বর্তমান যুগে আমাদের প্রতিদিনের জীবনে অনলাইন ডিভাইস ও অ্যাকাউন্ট ব্যবহারের উপর নির্ভর করতে হয়। ই-মেইল, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে শুরু করে ব্যাংকিং অ্যাপসহ অনেক কিছুর ব্যববহার দিন দিন বেড়েই চলেছে। এর জন্য প্রতিটি অ্যাকাউন্টের জন্য প্রয়োজন হয় একটি নিরাপদ পাসওয়ার্ড।
তবে দুর্বল পাসওয়ার্ড ব্যবহার করলে সাইবার অপরাধীরা সহজেই ব্যক্তিগত বা সংবেদনশীল তথ্য হাতিয়ে নিতে পারে। এ কারণে সাইবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে শক্তিশালী পাসওয়ার্ড ব্যবহার করা জরুরী।
প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞদের মতে, কয়েকটি সাধারণ নিয়ম অনুসরণ করলেই একটি নিরাপদ ও কার্যকর পাসওয়ার্ড তৈরি করা যায়।
নিচে কৌশলগুলো তুলে ধরা হলো—
নিরাপদ শব্দের বিকল্প সংস্করণ ব্যবহার: কোনো একটি সাধারণ শব্দ যেমন বই বা অভিধান থেকে নিয়ে তাতে সংখ্যা, প্রতীক এবং বড় ও ছোট হাতের অক্ষরের সংমিশ্রণ ঘটিয়ে একটি নতুন পাসওয়ার্ড তৈরি করতে পারেন। এটি হ্যাকারদের জন্য অনেক বেশি জটিল করে তোলে।
ব্যক্তিগত উক্তি বা বাক্য দেয়া: আপনার মনে রাখা সহজ, কিন্তু অন্যদের কাছে কঠিন এমন কোনো উক্তি বা বাক্যকে পাসওয়ার্ডে রূপান্তর করুন। এই বাক্যে কিছু অক্ষর প্রতীক বা সংখ্যায় পরিবর্তন করলে তা আরও নিরাপদ হয়ে উঠবে।
ইমোজি এবং প্রতীক ব্যবহার করুন: অনেকে জানেন না যে, ইমোজি বা ইউনিকোড সিম্বলও পাসওয়ার্ডে ব্যবহার করা যায় (যদি সিস্টেম তা সমর্থন করে)। এতে করে পাসওয়ার্ড আরও বেশি নিরাপদ হয় এবং অনুমান করা কঠিন হয়ে পড়ে।
পাসওয়ার্ড জেনারেটরের সহায়তা: অনলাইনে অনেক ফ্রি পাসওয়ার্ড জেনারেটর রয়েছে, যা ব্যবহার করে অল্প সময়ে একটি জটিল ও অনুমান করা কঠিন পাসওয়ার্ড তৈরি করা সম্ভব। এরপর সেটি নিজের প্রয়োজন অনুযায়ী কপি করে ব্যবহার করা যেতে পারে।
প্রতিটি অ্যাকাউন্টের জন্য আলাদা পাসওয়ার্ড: একই পাসওয়ার্ড বারবার বিভিন্ন অ্যাকাউন্টে ব্যবহার করা ঝুঁকিপূর্ণ। একটি অ্যাকাউন্ট হ্যাক হলে অন্য অ্যাকাউন্টগুলোতেও সেই পাসওয়ার্ড দিয়ে ঢুকে পড়া সহজ হয়ে যায়। তাই প্রতিটি প্ল্যাটফর্মের জন্য আলাদা ও কাস্টমাইজ করা পাসওয়ার্ড ব্যবহার করা উচিত।
দীর্ঘ পাসওয়ার্ড: পাসওয়ার্ড যত বড় হবে, হ্যাকারদের জন্য তা অনুমান করা ততটাই কঠিন হবে। অন্তত ১২ থেকে ১৫ অক্ষরের একটি পাসওয়ার্ড ব্যবহার করার পরামর্শ দেন নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা।
কোড সংকেত দিয়ে জটিল পাসওয়ার্ড তৈরি: সাধারণ চোখে কোনো অর্থ খুঁজে পাওয়া যাবে না এবং পড়তেও খুবই জটিল হবে, এমন পাসওয়ার্ড তৈরি করতে হবে। তবে মনে রাখার জন্য কোড সংকেত ব্যবহার করা যেতে পারে। যেমন ‘আমি ভেনিস যেতে চাই’ এই বাক্য দিয়ে!W2g2V3n!32 এভাবে পাসওয়ার্ড তৈরি করা যেতে পারে।
পাসওয়ার্ড ম্যানেজার ব্যবহার: একাধিক সংখ্যা ও চিহ্ন ব্যবহার করে আট অক্ষরের পাসওয়ার্ড তৈরির পর সেগুলো সাধারণত জটিল ও দুর্বোধ্য হয়ে পড়ে। ফলে অনেকেই পাসওয়ার্ড মনে রাখতে পারেন না। এ ক্ষেত্রে পাসওয়ার্ড ম্যানেজার ব্যবহার করা যেতে পারে। বিভিন্ন ওয়েবসাইট কিংবা অ্যাপে দ্রুত প্রবেশের সুযোগ করে দিতে ব্যবহারকারীদের পাসওয়ার্ডগুলো সংরক্ষণ করে থাকে পাসওয়ার্ড ম্যানেজার। ফলে কম্পিউটার বা ফোনে সফটওয়্যারটি নামানো থাকলে বারবার পাসওয়ার্ড লেখার ঝামেলা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
পাসওয়ার্ড পরিবর্তনে সাবধান: অনেক নিরাপত্তাবিশেষজ্ঞই অ্যাকাউন্টের নিরাপত্তায় কিছুদিন পরপর পাসওয়ার্ড পরিবর্তনের পরামর্শ দিয়ে থাকেন। কিন্তু মাইক্রোসফট বলছে উল্টো কথা।
সবশেষে মনে রাখা দরকার, একটি শক্তিশালী পাসওয়ার্ড কেবলমাত্র প্রযুক্তির সুরক্ষা নয়, বরং নিজের ব্যক্তিগত নিরাপত্তারও একটি অংশ। তাই পাসওয়ার্ড ব্যবহারে যতটা সম্ভব সচেতন ও কৌশলী হওয়া প্রয়োজন।
আরটিভি/এসকে