• ঢাকা শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১
logo
ধ্রুব এষ আইসিইউতে
স্মৃতিকথা / ‘চান উইল্ল্যে চান উইল্ল্যে, হালিয়ে ঈদ’
আমার গ্রামের নাম গুনাগরী। চট্টগ্রাম শহর থেকে দুইটা মোটামুটি বিখ্যাত নদী পার হয়ে যেতে হয়। প্রথমটা কর্ণফুলী। দ্বিতীয়টা সাঙ্গু বা শঙ্খ। দুই নদীর সৌন্দর্য দেখতে দেখতে একসময় আপনার চোখ প্রবেশ করবে দুইপাশে সবুজের ছড়াছড়ি আর সর্পিলদেহী একটা মোটামুটি সংকীর্ণ হাইওয়েতে। যার পুবে উঁচু পাহাড় আর কোল ঘেঁষে গড়ে উঠছে বসতবাড়ি ও খেতখামার। আর পশ্চিমে বিস্তীর্ণ সবুজ মাঠ। সবজি আর ধানের মাঠ। যেখানে প্রায় সারা বছরই চাষ হয়। খিল নেই কোনো জমি। আরও পশ্চিমে গেলে, কয়েক কিলোমিটার জনবহুল এলাকা ফেলে, বঙ্গোপসাগর; যার পাড়ে দাঁড়িয়ে আপনি আকাশ আর জলরাশি ছাড়া আর কিছুই দেখবেন না। আসলে ওদিকটাতে আর কোনো বসতির চিহ্ন নেই। পাড়ের কোনো নিশানা নেই। আমার নানারা বলতেন, আমাদের পশ্চিমে বেমান সাইগর! আমি জীবনের প্রথম ষোলো বছর কাটিয়ে এসেছি এই বাঁশখালী উপজেলায়। একসময় রাস্তাঘাট তেমন পাকা ছিলো না। শুধু মেইন রোড বাদ দিলে আর সব রাস্তাই বর্ষাকালে কাদামাটির দমদমা হয়ে যেতো।  শীতকালে অবশ্যই সুন্দর লাগতো সবকিছু। বিল পাতাড়ি হাঁটাই ছিলো যোগাযোগের অন্যতম সহজ উপায়। শহর থেকে যেতে গেলেও পড়তে হতো বিড়ম্বনায়। সাঙ্গুর উপর দিয়ে ফেরি পার হয়ে। মিস হলে সাম্পান। সাম্পানওয়ালার সেই বিখ্যাত গান তো দেশের প্রায় সবাই জানেন। ‘বাঁশখালী -মহেশখালী, পাল উড়াইয়া দিলে সামপান/গুরগুরাই টানে/তোরা হন হন যাবি আঁর সাম্পানে!’  আমাদের ছোটো বেলায় ঈদ হতো শীতকালে। সেসময় স্কুলের প্যারা থাকতো না। নিরবচ্ছিন্ন অবসর যাকে বলে। তো, রোজা আর ঈদ ছিলো আমাদের ছিলো বিশাল এক উপলক্ষ। রোজার আগে আগে মক্তবের মিজ্জি আমাদেরকে রোজার প্রস্তুতি নিতে উদ্বুদ্ধ করতেন। দলবেঁধে সুরা তারাবি, রাতে কেয়ামুল লাইল, সেহেরির আগে গজল পরিবেশনে আমাদের কয়েকজনের দায়িত্ব ছিলো বেশি। বিশেষ করে হুজুর যাদেরকে তাঁর পাঠশালার মেধাবী ছাত্র মনে করতেন! সৌভাগ্যক্রমে আমি ছিলাম হুজুরের প্রিয়। তাই আমার অংশগ্রহণ ছিলো অগ্রভাগে।  সেহেরিতে উঠে খাওয়ার আগে মসজিদে গিয়ে ‘রোজাদার অক্কল ঘুমত্তুন উড়ি যনগুই’ কয়েকবার বলে লোকজনকে ডেকে দিয়ে শুরু করতাম গজল গাওয়া। ‘ওহে সকালের বাতাস তুমি কোথায় চলে যাও?/ মদিনার খুশবু তুমি আমায় দিয়ে যাও’, ‘ওগো মদিনা মনোয়ারা হে,/ ওগো মদিনা মনোয়ারা’, ইত্যাদি গজল গাইতাম। রোজা শেষ হওয়ার আগে আগে আমরা ঈদের প্রস্তুতি সেরে নিতাম। তবে অন্য দশজনের মতো ঈদ ছিলো না আমার। আমাদের স্কুলে একটা প্রবন্ধ বা নিবন্ধ ছিল এতিমদের নিয়ে। ঈদের দিন তাদের দুঃখী মুখে রাসুল (সা.) হাসি ফুটাতে বলেছিলেন। আমার বাবা-মা দুইজন থাকলেও নিজেকে আমি এতিম মনে করতাম। কারণ, আমি তাদের কারো ঘরে থাকতাম না। থাকতাম নানা বাড়িতে। স্বাভাবিকভাবে আমার মনে সবসময় একটা ভয় কাজ করত। কারো কাছে ঈদেও জামা চাইতে পারতাম না! ঈদের আগের দিন দেখা যেতো আমার মা তার নতুন সংসার থেকে একটা শার্ট পাঠাত। আর বাবা এলাকার এক লোককে দিয়ে চাঁদরাতে বা তার আগের দিন একটা কী দুইটা শার্ট পাঠাতেন। দুয়েকবার বাঁশিসহ জুতো। অবশ্যই নানাভাইও একটা কিনে দিতেন। সেটা কোনো মার্কেট থেকে নয়। হকার থেকে। আমরা তখন হকারকে নিলামি টাল বলতাম! ঈদ তবুও খুশির উপলক্ষ ছিল।  মসজিদের হুজুর তার খুতবা পূর্ববর্তী ওয়াজে প্রায়ই বলতেন ঈদ আসলে রোজাদারের জন্য। অন্যরা সেদিন ঈদ মানে খুশি সেটা বুঝতে পারে না। এই বুঝ নিয়ে চাঁদ ওঠা সন্ধ্যায় রাজ্যের যত আগ্রহ নিয়ে মাগরিবের নামাজ কোনো রকম ফরজটুকু পড়ে আমরা মিছিলে চলে যেতাম। ‘চান উইল্ল্যে, চান উইল্ল্যে’, ‘আঁজিয়ে রোজা/হালিয়ে ঈদ, তোর মা কাঁদের ফিইতফিইত!’ তারপর বাড়ির পশ্চিমে আদ্দুনী বিলের মোহনায় গিয়ে নতুন চাঁদ দেখে গড়্গড়িয়ে পড়তাম, নতুন চাঁদ উঠিলে এই দোয়া পড়িতে হয়- আল্লাহুম্মা আহিল্লাহু আলাইনা বিল আমনি ওয়াল ঈমানি, ওয়াস সালামাতি ওয়াল ইসলাম, রাব্বি ওয়া রাব্বুকাল্লাহ।’  ঈদের দিন খুব ভোরে আমার ঘুম ভেঙে যেত খিদেয়; যা এখনো ঘটে। দীর্ঘ ত্রিশ দিন সেহেরি খাওয়ার অভ্যাসের কারণে এইদিন খিদে লেগে যায় ভোরে। আযানের সাথে সাথে মসজিদে যেতাম। নামাজ সেরে আবারো গজল ধরতাম। যা চলতো দিন শুরু পর্যন্ত। ঈদের জামাতেও আগে আগে যেতাম। নামাজের আগে যদি আরেকবার গজল গাওয়ার সুযোগ পাই! এবং, সেটা জুটতো। আরো দুয়েকটা গজল গাওয়ার সুযোগ পেতাম!  জামাত শেষে শুরু হয়ে যেতো আমাদের ঈদচলা। পুরো গ্রাম ঘুরে ঘুরে বেড়াতাম। সন্ধ্যা নামার আগে ঘরে ফিরতাম। আমাদের দল ছিলো মোটামুটি আট দশ জনের। দলের তেমন কারো সাথে এখন যোগাযোগ নেই অবশ্যই।এদের অধিকাংশই  মধ্যপ্রাচ্যে এখন। তো, আমরা ঘরে ঘরে গিয়ে সবাইকে কদমবুসি করতাম। লাল সেমাই, জর্দাসেমাই, মুরাব্বা, লাচ্ছাসেমাই আর বোম্বে সেমাই ছিলো ঈদের খাবার। যাদের কৃষি ছিলো, তাদের ঘরে ঘুরাপিঠা বা চুটকি বানানো হতো। গুড়, দুধ আর নারিকেল দিয়ে বানানো হতো এই পিঠা। ঘনিষ্ঠ আত্মীয়ের বাসা হলে আমরা দেশি মুরগী অথবা গরু মাংস দিয়ে ভাত খেতাম!  তবে সেমাই আর পানিতে সেদিন আমাদের পেট হয়ে উঠতো একেকটা চালের মটকা! তখন সেলামীর অত চল ছিলো  না। তবুও আমাদের কিছু নির্দিষ্ট টার্গেট থাকতো। আমার মার কাছে গেলে পাঁচ টাকা পেতাম!  আরো কিছু কিছু আত্মীয় বা পরিচিত মানুষের ঘরে গেলো আমাদেরকে  দোয়েলপাখির ছবিসহ দুই টাকার নতুন নোট দিতেন! এক টাকার হরিণমার্কা নোটও ছিলো আমাদের আগ্রহের তালিকায় । ঈদে সাকুল্যে দশ বারো টাকা পেতাম। সেটা দিয়ে নানারকম প্ল্যান করতাম। আর দিনশেষে আইস্ক্রিমওয়ালার পকেটে যেতো এর একটা অংশ।  অবশ্যই প্রায়সময় আমি কলম কিনে রাখতাম এই টাকা দিয়ে।  একসময় গ্রামের ঈদ মানে ছিলো অনাবিল আনন্দ। আমার এক বন্ধু ঈদ কার্ড দিতো আমাকে। সেখানে লেখা থাকতো, ঈদ আপনার জীবনে নিয়ে আসুক অনাবিল আনন্দ। আর উপরে সে লিখে দিতো, ঈদ মানে খুশির দিন।আসতে হবে ঈদের দিন! ঈদের আগে আমার টার্গেট থাকতো বাণী সম্বলিত  ছোটো ছোটো কার্ডের দিকে। দুই টাকার এসব কার্ড লাগিয়ে ঘরের সৌন্দর্য একটু বাড়াতে চাইতাম। কারণ স্কুলে আমার বন্ধুদের প্রায় সবারই বাবা চাকুরিজীবী ছিলেন। ওদের স্বচ্ছলতার গল্প শুনে ভয়ে কুঁকড়ে থাকতাম আমাদের ঘরে আসলে কি ভাববে! অবশ্যই আমার নানুর আন্তরিকতা যাবতীয় সব শংকা দূর করে দিতো। তবে আমার বন্ধুদের মধ্যে একটা বোঝাপড়া ছিলো। তারা আমাকে কখনো বাবা মা কোথায় সেটা জানতে চাইতো না। আমার কাছে গ্রামের ঈদের প্রতি আজো একটা মোহ কাজ করে। ঈদ মানে প্রায় কয়েক হাজার মানুষের সাথে দেখা হওয়া। বছরে একবারের জন্য হলেও প্রায় শ’খানেক বাড়িতে গিয়ে কুশল বিনিময় করা। ভালো মন্দ কিছু খেতে পারা। একটা হৃদ্যতাপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলা পরস্পরের মধ্যে৷ সারা বছরের যাবতীয় সব গ্লানি অনায়াসে ভুলে গিয়ে এই একটা দিনে আমরা সকল ভেদাভেদ অতিক্রম করে কাঁধে কাঁধ রেখে দাঁড়িয়ে যেতাম ঈদের নামাজে৷ বেরিয়ে পরস্পর কুশল বিনিময় ও কোলাকুলি। সেমাই খাওয়া দিন ভর। যার ছিঁটফোটাও নেই শহুরে নাগরিক জীবনে।  ঈদ মানে আমার কাছে গ্রামে যাওয়া। যেখানে বেড়ে উঠেছি। যাদের সাথে বড় হয়েছি সুখ, দুঃখ, ক্লেদ ও আনন্দে। বছর শেষে আবারো সবার সাথে হাসি বিনিময়। সালাম বিনিময়। অধুনা প্রচলিত সেলামি তো আছেই! ঈদ সবার জীবনে এক দিনের জন্য হলেও হাসি ফোটাক। দুঃখ, মান-অভিমান ভুলে সবাই গেয়ে উঠুক, ঈদ মোবারক, ঈদ মোবারক!  লেখক : শিক্ষক ও অনুবাদক, ইংরেজি বিভাগ, বাংলাদেশ আর্মি ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স এন্ড টেকনোলজি, কুমিল্লা  
বুকার পুরস্কারের সংক্ষিপ্ত তালিকা প্রকাশ
বইমেলায় ৬০ কোটি টাকার বই বিক্রি
‘ফারাক’ বইটি হতে পারে জীবন রক্ষার হাতিয়ার
বইমেলায় যারা পেলেন গুণীজন স্মৃতি পুরস্কার
বইমেলায় ৬০ কোটি টাকার বই বিক্রি
রাজধানীতে আয়োজিত চলতি বছরের (২০২৪) অমর একুশে বইমেলায় ৬০ কোটির বেশি টাকার বই বিক্রি হয়েছে, যা ২০২৩ সালের তুলনায় অন্তত ১৩ কোটি টাকা বেশি। গত বছর মেলায় ৪৭ কোটি টাকার বই বিক্রি হয়েছিল । শনিবার (২ মার্চ) বিকেলে অমর একুশে বইমেলার সমাপনী অনুষ্ঠানে এ তথ্য জানান বাংলা একাডেমির উপ-পরিচালক শাহেদ মমতাজ। অমর একুশে বইমেলার সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টা কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী। সম্মানিত অতিথি ছিলেন নবনিযুক্ত সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী নাহিদ ইজাহার খান। বিশেষ অতিথি ছিলেন সংস্কৃতি সচিব খলিল আহমদ। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাংলা একাডেমির সভাপতি কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন। এতে স্বাগত বক্তব্য দেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা। নবনিযুক্ত সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী নাহিদ ইজাহার খান রাজধানীর বেইলি রোডে নিহতদের স্মরণ করে তাদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন। এ সময় তিনি বলেন, গত ১ ফেব্রুয়ারি বইমেলার উদ্বোধনী আয়োজনে এসেছিলাম। জীবনে চিন্তাও করিনি বইমেলার সমাপনী আয়োজনে আমি সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী হিসেবে হাজির হবো। তিনি বলেন, আমি কোনো প্রতিশ্রুতি দিতে চাই না। কোনো প্রমিজে বিশ্বাস করি না, কাজ দিয়ে নিজেকে প্রমাণ করতে চাই। প্রতিশ্রুতি তো ভঙ্গ হয়ে যায়। আমরা সবাই মিলে যদি একটি টিমওয়ার্ক করতে পারি, তাহলে কাজটি ভালো হবে।’ তিনি আরও বলেন, বাংলা একাডেমি ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের বইমেলা এখন ঐতিহ্য হয়ে গেছে। এই বইমেলা সরানোর বিষয়ে কথা উঠেছে। আমরা কোনো না কোনো ব্যবস্থা করে বইমেলা এখানে রাখার ব্যবস্থা করবো। প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টা কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী বলেন, সারা পৃথিবী ঘুরে এসেও এমন একটি বইমেলা খুঁজে পাবেন না। এ বইমেলা আমাদের আবেগের মেলা, জাতিসত্তার মেলা। এই বইমেলা জাতি হয়ে ওঠার বইমেলা, আমাদের মাটি ও মানুষকে ভালোবাসার বইমেলা। চলতি বছরের (২০২৪) অমর একুশে বইমেলায় বই প্রকাশিত হয়েছে ৩ হাজার ৭৫১টি। গত বছর প্রকাশিত হয় ৩ হাজার ৭৩০টি বই।  
শেষ সময়ে প্রাণবন্ত বইমেলা
বিদায়ের সুর বাজছে আমর একুশে বইমেলায়। শেষবেলায় দর্শনার্থী ছিল কম। তবে পাঠকদের সমাগম ছিল বেশি। মেলায় যারা আসছেন অধিকাংশের হাতে ছিল বই। শেষ সময়ে পাঠকদের পদচারণায় প্রাণবন্ত ছিল বইমেলা। শনিবার (২ মার্চ) সরেজমিনে দেখা গেছে, তেমন ভিড় ছিলনা মেলায়। দর্শনার্থীদের সংখ্যা কম দেখা গেছে। শেষবেলা বইপ্রেমীরা খুঁজে খুঁজে বই কিনছেন। তবে অধিকাংশ পাঠককে হাতে বই নিয়ে ঘুরতে দেখা গেছে। খালি হাতে মেলা প্রাঙ্গণ থেকে বের হচ্ছে না পাঠকরা। এদিকে মেলার শেষ দিন হওয়ায় বই গোছাচ্ছেন কর্মীরা। বইগুলো প্যাকেজিং করে বিদায়ের জন্য প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। বিক্রয়কর্মীরা জানান, মেলায় দর্শনার্থী কম হলেও বেচাকেনা ভালো। যারা স্টলে আসছেন তাদের বেশির ভাগই বই কিনছেন। ঘুরতে আসা মানুষের সংখ্যা ছিল কম। তারা আরও বলেন, সময় বাড়ানোর কারণে কাল থেকে ভালো বিক্রি হয়েছে। শেষ সময়ে প্রবন্ধ, ইতিহাস, মুক্তিযুদ্ধ, স্বাস্থ্যবিষয়ক ও বাচ্চাদের নৈতিকতার বই বেশি বেচাকেনা হয়েছে। দর্শনার্থী আলমগীর হোসেন বলেন, শেষ সময়ে কিছু প্রয়োজনীয় বই সংগ্রহ করেছি। যা অন্যসময় পাওয়া যায় না। ভালেই লাগছে। এরপর অপেক্ষা করতে হবে আরও একবছর। প্রসঙ্গত, মেলা শেষ হওয়ার কথা ছিল ২৯ ফেব্রুয়ারি। তবে প্রকাশকদের আবেদনের পর প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনার নির্দেশে মেলার সময় বাড়ানো হয় দুদিন।
বইমেলায় সাড়া জাগিয়েছে ‘নদী পেরোলেই সাততারা’
এবার একুশে বইমেলায় প্রকাশিত হয়েছে নন্দিত নাট্যকার শফিকুর রহমান শান্তনু এর নতুন উপন্যাস ‘নদী পেরোলেই সাততারা’। উপন্যাসটি প্রকাশের সাথে সাথেই পাঠক মহলে যথেষ্ট সাড়া ফেলেছে।  এদিকে মেলার ২৫ তম দিনে নিঃশেষ হয়েছে বইটির প্রথম মুদ্রণ। নাট্যকার শফিকুর রহমান শান্তনু বলেন, একজন লেখকের জন্য এটা খুবই আনন্দের যে, পাঠক তার বইটি গ্রহণ করছে। আমার সৌভাগ্য, গত কয়েক বছরে আমার অল্পসংখ্যক নিয়মিত পাঠক তৈরি হয়েছে। তাদের মাধ্যমেই অন্যরা বইটির ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করছে। আমি দেখেছি, যারা সত্যিকারের পাঠক তারা যাচাই করে কয়েক পাতা পড়ে যদি সন্তুষ্ট হয় তবেই বই কেনে। এবার মেলায় ৫/৬ দিন যাওয়ার সুযোগ হয়েছে। প্রচুর অচেনা পাঠকের সাথে পরিচয় হয়েছে। তারা আগের বই নিয়ে মতামত জানিয়েছেন। আমাকে আবেগে ভাসিয়েছেন। নদী পেরোলেই সাততারা বইটি প্রকাশ করেছে ঝুমঝুমি প্রকাশন, স্টল ৭১-৭১। বইয়ের গল্প প্রসঙ্গে লেখক বলেন, প্রেম ও পারিবাহিক আবহের এই উপন্যাসে উঠে এসেছে সমকালীন বাংলাদেশ ও সমাজবাস্তবতা। প্রসঙ্গত, শফিকুর রহমান শান্তনু’র হরর থ্রিলার গবলিন, রোমান্টিক থ্রিলার কেউ কেউ পুরনো হয় না বিগত বছরগুলোতে রকমারি বেস্টসেলারে জায়গা করে নিয়েছিল। উপন্যাস লেখার পাশাপাশি বর্তমানে নাটক নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন শান্তনু। ধারাবাহিক নাটক ঘরের শত্রু বিভীষন, নীল ঘুর্নি সহ ইদের বেশ কিছু বিশেষ নাটকের শুটিং ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে।    
এপিএল এর ২টি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন
একাডেমিয়া পাবলিশিং হাউজ লিমিটেড (এপিএল) প্রকাশিত দুইটি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করা হয়েছে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আয়োজিত অমর একুশে বইমেলায় বৃহস্পতিবার, বিকালে গ্ৰন্থ উন্মোচন মঞ্চে এ মোড়ক উন্মোচন করা হয়। প্রকাশিত নতুন বইগুলোর মোড়ক উন্মোচন করেন পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. আবদুল লতিফ মাসুম এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাচ্যকলা বিভাগের অনারারী প্রফেসর ড. মো. আব্দুস সাত্তার।  ড. সৈয়দ শহীদ আহমেদ এর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন নর্দার্ন ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ ট্রাস্টের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. আবু ইউসুফ মো. আব্দুল্লাহ, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় কুষ্টিয়ার সাবেক ট্রেজারার প্রফেসর ড. আনোয়ারুল করীম, এনইউবির উপ-উপাচার্য প্রফেসর ড. নজরুল ইসলাম, শের-ই-বাংলা: জীবন ও কর্ম গ্রন্থের লেখক প্রফেসর মো. মোসলেম উদ্দীন শিকদার এবং শিল্পকলা সাহিত্য ও ইসলাম গ্রন্থের লেখক প্রফেসর ড. মাহফুজুর রহমান। অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, পরিচালক মো. সোলায়মান মিয়া, গবেষক ও সাংবাদিক আনিসুর রহমান এরশাদ, এপিএল’র ম্যানেজার মো. আখতারুজ্জামান এবং প্রচ্ছদশিল্পী এম এম হোসেন। প্রফেসর ড. আবদুল লতিফ মাসুম বলেন, এ কে ফজলুল হক ছিলেন যথার্থ অর্থে বাংলার কিংবদন্তি জননায়ক। তিনি ছাত্র-শিক্ষক, বুদ্ধিজীবী, আইনজীবী ও রাজনীতিবিদদের নায়ক। বাংলার গণমানুষের অবিসংবাদিত বর্ষীয়ান জাতীয় নেতা। সমকালীন বিশ্বনেতাদের মধ্যে কামাল পাশা (আতাতুর্ক), লেলিন, মাওসেতুং কিংবা জিন্নাহ-গান্ধীর ন্যায় তিনি জাতির পিতা বলে আখ্যায়িত না হলেও এবং তাঁর পক্ষে কোনো প্রচার, প্রকাশনা, বিলবোর্ড তেমন কিছু না থাকা সত্ত্বেও মৃত্যুর অর্ধশতাব্দী পরেও তিনি স্মরণীয় বরণীয় নেতা, জনগণের মুকুটহীন সম্রাট। প্রফেসর মো. মোসলেম উদ্দীন শিকদার বলেন, ‘শের-ই-বাংলা: জীবন ও কর্ম’ গ্রন্থটি, ‘বাংলার বাঘ’ খ্যাত আবুল কাশেম ফজলুল হক-এর বর্ণাঢ্য কর্মময় জীবনালেখ্য। তাঁর সময়কালে (১৮৭৩-১৯৬২) দেশের আর্থসামাজিক অবস্থা এবং পার্লামেন্টে (১৯১৩-১৬) ও বিভিন্ন সময়ে প্রদত্ত তাঁর ঐতিহাসিক ভাষণসমূহের মসিচিত্র সংক্ষেপে বিবৃত হয়েছে। প্রায় শতবর্ষ আগে ভারতীয় হিন্দি ও উর্দুভাষী অবাঙালিদের প্রদত্ত খেতাব ‘শের-ই-বাংলা’ উপনামটি মূল নামের সাথে বহুল পরিচিত। প্রায় শতাব্দী ব্যাপী কর্মময় জীবনে তিনি যতসব উচ্চপদে সমাসীন ছিলেন, তার মধ্যে অবিভক্ত বাংলার শিক্ষা ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী (১৯২৪), প্রধানমন্ত্রী (১৯৩৭-৪৩), কলকাতা করপোরেশনের প্রথম মুসলিম মেয়র (১৯৩৫), অন্যতম জাতীয় নেতা মওলানা ভাসানী, সোহরাওয়ার্দীসহ গঠিত যুক্তফ্রন্ট সরকারের মুখ্যমন্ত্রী (১৯৫৪), নিখিল পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী (১৯৫৫) এবং পূর্ব পাকিস্তানের ১০ম ও প্রথম বাঙালি গভর্নর (১৯৫৬-৫৮)। উল্লেখ্য, ২০১৯ সাল থেকে সৃজনশীল একাডেমিক এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিষয়ের সিলেবাস সংশ্লিষ্ট বই প্রকাশ করে আসছে প্রতিষ্ঠানটি। বইমেলায় এপিএল এর স্টল নং ১৭৬। অমর একুশে বইমেলা ২০২৪ উপলক্ষে এই দুটিসহ মোট ১১টি নতুন বই প্রকাশ করেছে এপিএল।
পল্লীগীতিই ধ্যানজ্ঞান শিল্পী শাহীনের
ভাওয়াইয়া গানকে দেশজুড়ে ছড়িয়ে দিতে চান সংগীত শিল্পী মো. শাহীন হোসেন। এই ধরনের গান গাইতে পছন্দ করেন ‘দুই চাকার গাড়ি’ খ্যাত এই শিল্পী। পল্লীগীতিকেই ধ্যানজ্ঞান করেছেন শিল্পী শাহীন। যশোর জেলার খাজুরা বাজারের মো. তবিবুর রহমানের ছেলে মো. শাহীন হোসেন। তিনি বাংলাদেশ টেলিভিশনে আধুনিক গানের এবং বাংলাদেশ বেতার আগারগাঁও, ঢাকা কেন্দ্রে লালন সংগীত ও পল্লীগীতিতে তালিকাভুক্ত সংগীত শিল্পী। ২০১১ সাল থেকে এই দুই মাধ্যমে নিয়মিত সংগীত পরিবেশ করে আসছেন তিনি। এ ছাড়া বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির তালিকাভুক্ত এই শিল্পী ঢাকার সরকারি সংগীত কলেজ থেকে লোক সংগীতে বি মিউজ, এম মিউজ ডিগ্রি অর্জন করেছেন। তিনি এস এম মিডিয়া ভিশনের নিয়মিত সংগীত শিল্পী। এই প্রতিষ্ঠানে ৫টি মৌলিক ভাওয়াইয়া গান রেকর্ড করেছেন। এ ছাড়া বাংলাদেশর অন্যতম নাট্যদল লোক নাট্যদলে ২০১৩ সাল থেকে নিয়মিত নাটক ও সংগীত শিল্পী হিসেবে যুক্ত আছেন। মাটির গান সংগীত দলের পরিচালক শাহীন হোসেন। শিল্পী ২০১৭ সালে স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে জাতীয় সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতায় লোক সংগীতে জাতীয় পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ নির্বাচিত হন। শিল্পী সংগীত শিক্ষক হিসেবে দীর্ঘ ৮ বছর যাবত ইন্টারন্যাশনাল হোপ স্কুল বাংলাদেশে নাটক সংগীত ও অঙ্কন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছেন শাহীন। এখন পর্যন্ত সংগীত শিল্পী শাহীন হোসেনের ৭টি মৌলিক গান রেকর্ড হয়েছে। সেগুলো হলো- দুই চাকার গাড়ি, ও নদীয়ার চাঁদ, তোমার চোখে হাজার ফাগুন, একটি সপ্ন দেখবো বলে, রাগ করিস না, নাজানি ভাব নদীর কেমন ধারা, মধুমতী কর্ণফুলী। বেতার ও টেলিভিশনে নিয়মিত সংগীত পরিবেশন করে আসছেন এই শিল্পী। এ ছাড়া দেশে-বিদেশে অসংখ্য মঞ্চে সুর-ছন্দে দর্শকদের মোহিত করেছেন তিনি। ঢাকাস্থ সুইট কনভেনশন হলে ভাওয়াইয়া সংরক্ষণ ও গবেষণা পরিষদ কতৃক আয়োজিত অনুষ্ঠানে সংগীতে অবদানের জন্য সম্মাননা দেওয়া হয় শাহীন হোসেনকে।
স্বরচিত দুই বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করলেন প্রধানমন্ত্রী
জাতিসংঘ ও জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণের ওপর নিজের রচিত দুটি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।  বুধবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) মন্ত্রিসভার বৈঠকে বই দুটির মোড়ক উন্মোচন করেন তিনি। ‘সকলের তরে সকলে আমরা’ এবং ‘আবাহন’ শিরোনামে বই দুটি প্রকাশিত হয়েছে। বই দুটির গ্রন্থনা ও সম্পাদনা করেছেন প্রধানমন্ত্রীর স্পিচ রাইটার এম নজরুল ইসলাম।  এর মধ্যে ‘সকলের তরে সকলে আমরা’ বইয়ে জাতিসংঘে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেওয়া ১৯টি ভাষণ এবং সেগুলোর ইংরেজি অনুবাদ স্থান পেয়েছে। আর অপর গ্রন্থ ‘আবাহন’-এ স্থান পেয়েছে ২০০৯ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত জাতির উদ্দেশে দেওয়া তার গুরুত্বপূর্ণ ভাষণগুলো।   এদিন মন্ত্রিসভা বৈঠকের শুরুতে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় প্রকাশিত ট্যুরিস্ট গাইড ‘জাতির পিতার সমাধিসৌধ’-এর মোড়ক উন্মোচনও করেন প্রধানমন্ত্রী। এ সময় উপস্থিত ছিলেন গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী ও সচিব কাজী ওয়াছি উদ্দিন।  একইদিন কৃষি সচিব ওয়াহিদা আক্তার রচিত ‘রাজনীতির পরম্পরা’ বইয়েরও মোড়ক উন্মোচন করেন প্রধানমন্ত্রী। গ্রন্থটিতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, তার পরিবার এবং বাংলাদেশের রাজনীতির পালাবদল সম্পর্কে অসাধারণ পর্যবেক্ষণ উঠে এসেছে।  এছাড়াও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়া মুক্তাগাছার মণ্ডা, জামালপুরের নকশিকাঁথা এবং জিআই সনদ তুলে দেন শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন ও মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব জাকিয়া সুলতানা।   
বইমেলায় মারুফ হোসেন সজীবের ‘অলিতে গলিতে’
অমর একুশে বইমেলায় প্রকাশিত হয়েছে তরুণ চিত্রনাট্যকার ও নির্মাতা মারুফ হোসেন সজীবের গল্পের বই ‘অলিতে গলিতে’। এটি তার প্রথম বই। প্রচ্ছদ করেছেন জুলিয়ান। বইটি প্রকাশ করছে দুয়ার প্রকাশনী। এর মুদ্রিত মূল্য রাখা হয়েছে ২৭০ টাকা। বইটি রকমারি ডটকমসহ বইমেলায় প্রকাশনীর ৩৫৭ নাম্বার স্টলে পাওয়া যাবে। বইটি সম্পর্কে লেখক মারুফ হোসেন সজীব বলেন, বইটি ১১টি ছোটগল্প নিয়ে সাজানো হয়েছে। শহরের অলিগলির ছোট ছোট গল্প নিয়ে সাজানো হয়েছে। গল্পে আছে প্রেম, সংসার, সমাজের বিভিন্ন ধরনের অবক্ষয়ের ছোটাছুটি। ভিন্ন ভিন্ন আঙ্গিকে লেখা প্রতিটি গল্পই আশা করি পাঠকদের ভালো লাগবে। প্রসঙ্গত, ‘বিলোপ’ নাটকের চিত্রনাট্যের জন্য পেয়েছেন মেরিল প্রথম আলো পুরস্কার-২০২১ ও দুই ক্যাটাগরিতে শ্রেষ্ট নাট্যকার ও শ্রেষ্ট নাট্যপরিচালক হিসেবে ‘চ্যানেল আই ডিজিটাল মিডিয়া অ্যাওয়ার্ড-২০২১।