টাইগার শোয়েবকে খেলা দেখা বন্ধ করার হুমকি, কে সেই ক্রিকেটার?
ছাত্রজনতার আন্দোলনের মুখে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে দেশ ছেড়েছেন শেখ হাসিনা। এরই সবার মুখে একটা কথাই ভাসছে দেশ ‘স্বাধীন’ হয়েছে। সেই সঙ্গে কথা বলার অধিকার ফিরে পেয়েছে বলে, মনের ভিতর লুকিয়ে থাকা সব কথাগুলোকে প্রকাশ করছে সাধারণ মানুষ। সেই তালিকায় রয়েছে বাংলাদেশ ক্রিকেটের অন্যতম ভক্ত টাইগার শোয়েব।
বুধবার (৭ আগস্ট) দেশের পতাকা নিয়ে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডে (বিসিবি) প্রবেশ করেছিলেন শোয়েব। এ দিন নিজেকে স্বাধীন মনে করে এক চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রকাশ করেছেন এই ক্রিকেটভক্ত। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সময় এক ক্রিকেটার নাকি তাকে হুমকি দিয়েছিলেন, তার খেলা দেখা এবং ক্রিকেট বোর্ডে ঢোকা বন্ধ করে দিবেন।
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে আফগানিস্তানে বিপক্ষে সেমিফাইনালের সমীকরণ মেলাতে ব্যর্থ হয় বাংলাদেশ। যার ফলে অন্য সব দর্শকদের মতো ক্ষোভ প্রকাশ করেন শোয়েবও। কথা বলেন বিসিবি বিভিন্ন অনিয়ম নিয়েও। কিন্তু সব ভুলে পরদিন ওয়েস্ট ইন্ডিজ বিমানবন্দরে ক্রিকেটারদের বিদায় দিতে গেলে এক ক্রিকেটার তাকে ডেকে সবার সামনে অপমান করে বলে জানিয়েছেন শোয়েব।
শোয়েব বলেন, অনেক দিন পর ক্রিকেট বোর্ডে ঢুকলাম। খুব ভালো লাগছে। স্বাধীন দেশে প্রথমবার আসলাম। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের পর প্রথম আসলাম। আগে এক দুই দিন পর এখানে আসতাম।
এর সময় সাংবাদিকরা শোয়েবকে প্রশ্ন করেন এতদিন পর আসার কারণটা কি। জবাবে এই টাইগার ভক্ত বলেন, অবশ্যই কারণ আছে। এখন আমরা স্বাধীন, কথা বলতে কোনো বাঁধা নেই। বুক ফুলিয়ে কথা বলব। যে ক্রিকেটার আমাকে বলেছিল, ক্রিকেট বোর্ডে ঢুকতে দিবে না, খেলা দেখা বন্ধ করে দিবে। তাকে আমি দেখালাম স্বাধীন দেশে পতাকা নিয়ে বোর্ডে ঢুকলাম।
মূল ঘটনার ব্যাখ্যা করে তিনি জানান, বিশ্বকাপে আফগানিস্তানের বিপক্ষে হারের পর বিসিবির অনিয়ম নিয়ে অনেক কথা বলেছিলাম। এটা এক ক্রিকেটারের গায়ে লেগেছে। আমি সব ভুলে পরদিন বিমানবন্দরে গিয়েছিলাম ক্রিকেটারদের বিদায় জানাতে। সেখানে এক ক্রিকেটার আমাকে ডেকে অনেক অপমান করেন। বলেছিলেন আমার খেলা দেখা এবং বোর্ডে ঢোকা বন্ধ করে দিবেন। আরও অনেক কথা বলেছিল।
‘আমার খারাপ লাগত না, সে যদি আমাকে আলাদা করে ডেকে এগুলো বলত। কিন্তু সে আমার থেকে ১০-১২ বছরের ছোট এবং সেখানে অনূর্ধ্ব-১৯ দলের অনেক ক্রিকেটার ছিল। আমার খুব খারাপ লেগেছিল। সে সময় মনে হচ্ছিল, বিমানবন্দরের মাটি ফাঁক হয়ে যাক, আমি এখান থেকে চলে যায়। পরে কেবল রিয়াল ভাই আমাকে শান্তনা জানিয়েছিলেন।’
এই তথ্য প্রকাশের পর সকলের মনে প্রশ্ন করে উঠেছে কে সেই ক্রিকেটার।
বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ স্কোয়াড: নাজমুল হোসেন শান্ত (অধিনায়ক), তাসকিন আহমেদ (সহ-অধিনায়ক), লিটন কুমার দাস, সৌম্য সরকার, তানজিদ হাসান তামিম, সাকিব আল হাসান, তাওহীদ হৃদয়, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, জাকের আলী অনিক, রিশাদ হোসেন, শেখ মাহেদী হাসান, তানজিম হাসান সাকিব, মোস্তাফিজুর রহমান, শরিফুল ইসলাম ও তানভীর ইসলাম।
বিশ্বকাপ দলের ১৫ জনের মধ্যে অনূর্ধ্ব-১৯ দলের ক্রিকেটার ছিলেন ৬ ক্রিকেটার। তারা হলেন, শরিফুল ইসলাম, তানভীর ইসলাম, জাকের আলী অনিক, তাওহীদ হৃদয় তানজিম হাসান সাকিব ও তানজিদ হাসান তামিম। আর দলের অন্যতম দুই সিনিয়র ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান ও মাহমুদউল্লাহ। এ ছাড়াও দলের সব চেয়ে তরুণ ক্রিকেটার ছিলেন রিশাদ হোসেন এবং এ দল থেকে জাতীয় দলে জায়গা করে নেওয়া শেখ মাহেদী।
এই ১০ ক্রিকেটারকে বাদ দিলে বাকি থাকে ৫ জন। নাজমুল হোসেন শান্ত (অধিনায়ক), তাসকিন আহমেদ (সহ-অধিনায়ক), লিটন কুমার দাস, সৌম্য সরকার ও মোস্তাফিজুর রহমান। শোয়েবের কথা গুলো বিবেচনা করলেও এই পাঁচ জয়ের কেউ একজন তাকে খেলা দেখা এবং ক্রিকেট বোর্ডে ঢুকতে না দেওয়ার হুমকি দেন। একাধিক বার জিজ্ঞেস করলেও তিনি বলতে চান নি।
তবে একজন ক্রিকেটারের কি এই ধরনের কথা বলার ক্ষমতা বা অধিকার আছে কিনা এটা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। দেশের ক্রিকেটের একজন ভক্তকে এভাবে অপমান করা কখনই গ্রহণ যোগ্য নয়। তাই এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও উঠেছে না প্রশ্ন।
গত ২৫ জুন আফগানিস্তানের কাছে হারের পর দেশের বেসরকারি একটি গণমাধ্যমের সাক্ষাৎকারে শোয়েব বলেন, এই হারে দায় কারও উপর দিয়ে লাভ হবে। আমাদের ম্যাচ আমরা নিজেরা হেরেছি। এমন সুযোগ আরও কখনও আসবে না। ২ ওভারে ৩৫ রান লাগতো। পিচে ছিল তানজিম সাকিব এবং লিটন দাস। লিটন শিক্ষিত ব্যাটার, তবুও চেষ্টা করেননি।
‘বিশ্বাস করেন আমার তখন মনে হয়েছে। আফগানিস্তান জিতে যাক। আফগানিস্তান চোখে আঙ্গুল দিয়ে বাংলাদেশকে দেখিয়ে দিয়েছে। তারা সেদিন ক্রিকেটে এসেছে। তারা সেমিফাইনাল খেলছে।,
বিসিবির সমালোচনা করে তিনি আরও বলেছিলেন, বিসিবিতে যারা আছে তারা জানে না কোথায় কি সিদ্ধান্ত হবে। আফগানিস্তানকে দেখে ব্রাভোকে নিয়ে আসছে। আর আমরা কোথায় থেকে কাকে ধরে নিয়ে আসছি। আপনারা ক্রিকেটের ‘ক’ টাও বোঝেন না। মনের দুঃখে এই কথাটা বললাম।
মন্তব্য করুন