‘শুয়াচান পাখি, আমার শুয়াচান পাখি; আমি ডাকিতাছি তুমি, ঘুমাইছ নাকি।’
শুয়াচান পাখি খ্যাত প্রখ্যাত সঙ্গীতশিল্পী বারী সিদ্দিকী ঘুমিয়ে গেলেন। যতই ডাকি তিনি আর সাড়া দেবেন না। চলে গেলেন না ফেরার দেশে। তার গানে এ কথাগুলো তার জীবনের জন্যই আজ সত্যি হলো।
তার ভক্তদের এই আকুতির জবাব কোন দিনই জানা যাবে না। সারাটি জীবন ভক্তরা তাকে যেভাবে আগলে ধরে ছিলেন, আজ বাঁধন খুলে চলে গেলেন এই বংশীবাদক। কোনো দিনই চোখ মেলে আর তাকাবেন না তিনি।
‘তুমি আমি জনম ভরা, ছিলাম মাখামাখি,আজ কেন হইলে নীরব, মেলো দুটি আঁখি।’ এ রকম অনেক গান গেয়ে চোখ না মেলার কথা ভক্তদের আগেই জানিয়ে দিয়েছিলেন বারী সিদ্দিকী।
‘আমি একটা জিন্দা লাশ, কাটিস নারে জংলার বাঁশ
আমার লাইগা সাড়ে তিন হাত কবর খুঁড়িস না।’
আজ আর জিন্দা লাশ নয়, প্রকৃত লাশ হয়ে সাড়ে তিন হাত মাটির নিচে তাকে চলে যেতে হলো। তার জন্য কবর খুঁড়াও হলো।
‘আমি যদি যাইগো মরে, আমার লাশটা বুকে ধরে
আমার লাইগা বন্ধু তোরা কান্না জুড়িস না।’
বারী সিদ্দিকীর এ কথা রাখতে পারেননি তার ভক্তরা। তার চিরবিদায়ে চোখের জলে বুক ভিজিয়েছেন হাজারো ভক্তরা। অনেক মানুষকে কাঁদিয়ে বিদায় নিলেন এ গুণীশিল্পী। তার শূন্যতা আর পুরণ হবার নয়।
এ সঙ্গীতশিল্পী ঢাকার একটি হাসপাতালে বৃহস্পতিবার দিনগত রাত আড়াইটার দিকে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
আজই বাদ আসর বিদ্যাপীঠ নেত্রকোনা সরকারি কলেজ মাঠে তৃতীয় জানাজা শেষে জেলা সদরের চল্লিশা বাজারের কারলি গ্রামের বাউলবাড়িতে তাকে দাফন করা হবে।
১৯৫৪ সালের ১৫ নভেম্বর নেত্রকোনা জেলায় জন্মগ্রহণ করেন বারী সিদ্দিকী। লোকগানের শিল্পী হিসেবে দেশজুড়ে রয়েছে তার জনপ্রিয়তা। একাধারে সঙ্গীতশিল্পী, গীতিকার ও বাঁশিবাদক হিসেবে আন্তর্জাতিকভাবেও খ্যাতি অর্জন করেছেন।
গানের সঙ্গে এই শিল্পীর সখ্যতা ছোটবেলা থেকেই। মাত্র ১২ বছর বয়সে নেত্রকোনার শিল্পী ওস্তাদ গোপাল দত্তের অধীনে তার প্রশিক্ষণ শুরু হয়। তিনি ওস্তাদ আমিনুর রহমান, দবির খান, পান্নালাল ঘোষসহ অসংখ্য গুণী শিল্পীর সরাসরি সান্নিধ্য লাভ করেন।
কথাসাহিত্যিক ও নির্মাতা হুমায়ূন আহমেদের হাত ধরে নব্বইয়ের দশকে জনপ্রিয়তা পান তিনি। ১৯৯৫ সালে বারী সিদ্দিকী এই নির্মাতার ‘রঙের বাড়ই’ নামের একটা ম্যাগাজিন অনুষ্ঠানে সঙ্গীত পরিবেশন করেন।
এরপর ১৯৯৯ সালে হুমায়ূন আহমেদের রচনা ও পরিচালনায় নির্মিত ‘শ্রাবণ মেঘের দিন’ চলচ্চিত্রে ৭টি গানে কণ্ঠ দেন। এরমধ্যে ‘শুয়া চান পাখি’ গানটির জন্য তিনি ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করেন।
১৯৯৯ সালে জেনেভায় অনুষ্ঠিত বিশ্ব বাঁশি সম্মেলনে ভারতীয় উপমহাদেশ থেকে একমাত্র প্রতিনিধি হিসেবে তিনি অংশগ্রহণ করেন। একক গানের পাশাপাশি বারী সিদ্দিকী বেশকিছু চলচ্চিত্রেও কণ্ঠ দিয়েছেন।
- বারী সিদ্দিকীর ভেতরে স্রষ্টা এসে গান করতেন’
- কেন শহীদ মিনারে নেয়া হলো না?
- ‘আমার গুরু বারী সিদ্দিকী’
- নির্মলেন্দু গুণের বাড়ি যাওয়া হয়নি বারী সিদ্দিকীর
- ফাঁসির আসামির শেষ ইচ্ছা বারী সিদ্দিকীর গান!
- বারী সিদ্দিকীর মৃত্যুতে প্রধানমন্ত্রীর শোক
- বারী সিদ্দিকীর দাফন নেত্রকোনায়
- বারী সিদ্দিকী আর নেই
জেএইচ