ঢাকাশনিবার, ১০ মে ২০২৫, ২৭ বৈশাখ ১৪৩২

ফেরত দেওয়া হচ্ছে না পোস্টপেইড মিটারের জামানতের অর্থ (ভিডিও)

শরিয়ত খান

সোমবার, ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২২ , ০২:৩৫ পিএম


বিদ্যুৎ ব্যবস্থা আধুনিক করতে গিয়ে গ্রাহকদের হাজার কোটি টাকা আটকে রেখেছে বিতরণ সংস্থাগুলো। সংযোগ পোস্টপেইড থেকে প্রিপেইডে রূপান্তর হলেও ফেরত দেওয়া হচ্ছে না জামানত। সংস্থাগুলোর দাবি, আবেদন করলে জামানতের টাকা ফেরত দেওয়া হবে। অথচ, নিয়ম অনুযায়ী প্রিপেইডে রূপান্তর করার সময়ই গ্রাহকের টাকা ফেরত দেওয়ার কথা। বিষয়টি খতিয়ে দেখার কথা জানান পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক। আর জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের। 

বিজ্ঞাপন

কেরানীগঞ্জের মোয়াজ্জেম হোসেন। এক যুগ আগে বিদ্যুৎ সংযোগ নিতে পোস্টপেইড মিটারের জন্য জামানতের টাকা জমা দিয়েছিলেন। দেড় বছর আগে তার মিটার পরিবর্তন করে প্রিপেইড মিটার বসায় পল্লী বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ। নিয়ম অনুযায়ী প্রি-পেইড মিটারে জামানত দিতে হয় না। তাই পোস্টপেইড মিটারের জন্য জমা দেওয়া টাকা তার ফেরত পাওয়ার কথা। কিন্তু সে টাকা আজও দেয়নি কর্তৃপক্ষ। অথচ, বিইআরসির আদেশের ৪-এর(গ) ধারায় বলা হয়েছে, প্রিপেইড মিটার প্রতিস্থাপন করলে আগে নেওয়া জামানতের টাকা ফেরত দেবে বিতরণ সংস্থা।

তিনি বলেন, পুরনো মিটার নিয়ে গেছে। আমাকে নতুন প্রিপেইড মিটার দিয়ে গেছে। আমি জামানতের কোনও রিসিট পাইনি। 

বিজ্ঞাপন

বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের চেয়ারম্যান (বিইআরসি) আবদুল জলিল বলেন, রিসিট না দিলে আপনি আমাদের অভিযোগ দেবেন এখানে ৫৪ ধারায়। প্রথমে তাকে তার সংস্থায় অভিযোগ দিতে হবে। সেখানে যদি প্রতিকার না হয়, তাহলে আমাদের এখানে অভিযোগ দিতে হবে।  

কেবল মোয়াজ্জেম হোসেন না, এ পর্যন্ত কোনো গ্রাহকই জামানতের টাকা ফেরত পাননি। পাওয়ার সেলের তথ্যমতে, ৪৫ লাখ গ্রাহক প্রিপেইড মিটার পেয়েছেন। যাদের বেশির ভাগই পোস্টপেইড থেকে রূপান্তরিত হন।

দেশে বিদ্যুতের গ্রাহক সংখ্যা চার কোটি ১৮ লাখ। নিম্ন আয়ের এক কোটি গ্রাহক বাদে বাকি সবাই প্রিপেইডে রূপান্তরিত হবেন। বিইআরসির তথ্যমতে, গ্রাহকদের শ্রেণিভেদে ৪০০ থেকে ১০০০ টাকা পর্যন্ত জামানত নেওয়া হয়। সে হিসাবে জামানতের টাকার পরিমাণ দাঁড়ায় ১২শ’ থেকে ১৫শ’ কোটি টাকা।

বিজ্ঞাপন

ঢাকা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-৪ জেনারেল ম্যানেজার আবুল বাশার আজাদ বলেন, জামানত গ্রাহকের ব্যক্তির টাকা, এটা অফিসের টাকা না। ইচ্ছা করলে সে তার রানিং বিলের সঙ্গে সমন্বয় করতে পারে, অথবা সে টাকাটা ফেরত নিতে পারে। গ্রাহকেরই আবেদন করতে হবে, টাকাটা তো তার।

ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি-ডিপিডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী বিকাশ দেওয়ান বলেন, যেখানে পোস্টপেইড থেকে প্রিপেইড হবে, সেখানে একটা দরখস্ত করলে আমরা টাকাটা ফেরত দিয়ে দেব। 

জামানতের টাকা ফেরত পাওয়ার বিষয়টি অনেকেরই জানা নেই। ফলে টাকার জন্য কেউ আবেদনও করেন না। আর এর সুযোগই নিচ্ছে বিতরণী সংস্থাগুলো।

এক গ্রাহক বলেন, একটা বিল হয়েছে। সেটা জমা দিতে বলেছে। টাকা ফেরতের ব্যাপারে কিছু বলে নাই।

জামানতের অর্থ যখন গ্রাহকরা ফেরত পাচ্ছেন না, তখন এই বিপুল পরিমাণ অর্থ যাচ্ছে কোথায়?

জামানতের অর্থ ফেরত না দেওয়াকে প্রতারণা বলছেন এই বিশেষজ্ঞ।

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ-টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, কী প্রক্রিয়ায় এই অর্থ ফেরত দেওয়া হবে বা এডজাস্ট করা হবে এ বিষয়গুলো জনগণকে জানাতে হবে। তা না হলে প্রতারণার প্রশ্ন উঠবে।   

এ ব্যাপারে দ্রুত আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা জানান বিদ্যুৎ সংশ্লিষ্টরা।

পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক প্রকৌশলী মোহাম্মদ হোসাইন বলেন, এটা তাহলে খোঁজ নেব। গ্রাহকদের স্বার্থ দেখা তো আমাদের দায়িত্ব। গ্রাহকদের কাছ থেকে এভাবে নিয়ে বিদ্যুৎ বিতরণ সংস্থা লাভ করাতে আমরা চাই না।

গ্রাহকদের জামানতের অর্থ কেউ আত্মসাৎ করতে পারবে না বলেও জানান পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক।

আরটিভি খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

বিজ্ঞাপন


© স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৬-২০২৫ | RTV Online |