পুরোনো যন্ত্র থেকে মিলছে কেজি কেজি স্বর্ণ
ফেলে দেওয়া পুরোনো রিমোট টেলিভিশন, ল্যাপটপ কিংবা মোবাইল ফোনের ভেতর লুকিয়ে আছে স্বর্ণ। হ্যাঁ, ঠিকই শুনেছেন! পুরোনো এসব ইলেকট্রিক যন্ত্র থেকে এই শ্রমিকরা সংগ্রহ করছেন ২৪ ক্যারেটের সোনা, আর তা বিক্রি করেই চলছে তাদের সংসার। কেউ কেউ মাসে পুরোনো এসব যন্ত্র থেকেই সংগ্রহ করেন একশ থেকে দেড়শ গ্রাম স্বর্ণ। তারপর তা নিয়ে যান স্বর্ণ গলানোর কারখানায়। তারা পরীক্ষা শেষে তা দিয়ে বানান নানান ডিজাইনের গয়না।
আফগানিস্তানের সীমান্ত শহর স্পিন বলডাকের শ্রমিকরা প্রতিদিন এমনই এক স্বপ্ন নিয়ে শুরু করেন তাদের কাজ—পুরোনো ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতি ভেঙে খুঁজে বের করেন স্বর্ণের ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র কণা। এই স্বর্ণেই তাদের জীবনযাত্রার একমাত্র ভরসা। তবে এই পেশার পিছনে রয়েছে এক অবর্ণনীয় সংগ্রাম আর জীবনের ঝুঁকি। কিন্তু সমস্যা হলো, আধুনিক যন্ত্রগুলোতে এখন আর আগের মতো স্বর্ণ ব্যবহার হয় না। বরং সস্তা ধাতু দিয়ে তৈরি হয়। তবুও, এই শ্রমিকরা বিশ্বাস করেন হয়তো আজকের দিনেই তাদের ভাগ্য খুলে যাবে!
শুধু লাভের আশাই নয়, এই কাজ করতে গিয়ে শ্রমিকরা তাদের জীবনকে প্রতিনিয়ত ঝুঁকির মুখে ফেলছেন। বিষাক্ত ধাতু, ধুলোবালি আর রাসায়নিক পদার্থের ভেতরেই তারা কাজ করেন ঘণ্টার পর ঘণ্টা। স্বাস্থ্যবিধি মানার সুযোগ নেই, নিরাপত্তার কোন বালাই নেই। তবুও, তারা থেমে নেই, কারণ পেটের ক্ষুধা তাদের সামনে আরও বড় বাস্তবতা।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আধুনিক ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতি থেকে স্বর্ণ পাওয়ার সম্ভাবনা দিনে দিনে কমছে। যন্ত্র থেকে সংগৃহীত স্বর্ণ যায় বাজারে, সেখানে কারিগররা এ দিনে কেউ গলান ১ থেকে ২ কেজি স্বর্ণ। সস্তা ধাতুর ব্যবহার বেড়েছে, ফলে এই পেশার ভবিষ্যৎ ক্রমশ অনিশ্চিত হয়ে পড়ছে। কমে কারিগরদের স্বর্ণ গলানোর কাজও।
কারিগররা বলেন, জাপানি ইলেকট্রনিক বিভিন্ন পণ্যে স্বর্ণ থাকে, কিন্তু চীনা ইলেকট্রনিক পণ্যে তেমন স্বর্ণ থাকে না। তাই এই গ্রাম থেকে আসা স্বর্ণের পরিমাণও কমছে। সম্ভবত প্রতি সপ্তাহে মাত্র ৩০ থেকে ৪০ গ্রাম স্বর্ণ বাজারে আসে।
তবুও আফগান শ্রমিকরা ভেঙে পড়ছেন না। তারা জানেন, অল্প কিছুই পাওয়া গেলেও একদিন তাদের ভাগ্যের চাকা ঘুরবেই। আর এমন আশা নিয়েই প্রতিদিনই বসে যান পুরোনো যন্ত্র নিয়ে।
আরটিভি/এফআই/এসএ
মন্তব্য করুন