শিশু আয়ানের মৃত্যু : তদন্ত প্রতিবেদন যা বলছে
রাজধানীর বাড্ডায় ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে শিশু আয়ান আহমেদের মৃত্যুর ঘটনায় হাইকোর্টে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সুন্নতে খতনার অস্ত্রোপচারের আগে ওয়েটিং রুমে ওই শিশুকে নেবুলাইজার ও ইনহেলার দেওয়া হয়েছিল। এ বিষয়টি চিকিৎসকদের জানানো হয়নি।
রোববার (২৮ জানুয়ারি) বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি মো. আতাবুল্লাহর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে ১৫ পৃষ্ঠার প্রতিবেদন দাখিল করা হয়। পরে আদালত প্রতিবেদন অ্যাফিডেভিট আকারে দাখিলের নির্দেশ দেন এবং শুনানির জন্য সোমবার (২৯ জানুয়ারি) দিন ধার্য করেন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের পক্ষে উপপরিচালক (আইন) ডা. পরিমল কুমার পাল প্রতিবেদনটি জমা দিয়েছেন।
তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আয়ান চাইল্ডহুড অ্যাজমা সমস্যায় ভুগছিল। শ্বাসকষ্টের জন্য তাকে মাঝে মাঝে নেবুলাইজার ও ইনহেলার দিতে হতো। সুন্নতে খতনার অস্ত্রোপচারের আগে ওয়েটিং রুমে তাকে নেবুলাইজার ও ইনহেলার দেওয়া হয়েছিল। এ বিষয়টি চিকিৎসকদের জানানো হয়নি।
এ ছাড়া আয়ানের অস্ত্রোপচারের সময় স্বাভাবিক রক্তপাত হয়েছে বলে প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়েছে। পাশাপাশি সুন্নতে খাতনা করাতে গিয়ে মৃত্যুঝুঁকি এড়াতে একই প্রতিবেদনে চারটি সুপারিশ করা হয়েছে। সেগুলো হলো– হাসপাতালে একাধিক অ্যানেসথেসিওলজিস্ট নিয়োগ দেওয়া, রোগী ও তার আত্মীয়কে অ্যানেসথেসিয়া ও অস্ত্রোপচারের ঝুঁকি ভালোভাবে জানানো, হাসপাতালে আইসিইউ ব্যবস্থা রাখা, সরকারের অনুমোদনের পরে হাসপাতালের কার্যক্রম শুরু করা।
এর আগে, বাড্ডার ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সুন্নতে খতনার জন্য অজ্ঞান করা শিশু আয়ানের মৃত্যুর ঘটনায় তার পরিবারকে এক কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট দায়ের করা হয় গত ৯ জানুয়ারি। রিটে আয়ানের চিকিৎসার দায়িত্বে থাকা চিকিৎসকদের সনদ বাতিল ও ইউনাইটেড হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনা চাওয়া হয়। সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট শাহজাহান আকন্দ মাসুম জনস্বার্থে এ রিট দায়ের করেন।
ওই রিটের শুনানি নিয়ে বাড্ডার সাঁতারকুলের ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও ইউনাইটেড গ্রুপের হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে গিয়ে এ পর্যন্ত কত রোগীর মৃত্যু হয়েছে, তা জানাতে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে আয়ানের মৃত্যুর ঘটনায় তার পরিবারকে পাঁচ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ কেন দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন হাইকোর্ট। পাশাপাশি ওই শিশু মৃত্যুর ঘটনা তদন্ত করে সাত দিনের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করতেও বলা হয়। এ ছাড়াও দেশের সব সরকার অনুমোদিত ও অননুমোদিত হাসপাতাল-ক্লিনিকের তালিকা আদালতে দাখিল করতে বলা হয় এক মাসের মধ্যে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে এ নির্দেশ বাস্তবায়ন করতে বলা হয়।
গত ১৫ জানুয়ারি বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি মো. আতাবুল্লাহর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এসব আদেশ দেন।
উল্লেখ্য, গত ৩১ ডিসেম্বর বাড্ডা ইউনাইটেড মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে আসেন শিশু আয়ানের বাবা শামীম আহমেদ। সেখানে ওই শিশুকে অস্ত্রোপচারের আগে অ্যানেসথেসিয়া দেওয়া হয়। পরে ৭ জানুয়ারি দিবাগত রাত ১১টা ২০ মিনিটে ইউনাইটেড হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ শিশুটিকে মৃত ঘোষণা করে। এই হাসপাতালের পিআইসিইউতে চিকিৎসাধীন ছিল শিশু আয়ান। জানা গেছে, শিশুটিকে অ্যানেসথেসিয়া প্রয়োগ করেন ডা. সাব্বির আহমেদ। আর সার্জারি করেছেন ডা. মেহজাবীন।
মন্তব্য করুন