লাতিন আমেরিকার দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী দেশ ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার ম্যাচ মানেই দুই দলের সমর্থক ও খেলোয়াড়দের মাঝে বাড়তি উন্মাদনা। ২০২৬ ফুটবল বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের সুপার ক্লাসিকো ম্যাচে তার প্রমাণ মিলেছে আরও একবার।
গতকাল মারাকানায় দারুণ একটা লড়াই দেখার অপেক্ষায় ছিল আর্জেন্টিনা এবং ব্রাজিলের সমর্থকরা। তবে নান্দনিক ফুটবলের চাইতে ফাউল এবং মাঠের বাইরের লড়াইয়ের কারণেই বেশি আলোচিত হয়েছে জনপ্রিয় দুই দলের মধ্যকার ম্যাচটি।
অবশ্য রোমাঞ্চকর সেই লড়াইয়ে শেষ হাসি হেসেছে লিওনেল মেসির আর্জেন্টিনা। তবে ১-০ জয় পেলেও একটা দুশ্চিন্তা থেকেই গেছে তিনবারের চ্যাম্পিয়নদের। কারণ, ম্যাচের ফল ছাপিয়ে আলোচনার কেন্দ্রে এখন সমর্থকদের দু’পক্ষের মধ্যে মারামারি ও পুলিশের লাঠিচার্জ।
এদিন ম্যাচ শুরুর আগেই গ্যালারিতে হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়েন দুই দলের সমর্থকরা। আর্জেন্টিনার জাতীয় সঙ্গীত চলাকালেই দুয়োধ্বনি দিতে শুরু করেন ব্রাজিলের কিছু সমর্থক। একপর্যায়ে দুই পক্ষের দর্শকদের সামাল দিতে স্থানীয় পুলিশ লাঠিচার্জের আশ্রয়ও নিয়েছিলেন।
একপর্যায়ে প্রতিবাদ জানাতে দলকে মাঠ ছাড়ার ইঙ্গিত দেন লিও। যার সুবাদে খেলাও বন্ধ ছিল লম্বা সময় ধরে। ম্যাচের পর ব্রাজিল পুলিশের এমন আচরণের নিন্দা জানিয়েছেন মেসি। ম্যাচ শুরুর আগে এমন ঘটনায় বেশ ক্ষুব্ধ মেসি মাঠের খেলার দিকে ব্রাজিলিয়ানদের মনোযোগ নেই বলেও সরাসরি কটাক্ষ করেছেন।
মেসি বলেন, ‘আমরা দেখেছি পুলিশ কীভাবে মানুষের ওপর চড়াও হচ্ছিল। আমাদের পরিবারের বেশ কয়েকজন সদস্যও ওখানে ছিল। কোপা লিবার্তাদোরেসের ফাইনালেও একই কাজ করেছে তারা (ব্রাজিলের পুলিশ)। মাঠে খেলার চেয়ে সেসবেই তাদের মনোযোগ বেশি থাকে।’
গত অক্টোবরে বিশ্বকাপ বাছাই খেলতে গিয়ে এসিএল ইনজুরিতে পড়েন নেইমার জুনিয়র। এজন্য সুপার ক্লাসিকোর ম্যাচটা খেলা হয়নি ব্রাজিলের সর্বকালের শীর্ষ গোলদাতার। তবে ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার মেজাজ হারানোর ম্যাচ নিয়ে চুপ থাকেননি নেইমার।
এই ম্যাচের উত্তাপ নিয়ে মুখ খুলেছেন নেইমার জুনিয়র। তার দাবি, মঙ্গলবার ম্যাচটি খেললে প্রতিপক্ষের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হতেন। তাকেও অনেক বেশি আঘাত সইতে হতো।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ইনস্টাগ্রামে এক স্টোরিতে নেইমার লিখেছেন, ‘ভালো খেলা, ক্লাসিক। উত্তাপ ছড়ানো ম্যাচ। আমি এই ম্যাচে আরও অনেক আঘাত পেতাম। কিন্তু আমি হয়তো তালগোল পাকিয়ে ফেলতাম।’
চোটের কারণে লাতিন ফুটবলের সবচেয়ে রোমাঞ্চকর দ্বৈরথে খেলা হয়নি নেইমারের। ওই অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনায় উত্তপ্ত হয়ে ওঠা আবহ সামাজিকমাধ্যমে দেওয়া পোস্ট যেন একটু শান্ত করার চেষ্টা করলেন তিনি। ‘ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা ম্যাচ আমাদের বাড়িতে হল্লা তৈরি করে। আরে চলো, চলো! আবহটা উঞ্চ করতে কাউকে না কাউকে তো কিছু একটা করতে হবে!’
অন্যদিকে, গ্যালারিতে মারামারি ও পুলিশের লাঠিচার্জ নিয়ে মেসির প্রতিক্রিয়ার জবাব দিয়েছে ব্রাজিল ফুটবল ফেডারেশন (সিবিএফ)। এক বিবৃতিতে সিবিএফ বলছে, ‘এটি স্পষ্টভাবে ব্যাখ্যা করা দরকার যে ম্যাচ আয়োজন ও পরিকল্পনার অত্যন্ত সতর্কতা এবং কৌশলের আশ্রয় নিয়েছিল সিবিএফ। মাঠে থাকা দুই দলের প্রতিনিধি সঙ্গে আমাদের নিয়মিত যোগাযোগ ছিল, এমনকি রিও ডি জেনেইরোর সামরিক পুলিশের সঙ্গে আমরা কথা বলেছি। পুরো ম্যাচের আয়োজন—বিশেষ করে নিরাপত্তার বিষয়টি ঠিক রাখতে আমরা প্রশাসন ও নিরাপত্তাবাহিনীর সঙ্গে সভায় নির্ধারণ করেছিলাম।’