লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার দালাল বাজার এলাকার রায়পুর সড়ক-সংলগ্ন পূর্বপাশে বিশাল আয়তনের দিঘি, নাম খোয়া সাগর।
কুয়াশাকে লক্ষ্মীপুরের স্থানীয় ভাষায় খোয়া বলা হয়। দিঘির বিরাট দৈর্ঘ্য-প্রস্থের ফলে এক প্রান্তে দাঁড়ালে অন্য প্রান্তে কুয়াশার মতো মনে হতো বলে এ দিঘির নামকরণ করা হয় খোয়া সাগরদিঘি। এ দিঘিকে ঘিরে অনেক অলৌকিক লোককথা প্রচলিত আছে।
কথিত আছে অনেক আগে একদল বরযাত্রী নববধূসহ এই দিঘির পাড় দিয়ে যাচ্ছিলেন। ওই সময় পিপাসা পেলে বরযাত্রী ও নববধূ জল খেতে দিঘির পাড়ে থামেন। নববধূ যখন দিঘিতে নেমে জল খাচ্ছিল তখনই দিঘি থেকে কিছু একটা নববধূকে গভীর জলে টেনে নিয়ে যায়। সেই থেকে নববধূকে আর খুঁজে পাওয়া যায়নি। যেখানে নববধূকে টেনে নেওয়া হয়েছিল, দিঘির সে জায়গা কখনও শুকায় না বলে জনশ্রুতি রয়েছে।
জানা যায়, আনুমানিক ১৭৫৫ সালে দালাল বাজারের জমিদার ব্রজবল্লভ রায় মানুষের জল সংরক্ষণে এ দিঘিটি খনন করেন। ২২ একর জমিজুড়ে দিঘিটির সৌন্দর্য মনোমুগ্ধকর। চারপাশে হাঁটার পথ। শীতকালে দিঘির এক পাড় থেকে অন্য পাড়ে কুয়াশার জন্য কিছুই দেখা যায় না। প্রতিদিন বিকেলে ভ্রমণপ্রেমীদের ভিড়ে মুখর থাকে খোয়া সাগরদিঘির পাড়। বিশেষ করে ছুটির দিনে দর্শনার্থীদের ভিড় বেশি থাকে খোয়া সাগরদিঘির পাড়ে।
দিঘির জল ছুঁয়ে আসা কোমল হাওয়া তাদের মন ছুঁয়ে যায়। ভ্রমণপিপাসুদের ছায়া হিসেবে কাজ করে বেশ কিছু কড়ই গাছ। এখানে গল্পে গল্পে দারুণ সময় কাটান তরুণ-তরুণীরা। অনেকে মোবাইল ফোনে সেলফি তুলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শেয়ার করেন।
জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে ইতোমধ্যে দিঘিটিকে সংস্কার করা হয়েছে। দিঘির চারপাশ সুন্দরভাবে বাঁধানো হয়েছে। দর্শনার্থীদের সুবিধার জন্য স্টিলের রেলিং দেওয়া হয়েছে, বসার জন্য বেঞ্চের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এই দিঘিকে ঘিরে ইতোমধ্যে অনেক রেস্টুরেন্ট ও একটি শিশুপার্ক গড়ে উঠেছে।
লক্ষ্মীপুর জেলা প্রশাসক আনোয়ার হোসাইন আকন্দ জানান, খোয়া সাগরদিঘি ইতোমধ্যে সংস্কার কাজ করা হয়েছে। দর্শনার্থীর কথা মাথায় রেখে স্টিলের রেলিং, ল্যাম্পপোস্ট ও দিঘিতে নৌ-ভ্রমণেরও ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।