• ঢাকা রোববার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৭ পৌষ ১৪৩১
logo

রাজনীতিতে নতুন মেরুকরণ

শঙ্কা ও সংকটে আওয়ামী লীগ

  ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২২:০১
ছবি : সংগৃহীত

১৯৭১ সালে স্বাধীনতার পর চলতি বছর (২০২৪) ছিল দেশের রাজনীতিতে সবচেয়ে আলোচিত বছর। কারণ, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে দেশের ইতিহাসের সবচেয়ে দীর্ঘমেয়াদি স্বৈরশাসকের পতন হয়েছে এ বছরই।

সমালোচিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির ‘একতরফা’ নির্বাচন ও ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের রাতের ভোটের নির্বাচনের পর ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারির নির্বাচনটা ছিল আরও অগ্রহণযোগ্য। এই নির্বাচনে দেশের প্রধান বিরোধীদল বিএনপিসহ অধিকাংশ রাজনৈতিক দল অংশগ্রহণ করেনি। আওয়ামী লীগের অধীনে নির্বাচনে বেশিরভাগ দল অংশ না নেওয়ায় দলীয় নেতাদের সতন্ত্রপ্রার্থী বানায় দলটি। ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে ২৯৮টি আসনের মধ্যে ২২৩টিতে জয়লাভ করে আওয়ামী লীগ। স্বতন্ত্র প্রার্থীরা পায় ৬১টি আসন। মাত্র ১১টি আসন পেয়ে জাতীয় সংসদে প্রধান বিরোধী দল হয় জাতীয় পার্টি।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ‘একতরফা’ ও ‘ডামি নির্বাচন’ আখ্যায়িত করে বাতিলের দাবিতে চলমান আন্দোলন অব্যাহত রাখে বিএনপি। সরকারকে ‘অবৈধ’ দাবি করে দ্রুত পদত্যাগ ও অবিলম্বে নির্দলীয় সরকারের অধীনে অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের দাবি করে দলটি।

নির্বাচনের কয়েকদিনের মধ্যে কোনো পশ্চিমা দেশ শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানায়নি। এরপর ৯ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্ট এক বিবৃতিতে জানিয়েছিল, বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হয়নি। এতে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্র লক্ষ্য করেছে ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী-লীগ সর্বোচ্চ সংখ্যক আসন নিয়ে জয়ী হয়েছে। তবে, হাজারো বিরোধী রাজনৈতিক কর্মীর গ্রেপ্তার এবং নির্বাচনের দিনে বিভিন্ন জায়গায় নানা ধরণের অনিয়মের খবরে যুক্তরাষ্ট্র উদ্বিগ্ন।

বিএনপির হাজার হাজার নেতাকর্মী গ্রেপ্তার

সংসদ নির্বাচন নির্বাচনের পর বিভিন্ন আন্দোলন ঠেকাতে বিএনপির নেতাকর্মীদের আটক করে জেলে পাঠাতে থাকে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছায় যে দেশের কারাগারগুলোতে বিএনপি ও সমমনা দলগুলোর নেতাকর্মীদের জায়গা হচ্ছিল না। সেসময় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেছিলেন, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ ২৫ হাজারেরও বেশি নেতাকর্মীকে কারাগারে আটক রেখেছে আওয়ামী লীগ সরকার।

আওয়ামী লীগপন্থী আমলাদের দুর্নীতি ও টাকা পাচারের তথ্য প্রকাশে আসা

চলতি বছরের মার্চের দিকে দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে একের পর এক আওয়ামী লীগ পন্থী আমলাদের দুর্নীতি ও টাকা পাচারের তথ্য গণমাধ্যমে উঠে আসে। তাদের মধ্যে পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক বেনজীর আহমেদ, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সাবেক সদস্য মতিউর রহমান ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পিয়ন জাহাঙ্গীর আলম উল্লেখযোগ্য। এসব বিষয় প্রকাশ্যে আসায় জনমনে আওয়ামী লীগ বিরোধী মনোভব সৃষ্টি হয়। একই সঙ্গে দলটির সাধারণ নেতাকর্মীদের মনেও প্রশ্ন উঠতে থাকে।

কোটা সংস্কার আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের ওপর অতিরিক্ত শক্তি প্রয়োগ

২০১৮ সালের মার্চে কোটাভিত্তিক পদ কমানো, শূন্য পদে মেধাভিত্তিক নিয়োগ ও সরকারি চাকরিতে সবার জন্য অভিন্ন বয়সসীমা নির্ধারণের দাবিতে রাস্তায় নামে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীদের বিক্ষোভ উপেক্ষা করে ২১ মার্চ সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কোটাব্যবস্থা বহালই থাকবে বলে ঘোষণা দেন। প্রতিবাদের অংশ হিসেবে সারাদেশে কয়েক হাজার বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা ক্লাস বর্জন করে, মিছিল বের করে এবং মহাসড়ক অবরোধ করতে শুরু করে। এপ্রিলের দ্বিতীয় সপ্তাহে পুলিশ ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে তুমুল সংঘর্ষে অন্তত ৭৫ জন আহত হয়। পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে রণক্ষেত্রে পরিণত হয় রাজধানীর শাহবাগ মোড় ও এর আশেপাশের এলাকা। ১১ এপ্রিল শেখ হাসিনা কোটাব্যবস্থা সম্পূর্ণ বাতিলের ঘোষণা দেন। এরপর ৩ অক্টোবর সরকারের মন্ত্রিসভা সরকারি চাকরিতে নবম থেকে ১৩তম গ্রেডে (যেসব পদ আগে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির চাকরি বলে পরিচিত ছিল) নিয়োগের ক্ষেত্রে কোটাব্যবস্থা বাতিল করে প্রজ্ঞাপন জারি করে।

২০২৪ সালের ৫ জুন মুক্তিযোদ্ধার পরিবারের পক্ষ থেকে আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে, হাইকোর্ট সরকারি দপ্তর, স্বায়ত্তশাসিত ও আধা-স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান এবং বিভিন্ন করপোরেশনের চাকরিতে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে (নবম থেকে ১৩তম গ্রেড) মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের পরিপত্র অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেন। এতে ফের রাস্তায় নেমে আসেন শিক্ষার্থীরা।গত ২-৬ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’র ব্যানারে সংগঠিত হয় এবং সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি বাতিল করে ২০১৮ সালের সরকারি বিজ্ঞপ্তি পুনঃবহালের দাবিতে টিএসসি এলাকায় একটি বিক্ষোভ সমাবেশ করে। পরের কয়েকদিন দেশের অন্যান্য অংশে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। গত ৪ জুলাই সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ ৫ জুলাই হাইকোর্টের রায় বহাল রাখার সিদ্ধান্ত নেয়। পরদিন ৬ জুলাই শিক্ষার্থীরা ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচির ডাক দেয়।

গত ১৪ জুলাই সব গ্রেডে কোটার যৌক্তিক সংস্কারের দাবিতে গণপদযাত্রা করে রাষ্ট্রপতি বরাবর স্মারকলিপি দেন আন্দোলনকারীরা। সেদিন সন্ধ্যায় একজন সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বিতর্কিত মন্তব্য করেন, মন্তব্যে তিনি আন্দোলনকারীদের ‘রাজাকার’র সঙ্গে তুলনা করেন। এই মন্তব্যের পর রাতে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ শুরু হয়। বিভিন্ন ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীরা স্লোগান দেন ‘তুমি কে, আমি কে, রাজাকার রাজাকার; কে বলেছে, কে বলেছে, স্বৈরাচার স্বৈরাচার’। এরপর ১৫ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কোটা আন্দোলনে ছাত্রলীগ ও অন্যান্য ক্ষমতাসীন দলের কর্মীরা শিক্ষার্থীদের ওপর নির্বিচারে হামলা চালায়। তারা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ভেতরে ও বাইরে আহত বিক্ষোভকারীদের ওপরও হামলা চালায়। সেদিন উভয়পক্ষের তিন শতাধিক মানুষ আহত হয়।

১৬ জুলাই ঢাকা, চট্টগ্রাম ও রংপুরে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষে অন্তত ছয়জন নিহত হয়। সব বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ ও মাধ্যমিক বিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয় এবং শিক্ষার্থীদের হল খালি করতে বলা হয়েছে। সরকার ছয়টি জেলায় বিজিবি (বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ) মোতায়েন করে। সেদিন শিক্ষার্থীরা ঢাবি ও রাবির অধিকাংশ হলের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ছাত্রলীগ নেতাদের কক্ষ ভাঙচুর করে। রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে নিরস্ত্র শিক্ষার্থী আবু সাঈদকে পুলিশ গুলি করে হত্যা করে। এ ঘটনার একটি ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়ে। ১৮ জুলাই ব্র্যাক ইউনিভার্সিটিসহ কয়েকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে পুলিশ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালায়। ১৯টি জেলায় সংঘর্ষের ফলে সহিংসতায় কমপক্ষে ২৯ জন নিহত হয়। অনির্দিষ্টকালের জন্য মেট্রোরেল চলাচল বন্ধ করা হয়। ১৯ জুলাই দিনব্যাপী সহিংসতায় কমপক্ষে ৬৬ জনের মৃত্যু হয়, আহত হন কয়েকশ মানুষ। এদিনই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়করা নয় দফা দাবি ঘোষণা করেন। যার মধ্যে ছিল শেখ হাসিনাকে ক্ষমা চাইতে হবে, কয়েকজন মন্ত্রী ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিদের পদত্যাগ করতে হবে, হামলায় জড়িত ছাত্রলীগ ও পুলিশ সদস্যদের শাস্তি দিতে হবে, ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ ও আন্দোলনকারীদের আইনি সুরক্ষা দিতে হবে। এদিন মধ্যরাত থেকে সরকার দেশব্যাপী কারফিউ ঘোষণা করে এবং সেনা মোতায়েন করে। ২০ জুলাই কারফিউয়ের প্রথম দিনে অন্তত ২১ জন নিহত হয়েছেন। ২৩ জুলাই সরকারি, আধা-সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত সংস্থায় ৯৩ শতাংশ নিয়োগ মেধার ভিত্তিতে করার ঘোষণা দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে সরকার। তবে, কোটা সংস্কার আন্দোলনের সমন্বয়করা তা প্রত্যাখ্যান করে। গত ২৬ জুলাই পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) হাসপাতাল থেকে তিন সমন্বয়কে তুলে নেয়। এদিন জাতীয় ঐক্য ও সরকার পতনের আহ্বান জানায় বিএনপি। ২৮ জুলাই দেশব্যাপী পুলিশের অভিযান চলমান ছিল। শুধু ঢাকাতেই ২০০টিরও বেশি মামলায় দুই লাখ ১৩ হাজারের বেশি মানুষকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। মোবাইল ইন্টারনেট সচল হলেও বন্ধ ছিল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম। গত ৩০ জুলাই কোটা আন্দোলন ঘিরে নিহত ব্যক্তিদের স্মরণে দেশব্যাপী শোক পালনের আহ্বান জানায় সরকার। এ আহ্বান প্রত্যাখ্যান করে একক বা ঐক্যবদ্ধভাবে লাল কাপড় মুখে ও চোখে বেঁধে ছবি তোলা এবং অনলাইনে প্রচার কর্মসূচি ঘোষণা করে আন্দোলনকারীরা।

নির্বাহী আদেশে জামায়াতে ইসলামী ও ছাত্রশিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধ

গত ৩১ জুলাই সরকারের নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে জামায়াতে ইসলামী ও ছাত্রশিবিরকে নিষিদ্ধ করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। ওই দিন সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, নিয়ম অনুযায়ী জামায়াত ও ছাত্রশিবিরকে নিষিদ্ধ করার প্রস্তাব স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। আইন মন্ত্রণালয় আইনগত মতামত দেওয়ার পর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রজ্ঞাপন জারি করবে। আজ এই প্রক্রিয়া শেষ করার চেষ্টা থাকবে তাদের। কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সহিংসতার ঘটনায় জামায়াত ও এর ছাত্রসংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবিরের জড়িত থাকার অভিযোগে এ সিদ্ধান্ত নেয় আওয়ামী লীগ।

গণঅভ্যুত্থানের মুখে পদত্যাগ করে শেখ হাসিনার ভারত পলায়ন

গত ৪ আগস্ট সারাদেশে আওয়ামী লীগের সদস্যদের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের সহিংস সংঘর্ষ হয়। দেশব্যাপী অন্তত ৯৩ জন নিহত হন। এদিন মন্ত্রী-এমপিদের বাড়িতে হামলা শুরু হয়। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জনগণকে ‘শক্ত হাতে নাশকতাকারীদের প্রতিহত করার’ আহ্বান জানান।

সরকারের পদত্যাগের পর অন্তর্বর্তী সরকারের পরিকল্পনার রূপরেখা দেন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক। বিক্ষোভকারীরা সারাদেশে নাগরিকদের ‘মার্চ টু ঢাকা’ করার আহ্বান জানান। শুরুতে ৬ আগস্ট 'মার্চ টু ঢাকা' কর্মসূচির আহ্বান জানানো হলেও পরে তা একদিন আগে ৫ আগস্ট করার ঘোষণা দেওয়া হয়।

৫ আগস্ট এদিন হাজারো মানুষ কারফিউ ভেঙে ঢাকার একাধিক মোড়ে জড়ো হয়ে রাজধানীতে প্রবেশের চেষ্টা করে। দুপুর পর্যন্ত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও ক্ষমতাসীন দলের সমর্থকদের সঙ্গে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। প্রধানমন্ত্রী আরও বল প্রয়োগ করে ক্ষমতায় থাকতে চাইলে তাকে জানানো হয় যে, এই ধরনের ব্যবস্থা অকার্যকর হবে। সকাল ১০টা থেকে দুপুর দেড়টা পর্যন্ত দেশব্যাপী ইন্টারনেট ব্ল্যাকআউট ছিল। পরে সেনাপ্রধান দুপুর ২টায় জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেওয়ার ঘোষণা করে। পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে আলোচনার পর পদত্যাগ করতে রাজি হন শেখ হাসিনা। তিনি হেলিকপ্টারে দেশ ছেড়ে যান। শেখ হাসিনার পতন উদযাপন করতে লাখো মানুষ রাস্তায় নেমে আসে। গণভবন, সংসদ ভবন ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে ভাঙচুর চলে।

আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের গা ঢাকা দেওয়া ও গ্রেপ্তার হওয়া

সাধারণ মানুষসহ ছাত্র-জনতার ভাষা বুঝতে ব্যর্থ হয়ে পতিত হয়েছে আওয়ামী লীগ। রাজনীতির মাঠ থেকে কোনোরকম আগাম সতর্কতা ব্যতিরেকে বলয় থেকে ছিটকে গেছে তারা। যেখানে দেশের অনুমানিক ৮০ শতাংশ মানুষ তাদের বিরুদ্ধে তো বটেই, উল্টো দলীয় বঞ্চিত ও নিগৃহীত হওয়া কর্মীসমর্থকরাও তাদের পাশে এগিয়ে আসেনি। এতে একটা বিষয় পরিষ্কার হয়েছে যে, দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকলে একটা সিন্ডিকেট তাদের নিজস্ব অনুসারী ছাড়া আর কাউকে সুযোগ দিতেও রাজি ছিল না। এতে পদবঞ্চিত, সুবিধাবঞ্চিত বৃহৎ সমর্থকগোষ্ঠীর সমর্থন হারিয়েও ক্ষমতা আর আধিপত্য বজায় রাখতে দমনপীড়ন চালিয়ে নিজ দলীয় কর্মীদের জামায়াত-শিবির ট্যাগ দিয়ে দল ছাড়তে বাধ্য করাও ছিল বেশ লক্ষ্যণীয়। আবার দলে নিজেদের অবস্থান পোক্ত করতে রাজনীতির মাঠে কোনঠাসা হয়ে পড়া জামায়াত-শিবিরকে কিংবা ভিন্ন দলের কর্মীদের দলে টেনে দল ভারী করে আধিপত্য কায়েম করতে দেখা গেছে। আর শেষমেশ সেটিই পরিলক্ষিত হয়েছে সরকার পতনের সফল অভ্যুত্থানের সময়।

শীর্ষ নেতারাও অনেকে দেশ ছেড়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। কেউ কেউ দেশ ছাড়ার চেষ্টাকালে গ্রেপ্তারও হয়েছেন। অনেকের আদালতে বিচার চলেছে। এর বাইরে, নেতাদের মধ্যে এখনও যারা দেশে অবস্থান করছেন, তাদের প্রায় সবাই ‘আত্মগোপন’ করেছেন।

এমন অবস্থায় গত দেড় দশকেরও বেশি সময় ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগে চরম নেতৃত্বশূন্যতা দেখা দিয়েছে। এতে সাংগঠনিকভাবে দলটি রীতিমতো বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে বলে জানিয়েছেন তৃণমূলের নেতারা। তাদের অনেকেই এখন উদ্বেগ ও আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন। গণমাধ্যমে কথা বলার সময় কেউ কেউ তাদের নামও প্রকাশ করতে ইচ্ছুক নন।

আওয়ামী লীগ নেতারা জানান, তাদের দলের এখন দিশেহারা বিপর্যস্ত অবস্থা হয়ে গেছে। কয়েক মাস হয়ে গেল, অথচ কেন্দ্র থেকে কার্যকর কোনো নির্দেশনা দেওয়া হলো না। ফোন দিলেও কেউ ধরে না। হামলা-মামলা সব মিলিয়ে নেতাকর্মীরা হতাশ হয়ে পড়েছে। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, নেতাকর্মীদের অনেকে রাজনীতি ছেড়ে দেওয়ার কথা ভাবছেন।

অন্যদিকে, আওয়ামী লীগের এখনকার যে অবস্থা দেখা যাচ্ছে, সেটার জন্য দলের সিনিয়র নেতাদের দায়ী করছেন তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকরা। তৃণমূলের এক কর্মী বলেন, ‘কোটি কোটি টাকা বানাইলো তারা; আর তাদের পাপের শাস্তি ভোগ করতে হইতেছে আমাদের মতো তৃণমূলের নেতাকর্মীদের।’

মন্তব্য করুন

Bangal
rtv Drama
Radhuni
  • বিশেষ প্রতিবেদন এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
দেশীয় অস্ত্র হাতে আ.লীগ নেতার ভিডিও ভাইরাল
আ.লীগের অস্তিত্ব বাংলার জনগণ আর কখনো মেনে নিবে না: মুহাম্মদ শাহজাহান 
মিত্রের শত্রুতা, কোন পথে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক
বাঘারপাড়ায় আ.লীগের ৩০৮ নেতাকর্মীর নামে মামলা