• ঢাকা মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১
logo

মরার আগেই আগুন-ধোঁয়ার মিশ্রণে জীবন্ত মমি! 

অর্পিতা জাহান

  ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ১৪:২৫

এক প্রাচীন গুহা, ভেতরে লুকিয়ে থাকা অতীতের ছোঁয়া, আর সেই ছোঁয়ায় জীবিত এক ইতিহাস—এমনই এক রহস্যের নাম ‘আগুন মমি।’ ফিলিপাইনের ইবালোই গোত্রের মানুষদের এক অনন্য প্রথা, যা আজকের পৃথিবীর চোখে বিস্ময়ের মতো। মিশরের মমির কথা আমরা সবাই জানি, কিন্তু ফিলিপাইনের এই মমির রহস্য অনেকেরই অজানা। জীবিত অবস্থায় শুরু করা হত এই মমি তৈরির প্রক্রিয়া, যেখানে মৃতদেহ সংরক্ষণের মূল উপাদান ছিল আগুন আর ধোঁয়া। কেমন ছিল সেই প্রক্রিয়া? কেমন ছিল সেই মানুষেরা, যারা এই প্রথার পেছনে কাজ করেছে?

উত্তর ফিলিপাইনের বেঙ্গুত প্রদেশের কাবাইয়ান অঞ্চলে বাস করে ইবালোই গোত্র। এই উপজাতির পূর্বপুরুষেরা মৃতদেহ সংরক্ষণের এক বিশেষ পদ্ধতি অবলম্বন করত, যা আজও তাদের সংস্কৃতির অংশ হয়ে আছে। তারা মৃতদের মমি করত আগুন আর ধোঁয়া ব্যবহার করে, আর এই প্রক্রিয়ায় তৈরি মমিরা পরিচিত আগুন মমি নামে।

এই প্রক্রিয়ার সূচনা নিয়ে গবেষকদের মধ্যে ভিন্নমত থাকলেও, ধারণা করা হয় এটি ১২০০ খ্রিষ্টাব্দে শুরু হয়েছিল। মৃত্যুর আগে মুমূর্ষু ব্যক্তিকে লবণাক্ত পানীয় খাওয়ানো হত, যাতে তার শরীরের পানি দ্রুত বেরিয়ে যায়। তবে আধুনিক বিজ্ঞান এই পদ্ধতির কার্যকারিতা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছে। মৃত্যুর পর শুরু হত আসল প্রক্রিয়া মৃতদেহকে ধুয়ে কোলেবাও নামে এক বিশেষ কম্বলে মুড়ে বসানো হতো চেয়ারে, আর তার চারপাশে জ্বালানো হতো ছোট ছোট আগুন।

আগুনের তাপের ধোঁয়া শরীর থেকে সমস্ত পানি বের করে দিত, যা সংরক্ষণ করা হতো বোতলে। এই প্রক্রিয়া কয়েক সপ্তাহ ধরে চলত, আর শেষে শুকিয়ে যাওয়া দেহকে কাঠের কফিনে মায়ের পেটে শিশুর মতো শায়িত করে পাহাড়ি গুহায় রেখে আসা হতো।

স্প্যানিশ ঔপনিবেশিক শাসনের ফলে ১৫০০ শতকের দিকে ফিলিপাইনে খ্রিষ্টধর্ম প্রচার শুরু হয়, আর হারিয়ে যেতে থাকে এই প্রাচীন প্রথা। তবে আগুন মমিরা তাদের আকর্ষণ হারায়নি। ১৯১৯ সালে আপো আন্নু নামে এক বিখ্যাত মমি চুরি হয়ে যায়। ইবালোইদের কাছে তিনি ছিলেন একজন নেতা এবং শিকারী। তার মমি চুরি হওয়ার পর, ইবালোইরা এটিকে অভিশাপ বলে মানতে শুরু করে, কারণ এর পরপরই এলাকায় নানা দুর্যোগ নেমে আসে।

শেষমেশ, ১৯৮৪ সালে আপো আন্নুর মমি পুনরুদ্ধার করা হয় এবং ইবালোইদের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া হয়। আজও এই গুহাগুলোতে আগুন মমি দেখতে যাওয়ার জন্য কঠিন পথ পাড়ি দিতে হয়, আর সরকার সেগুলোকে রক্ষার জন্য বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা করেছে।

ইবালোইদের জন্য আগুন মমি শুধু একটি প্রথা নয়, এটি তাদের পূর্বপুরুষদের সাথে এক গভীর সংযোগের প্রতীক। আজও তারা গুহার মমিদের জন্য খাবার ও পানীয় উৎসর্গ করে, আর মমিদের কোনো পরিবর্তন করতে হলে আগে তাদের নেতাদের অনুমতি নিতে হয়। এই গুহায় প্রবেশ করে গবেষণা করতেও লাগে তাদের অনুমতি।

আরটিভি/এফআই

মন্তব্য করুন

Bangal
rtv Drama
Radhuni
  • বিশেষ প্রতিবেদন এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
ব্যাটারিচালিত রিকশায় আসছে নতুন প্রযুক্তি
ধেয়ে আসছে সুপার ঘূর্ণিঝড়, কত কিমি বেগে হানতে পারে আঘাত
ইউরো সেরা একাদশে স্প্যানিশদের আধিপত্য
শক্তিশালী ভূমিকম্পে কাঁপল ফিলিপাইন