১০ হাজার ফুট ওপর থেকেও যেভাবে শিকার দেখতে পায় ঈগল

অর্পিতা জাহান

বৃহস্পতিবার, ১৪ নভেম্বর ২০২৪ , ১২:৫৮ পিএম


আকাশের রাজা ও শিকারের শক্তিমান যোদ্ধা ঈগল। এই পাখির উড়ার গতি, শক্তিশালী নখ আর শিকারের অসাধারণ কৌশল যে কোনো প্রকৃতিপ্রেমীকে মুগ্ধ করে। কিংবদন্তি গল্প আর বৈজ্ঞানিক গবেষণায় ভরপুর ঈগল। বলা হয় এটি  শুধু একটি শিকারি পাখিই নয়, বরং এটি শক্তি ও সাহসের প্রতীক। তাইতো এই পাখিকে যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, রাশিয়া ও আলবেনিয়া শক্তি ও স্বাধীনতার প্রতীক হিসেবে গ্রহণ করেছে। এছাড়া মেক্সিকো, পোল্যান্ড ও অস্ট্রিয়ায়ও ঈগল জাতীয় ঐতিহ্য ও গৌরবের প্রতীক। আজ জানাবো সেই ঈগলের রহস্যময় জীবন ও তার শিকারের অসাধারণ গল্প।

বিজ্ঞাপন

অবিশ্বাস্য দৃষ্টিশক্তি: প্রথমেই বলি ঈগলের দৃষ্টিশক্তি। যা আল্লাহর সৃষ্টির এক বিস্ময়কর ক্ষমতা। গবেষণা বলছে মানুষের তুলনায় ঈগলের চোখ ৪ থেকে ৫ গুণ বেশি শক্তিশালী, যার ফলে তারা অনেক দূর থেকে শিকারকে দেখতে সক্ষম। গবেষণায় বলা হয়, কিছু প্রজাতির ঈগল প্রায় ২ মাইল তথা ১০ হাজার ৫০০ ফুট উপরে থেকেও ছোট শিকারকে দেখতে পারে। তাদের চোখের বিশেষ কোষ আলোর প্রতি সংবেদনশীল এবং রঙের প্রতি অত্যন্ত সতর্ক। এই দৃষ্টিশক্তি ঈগলকে শিকারের জন্য আরো দক্ষ করে তোলে, যেকোনো পরিস্থিতিতে তারা শিকার ধরতে পারে।

দেহের গঠন এবং ওজন: পূর্ণবয়স্ক ঈগলের দৈর্ঘ্য সাধারণত ৩০ থেকে ৩৫ ইঞ্চি হয়, এবং এর ওজন ৩ থেকে ৭ কেজির মধ্যে থাকে। হার্পি ঈগলের মতো কিছু প্রজাতি প্রায় ৯ কেজি পর্যন্ত ওজন ধারণ করতে পারে। তবে তাদের হালকা পালক এবং শক্তিশালী ডানা ঈগলকে সহজেই আকাশে উড়তে এবং দ্রুতগতিতে শিকার ধরতে সাহায্য করে। তাদের শারীরিক গঠন শিকার ধরার ক্ষেত্রে অদ্বিতীয় করে তুলেছে। 

বিজ্ঞাপন

শক্তিশালী নখ এবং গতি: ঈগল আকাশ থেকে প্রায় ১২০-১৫০ মাইল প্রতি ঘণ্টা গতিতে শিকার ধরতে ডাইভ দেয়। তাদের পায়ের নখর এতটাই শক্তিশালী যে এর সাহায্যে শিকারকে মুহূর্তেই ছিন্নভিন্ন করা যায়। একটি প্রাপ্তবয়স্ক ঈগলের নখ প্রায় ৪০০ পাউন্ড চাপ প্রয়োগ করতে পারে, যা শিকারের মাংস ছিঁড়ে ফেলতে যথেষ্ট।

শিকার ধরার কৌশল: ঈগল প্রধানত জীবন্ত শিকার ধরতে পছন্দ করে। খরগোশ, মাছ, শেয়াল থেকে শুরু করে ছোট হরিণ পর্যন্ত তাদের শিকারের তালিকায় রয়েছে। মৎস্য ঈগল পানির ওপরে উড়ে গিয়ে পানির নিচে থাকা মাছ শিকার করার ক্ষেত্রে অসাধারণ দক্ষতা দেখায়। তারা পানির ওপরে উড়তে উড়তে মাটির কাছাকাছি থাকা শিকারকে মুহূর্তের মধ্যে ধরে নেয়।

বিজ্ঞাপন

বিশ্বজুড়ে প্রজাতি: বিশ্বজুড়ে ঈগলের প্রায় ৬০টি প্রজাতি রয়েছে। তবে সবচেয়ে বেশি প্রজাতি দেখা যায় ইউরেশিয়া এবং আফ্রিকায়। উত্তর আমেরিকায় মাত্র দুটি প্রজাতি আছে—বেল্ড ঈগল এবং গোল্ডেন ঈগল। প্রতিটি প্রজাতি আলাদা আচার-আচরণ এবং শিকার ধরার কৌশলে বিশেষ পারদর্শী।

বিজ্ঞাপন

ঈগলের বাসা: ঈগলের বাসা পৃথিবীর অন্যতম বড় পাখির বাসাগুলোর মধ্যে একটি। বেল্ড ঈগলের বাসা প্রস্থে প্রায় ৮ থেকে ১০ ফুট এবং ওজনে প্রায় এক টন হতে পারে। তারা বছরের পর বছর ধরে একই বাসা ব্যবহার করে এবং প্রতি বছর এটি বড় হতে থাকে।

ঈগল প্রকৃতির এক অনন্য সৃষ্টি। তার শক্তি, বুদ্ধিমত্তা, এবং শিকারের দক্ষতা তাকে প্রকৃতির শিকারি পাখিদের মধ্যে শীর্ষস্থানীয় করে তুলেছে। ঈগলের জীবনের প্রতিটি অধ্যায় আমাদের শেখায় সাহস, ধৈর্য্য, এবং শিকারের জন্য সঠিক কৌশল প্রয়োগের গুরুত্ব।

আরটিভি/এফআই

আরটিভি খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

বিজ্ঞাপন
Advertisement
Advertisement

Loading...


© All Rights Reserved 2016-2025 | RTV Online | It is illegal to use contents, pictures, and videos of this website without authority's permission