আগাম বন্যায় তলিয়ে গেছে দেশের হাওরাঞ্চল। সেইসঙ্গে ভাসিয়ে নিয়ে গেছে এসব এলাকার মানুষের জীবন-জীবিকা ও স্বপ্ন। যে সময়টায় এ অঞ্চলের মানুষদের সবচে বেশি ব্যস্ত থাকার কথা, তারা এখন পার করছেন অলস সময়।
প্রতিবছর এপ্রিলের মাঝামাঝি থেকে শুরু হয় এসব এলাকার মানুষের ব্যস্ততা। ধান মাড়াই, বিক্রি আর সবচে বেশি ব্যস্ততা থাকে চালকলগুলোতে। এসময়টাতে নতুন ধান আসে রাইসমিলে, যা দিয়ে তৈরি চাল নিজ নিজ এলাকার চাহিদা মিটিয়ে রপ্তানি করা হয় দেশের বিভিন্ন এলাকায়।
কিন্তু এ বছর আগাম বন্যায় তলিয়ে গেছে গোটা হাওর এলাকা। ফলে কোনো ফসল ঘরে তুলতে পারেননি কোনো কৃষক। চাষীদের সঙ্গে সঙ্গে স্বপ্ন ভেঙেছে মিল মালিক ও সংশ্লিষ্টদের।
সুনামগঞ্জের সবচে বড় চালকল রাসেল রাইস মিল। আরটিভি অনলাইনের সঙ্গে কথা বলেন মিলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ রাসেল চৌধুরী।
তিনি বলেন, এখন হচ্ছে আমাদের ভরা মৌসুম। হাওরে প্রতিবছর এসময় ধান ঘরে তোলা ও বিক্রির সময়। আমরা কৃষকদের কাছ থেকে ধান কিনে চাল তৈরি করি। তা দিয়ে শুধু আমাদের অঞ্চল নয়, রপ্তানি করা হয় দেশের বিভিন্ন এলাকায়। কিন্তু এবার আমাদের কোনো কাজ নেই।
তিনি আরো বলেন, অন্য বছর এ সময় আমাদের মিলগুলোতে থাকে ঈদের আমেজ। আর এ বছর কোনো কাজ নেই। সবাই অলস সময় পার করছে। গেলো ২০১৬তেও আমরা ১ লাখ টনের বেশি চাল উৎপাদন করেছি। এবার নিজের পরিবারের চাহিদা মেটানোর ধানও কিনতে পারিনি। সব পানির নিচে তলিয়ে গেছে।
রাসেল বলেন, গেলো বছরগুলোতে মিলের সব ধরনের খরচ পুষিয়ে এক থেকে দেড় কোটি টাকা লাভ হতো। এবার সেখানে খালি হাতে বসে আছি। এমনিতেই চাষীদের আগাম টাকা দিয়ে এখন আমরা প্রায় দিশেহারা।
আরেক চালকল হক রাইস মিলের পরিচালক শেখ সহিদুল আরটিভি অনলাইনকে বলেন, আমরা একেবারে শেষ হয়ে গেছি। এবার একটা ধানও কেউ তুলতে পারেনি। মিলগুলো কর্মহীন পড়ে আছে। অন্যবছরগুলোতে এ অবস্থা থাকে না। এখানে মানুষের কোলাহল থাকে সব সময়, দিন কী রাত।
তবে রোববার প্রধানমন্ত্রীর হাওর এলাকার পরিদর্শনের সময় কৃষকদের থেকে এক বছরের কৃষিঋণ আদায় না করার নির্দেশকে সাদুবাদ জানালেন তিনি। বলেন এর ফলে কৃষকরা কিছুটা হলেও শান্তি পাবে। না হলে দেনার দায়ে তাদের পালিয়ে বেড়াতে হতো।
এইচটি/সি