2025, 11 Boishakh 1432

সকাল থেকে ওই ফুটপাতে ৪৭ জন পুলিশ ছাড়া কাউকে দেখা যায়নি

ফারুক আলম

সোমবার, ০৭ ডিসেম্বর ২০২০ , ১০:৩৩ পিএম


loading/img
জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনের ফুটপাতে পুলিশ

জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনের ফুটপাতের চিত্র একেবারেই পাল্টে গেছে। রোববার (৬ ডিসেম্বর) পর্যন্ত যে ফুটপাত দখলে ছিল বিভিন্ন সংগঠনের কর্মীদের মানববন্ধন ও অনশনে, সোমবার (৭ ডিসেম্বর) সকাল থেকে সে ফুটপাতে ৪৭ জন পুলিশ ছাড়া আর কাউকে দেখা যাচ্ছে না। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) অনুমতি ছাড়া প্রেসক্লাবের সামনে যেন আর কোনও সংগঠন ধর্মঘট ও অনশন করতে না পারে সেজন্য কড়া নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছে পুলিশ।  

বিজ্ঞাপন

গত রোববার প্রেসক্লাবের সামনে থাকা বিভিন্ন সংগঠনের কর্মীদের ভোররাতে পিটিয়ে তুলে দেওয়া হয়েছে এমন অভিযোগ করেছেন অনশন মানববন্ধনে অংশ নেয়া কর্মীরা। এ বিষয়ে পুলিশ বলছে, অনশনকারীদের পেটানো হয়নি, তাদেরকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। অনুমতি ছাড়া রাজধানীতে অনশন ও ধর্মঘট করার কোনও সুযোগ নেই। তাই এসব সংগঠনকে সরিয়ে দেয় পুলিশ।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, প্রেসক্লাবের সামনের ফুটপাতে আগের মতো সংগঠনগুলোর সমাবেশ, প্রতিবাদ কিংবা অনশন চোখে পরেনি। নীরব পরিবেশ বিরাজ করছে। কারো অবস্থান ধর্মঘট না থাকলেও পুলিশের কাড়াকড়ি নিরাপত্তা ছিল চোখে পড়ার মতো। ফুটপাতে চেয়ার ও টেবিল বসিয়ে দায়িত্ব পালন করছেন পুলিশ। আর মানববন্ধন, অনশন ও ধর্মঘটের ব্যানার, ফেস্টুন ও প্লেকার্ড ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পরে থাকতে দেখা যায়। 

বিজ্ঞাপন

ঢাকা ইপিজেডের এ ওয়ান বিডি লিমিটেডের শ্রমিক লিয়াকত আলী আরটিভি নিউজকে বলেন, ভোর রাতে বাতি নিভিয়ে দিয়ে আমাদের পেটানো হয়। শীতের রাত হওয়ায় অনেক শ্রমিক ফুটপাতে ঘুমিয়ে ছিলেন। ফুটপাতে তাজরীন ফ্যাশনের শ্রমিক, প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক নিয়োগ-২০১৮ এর প্যানেলে নিয়োগ পাওয়ার জন্য চাকরিপ্রত্যাশী এবং স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসার শিক্ষকরা ছিলেন। পুলিশ পেটানো শুরু করলে সবাই যে যেদিকে পারে পালিয়ে যায়।   

এ বিষয়ে শাহবাগ থানার ওসি মামুনুর রশিদ আরটিভি নিউজকে বলেন, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) অনুমতি ছাড়া রাজধানীতে কোনও সভা-সমাবেশ, অনশন-ধর্মঘট করা যাবে না। জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন সংগঠন অনুমতি না নিয়ে অনশন করে আসছিল। তাই ওপরের নির্দেশে এসব সংগঠনকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।

জানা গেছে, জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বিভিন্ন দাবি নিয়ে তাজরীন ফ্যাশনের শ্রমিক ৮১ দিন, ঢাকা ইপিজেডের এ ওয়ান বিডি লিমিটেডের শ্রমিক ৩৮ দিন, বাংলাদেশ স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসা শিক্ষক সমিতি ২২ দিন এবং ‘প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক নিয়োগ-২০১৮’ এর মৌখিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারীরা ৫৬ দিন ধরে ধর্মঘট ও অনশন করে আসছিল। এসব সংগঠন ডিএমপির অনুমতি ছাড়া রাজধানীতে অনশন করায় তাদের উঠিয়ে দেয় পুলিশ।

বিজ্ঞাপন

বাংলাদেশ স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসা শিক্ষক কাজী মোখলেছুর রহমান বলেন, ভোর রাতে হঠাৎ পুলিশ এসে ঘুমিয়ে থাকা শিক্ষকদের গাঁয়ে পানি ছিটিয়ে দেয়। এরপর লাঠিপেটা করতে থাকে। কেন তাদের সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে, সে সম্পর্কে কোনও প্রশ্নের জবাব দেয়নি পুলিশ।

প্রেসক্লাবের সামনে বিভিন্ন সংগঠনের দাবি আদায়ে অনশন করা মানুষের ভিড়ে এলাকার দোকানপাটে কেনাবেচা থাকে জমজমাট। সভা-সমাবেশ, অনশন-ধর্মঘটে দোকানে পণ্য বিক্রি থেকে শুরু করে মাইক ভাড়া ছিল চাঙ্গা। আজ এসব দোকানেও বিক্রি কম হয়েছে জানান দোকানিরা।

প্রেসক্লাবের সামনে ফুটপাতে চায়ের দোকানদার ফিরোজ রহমান। তিনি স্বাভাবিক দিনগুলোতে দৈনিক ২ হাজার টাকার পণ্য বিক্রি করেন। প্রেসক্লাব কেন্দ্রিক সভা, অনশন ও ধর্মঘট হলে পণ্য বিক্রি বেড়ে দৈনিক কমবেশি সাড়ে ৩ হাজার টাকা হয়। গতকাল রোববারেও প্রেসক্লাবের সামনের ফুটপাতে বিভিন্ন সংগঠনের ধর্মঘট ও অনশন থাকায় সাড়ে ৩ হাজার টাকার পণ্য বিক্রি করেন। আজ সোমবার ফিরোজের দোকানে পণ্য বিক্রি হয়েছে দেড় হাজার টাকা।

বাংলাদেশ সচিবালয় ও প্রেসক্লাবের মাঝ পথের রাস্তায় ভ্রাম্যমাণ ভাতের দোকানদার মো. শহীদ উদ্দিন। এই দোকানে ডিম-ভাত ৫০ টাকা, মাছ-ভাত ৮০ টাকা এবং মাংস দিয়ে ভাত ১২০ টাকায় পাওয়া যায়। প্রতিদিন দুপুরে ভ্রাম্যমাণ ভাতের দোকানে গ্রাহকের ভিড় থাকে চোখে পরার মতো। প্রেসক্লাব কেন্দ্রিক অনশন ও ধর্মঘট থাকলে ভাতের দোকানটিতে বিক্রি থাকে তুঙ্গে। লাইনে দাঁড়িয়ে ভাত খেতে হয়। কিন্তু আজ সোমবার প্রেসক্লাবের ফুটপাতে কোনও সংগঠনের অনশন ও ধর্মঘট না থাকায় দোকানে বিক্রিও তেমন নেই।

ভ্রম্যমাণ ভাতের দোকানদার মো. শহীদ উদ্দিন বলেন, দীর্ঘদিন ধরে প্রেসক্লাবের ফুটপাতে শ্রমিক, মাদরাসার শিক্ষক ধর্মঘট ও অনশন করে আসছিল। এতে দোকানে বিক্রি বেড়ে যায়। কিন্তু আজ সকালে এসে দেখি ফুটপাতে কোনও লোক নেই। কিছু পুলিশ ফুটপাতে বসে আছেন।

প্রেসক্লাবের সামনে দায়িত্বরত এস.আই মো. আবদুল্লাহ আরটিভি নিউজকে বলেন, আমরা সকাল ৮টা থেকে এখানে দায়িত্ব পালন করছি। সকালে এসে কোনও শ্রমিক সংগঠনের ধর্মঘট কিংবা অনশন দেখতে পাইনি। আমরা ৪৭ জন পুলিশ এখানে দায়িত্বে রয়েছি।

এফএ/এমকে

আরটিভি খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

বিজ্ঞাপন

Loading...


© স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৬-২০২৫ | RTV Online |