‘শুয়াচান পাখি’-খ্যাত প্রখ্যাত সঙ্গীতশিল্পী বারী সিদ্দিকীকে দাফন করা হবে তার জন্মস্থান নেত্রকোনার চল্লিশার কারলি গ্রামের বাউল বাড়িতে।
এ সঙ্গীতশিল্পীর প্রথম জানাজা হবে সকাল সাড়ে ৯টায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদে। দ্বিতীয় জানাজা হবে সকাল সাড়ে ১০টায় বাংলাদেশ টেলিভিশন প্রাঙ্গণে। বাদ আছর নেত্রকোনা কলেজ মাঠে জানাজা শেষে নিজ গ্রামে তাকে দাফন করা হবে।
বৃহস্পতিবার দিনগত রাত আড়াইটার দিকে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। বারী সিদ্দিকীর ছেলে সাব্বির সিদ্দিকী এই তথ্য জানান।
তিনি বলেন, রাত আড়াইটার দিকে চিকিৎসকরা আমাকে জানিয়েছেন, বাবা আর নেই। বাবার প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদ প্রাঙ্গণে সকাল সাড়ে ৯টায়, তারপর বিটিভিতে সকাল সাড়ে ১০টায় দ্বিতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হবে।
বাদ আসর তৃতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হবে বিদ্যাপীঠ নেত্রকোনা সরকারি কলেজ মাঠে। এরপর জেলা সদরের চল্লিশা বাজারের কারলি গ্রামের বাউলবাড়িতে দাফন করা হবে।
বারী সিদ্দিকীর মরদেহ নেত্রকোনায় নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রশাসনের সহযোগিতা চেয়েছেন সাব্বির সিদ্দিকী। তিনি বলেন, মরদেহ নিয়ে যেতে পথে যেনো কোনো সমস্যা না হয়, তার জন্য প্রশাসন যেনো সহযোগিতা করেন।
বারী সিদ্দিকীর শিষ্য জলের গানের শিল্পী রাহুল আনন্দ বলেন, আমার গুরু বারী সিদ্দিকী অন্যলোকে পাড়ি দিলেন। তার আত্মার শান্তি কামনা করছি।
বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১২টায় আরটিভিতে সরাসরি গান শুনিয়েছেন রাহুল আনন্দ ও জলের গান। অনুষ্ঠানটিতে গুরু বারী সিদ্দিকীর জন্য সবার কাছে দোয়া চেয়েছিলেন রাহুল আনন্দ।
এদিকে গত শুক্রবার (১৭ নভেম্বর) রাতে হঠাৎ হৃদরোগে আক্রান্ত হলে তাকে রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে নেয়া হয় বারী সিদ্দিকীকে। শারীরিক অবস্থা গুরুতর বিবেচনায় সঙ্গে সঙ্গেই আইসিইউতে নেয়া হয়।
কার্ডিওলজি বিভাগের চিকিৎসক আবদুল ওয়াহাবের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি। হৃদরোগ ছাড়াও কিডনির জটিলতায় ভুগছিলেন তিনি। এক সপ্তাহ হাসপাতালে থাকার পর অনন্তলোকে পাড়ি জমালেন বারী সিদ্দিকী।
১৯৫৪ সালের ১৫ নভেম্বর নেত্রকোনা জেলায় জন্মগ্রহণ করেন বারী সিদ্দিকী। লোকগানের শিল্পী হিসেবে দেশজুড়ে রয়েছে তার জনপ্রিয়তা। একাধারে সঙ্গীতশিল্পী, গীতিকার ও বাঁশিবাদক হিসেবে আন্তর্জাতিকভাবেও খ্যাতি অর্জন করেছেন।
গানের সঙ্গে এই শিল্পীর সখ্যতা ছোটবেলা থেকেই। মাত্র ১২ বছর বয়সে নেত্রকোনার শিল্পী ওস্তাদ গোপাল দত্তের অধীনে তার প্রশিক্ষণ শুরু হয়। তিনি ওস্তাদ আমিনুর রহমান, দবির খান, পান্নালাল ঘোষসহ অসংখ্য গুণী শিল্পীর সরাসরি সান্নিধ্য লাভ করেন।
কথাসাহিত্যিক ও নির্মাতা হুমায়ূন আহমেদের হাত ধরে নব্বইয়ের দশকে জনপ্রিয়তা পান। ১৯৯৫ সালে বারী সিদ্দিকী এই নির্মাতার ‘রঙের বাড়ই’ নামের একটা ম্যাগাজিন অনুষ্ঠানে সঙ্গীত পরিবেশন করেন।
এরপর ১৯৯৯ সালে হুমায়ূন আহমেদের রচনা ও পরিচালনায় নির্মিত ‘শ্রাবণ মেঘের দিন’ চলচ্চিত্রে ৭টি গানে কণ্ঠ দেন। এরমধ্যে ‘শুয়া চান পাখি’ গানটির জন্য তিনি ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করেন।
১৯৯৯ সালে জেনেভায় অনুষ্ঠিত বিশ্ব বাঁশি সম্মেলনে ভারতীয় উপমহাদেশ থেকে একমাত্র প্রতিনিধি হিসেবে তিনি অংশগ্রহণ করেন। একক গানের পাশাপাশি বারী সিদ্দিকী বেশকিছু চলচ্চিত্রেও কণ্ঠ দিয়েছেন।
- বারী সিদ্দিকীর ভেতরে স্রষ্টা এসে গান করতেন’
- কেন শহীদ মিনারে নেয়া হলো না?
- ‘আমার গুরু বারী সিদ্দিকী’
- আমি ডাকিতাছি তুমি, ঘুমাইছ নাকি
- নির্মলেন্দু গুণের বাড়ি যাওয়া হয়নি বারী সিদ্দিকীর
- ফাঁসির আসামির শেষ ইচ্ছা বারী সিদ্দিকীর গান!
- বারী সিদ্দিকীর মৃত্যুতে প্রধানমন্ত্রীর শোক
- বারী সিদ্দিকী আর নেই
পিআর/জেএইচ