জির্কজির স্বপ্নের অভিষেক, শুভ সূচনা রেড ডেভিলদের
ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড বনাম ফুলহ্যাম ম্যাচ দিয়ে পর্দা উঠলো ইংলিশ প্রিমিয়ার লীগের। ধারেভারে আর ঐতিহ্যে যতই এগিয়ে থাকুক ইউনাইটেড, লীগটা যে বিশ্বের সবচেয়ে প্রতিযোগীতামূলক লীগ। তাছাড়া দুদলের সবশেষ দেখায় জয়ের সুখস্মৃতিটা ছিল ফুলহ্যামেরই। আজকের ম্যাচটাতেও রেড ডেভিলদের প্রায় আটকেই দিচ্ছিল তারা। কিন্তু সেটা আর সম্ভব হলো না অভিষিক্ত ডাচ স্ট্রাইকার জশুয়া জির্কজির অসাধারণ নৈপুণ্যে। ম্যাচের শেষ দিকে করা তরুণ এই স্ট্রাইকারের একমাত্র গোলেই জয় দিয়ে ইপিএল যাত্রা শুরু হলো এরিক টেন হাগের দলের।
মৌসুমের প্রথম ম্যাচে ওল্ড ট্রাফোর্ডে শুরু থেকেই বল দখলে এগিয়ে ছিল ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড। বেশ কিছু সুযোগও তৈরি করেছিল স্বাগতিকরা। তবে সবকটা সুযোগ নষ্ট হয়ে যাচ্ছিল ব্রুনো-রাশফোর্ডদের ফিনিশিংয়ের অভাবে। উল্টো রক্ষণ থেকে প্রতি আক্রমণে উঠে রেড ডিভিলদের মাঝে মাঝেই চোখ রাঙানি দিচ্ছিল ফুলহ্যামের খেলোয়াড়রা। বিপদ যদিও ঘটেনি শেষ পর্যন্ত।
অবশ্য গোল করার প্রথম সুযোগটা তৈরি করে ফুলহ্যামই। ম্যাচের ১৩তম মিনিটে ২৫ গজ দূর থেকে জোরালো শট নেন ফুলহ্যাম রাইটব্যাক কেনি টেটে। তবে দারুণ দক্ষতায় সেটি রুখে দেন গোলরক্ষক ওনানা। এরপর ধীরে ধীরে নিজেদের খেলা গুছিয়ে নিতে থাকে ইউনাইটেডের খেলোয়াড়েরা। যার প্রমাণ, প্রথমার্ধে এই একটি শটই লক্ষ্যে ছিল ফুলহ্যামের।
২৭তম মিনিটে এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ আসে ইউনাইটেডের সামনে। ব্যাকপাস পেয়ে বিপদমুক্ত করতে গিয়ে ক্যাসেমিরোর কাছে বল পাঠান ফুলহ্যামের গোলরক্ষক বার্নার্ড লেনো। তার কাছ থেকে বল নিয়ে জোরালো শট নেন ব্রুনো ফের্নান্দেজ। তবে দারুণ রিফ্ল্যাক্সের প্রদর্শনী করে পা দিয়ে সেই শট রুখে দেন লেনো।
মিনিট সাতেক পর আরও একটি সুযোগ পান ইউনাইটেড অধিনায়ক। ক্যাসেমিরোর দারুণ এক পাস থেকে ডি বক্সে বল পেয়ে শট নেন ব্রুনো। কিন্তু এবারও তার শট ফিরিয়ে দেন লেনো। তিন মিনিট বাদেই সুযোগ আসে আরেকটা। এবার কর্নার থেকে দারুণ একটি হেড করেন ক্যাসেমিরো, তবে ব্যর্থ হন লক্ষ্যে রাখতে। এভাবে গোলশূন্যভাবেই শেষ হয় প্রথমার্ধ।
দ্বিতীয়ার্ধেও বল দখলে রেখে মাঠের আধিপত্য বজায় রাখার চেষ্টা করতে থাকেন টেন হাগের শিষ্যরা। ৫৪তম মিনিটে দৃশ্যপটে হাজির হন পুরো ম্যাচে নিজের ছায়া হয়ে ঘুরে বেড়ানো মেসন মাউন্ট। রাশফোর্ডের কাছ থেকে পেনাল্টি স্পটের খুব কাছে বল পেয়ে যান সাবেক চেলসি মিডফিল্ডার। কিন্তু এবারও ফুলহ্যামের ত্রাণকর্তা হয়ে দাঁড়ান লেনো। দারুণ দক্ষতায় ঠেকিয়ে দেন মাউন্টের এত কাছের শটটি। এর দুই মিনিট বাদে কোবি মাইনুর একটি শট বেরিয়ে যায় পোস্ট ঘেঁষে।
৬১তম মিনিটে মাউন্টকে উঠিয়ে রেড ডেভিল ম্যানেজার মাঠে নামান মাসখানেক আগে মাত্র দলে যোগ দেওয়া জশুয়া জির্কজিকে। একইসঙ্গে দিয়াল্লোর বদলি হিসেবে নামান নিজেদের আর্জেন্টাইন বিস্ময়বালক গার্নাচোকে। শেষ পর্যন্ত ম্যাচের ফলও নির্ধারিত হয় এই দুই তরুণ তুর্কির দারুণ যুগলবন্দিতেই।
একটা সময় মনে হচ্ছিল, বুঝি ড্র নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হবে রেড ডেভিলদের। কিন্তু না; ৮৭তম মিনিটে ক্যাসেমিরোর কাছ থেকে বল পেয়ে দারুণ এক ক্রস করেন গার্নাচো। আর সেটাকেই দারুণ এক ফিনিশিংয়ে রূপ দেন জিকর্জি। পরে এই একটামাত্র গোলে ভর করেই জয় নিয়ে মাঠ ছাড়তে সক্ষম হয় ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড।
অবশ্য ৭৪তম মিনিটে প্রতি আক্রমণের মাধ্যমে দারুণ এক সুযোগ পেয়েছিল ফুলহ্যামও। তবে গোল হতে দেননি আর্জেন্টাইন ডিফেন্ডার লিসান্দ্রো মার্টিনেজ। চমৎকার স্লাইডে কর্নারের বিনিময়ে দলকে রক্ষা করেন এই ডিফেন্ডার।
পুরো ম্যাচে ৫৫ শতাংশ বল দখলে রেখে ১৪টি শট নেয় রেড ডেভিলরা। এর মধ্যে লক্ষ্যে ছিল পাঁচটি শট। অন্যদিকে ফুলহ্যাম নিয়েছিল ১০টি শট। তবে, তার মধ্যে লক্ষ্যে ছিল মাত্র দুটি শট।
জির্কজি ছাড়াও এই ম্যাচে রেড ডেভিলদের হয়ে অভিষেক ঘটে মাত্রই দিনকয়েক আগে বায়ার্ন মিউনিখ থেকে যোগ দেওয়া মরোক্কান ফুলব্যাক নোসাইর মাজরাউই ও ডাচ সেন্ট্রালব্যাক ম্যাথিয়াস ডি লিটের।
মন্তব্য করুন