ঢাকাশনিবার, ১০ মে ২০২৫, ২৭ বৈশাখ ১৪৩২

ফুটপাতের দোকানের জন্য মিটার দিয়ে কয়েক গুণ বিল আদায় (ভিডিও)

শরিয়ত খান

বুধবার, ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২২ , ০৮:০৩ এএম


ফুটপাতের অবৈধ দোকানের জন্য মিটার বরাদ্দ করে বিদ্যুৎ সংযোগ দিচ্ছে বিতরণ সংস্থাগুলো। রাজধানীতে এমন প্রায় শতাধিক মিটার রয়েছে। যেখান থেকে লাইন দিয়ে দোকানিদের কাছ থেকে কয়েক গুণ বিল আদায় করে প্রভাবশালী চক্র। অবৈধ দোকানে সংযোগ বন্ধে সিটি করপোরেশনের আহ্বান অজানা কারণে কানে তোলেনি বিতরণ সংস্থাগুলো।

বিজ্ঞাপন

গুলিস্তান মোড়ে খোলা রাস্তায় এই বিদ্যুতের খাম্বায় ঝুলছে ডিপিডিসির বিদ্যুতিক মিটার। কোনো বাসাবাড়ি বা বাণিজ্যিক ভবনের জন্য নয়, এখান থেকে বিদ্যুতের লাইন গেছে ফুটপাতের অবৈধ দোকানে।

খাজা গরীবে নেওয়াজ জেনারেটর অ্যান্ড পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন সেন্টারের নামে মিটারটি বরাদ্দ নেন হানিফ চিশতী খাজা। শুরুতে কার্যালয় থাকলেও এখন ফুটপাতে বসেই সব পরিচালনা করেন।

বিজ্ঞাপন

এক ব্যক্তি বলেন, মিটার আছে প্রায় ৬০-৬৫টা হবে।

আরেক ব্যক্তি বলেন, যেখানে বিদ্যুৎ চুরি হয়, সেসব জায়গায় আমরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এটাকে বন্ধ করার চেষ্টা করি। কিন্তু বিদ্যুতের অনেক লোক এটার সঙ্গে জড়িত থাকে। ফুটপাতের দোকানে বা অবৈধ স্থাপনা যেমন সিটি করপোরেশন একটা দোকান দিয়েছে যেখানে কারেন্ট নাই, সেখানে; অনেক ক্ষেত্রে দেখা গেছে জায়গা আছে কিন্তু বড় কোনো স্থাপনা নেই। হয়তো করবে, এই সময় বা অন্যান্য যে যেখান থেকে নেয়। 

ফুটপাতের দোকানের জন্য রাজধানীতে তার নামেই আছে ৬৫টি মিটার। এ ছাড়া বিভিন্ন ব্যক্তির নামে ফুটপাতে মিটার বরাদ্দ করে দিয়েছে ডিপিডিসি।

বিজ্ঞাপন

এক হকার বলেন, ওরা এসে লাইন দেয়। আবার নিয়ে যায়। পরে লাইন দিয়ে আবার রাতে লাইন খুলে নিয়ে যায়। 

আরেকজন বলেন, মাঝখানে ছয় মাস লাইন কেটে দেওয়া ছিল। এখন আবার মাস দুয়েক হয়েছে আনছে। এটা বৈধভাবে নাকি অবৈধভাবে আনছে, এটা বলতে পারি না। 

ফুটপাতে মিটার বরাদ্দের জন্য অভিযোগের তীর ওঠে ডিপিডিসির কয়েকজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। বিষয়টি স্বীকারও করে নেন ডিপিডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক। তার মতে, অবৈধ সংযোগ বন্ধ করতেই নাকি এই ব্যবস্থা।

ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির (ডিপিডিসি) ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী বিকাশ দেওয়ান বলেন, বঙ্গভবনের চারপাশে আমরা ম্যাজিস্ট্রেট নিয়ে গিয়ে অভিযান চালিয়েছি। যেগুলো আমরা পাচ্ছি, সেগুলো আমরা আইনের আওতায় নিয়ে আসছি। যাদের এ রকম আছে তাদেরকে আমরা মিটার দিচ্ছি।

এ নিয়ে ঘোর আপত্তি নগর কর্তৃপক্ষের। অবৈধ দোকানে বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধে একাধিকবার অনুরোধও করেন তারা। এক কর্মকর্তা বলেন, এটা নিয়ে আমরা ডিপিডিসি বা আমাদের বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের সঙ্গে সভাও করেছি ইতোপূর্বে, সেখানে আমরা তথ্যগুলো তুলে ধরেছি এবং অনুরোধ করেছি, অবৈধভাবে যে দোকানদার থাকে তাদেরকে যেন কোনোভাবেই সংযোগ দেওয়া না হয়।

এই বিশেষজ্ঞ বলেন, চুরি বন্ধে অবৈধ দোকানে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়ার এখতিয়ার কারও নেই। জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ড. শামসুল আলম বলেন, তারা যে নিজেরা মিটার কিনে বিদ্যুৎ সুবিধা দেয় তা না, যিনি কেনেন তারা আবার বিদ্যুৎ বিক্রি করেন। এই বিক্রি করাটা অবৈধ। সুতরাং তাদেরকে ইনডিভিজুয়ালি মিটা দিয়ে নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে বৈধভাবে ব্যবসা করা এবং এ ধরনের চাঁদাবাজ বা অসাধু ব্যবসায়ীদের হাত থেকে তাদেরকে সুরক্ষা দেওয়া। এটা মূল কাজ সিটি করপোরেশনের। 

বছরের পর বছর ধরে রাজধানীর ফুটপাতে ব্যবসা করছেন এসব মানুষ। তবে বরাবরের মতোই বেশি মূল্যে বিদ্যুৎ ব্যবহার করতে হচ্ছে তাদের। তাই কোনো ব্যক্তি মালিকানায় নয়, সরকারিভাবে ন্যায্য মূল্যে বিদ্যুৎ চান এখানকার ব্যবসায়ীরা।

আরটিভি খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

বিজ্ঞাপন


© স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৬-২০২৫ | RTV Online |