ঢাকাশনিবার, ১২ এপ্রিল ২০২৫, ২৯ চৈত্র ১৪৩১

বিশ্ব ক্রিকেটে নতুন ‘চোকার্স’ ভারত!

মোহাম্মদ রনি খাঁ

সোমবার, ১২ জুন ২০২৩ , ১২:২১ পিএম


loading/img
ছবি- ক্রিকইনফো

বিশ্ব ক্রিকেটে ‘চোকার্স’ তকমাটা বরাবরই জড়িয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে। আইসিসি আয়োজিত টুর্নামেন্ট থেকে প্রতিবারই হতাশ হয়ে ফিরেছে দলটি। এ কারণেই ‘চোকার্স’ তকমা তাদের কপালে জুটেছে। 

বিজ্ঞাপন

প্রোটিয়াদের পাশাপাশি এবার বিশ্ব ক্রিকেটে নতুন ‘চোকার্স’ হিসেবে নাম লেখাচ্ছে ভারত। গত ১০ বছরে আইসিসি টুর্নামেন্টের মঞ্চ থেকে বারবারই খালি হাতে ফিরেছে ভারতীয় শিবির। হতাশা ছাড়া আর কিছুই জোটেনি তাদের ভাগ্যে।

সবশেষ ২০১৩ সালে বিশ্ব আসরে চ্যাম্পিয়নস ট্রফির শিরোপা জিতেছিল মহেন্দ্র সিং ধোনির নেতৃত্বাধীন ভারত। এরপর থেকেই হতাশায় পুড়েছে ভারতীয় শিবির। ২০১৪ সালে শ্রীলঙ্কার কাছে বিশ্বকাপ ফাইনালে হার দিয়েই শুরু ভারতের শিরোপা খরার। 

বিজ্ঞাপন

আইসিসি আয়োজিত যেকোনো টুর্নামেন্টের পুরো পর্বে দাপট দেখালেও নক-আউটে এসেই বারবার ছন্দ হারিয়েছে দলটি। বৈশ্বিক আসরে শেষ পর্যায়ে গিয়েই ধূলিসাৎ হয়েছে শিরোপা স্বপ্ন। আর দলটির এমন ব্যর্থতাই তাদের ঠেলে দিয়েছে ‘চোকার্স’ তকমার দিকে।

টানা দু’বার খুব কাছে গিয়েও টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের শ্রেষ্ঠত্বের স্মারকটা ছুঁয়ে দেখা হয়নি রোহিত-বিরাটদের। যদিও র‍্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষে থেকে এ ট্রফি আগেই পেয়েছিল ভারত। তবে প্রতিযোগিতামূলক ফাইনালে আক্ষেপে কেটেছে ভারতের। নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে হতাশার পর কোহলিদের স্বপ্নভঙ্গ হয়েছে, তাসমান সাগরপাড়ের আরেক দেশ অস্ট্রেলিয়ার কাছেও। এর আগে, ২০১৭ সালে চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তানের কাছেও হেরেছে রোহিত শর্মারা। সব মিলিয়ে গত ১০ বছরে চারটি ফাইনালে হেরেছে ভারত।

শুধু ফাইনালই না, এ সময়ে চারটি সেমিফাইনালেও হেরেছে ভারত। ২০১৫ সালে অজিদের পর ২০১৯ সালে কিউইদের সঙ্গে ওয়ানডে বিশ্বমঞ্চের সেমিফাইনালেই আটকে গেছে ভারতের শিরোপা মহাযজ্ঞ। ২০১৬ সালে ঘরের মাঠে ওয়েস্ট ইন্ডিজের পর সবশেষ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে শেষ চার থেকেই বিদায় নিয়েছে ভারত। তাই একসময় ক্রিকেটে প্রোটিয়াদের ‘চোকার্স’ অপবাদ এখন ভারতের সঙ্গেও জুড়ে দেওয়াই যায়! আর ‘চোকার্স’ খেতাব পাওয়া ভারতের এই চার সেমিফাইনাল ও ফাইনালে খেলেছেন রোহিত ও বিরাট।

বিজ্ঞাপন

তবে ১০ বছরের এই শিরোপা খরা কাটাতে তারা যে চাপে আছে, তা মানতে নারাজ ভারতের প্রধান কোচ রাহুল দ্রাবিড়। ফাইনালের আগে অকপটেই তা অস্বীকার করেন তিনি। ভারতের সাবেক এ অধিনায়কের ভাষ্যমতে, না, মোটেও না। মানে আইসিসি ট্রফি জেতার চেষ্টা করার ক্ষেত্রে আমরা চাপ অনুভব করি না। অবশ্যই জিতলে ভালো লাগবে। তবে এ ক্ষেত্রে তাকালে দেখবেন, এটি আসলে দুই বছরের কাজের ফল। দুই বছর ধরে সফল হয়েই আপনি এখানে এসেছেন। ফলে সেখানে অনেক ইতিবাচক ব্যাপার আছে। অস্ট্রেলিয়ায় জেতা আছে, পয়েন্ট তালিকার ওপরের দিকে থাকার ব্যাপার আছে, গত পাঁচ-ছয় বছরজুড়েই বিশ্বের নানান জায়গায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ার ব্যাপার আছে।

এমনকি ফাইনাল শেষে মন্তব্যে অভিন্নতাই রেখেছেন অধিনায়ক রোহিত। তার (রোহিত) দাবি, আমরা চার বছরে কঠোর পরিশ্রম করেছি দুটি ফাইনালে পৌঁছাতে। এটি আমাদের জন্য হতাশার, একটি তো জিততেই চাইতাম। তবে গত দুই বছরে যা করেছি, সেটি তো কেড়ে নিতে পারেন না। এটা দারুণ প্রচেষ্টা। অনেক খেলোয়াড়ই এসব সিরিজে অংশ নিয়েছে। আমরা মাথা উঁচুই রাখছি, পরের চ্যাম্পিয়নশিপেও লড়াই করব।

একনজরে ভারতের ‘চোকার্স’ অপবাদের কারণগুলো :

২০১৫ ওয়ানডে বিশ্বকাপ : এ আসরে গ্রুপ পর্বে অপরাজিত ছিল ভারত। কোয়ার্টারে বাংলাদেশকে হারায় দলটি। কিন্তু শেষ চারে গিয়েই মুখ থুবড়ে পড়ে মহেন্দ্র সিংহ ধোনির দল। অজিদের কাছে ৯৫ রানের ব্যবধানে হেরে যায় ভারতীয়রা।

২০১৬ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ : এই যাত্রায় শেষ চারে বিরাট কোহলির অপরাজিত ৮৯ রানে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ১৯২ রান তোলে ফাইনালের দাবি জিইয়ে রেখেছিল তারা। কিন্তু লেন্ডল সিমন্সের অপরাজিত ৮২ রানের সুবাদে শিরোপার মুকুট ক্যারিবীয়দের ঘরে।

২০১৭ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি : গ্রুপ পর্বে শ্রীলঙ্কার কাছে হারলেও বাকি যাত্রাটা মসৃণ করেই ফাইনালে পা রেখেছিল ভারত। তবে ফাইনালের মঞ্চে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তানের সঙ্গে হার! দ্য গ্রিন ম্যানদের ওপেনার ফখর জামানের দুর্দান্ত সেঞ্চুরিতে ৩৩৭ রানের বিশাল সংগ্রহের বিপরীতে মাত্র ১৫৮ রানেই গুটিয়ে যায় ভারত।

২০১৯ ওয়ানডে বিশ্বকাপ : বৃষ্টি বাগড়ায় দু’দিন ধরে চলা সেমিফাইনালে কেন উইলিয়ামসনের ৬৭ ও টেলরের ৭৪ সৌজন্যে ২৩৯ তোলে নিউজিল্যান্ড। এমন মামুলি লক্ষ্য তাড়া করতে গিয়েও তীরে এসে তরী ভাসায় ভারত। কিউই বোলারদের দাপটে ক্রিজে থিতুই হতে পারেনি ভারতীয় শক্তিশালী ব্যাটিং লাইন-আপ।

২০২১ বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ : দুই বছর ব্যবধানে আবারও সেই কিউইদের সঙ্গে স্বপ্নভঙ্গ ভারতের। এ ম্যাচে ৮ উইকেটের সহজ জয়ে শিরোপা নিশ্চিত হয় কেন উইলিয়ামসনদের।

২০২২ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ : প্রোটিয়াদের সঙ্গে হারলেও গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়েই সেমিফাইনালে উঠেছিল ভারত। তবে শেষ চারে ইংলিশদের সঙ্গে রীতিমতো অসহায় আত্মসমর্পণ জানিয়েই বিদায় নেয় রোহিত শর্মার দল।

২০২৩ বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ : এ শিরোপা জয়ের জন্য বিশ্বরেকর্ড গড়তে হতো ভারতকে। তবে ৭ উইকেট হাতে রেখে পঞ্চম দিনের খেলা শুরু করেও বেশি দূর আগাতে পারেনি বিরাট কোহলি-আজিঙ্কা রাহানেরা। অজিদের দেওয়া ৪৪৪ রানের রেকর্ডময় লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে মাত্র ২৩৪ রানেই অল-আউট হয়ে যায় ভারতীয় দল। ফলে ২০৯ রানের জয়ের সঙ্গে টেস্ট ক্রিকেটে নতুন রাজার মুকুট ছিনিয়ে নেয় প্যাট কামিন্সের দল।

আরটিভি খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

বিজ্ঞাপন


© স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৬-২০২৫ | RTV Online |