জয়াকে ‘রংবাজ’র নায়িকা হতে বলেছিলেন রাজ্জাক
বরেণ্য অভিনেতা রাজ্জাকের জন্মদিন আজ মঙ্গলবার,২৩ জানুয়ারি। দিনটি নানা আয়োজনে পালিত হচ্ছে। এছাড়া সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নায়করাজের সঙ্গে কাটানো বিভিন্ন সময়ের স্মৃতিচারণ করছেন অনেকেই। গুণি অভিনেত্রী জয়া আহসানও দীর্ঘ স্ট্যাটাস লিখে, রাজ্জাকের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন। আরটিভি অনলাইন পাঠকের জন্য জয়া আহসানের সেই স্ট্যাটাসটি প্রকাশ করা হলো।
জয়া আহসান তার ফেসবুকে লিখেন, ‘বেশ আগের কথা। লন্ডনে একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিতে গিয়েছিলাম আমরা। লম্বা সফর। ফ্লাইটে হঠাৎ খেয়াল করলাম তিনি একটি উপন্যাস পড়ছেন। নাম ‘হিরে বসানো সোনার ফুল’; সমরেশ মজুমদারের লেখা। বইটি পড়া শেষ করে তিনি আমাকে সেটি উপহারও দিয়েছিলেন। সঙ্গে দুই লাইনের শুভেচ্ছা স্বাক্ষর।’
--------------------------------------------------------
আরও পড়ুন: হঠাৎ মন্দিরে দীপিকা
--------------------------------------------------------
‘স্পষ্ট মনে আছে, তিনি লিখেছিলেন-‘খুব ভালোবাসি’। আজ বলতে দ্বিধা নেই, আমি যতদিন বেঁচে থাকবো, ওই দুই শব্দের শুভেচ্ছা স্বাক্ষর আমার জীবনের অন্যতম বড় উপহার হয়ে থাকবে। কারণ উপহারটি আমাকে সাধারণ কেউ দেননি। দিয়েছিলেন নায়করাজ রাজ্জাক। আমাদের চলচ্চিত্রের গর্ব।’
‘হলফ করে বলতে পারি, তরুণ রাজ্জাকের ছবি দেখেছে অথচ তার প্রেমে পড়েনি-এমন তরুণী খুঁজে পাওয়া যাবে না। আমিও সেই লাখো কোটি তরুণীদের একজন; এ কারণেই হয়তো বরাবরই ঈর্ষান্বিত হয়েছি কবরী, ববিতা, শাবানা, সুচন্দা, শবনম, সুজাতাসহ নায়করাজের সব নায়িকাদের ওপর।’
‘আরেকটু আগে জন্ম হলে আমিও তো বেহুলা, আবির্ভাব, এতটুকু আশা, নীল আকাশের নীচে, পীচ ঢালা পথ, দর্পচূর্ণ, টাকা আনা পাই, দীপ নেভে নাই, আলোর মিছিল, অনন্ত প্রেম, অবুঝ মন, জীবন থেকে নেয়া, অশিক্ষিত, ছুটির ঘন্টা, রংবাজ-এরকম আরও অনেক কালজয়ী ছবির নায়িকা হতে পারতাম।’
‘খুব আফসোস হয়, ‘রংবাজ’ ছবির রিমেক করতে চেয়েছিলেন তিনি আমাকে নিয়ে। ফোন করে প্রস্তাবও দিয়েছিলেন। আমার দুর্ভাগ্য, তার পরিচালনায় কাজ করা হয়নি। তার আগেই তিনি চলে গেছেন। তবে ২০১২ সালে সহশিল্পী হিসেবে নায়করাজের সঙ্গে কাজ করার সৌভাগ্য হয়েছিল ‘পূর্ণদৈর্ঘ্য প্রেম কাহিনী’ ছবিতে।’
‘এখনো স্পষ্ট মনে আছে, তিনি যখন সেটে দাঁড়াতেন, তখন সবার সঙ্গে ওনার পার্থক্য খুব সহজেই ধরা পড়তো। তার বাচনভঙ্গি থেকে শুরু করে সবকিছুতে শিক্ষার ছাপ ছিল। রুচির ছাপ ছিল। শুটিংয়ের ফাঁকে আমার সঙ্গে অনেক ব্যক্তিগত গল্প করতেন তিনি।’
‘এ কারণেই একসঙ্গে ক্যামেরার সামনে কাজ করার চেয়ে তার সঙ্গে ক্যামেরার পেছনের মুহূর্তগুলো আমি খুব উপভোগ করতাম। অপেক্ষা করতাম তার কথা কখন শুনতে পারব। মাছ ধরার ভীষণ নেশা ছিল তার। আমাদের নিজের বড়শি দিয়ে তোলা মাছ খাওয়াতেও চেয়েছিলেন। এছাড়া কলকাতা থেকে কীভাবে তিনি ঢাকায় এসেছেন, সেসব গল্পও শুনেছি তার মুখে।’
‘আজ নায়করাজ রাজ্জাকের জন্মদিন। এই বিশেষ দিনে কেন জানি প্রিয় অভিনেতার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত প্রতিটি স্মৃতি একটার পর একটা মনে পড়ছে। এটা ঠিক, আজ তিনি নেই। কিন্তু আধুনিক অভিনয়ের শিক্ষা আমরা যার কাছ থেকে পেয়েছি, তাকে কি আমরা খুব সহজে ভুলে যেতে পারব?’
‘কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছিলেন, রঙ যেন মোর মর্মে লাগে, আমার সকল কর্মে লাগে। আমি নিশ্চিত, বাংলা চলচ্চিত্র যতদিন থাকবে, দুই বাংলাতেই নায়করাজ রাজ্জাকের নাম এবং তার কর্ম রঙিন হয়ে বেঁচে থাকবে। শুভ জন্মদিন, নায়করাজ।’
আরও পড়ুন
পিআর/এম
মন্তব্য করুন