টাকার বিনিময়ে খ্যাতনামা জিমগুলোর বডিবিল্ডারদের চ্যাম্পিয়ন ঘোষণা করা হয়, এটা অনেক পুরাতন অভিযোগ। আয়-ব্যয়ের হিসাব প্রকাশ না করাসহ একাধিক অভিযোগ রয়েছে বিল্ডিং ফেডারেশনের কর্তাদের বিরুদ্ধে। আর বাংলাদেশ বডিবিল্ডিং ফেডারেশনের কর্তাদের কথার বাইরে গিয়ে আজীবনের জন্য বহিষ্কার হয়েছেন দেশের অনেক শীর্ষ বডিবিল্ডার।
তাদেরই একজন হাসিব মোহাম্মদ হলি। ২০১৫ সালে মিস্টার বাংলাদেশ নির্বাচিত হন তিনি। এরপর ২০১৭ সালে সিঙ্গাপুরে গিয়ে মিস্টার এশিয়া হওয়ার কীর্তিও গড়েন হাসিব হলি। তবে ফেডারেশনের কথা না রাখার অভিযোগে তাকে আজীবনের জন্য ফেডারেশন থেকে নিষিদ্ধ করা হয়।
সম্প্রতি বডিবিল্ডার জাহিদ হাসান শুভর পুরস্কারে লাথি দেওয়ার বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়। এরপর ন্যায্য বিচারও পেয়েছেন তিনি। কিন্তু বিচারের আশায় এখনও দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন মিস্টার এশিয়া।
এবার বাংলাদেশ বডিবিল্ডিং ফেডারেশনের আরোপিত নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার চেয়ে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদে আবেদন করেছেন সাবেক মিস্টার বাংলাদেশ হাসিব হলি।
সম্প্রতি জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের পরিচালক (ক্রীড়া) এস এম শাহ্ হাবিবুর রহমান হাকিম বরাবর লিখিত দিয়ে ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রীর কাছে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের আবেদন জানিয়েছেন হাসিব হলি।
আবেদনে হাসিব হলি জানান, সম্প্রতি শরীরগঠন ফেডারেশনে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় ব্যাপক ভাইরাল হয়। যেখানে দেখা যায়, ৪ বারের জাতীয় চ্যাম্পিয়ন জাহিদ হাসান শুভ জাজদের তাকে জোর করে দ্বিতীয় বানিয়ে দেওয়া মেনে নিতে না পেরে পুরস্কারে লাথি মেরে প্রতিবাদ জানায়। এর রেশ ধরে শুভকে একদিনের ব্যবধানে কোনো কারণ দর্শানোর নোটিশ না দিয়ে বা সংবাদ সম্মেলন করে না জানিয়ে ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম নিজ ইচ্ছায় পরদিন শুভকে আজীবন বহিষ্কার করে।
তার (হাসিব) দাবি, আমাকেও ২০১৭ সালে মি. এশিয়া পদক সিঙ্গাপুর থেকে জিতে আসার পর নানান ভ্রান্ত অপবাদ দিয়ে ফেডারেশনের ফেসবুক পেজে একটি নোটিশ দিয়ে, কোনো অফিসিয়াল চিঠি না দিয়ে আজীবন বহিষ্কার করা হয়।
হাসিব হলির ভাষ্য, ২০১৫ সালে মি. বাংলাদেশ প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর ২০১৬ সালে আমি প্রথম আইএফবিবি মি. এশিয়া প্রতিযোগিতা করতে চীনে যাই। তখন শরীরগঠন ফেডারেশন থেকে আর্থিক ও ভিসাসংক্রান্ত সহযোগিতা চাইলে তারা কোনো সহযোগিতা না করে উল্টো হয়রানি করেন।
এ বডিবিল্ডারের ভাষ্যমতে, নজরুল ইসলাম স্ট্যাম্পে আমার থেকে লিখিত নেন যে, আমি নিজ খরচে ও নিজ দায়িত্বে চীনে খেলতে যাচ্ছি; এ জন্য ফেডারেশনের কোনো দায়দায়িত্ব নেই। এ ধরনের হয়রানি থেকে রেহাই পেতে ২০১৭ সালে নাম্বা ওয়াইএফএফ এশিয়া আয়োজিত প্রতিযোগিতায় সিঙ্গাপুরে অংশ নিয়ে ওই বছর স্বর্ণপদক অর্জন করি। এরপর দেশে ফেরার পর আমাকে নানান ভ্রান্ত অভিযোগ দিয়ে আজীবন বহিষ্কার করা হয়। এর বিচার আমি আজও পাইনি।
এ বডিবিল্ডার আরও যোগ করেন, আন্তর্জাতিক ফেডারেশনের মি. ইউনিভার্স খেলার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাকে আর্থিক সহযোগিতা দেন এবং এই ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশিপ প্রতিযোগিতায় ২০২২ সালের ১৭ জুলাই থাইল্যান্ডে রৌপ্যপদক অর্জন করি আমি। অথচ নাম্বা ওয়াইএফএফ-এ খেলার কারণে নজরুল ইসলাম আমাকে অবৈধভাবে আজীবন বহিষ্কার করেন।
দুর্নীতিমুক্ত পরিবেশে প্রতিযোগিতার আহ্বান জানিয়ে হাসিব হলি দাবি করেন, উপরোক্ত বিষয়গুলো তদন্ত সাপেক্ষে দোষীদের সনাক্ত করে উপযুক্ত শান্তির আওতায় এনে শরীরগঠন ফেডারেশন ও এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট খেলোয়াড়দের দুর্নীতিমুক্ত পরিবেশে প্রতিযোগিতার সুযোগ করে দিলে সবাই আপনার প্রতি চিরকৃতজ্ঞ থাকব এবং আমার নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়ে খেলার সুযোগ করে দিলে ভবিষ্যতে আরও আন্তর্জাতিক পদক জিতে বাংলাদেশের নাম বিশ্ব দরবারে উজ্জ্বল করব।
এদিকে গুঞ্জন রয়েছে, বাংলাদেশ শরীরগঠন ফেডারেশনের আসন্ন নির্বাচনে আবারও প্রার্থী হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন ফেডারেশনের বিতর্কিত সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম। বিভিন্ন মাধ্যমে এর আভাসও দিয়েছেন তিনি।