• ঢাকা রোববার, ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
logo
এক মহাজীবনের সান্নিধ্যে কিছু দুর্লভ মুহূর্ত
রক্ষক যখন ভক্ষক 
বাংলাদেশের পুজিবাজারে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ হওয়া উচিত ছিলো সাধারণ বিনিয়োগকারীদের আস্থার স্থান, সেখানে খোদ ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ কমিশন অবৈধ বাণিজ্যের সাথে জড়িত খায়রুল বাশার এবং তার সহযোগী গংদের দিয়ে চলেছে সুরক্ষা।  গত ১১ নভেম্বর সোমবার সাধারণ বিনিয়োগকারীদের পক্ষ থেকে একটি দল ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের উর্ধ্বতন কমকর্তাদের সাথে এই বিষয়টি নিয়ে আলোচনার জন্য যায়। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক এজিএম সাত্তিক আহমেদ বিনিয়োগকারীদের সাথে কথা বলেন, যার ভিডিও আমাদের কাছে আছে। বিনিয়োগকারীরা স্পষ্টভাবে ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালককে জানিয়ে আসে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের প্রধান নিয়ন্ত্রক কমকর্তা খায়রুল বাশার আবু তাহের মোহাম্মদ, বজলুর রহমান (এজিএম), মোহাম্মদ ইকরাম (মনিটরিং ম্যানেজার), মো. জাকির (সিনিয়র এক্সকিউটিভ) এবং মো. আফজালুর রহমান (ইনভেস্টিগেশন এন্ড এনফোর্সমেন্ট, এসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার) এই পুরো টিমটি পুঁজিবাজারের স্বার্থের বিরুদ্ধে কাজ করছে।  তারা বর্তমান সরকারকে বিব্রত করার জন্য কাজ করছে, বর্তমান সিকুউরিটি এক্সচেঞ্জ কমিশনের চেয়ারম্যান খন্দকার মাকসুদের কমিশনের  বিরুদ্ধে কাজ করছে। তারা বিগত সরকারের সালমান এফ রহমান - শিবলী রুবাইয়াত (সাবেক চেয়ারম্যান বাংলাদেশ সিকুউরিটি এক্সচেঞ্জ কমিশন) এর পক্ষ হয়ে কাজ করছে। এই চক্রটি ২৫০ টি ব্রোকার হাউজের কাছে আতংকের নাম, এরা সাপ্তাহিক চাঁদা উত্তোলন করে প্রতিটি ব্রোকার হাউজ থেকে। যদি কোন ব্রোকার হাউজ চাঁদা দিতে ব্যর্থ হয় তাহলে তারা তার বিরুদ্ধে আইনের তকমা দিয়ে হেনস্থা করে। বিগত সরকারের শেষ সময়ের চাঞ্চল্যকর তদন্তের নামে হয়রানির শিকার আভিভা ইকুউটি ম্যানেজমেন্ট লিমিটেড। সালমান এফ রহমান ৪০ কোটি টাকার মারজিন লোন নেয় তার কোম্পানির স্পনসর শেয়ার দিয়ে। এই টাকা এখন পর্যন্ত অনাদায়ী পাওনা হিসেবে পড়ে আছে। সালমান এফ রহমানের কাছে পাওনা টাকা ফেরতের জন্য তাগাদা দিলে উনি উনার খায়রুল বাশার গং ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের পেটুয়াবাহিনী লেলিয়ে হয়রানির নামে তদন্ত চালিয়ে যায়। সেই টাকা সালমান এফ রহমানের কাছে থেকে কোনভাবেই উদ্ধার করা সম্ভব হয় নাই এবং উনি সেই ক্রয়কৃত শেয়ার বিক্রির ক্ষেত্রেও বাধা দেয়। এ অবস্থায় আভিভা ইকুইটি ম্যানেজমেন্টের পক্ষ থেকে বারংবার চাপ দেওয়া হলে সালমান-শিবলী ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের তাদের পেটোয়া বাহিনী খায়রুল বাশার আবু তাহের এবং তার পালিত প্রভুভক্ত টিমকে লেলিয়ে দেয়। তারা নিয়মবহির্ভূতভাবে চিরুনি অভিযানের নামে তদন্ত চালায়। শেষমেষ কোন অভিযোগ না পেয়ে জহিরুল হক জুয়েল (সাবেক কমকর্তা আভিভা ইকুইটি ম্যানেজমেন্ট লি:) এর মাধ্যমে ব্যক্তিগত মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে এখনো কড়া ভাষায় ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের মাধ্যমে চিঠি পাঠাচ্ছে। যা ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের আইন বহির্ভুত। এই জহিরুল হক জুয়েল হলেন খায়রুল বাশার এবং বজলুর রহমানের খুবই বিশ্বস্ত সহচর এবং পুরানো বন্ধু। ব্যক্তিগত আক্রোশ থেকেই এই ব্রোকার হাউজের সম্মানহানির মাধ্যমে খায়রুল বাশার গং প্রতিশোধ নেওয়ার চেষ্টা করছে।  অভিযোগ আছে, এই খায়রুল বাশার গং বাজারের মাফিয়া এবং গেম্বালারদের সাথে চুক্তিবদ্ধ। বাজারের যেসব বস্তাপচা বন্ধ কোম্পানি আছে সেগুলো ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে উচ্চ মূল্যে পাবলিককে শেয়ার গছিয়ে দিচ্ছে এবং বিপুল পরিমান অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে। উল্লেখ্য, এমারল্ড অয়েল কোম্পানি  বা লাভেলো কোম্পানির শেয়ার যখন উচ্চমুল্যে ছাড়া হয়, তখন এই খায়রুল বাশার গং ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের পক্ষ থেকে কোন আইনগত পদক্ষেপ নেয় নাই। তখন তারা নিরবতা পালন করে। কারণ এই গেম্বালারদের কাছ থেকে তারা মোটা অংকের টাকা পায়। আর যখন তাদের সাথে চুক্তিবদ্ধ ছাড়া কোন ভালো কোম্পানির শেয়ার বাজারে নিজস্ব গতিতে বেচাকেনা হয় তখন তারা ইনকুয়েরি দিয়ে চিঠি পাঠায় কোম্পানিকে, সাধারণ বিনিয়োগকারীদের, ব্রোকার হাউজগুলোতে। এর মাধ্যমে তারা তাদের ভাগের টাকা আদায়ের চেষ্টা করে, নয়ত আইনের গ্যাড়াকলে ফেলে শেয়ার কেনাবেচা বন্ধ করে দেয়। আফসোস, বিগত সরকারের এই জঞ্জাল এখনো কিভাবে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের ভিতর চাকরি করে!  সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি, এই চিহ্নিত দুষ্ট চক্রের সকল অবৈধভাবে উপার্জিত সম্পদের পরিমাণ জানতে চেয়ে দুদকের মাধ্যমে তদন্ত করার। গত ৫ আগস্ট স্বৈরাচারী সরকার পতনের পর এই খায়রুল বাশার আমেরিকা পালানোর চেষ্টা করেছিলো। কিন্তু সফল হয়নি। অভিযোগ আছে, বর্তমানে তিনি সেনাবাহিনীর গোয়েন্দা সংস্থার একজন ডিডি বা অফিসারের প্রভাব খাটিয়ে তার চাকরি বাঁচিয়ে রাখার আপ্রান চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। সাধারণ বিনিয়োগকারীরা খায়রুল বাশারের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানালেও খোদ ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ তার এবং তার সহযোগীদের পক্ষে সাফাই গাইছে। এ অবস্থায় প্রশ্ন ওঠতেই পারে, আমরা কি আসলেই বিজয় আনতে পেরেছি? চোখের সামনে দেখছি, কিছু চাটার দল কোনো না কোনোভাবে দেশটাকে চেটে খাচ্ছে। লেখক: পুঁজিবাজার বিশ্লেষক এবং বিনিয়োগকারী আরটিভি/  ডিসিএনই
ত্রিমুখী সমস্যায় পাহাড়ি জনগোষ্ঠী, শান্তির অন্বেষায় প্রয়োজন কঠোর সিদ্ধান্ত
পুঁজিবাজারের চলমান অস্থিরতা এবং কিছু প্রস্তাবনা
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের জালে আসক্ত হয়ে পড়ছেন না তো?
কীভাবে আ.লীগ আমলের পাচার হওয়া সম্পদ উদ্ধার করতে পারে বাংলাদেশ?
পর্যটন শিল্পের রূপান্তর: অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং বৈশ্বিক স্বীকৃতির পথ
দেশে পর্যটন ব্যবসার উন্নতি ও অগ্রগতি করতে হলে কিছু সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি, যা দেশের সংস্কৃতি, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, এবং ঐতিহ্যকে কাজে লাগিয়ে পর্যটকদের আকর্ষণ করবে। নিচে কিছু কৌশল আলোচনা করা হলো যা পর্যটন ব্যবসার উন্নয়নে সহায়ক হতে পারে। ১. নিশ পর্যটন (Niche Tourism) বিকাশ  •    ইকো-ট্যুরিজম: সুন্দরবন, চট্টগ্রাম হিল ট্র্যাক্স ও বান্দরবানের পাহাড়ি এলাকাগুলোর পরিবেশ-বান্ধব ভ্রমণকে উন্নীত করুন। •    সাংস্কৃতিক পর্যটন: স্থানীয় উৎসব, ঐতিহ্যবাহী শিল্পকর্ম, এবং ঐতিহাসিক স্থাপনাগুলি (যেমন, ষাট গম্বুজ মসজিদ, পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহার) প্রচার করুন।  •    অ্যাডভেঞ্চার পর্যটন: চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারে ট্রেকিং, রিভার ক্রুজিং এবং অন্যান্য অ্যাডভেঞ্চার স্পোর্টসের ব্যবস্থা করতে পারেন। •    ধর্মীয় পর্যটন: মহাস্থানগড়, পুঠিয়া মন্দির, এবং অন্যান্য ধর্মীয় স্থানগুলোকে প্রচার করুন। ২. অবকাঠামো উন্নয়ন •    পরিবহন ব্যবস্থার উন্নতি: মূল পর্যটন স্থাপনাগুলির সাথে ভালো সড়ক ও যেখানে সম্ভব বিমান সংযোগ গড়ে তুলুন। •    আবাসন সুবিধা: পর্যটকদের জন্য বিভিন্ন বাজেটের আবাসনের সুযোগ তৈরি করুন, বিশেষ করে নতুন পর্যটন হাবগুলোতে। •    ডিজিটাল সংযোগ: পর্যটন এলাকায় ইন্টারনেট এবং মোবাইল নেটওয়ার্ক উন্নত করুন। ৩. স্থানীয় সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য প্রচার •    সাংস্কৃতিক উৎসব: স্থানীয় সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য প্রদর্শনের জন্য বিভিন্ন উৎসবের আয়োজন করতে পারেন, যেমন পহেলা বৈশাখ, লোকসংগীত উৎসব। •    খাদ্য পর্যটন: স্থানীয় খাবার ও রান্নার উৎসবের আয়োজন করতে পারেন, যা পর্যটকদের আকর্ষণ করবে। •    হস্তশিল্প: স্থানীয় কারিগরদের হস্তশিল্প প্রচার ও বিক্রির জন্য বিশেষ উদ্যোগ নিন। ৪. ডিজিটাল মার্কেটিং ও অনলাইন উপস্থিতি •    সোশ্যাল মিডিয়া প্রচারণা: ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম ও ইউটিউবের মাধ্যমে দেশের পর্যটন স্পটগুলোকে বিশ্ববাসীর কাছে তুলে ধরুন। •    ওয়েবসাইট ও অনলাইন বুকিং: পর্যটকদের জন্য সহজ ও ব্যবহারবান্ধব বুকিং ব্যবস্থা তৈরি করুন। ৫. পর্যটকদের নিরাপত্তা ও সুবিধা বৃদ্ধি •    পর্যটন তথ্যকেন্দ্র: প্রধান পর্যটন এলাকায় ও বিমানবন্দরে তথ্যকেন্দ্র স্থাপন করুন। •    নিরাপত্তা ব্যবস্থা: পর্যটকদের নিরাপত্তার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিন এবং পর্যটন এলাকাগুলোতে স্বাস্থ্যসেবা সহজলভ্য করুন। ৬. স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক অংশীদারিত্ব •    ভ্রমণ সংস্থা ও ট্যুর অপারেটরদের সাথে অংশীদারিত্ব: স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ভ্রমণ সংস্থার সাথে অংশীদারিত্ব করে পর্যটকদের আকর্ষণ করুন। •    হোটেল ও বিমান সংস্থাগুলোর সাথে সহযোগিতা: হোটেল ও বিমান সংস্থাগুলোর সাথে মিলে প্যাকেজ অফার করুন। •    সরকার ও এনজিও সহযোগিতা: বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের সাথে কাজ করে টেকসই পর্যটন উদ্যোগ তৈরি করুন। ৭. হসপিটালিটি স্টাফ ও কর্মীদের প্রশিক্ষণ •    গ্রাহক সেবা: হোটেল, রেস্তোরাঁ, এবং ট্যুর গাইডদের পেশাগত প্রশিক্ষণ দিন যাতে তারা পর্যটকদের উন্নত সেবা দিতে পারে। •    ট্যুর গাইড: দক্ষ ও বহু ভাষায় পারদর্শী ট্যুর গাইড নিয়োগ করুন, যাতে আন্তর্জাতিক পর্যটকদের সঠিকভাবে সেবা প্রদান করা যায়। ৮. পর্যটন শিল্পে টেকসইতা নিশ্চিত করা •    পরিবেশ সুরক্ষা: স্থানীয় জনগোষ্ঠীর সাথে মিলে প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণের উদ্যোগ নিন এবং ইকো-ফ্রেন্ডলি ট্যুরিজম প্রচার করুন। •    বর্জ্য ব্যবস্থাপনা: পর্যটন এলাকায় বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য সঠিক পদক্ষেপ নিন, যা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন পরিবেশ রক্ষা করতে সহায়ক হবে। ৯. বিশেষ বাজার লক্ষ্য করা •    দেশীয় পর্যটন: দেশীয় পর্যটকদের জন্য সাশ্রয়ী মূল্যের প্যাকেজ তৈরি করে স্থানীয় পর্যটন বৃদ্ধি করুন। •    আন্তর্জাতিক পর্যটন: নিকটবর্তী দেশগুলোতে (যেমন ভারত, নেপাল, ভুটান) প্রচারণা চালান এবং আন্তর্জাতিক পর্যটন মেলায় অংশগ্রহণ করুন। এই কৌশলগুলোকে একত্রিত করে পর্যটন ব্যবসা উন্নত করা সম্ভব, যা বাংলাদেশের প্রাকৃতিক ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যকে বিশ্ব দরবারে তুলে ধরতে সহায়ক হবে। লেখক: রেসিডেন্ট ইঞ্জিনিয়ার (মেকানিক্যাল), কনকর্ড গ্রুপ আরটিভি/ডিসিএনই
পাহাড়ে হচ্ছেটা কী? সুযোগ নিচ্ছে কারা?
অশান্ত উত্তাল পাহাড়ি জনপদ দীঘিনালা। সেখানে রক্তপাত ঘটেছে, উদগীরণ হচ্ছে সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প। শান্ত প্রকৃতির ছায়া শীতল সৌহার্দ্যতার মাঝে বাজছে সংঘাতের দামামা, আবার মুখোমুখি দাঁড়িয়েছে পাহাড়ি-বাঙালি। ভালো নেই খাগড়াছড়ি, ভালো নেই সেখানকার মানুষজন।  খাগড়াছড়ির মধুপুর, মহাজনপাড়া, দিঘীনালা, বাবুছড়ার নানা জায়গায় হামলা-ভাঙচুর হয়েছে, আগুনে পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে বাড়িঘর, দোকানপাট, সবকিছু। বাঙালি যুবক হত্যার অভিযোগকে কেন্দ্র করেই সীমাহীন অরাজকতার সূত্রপাত ঘটে, ক্রমেই তা ছড়িয়ে পড়ে পাহাড় থেকে পাহাড়ে। টানা দুদিন ধরে স্পর্শকাতর ওই জনপদে সংঘাতের বিস্তার ঘটলো কিভাবে? বাধাহীন নৈরাজ্যের পেছনে কারা দায়ী? সবকিছু খুঁজে বের করার পাশাপাশি সকল ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারে জরুরি ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা নেওয়া হোক, এখনই। বৃহস্পতিবার রাতভর পাহাড়ি ও বাঙালিদের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছে। এ সংঘর্ষে অন্তত তিনজন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন উভয় পক্ষের ৩০ জনেরও বেশি। এসময় অসংখ্য বাড়িঘর, দোকানপাট আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। নিহতরা হলেন- ধন রঞ্জন চাকমা (৫০), রুবেল ত্রিপুরা ও জুরান চাকমা (২০)। এর মধ্যে রুবেল ত্রিপুরা ও জুরান চাকমা (২০) জেলা সদরের নারানখাইয়া এলাকায় ব্রাশফায়ারে নিহত হয়েছেন। আর ধন রঞ্জন চাকমা সংঘর্ষের মধ্যে পড়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান।  জাতিগত সংঘাত ছড়িয়ে পড়েছে দূরবর্তী রাঙামাটিতেও। সেখানেও সংঘর্ষে একজন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। উত্তেজনাময় পরিবেশের জের ধরে বান্দরবানেও বিরাজ করছে থমথমে অবস্থা। সেখানে জেএসএস আর দেশীয় নিরাপত্তা বাহিনীর ভূমিকা বুঝতে সাধারণ বাসিন্দাদের গলদঘর্ম অবস্থা। আগে সংঘাতময় পরিস্থিতি কঠোর ভাবে বন্ধ করুন, জ্বালাও পোড়াও চলবে না। ব্যর্থতার দায়ভার গণমাধ্যমের কয়েকটি যুগ ধরে বৃহত্তর পার্বত্য জনপদ জুড়ে অস্বাভাবিক, বিপর্যয়কর পরিবেশ চলে আসছে। এদেশেরই অবিচ্ছেদ্য অংশের বিরাট সংখ্যক পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী বনাম সেটেলার বাঙালিদের মধ্যে সীমাহীন বৈরীতাসহ সঘাত সংঘর্ষ চলে আসছে। লাশের পর লাশ পড়েছে, রক্তাক্ত হয়েছে সবুজ পাহাড়। উভয়পক্ষই পরস্পরবিরোধী মানবাধিকার লংঘনের অভিযোগ তুলে, একপর্যায়ে সবকিছুর জন্য দায় চাপিয়ে দেওয়া হয় সেনাবাহিনীর উপর। অথচ এদেশের এতো এতো মিডিয়া, অনুসন্ধানী সাংবাদিকেরও অভাব নেই। কিন্তু সুদীর্ঘ সময়েও কোনো অনুসন্ধানী সাংবাদিক টিমকে পাহাড়ে অশান্তির নেপথ্য তথ্যচিত্র তুলে ধরাসহ সহসা সমাধানের কোনো পথ বাৎলে দিতে দেখা যায়নি।  যারাই হাতি ঘোড়া নিয়ে অনুসন্ধানে নেমেছে তারাই ফিরে এসে নয়তো সেটেলার বাঙালিদের পক্ষ নিয়েছে, নয়তো পাহাড়িদের ঘরের মানুষ সেজে মানবতাবাদী বনে গেছেন। কিন্তু পাহাড়ের সমস্যা অভিন্ন অবস্থাতেই জিইয়ে রয়েছে, ভিক্ষুকের দগদগে ঘা এর মতো। বন্ধু প্রসীত ইতিহাস হও! দীঘিনালার বিচ্ছিন্ন ঘটনাটিকে কেন্দ্র করে ইউপিডিএফ নাকি অতিমাত্রায় শক্তি প্রদর্শনের নগ্ন খেলায় মেতে উঠেছে। পাহাড়ি উগ্রবাদী এ সশস্ত্র গ্রুপটির প্রধান প্রসিত খীসা আমার ২৩ বছরের পুরোনো বন্ধু। লীগ পতনের পর বিএনপির প্রভাব বৃদ্ধির সাথে সাথে বন্ধুর ইউপিডিএফ কি অলৌকিক শক্তিতে বলীয়ান হয়ে উঠলো?  আপাতত রক্তের হলিখেলায় বিরতি দাও বন্ধু, নতুন দেশ গঠনে এগিয়ে আসো, সক্রিয় ভূমিকা রাখো। তাহলেই পাহাড়ি জনগোষ্ঠী তাদের স্মৃতির মণিকোঠায় শত শত বছর তোমাকে ঠাঁই দিবে।  পান থেকে চুন খসলেই সুযোগ নেয় ভারত আমরা মণিপুরের স্বাধীনতাকামীদের সহমর্মিতা জানালে, ভারত আমাদের পার্বত্য উগ্রপন্থী গ্রুপগুলোকে লেলিয়ে দেয়। আমরা মিজোরামের অত্যাচারী, বঞ্চিত, দিশেহারা মিজোদের পক্ষে বললে ভারত তখন ভারী অস্ত্রশস্ত্রে সাজিয়ে কুকিচিনকে বান্দরবানে পাঠায় ম্যাসাকার ঘটাতে। আমরা শুধু শান্তি, শৃংখলা আর প্রতিবেশী রাষ্ট্র দানবের মঙ্গল চাই বলে উলফা, এনডিএফবি, আচিক ফ্রন্ট, বড়ো বিদ্রোহী, এনএলএফ, পিএলএ, কেএনএলএফ সহ দুই ডজনেরও বেশি উগ্রপন্থী সশস্ত্র গ্রুপকে বিন্দুমাত্র সুযোগ দেই না, সাহায্য করি না।  স্বাধীনতাকামী এসব সশস্ত্র দল - উপদলকে শুধু সীমান্তবর্তী নোম্যানস ল্যান্ডে অবস্থানের সুবিধাও যদি দেওয়া হয় তাহলে ত্রিপুরা, মিজোরাম, আসাম, মেঘালয়, অরুণাচল, মনিপুর, নাগাল্যান্ডে কিন্তু ভারতের জাকান্দানি শুরু হয়ে যাবে। বাস্তবতায় এখন আসলেই ভারতকে অস্থিরতায় ঠেলে দেওয়া ছাড়া আমাদের পাহাড়ে শান্তি বজায় রাখা কঠিন হয়ে দাঁড়াচ্ছে। লেখক: সিনিয়র সাংবাদিক আরটিভি/ ডিসিএনই
কার তামাকের কলকেতে কে সুখ টান দেয়
উহুদের যুদ্ধের শিক্ষা যেন ভুলে না যাই। মুসলমানদের প্রাথমিক বিজয় কীভাবে হাতছাড়া হয়ে পরাজয় সে বিজয়কে গ্রাস করে। প্রতিরক্ষা ব্যূহ ছেড়ে বিজয় উদযাপনে মনোযোগী হয়ে পড়ায় ভয়াবহ বিপর্যয় নেমে আসে। প্রাথমিক জয়ে প্রতিরক্ষা অরক্ষিত রেখে বিজয়ের আনন্দ উদযাপন, গনিমতের মাল বণ্টনে মশগুল হওয়ায় চরম মূল্য দিতে হয়েছিল মুজাহিদদের। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় অভ্যুত্থানের পর প্রতি অভ্যুত্থান মোকাবিলায় সজাগ ও সরব থাকতেই হবে, নচেৎ বিপদের আশঙ্কা। দল ও গোষ্ঠীর কৃতিত্ব নিতে সম্মিলিত মহৎ আন্দোলনকে পাশ কাটানো কোনোভাবেই কাঙ্ক্ষিত নয়। ভারহীন কথা সমাজমাধ্যমে বলে নিজের প্রচারে নিজের দক্ষতা জাহির করতে গিয়ে জাতীয় ঐক্য নিয়ে দলীয় গন্ধ ছড়ানো অনুচিত। দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে কোনো অর্বাচীনের কথায় গুরুত্ব না দিয়ে জাতীয় ঐক্য বজায় রাখতে হবে। টাউট শ্রেণির লোক মতলববাজ দলীয় উচ্ছিষ্টভোগীরা ছাত্র-জনতার আন্দোলন কাউকে খুশি করতে তাকে রূপকার, সুরকার, গীতিকার, চিত্রনাট্যকার, মাস্টার মাইন্ড ইত্যাদি বিশেষণ বলে তোয়াজ করছে, তেল মারছে শ্রুতি কটুভাবে নিজের ফায়দা লুটতে। বীরত্বের খেতাব কাড়াকাড়ির সময় এখন না। পিচ্ছিল সরু বিপৎসংকুল পথ দিয়ে চলছে দেশ। আন্দোলনে আহতরা হাসপাতালে কাতরাচ্ছে। সব নাগরিক এখনো স্বস্তি খুঁজে পায়নি। হয়তো বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে নিশ্চয়ই কোনো পাকা মস্তিষ্কের দীর্ঘদিনের প্রতিকূল পরিবেশে বৈরী পরিস্থিতিতে আন্দোলনের অভিজ্ঞ নেতার মেধা কাজ করতে পারে যা তিনি আঁচ করতে দেননি। সেই মেধা জাতীয় সম্মিলিত আন্দোলনের ধারায় একাকার হয়ে এক স্রোতে স্বৈরাচার ভাসিয়ে নিয়ে গেছে। কিন্তু তা এখন বলারও প্রয়োজন ফুরিয়ে গেছে। শেখ হাসিনা জনগণের ধাওয়া খেয়ে প্রাণ বাঁচাতে দেশ থেকে পালিয়ে গেছেন মাত্র। সমালোচকরা বলেন, তার অপমানের যন্ত্রণা সহ্য করার মতো পরিপক্বতা, ধৈর্য কোনোটা নেই। মাতা-পুত্র নিজেদের মুখ রক্ষার জন্য নবীনদের সঙ্গে টেলিফোনে আলাপচারিতা করে বুকের ব্যথা বুকেই লুকিয়ে ক্ষমতা হারানোর বেদনা লাঘব করার চেষ্টা করছেন। বলছেন যেভাবে পদত্যাগ করতে হয় সেভাবে তিনি করেননি। টুস করে দেশে আসবেন। কথাটা সমালোচকদের বিনোদন জোগাচ্ছে। সাধারণ মানুষ, যারা কোনো দল-মতের না, তারাই সংখ্যায় বেশি। তারাই রাজপথ দখল করেছিল, ছাত্রদের সঙ্গে রক্ত দিয়েছে বেশি তারাই। ছাত্র-জনতা আমাদের দিয়েছে নতুন ভাবনার জগৎ। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সংবিধান, বিচার বিভাগ, নির্বাচনব্যবস্থা, পুলিশ, প্রশাসন ও দুর্নীতি দমন কমিশন সংস্কারে ছয়টি কমিশন গঠনের ঘোষণা দিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। অন্তর্বর্তী সরকারের এক মাস পূর্তি উপলক্ষে গত বুধবার সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে তিনি এ ঘোষণা দেন। ছাত্র-জনতার আন্দোলন নিয়ে বেপরোয়া মতলববাজরা নির্লজ্জ চামচামির রেকর্ড বাজাচ্ছে। পতিত সরকারের মিডিয়া ফ্যাক্টরি ভোল পাল্টিয়ে নতুন সুরে আওয়াজ তুলছে। মতলববাজরা উঁচু গলায় নতুন সাজে জাতীয়তাবাদী হচ্ছে। এবারের আন্দোলনের লক্ষণীয় ছিল রাজনৈতিক পরিচয় কেউ দেয়নি, রাজনৈতিক প্ল্যাটফরম ছিল না। এ অরাজনৈতিক আন্দোলনে কোথাও কোথাও রাজনৈতিক লোকজন কুলচিহ্নবাহী পতাকা ছাড়া, ঘোষণা ছাড়া, স্লোগান ছাড়া নীরবে ঢুকে পড়ছেন নির্দলীয় হয়ে আন্দোলনকে বেগবান করতে কোনো বিতর্ক সৃষ্টি না করে। সবাই এক হয়ে লড়াই করেছে সরকার পতনের আখেরি রূপ দিতে। বাংলাদেশ এখন বিশ্বে দারুণ এক বিস্ময়। বাংলাদেশের ৫ আগস্ট আন্দোলন নতুন অভিনব মডেল। একদিকে যেমন কেউ নিজেদের রাজনৈতিক পরিচয়দানে উৎসাহ দেখাননি, অন্যদিকে যোগদানকারীদের বেশির ভাগই সচেতনভাবে রাজনীতির ছোঁয়াচ বাঁচিয়ে চলতে চেয়েছেন জাতিকে অরাজনৈতিক এক মঞ্চে ধরে রাখতে। রাজনৈতিক দলগুলো এ গণ আন্দোলনে নিজেদের ভূমিকা গোপন রেখেছে বলে মনে হয়। চূড়ান্ত পর্যায়ে সব রাজনৈতিক দল মিছিল নিয়ে মাঠে নামে। মনে থাকার কথা পতিত সরকার ক্ষমতায় বসেই জামায়াত নিধন অভিযান চালায়। ফাঁসি জেল মামলার শিকলে বাঁধা সব নেতা। বিএনপি ১৮ বছর আন্দোলন-সংগ্রাম করে রক্ত ঝরিয়ে, জীবন দিয়ে, অর্থ দিয়ে, হিজরত করে, জেল জুলুম খুন গুমের অভিশাপে পর্যুদস্ত ক্লান্ত। কর্মীদের বিলুপ্ত করতে গায়েবি মামলা-হামলা খুন গুম চলেছে। দানবীয় সরকার আর জাহেলি প্রশাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলনের শক্তি যখন ক্ষয়িষ্ণু প্রায়, তখনই সাধারণ ছাত্ররা রাজপথ কাঁপাতে শুরু করল। বিএনপি বিভাগীয় সমাবেশ সফল করে তাদের শক্তি প্রদর্শন করে। চূড়ান্ত সমাবেশ ঢাকায়ও সফল হয়েছে। পুলিশ গোলাগুলির নাটক মঞ্চস্থ করে সব নেতা-নেত্রীকে জেলে ঢোকানোর অজুহাত বের করল। এ আন্দোলন রাজনৈতিক পরিচয়হীন শুধু নির্দলীয় ছাত্র দিয়ে শুরু। ছাত্র আন্দোলনকে দলীয়করণ করার চেষ্টা করলে জাতীয় ঐক্য দুর্বল হবে। দ্বিতীয় স্বাধীনতাকে পুঁজি করে কেউ দলীয় আন্দোলন আখ্যা দিয়ে আবার দুর্নীতি চর্চা করলে তাদের ছাত্র-নাগরিক প্রতিহত করবে। জাতির নীতি হবে এখন ৫ আগস্ট ও এর আগে যে গণহত্যা, জুলুম অত্যাচারের শিকার দেশের মানুষ হয়েছে, এর পুনরাবৃত্তি যেন না ঘটে। সম্মিলিত প্রচেষ্টায় নৈরাজ্য, দখলদারিত্ব, চাঁদাবাজির রাজনীতির ইতি টানতে হবে। সারা দেশে লুটপাট, সহিংসতা যারা করেছেন তাদের এখনই ইনসাফ, ন্যায়ের পথে ফেরাতে হবে। অনেকের সঙ্গে চরম অন্যায় করা হয়েছে। অন্যায়কারীদের দেশের আইনে অবশ্যই বিচার করতে হবে। হাসিনার পলায়নকাণ্ডের পর থেকে ধারাবাহিকভাবে ঘটেচলা নানা উলটপালট দেখে পুরনো প্রবচনটি মনে পড়ে। গত চার দশকে রাজনৈতিক কর্মীদের দাপুটে হাবভাবের সমাজচিত্রের প্রেক্ষিতে মানুষের ধারণা হয়েছিল—এখানে সব আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জামায়াত, জাতীয় পার্টি বা বাম-ডান দলের কর্মী সমর্থক থাকলেও বুঝি ‘মানুষ’ নেই। তারা অভিজ্ঞতা থেকে শিখেছিলেন—এসবের বাইরে স্রেফ ‘মানুষ’ হয়ে উঠতে চাইলে, মানুষের মতো উচিত কথা বললে, অন্যায়ের প্রতিবাদ করলে অনেক চড়া মূল্য দিতে হয়, হেনস্তা হতে হয়। কন্যাকে স্কুল-কলেজে পাঠাতে ভীতসন্ত্রস্ত থাকতে হয়। আবার প্রমাণ হলো পচা রাজনীতির খোলসের আড়ালেও আদতে প্রচুর আদর্শিক অসীম সাহসী দেশপ্রেমিক ‘মানুষ’ ছিলেন। এতদিন যারা ভয়ে ও অনিশ্চয়তায় খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আসার সাহস পাচ্ছিলেন না। সব ভীতি প্রলোভনের ঊর্ধ্বে ওঠে ভয়কে জয় করে তারাই রাত জেগে শাহবাগ, রাজপথ দখল করেছেন, মিছিল করেছেন, দীর্ঘ মানবশৃঙ্খল গড়েছেন, রোদ-বৃষ্টি উপেক্ষা করে হাঁটতে হাঁটতে আওয়াজ তুলেছেন পেছনে ফিরে যাওয়ার সব পথ বন্ধ। কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রী-শিক্ষকসহ ছাত্রদের ন্যায্য দাবির ডাকে বাংলাদেশ তো বটেই, মধ্যপ্রাচ্য আমেরিকা ইউরোপ পাকিস্তান ও ভারতের নানা রাজ্যে, পৃথিবীর নানা দেশে বয়স ও লিঙ্গ নির্বিশেষে যে অগণিত মানুষ রাত ও রাজপথের দখল নিতে নেমে পড়েছিলেন, তার তুল্য স্বতঃস্ফূর্ততা কবে বিশ্ব দেখেছে বলা শক্ত। তার চেয়েও বড় কথা, এ গণ আন্দোলন যে উৎসাহ ও প্রেরণার জন্ম দিয়েছে তার সুদূরপ্রসারী অভিঘাত সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে। জাতি মরিয়া হয়ে আন্দোলনের অপ্রতিরোধ্য চালিকাশক্তি দেখে সেনাবাহিনীও দেশের মানুষের বিপক্ষে অবস্থান নিতে অপারগতা প্রকাশ করে। সম্পূর্ণ অরাজনৈতিক আন্দোলন ছিল। কোনো নীলনকশা শেষ রক্ষা করতে পারেনি। দল গোষ্ঠীর বাহাদুরি সংকীর্ণ বিবেচনা না করে স্বাধীনতাকামী জনতার বাহাদুরির ইতিহাস এ আন্দোলন। আমজনতা তাদের নিজ বিবেকের তাড়নায় ছাত্রদের পাশে দাঁড়িয়েছিল। তাদের একটাই স্বর, এক দাবি ছিল হাসিনা কবে যাবি! এক দফা শেখ হাসিনার পতন। সোজা আঙুলে ঘি না ওঠায় ছাত্র-জনতা ঢাকার চতুর্দিক থেকে গণভবনের দিকে অগ্রসর হয় হাসিনাকে হটাতে। অবস্থা বেগতিক দেখে বোনকে নিয়ে পালান শেখ হাসিনা। এখানে কোনো রাজনীতির ব্যানারে আন্দোলনের আলামত ছিল না। অবাক করা ঘটনা, দিনের পর দিন যে গণ আন্দোলন ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালিত হয়েছিল, সেগুলো এতই স্বতঃস্ফূর্ত যে অধিকাংশ ক্ষেত্রে কেউ রাজনৈতিক নেতা-নেত্রীর অপেক্ষা করেনি, নির্দেশনা আশা করেনি। প্রাথমিকভাবে ছাত্ররা কোটা সংস্কারের দাবিতে পথে নামে। তাদের ওপর জুলুম অত্যাচার নির্যাতনের বুলডোজার চালিয়েও দমাতে পারেনি। নির্দলীয় প্রতিবাদ কর্মসূচি শুরু করলেও, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তার পরিসর আমজনতার প্রতিবাদী মিছিল শামিল হওয়ার ও প্রতিবাদী-সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় ঢাকা আন্দোলনকারীদের দখলে চলে যায়। সাধারণ নাগরিকরা তো ছিলেনই, একই সঙ্গে পেশাজীবী শিক্ষক, অভিনেতা, কবি, সংগীতশিল্পী, আইনজীবী, তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ, যৌনকর্মী, বিশেষভাবে সক্ষম মানুষ, রিকশাচালক, পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের দেখা গেছে প্রতিবাদে শামিল হতে! দিন যত এগোচ্ছিল, আন্দোলনের আগুনের তেজ ততই বাড়ছিল। ঢাকা শহরকেন্দ্রিক আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ছিল দেশের প্রান্তিক শহরে। ছাত্র-জনতা হাতে হাত কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে শহীদ হয়েছে। আবু সাঈদ শহীদ হওয়ার পর আর কোনো ছাত্র পেছাল না, শুধু জীবন দিতে উদগ্রীব হলো, দেশের মানুষকে জীবন দিয়ে মুক্ত করে গেল।  এখানে রাজনৈতিক দলের কোনো গন্ধ নেই। দেশের বিভিন্ন জায়গায় প্রতিদিন যে আন্দোলনগুলো সংঘটিত হয়েছিল, তার বেশির ভাগই আহ্বান করছেন বা নেতৃত্ব দিয়েছেন এমন ছাত্র ও মানুষেরা, যাদের কথা অতীতে সেভাবে শোনা যায়নি। এমনকি তাদের অধিকাংশেরই প্রত্যক্ষ রাজনীতিতে উজ্জ্বল অংশগ্রহণের পূর্ব ইতিহাস নেই। ছাত্র-জনতার প্রতিবাদের স্রোতের তোড়ে তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়ে সরকার।  যে কোনো মূল্যে জাতীয় সংহতি বজায় রাখতে হবে। দেশ বাঁচাতে আন্দোলনের সফলতা ক্ষুদ্র কর্তা হওয়ার যে আনন্দ, তার চেয়ে বেশি মহিমা দেশের সব মানুষের আন্দোলনের ফসল আজকের মুক্ত দেশ এটা প্রচার করা। আসুন দেশ গড়ি, দেশের ভালোমন্দের আপনি আমি সবাই অংশীদার, সবাইকে সম্পৃক্ত করি দেশের কাজে। লেখক: নিরাপত্তা বিশ্লেষক আরটিভি/এআর  
বাংলাদেশে কি সরাসরি রাজনীতি না করে টিকে থাকা যায়? 
বাংলাদেশে কি সবাই রাজনীতি করে? আচ্ছা বাংলাদেশে এতো লোক  রাজনীতি করে কেন? যার নামই শুনছি সেই সরকারি দলের বিশেষ কোনো হোমরা চোমরা ছিলেন। এমনকি সংগীত বা অভিনয়শিল্পী,  লেখক, খেলোয়াড়, নাটক- সিনেমার শিল্পী, সাংবাদিক, পুলিশ বা আর্মি, ডাক্তার, আইনজীবী; কে নেই যে সরকারি দল করতো না? অথচ আমরা যে কানাডায় থাকি, সেখানে এরকমভাবে রাজনীতি তো করে খুব কম লোক। ভোট দেয় কেউ অনলাইনে বা বাই  পোস্টে কিংবা অ্যাডভান্স ভোটিং ডেতে।  ভোটে কোনো কারচুপি হতেও তো দেখি না।  তাহলে কি কানাডিয়ানরা রাজনৈতিকভাবে সচেতন না? আসলে কানাডায় রাজনীতি করা মানে -এখানকার প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে এমপি বা এমপিরা তাদের নিজস্ব পেশা ছেড়ে একটা সরকারি চাকরিতে যোগ দেন মাত্র।  এ দেশের প্রধানমন্ত্রী তাঁর ক্রেডিট কার্ডে এক পেনিও ব্যক্তিগত খরচ করলে তাঁর জবাবদিহিতা করতে হয়।  কিন্তু বাংলাদেশে কেন এতো মানুষের রাজনীতি করতে হয়? বাংলাদেশের রাজনৈতিক নেতাদের কেন এরকম জবাবদিহিতা নেই, কেন ভোটে এতো কারচুপি হয়? বাংলাদেশে কি সরাসরি রাজনীতি না করে টিকে থাকা যায়? বাংলাদেশে আমি শিক্ষকতা করতাম। আমি কখনোই কোনও রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সরাসরি  সম্পৃক্ত ছিলাম না।  বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন সময়ে  বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িত ছিলাম। ময়মনসিংহ গার্লস ক্যাডেট কলেজে লেকচারার হিসাবে চাকরি শুরু করি এবং পরে বিসিএসের মাধ্যমে সরকারি কলেজে যোগদান করি।  বিএল কলেজে থাকা অবস্থায় কুড়িতম বিসিএসের মাধ্যমে আমার তথ্য ক্যাডারে, শাহবাগে পোস্টিং হয়। কিন্তু আমি  অস্ট্রেলিয়ান গভর্নমেন্ট স্কলারশিপ নিয়ে টেসরেল মাস্টার্স করি ইউনিভার্সিটি অফ টেকনোলজি, সিডনি, অস্ট্রেলিয়া থেকে।  এরপর জাহাঙ্গীরনগর ইউনিভার্সিটি এবং খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি বিভাগে সহকারী অধ্যাপক পদে  চাকরির ইন্টারভিউ দেই।  আমি দুই বিশ্ববিদ্যালয়েই চাকরি পাই এবং খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদান করি।  আমার স্বামী সৈয়দ আমিনুল ইসলাম বাগেরহাটের শহীদ স্মৃতি ডিগ্রী মহাবিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা প্রিন্সিপাল। তিনি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন সময়ে ছাত্র রাজনীতি করতেন আর সেই সুবাদেই  খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে  আমাকেও বিএনপির তকমা লাগিয়ে দেয়া হলো।  আশ্চৰ্যজনকভাবে  খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার ডিপার্টমেন্টের হেড এবং  তখনকার ভিসি যাদের উভয়েরই নিয়োগ হয়েছিল বিএনপির আমলে তাঁরা আমার প্রমোশন আটকালেন, সিন্ডিকেটে সৌদি আরবের কিং খালিদ বিশ্ববিদ্যালয়ে  লিয়েন নিয়ে যাওয়ার আদেশ বাতিল করলেন।  কারণ তখন খুলনার রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ আমার স্বামী সৈয়দ আমিনুল ইসলামকে তাঁদের প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করতেন।    খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার স্বামী সৈয়দ আমিনুল ইসলামের ট্রেজারার হিসাবে নিয়োগ পত্রটি  এই কারণেই শেষ মুহূর্তে বাতিল করা হয়। তাঁর নিয়োগ বাতিল হলো কারণ সে বিএনপি করতো- বুঝলাম এক ঘাটে দুই বাঘ পানি খেতে পারে না। কিন্তু আমার দোষটা কোথায়? আমিতো বিএনপি, আওয়ামী লীগ কিছুই করিনি কখনো, আমি নিতান্তই একজন শিক্ষক।  কখনো কোথাও কোনো রাজনৈতিক বক্তব্য পেশ করিনি, রাজনৈতিক পেশী শক্তিও দেখাইনি।   শুধুমাত্র আমার স্বামীর ছাত্রজীবনের রাজনৈতিক পরিচয়ের কারণে আমি বিএনপি এবং আওয়ামী লীগ দুই দলের কাছ থেকেই  অন্যায় -অবিচারের শিকার হয়েছি। আমার প্রমোশন আটকে দেয়া হয়, সিন্ডিকেটে শেষ মুহূর্তে আমার ছুটি বাতিল করা হয়। কে ছিলেন তখন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি  ডিপার্টমেন্টের হেড? আমারই কলিগ যাঁর প্রোমোশনের ফাইল আমি ছেড়ে দিয়েছিলাম (হেড ছুটিতে থাকায় একদিনের অস্থায়ী হেডের দায়িত্বে ছিলাম)।  ফাইল সাইন  করার পর পরই বিভাগীয় প্রধান এবং স্বয়ং ভিসি স্যার টেলিফোনে ভীষণ বকাঝকা করলেন।  ‘তুমি ওঁর প্রোমোশনের ফাইল ছেড়ে দিলে যেটা ঝুলে আছে অনেক দিন থেকে - তুমি জানোনা ও কোন ব্লকের লোক? তোমাকে দিয়ে কিচ্ছু হবে না  তুমি শিক্ষক রাজনীতির কিছুই বোঝো না।’  এই প্রসঙ্গে কয়েক বছর আগে  আমার একটি লেখা বেরিয়েছিল প্রথম আলোতে।  আমার মতো এরকম নাদান বাংলাদেশে বহু আছে যারা বাধ্য  হয়েছে সরকারি দল করতে শুধু মাত্র তাদের চাকরি বাঁচাতে।  শুধু বিশ্ববিদ্যালয়ের  চাকরির ক্ষেত্রেই  নয়, বাংলাদেশে যেকোনো চাকরি বা ব্যাবসা যেটাই করতে গেছেন আপনাকে আওয়ামী লীগ করতেই হয়েছে অন্যত্থায়  আপনি কোনো কিছুই করতে পারতেন না। আপনি এমন কি  গুম হতে পারতেন, আপনাকে আয়না ঘরে পাঠানো হতে পারতো, আপনার প্রমোশন আটকে থাকতে পারতো।  উপরন্তু আওয়ামী লীগের  হাসিনা আপা, তাঁর আত্মীয় স্বজন, চামচাদের হম্বি তম্বি দেখে মনে হবে দেশটা তাদেরই, আমরা সবাই বানের  জলে ভেসে এসেছি।      আমি লাল-সবুজ- নীল কোনো দলেরই ছিলাম না কোনো দিন। যাই হোক বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্বস্তিকর পরিবেশ এড়ানোর জন্যে আমি আর্ন লিভ নিয়ে  স্বামী এবং সন্তানদের নিয়ে সৌদি আরব চলে যাই। ইচ্ছে ছিল নতুন দেশে নতুন পরিবেশে কিছুদিন চাকরি করে, নতুন অভিজ্ঞতা সঞ্চয়  করে,  হজ-ওমরাহ করে দেশে ফিরে যাবো।   এরপর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসলে আমি ছুটিতে থাকা অবস্থায় খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার চাকরিটা চলে গেলো।  আমি রিট করেছিলাম এই  অন্যায়ের বিরুদ্ধে- কিছুই হয়নি সেই আবেদনের।  আমার প্রভিডেন্ট ফান্ডের টাকা আটকে আছে- আমি কি সেগুলো  ফেরত  পেতে পারি না? আমার বিরুদ্ধে যে অন্যায় করা হয়েছে, সেটি কি ইউনিভার্সিটি স্বীকার করবে?  সবাই বলে- আমরা অকৃতজ্ঞ, দেশ থেকে সব সুযোগ সুবিধা নিয়ে দেশ ছেড়ে চলে এসেছি,  ব্রেন ড্রেন হয় - আসলে কি তাই? নাকি আমাদেরকে দেশে থাকতে দেয়া হয় না? আমরা আসলে দেশে থাকার যোগ্যতা রাখি না।  দেশে থাকতে গেলে লেজুড়বৃত্তির রাজনীতি করতে হবে, শাসক শ্রেণীর সব অন্যায় অপরাধ মেনে নিয়ে জি হুজুর, জি হুজুর করতে হবে, আপা আপা করতে করতে নাভিশ্বাস ওঠাতে হবে তবেই আপনি বাংলাদেশে থাকতে পারবেন। আমার ছোট ভাই অ্যাডমিন ক্যাডার এ - তাঁর দীর্ঘ দিনের আটকে থাকা প্রমোশন হয়েছে গতকাল।   সৈয়দ আমিনুল ইসলামের নামে মিথ্যা হয়রানিমুলুক মামলা দেওয়ার কারণে সে আজ ১৬ বছর দেশে যেতে পারেনি। সে অনেকবারই চেয়েছে দেশে যেয়ে এই মিথ্যা মামলা মোকাবেলা করতে।  এখন মনে করি এটি মহান আল্লাহতালার বিশেষ নেয়ামত - সে দেশে গেলে গুম হতে পারতো, জেলে যেতে হতে পারতো, আয়না ঘরে আটকা পড়তে পারতো এমনকি খুনও হতে পারত।  মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন ই তাঁকে বাঁচিয়েছেন।  আমি সারাজীবনই একজন আশাবাদী মানুষ।  যে সব ছাত্রদের জীবন এবং ত্যাগ তিতিক্ষায় আজকের এই স্বৈরাচারী সরকারের পতন ঘটেছে, তাঁদের প্রতি রইলো আমার অশেষ কৃতজ্ঞতা। নতুন সরকার বাংলাদেশে নতুন স্বপ্নের বাস্তবায়ন ঘটাবে এটিই আমার ঐকান্তিক কামনা।  ভালো থাকুক আমার বাংলাদেশ, ভালো থাকুক আমার দেশের মানুষগুলো।  লেখক: প্রিন্সিপাল কনসালটেন্ট, ক্যানবাংলা ইমিগ্র্যাশন সার্ভিসেস, আরসিআইসি, টরেন্টো, কানাডা/ প্রাক্তন সহযোগী অধ্যাপক, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়/ কিং খালিদ ইউনিভার্সিটি, সৌদি আরব।   আরটিভি/ ডিসিএনই
প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক নিয়ে যা বললেন মাহফুজ আনাম
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাতের অভিজ্ঞতার বিষয়ে ইংরেজি দৈনিক দ্য ডেইলি স্টারের সম্পাদক ও প্রকাশক মাহফুজ আনাম লিখেছেন, ‘ড. ইউনূসের বিনয়, উদারতা এবং সর্বোপরি আন্তরিকতা আমাদের হৃদয় ও মনকে ছুঁয়ে গেছে।’ গত মঙ্গলবার প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে এ সাক্ষাৎ অনুষ্ঠিত হয় বলে জানান তিনি। ডেইলি স্টারে প্রকাশিত মাহফুজ আনামের লেখাটি হুবহু তুলে ধরা হলো- আমার কাছে বিষয়টি এমন যে মতবিনিময় তো দূরের কথা, ক্ষমতার সর্বোচ্চ আসনের ধারেকাছে যাওয়ার সুযোগই মিলল ১২ বছর পর। সাবেক প্রধানমন্ত্রী কখনো শীর্ষ এই ইংরেজি দৈনিকের সম্পাদক বা কোনো সাংবাদিককে তার কার্যালয়ে প্রবেশ কিংবা তিনি উপস্থিত থাকবেন, এমন কোনো অনুষ্ঠানের সংবাদ সংগ্রহের অনুমোদন দেননি। এ বিষয়টি উল্লেখের কারণ হলো, আইনগতভাবে শুধু জাতীয় নিরাপত্তা সংশ্লিষ্ট পদ ছাড়া জনগণের অর্থে পরিচালিত, সরকারি পদে নিযুক্ত কোনো ব্যক্তিকে জবাবদিহিতার প্রক্রিয়া থেকে বাদ রাখা যায় না এবং এই প্রক্রিয়ার বিশেষ ও গুরুত্বপূর্ণ উপকরণ গণমাধ্যম। কিন্তু আমাদের এই প্রক্রিয়ায় বাধা সৃষ্টি করে তিনি আইন ভঙ্গ করেছেন। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ব্যক্তিগত বিদ্বেষের জেরে সিএনএনের হোয়াইট হাউস সংবাদদাতাকে বহিষ্কার করলেও ফেডারেল আদালত সেই সংবাদদাতাকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই পুনর্বহাল করে। আদালত যুক্তি দেন, করদাতার অর্থে পরিচালিত সরকারি কার্যালয় চাইলেও গণমাধ্যমকে বঞ্চিত করার এখতিয়ার রাখে না। কিন্তু এই দেশে তিনিই ছিলেন 'আইন' এবং বিচার বিভাগেও তার সরাসরি হস্তক্ষেপ ছিল। আমরা যদি আদালতে যেতাম, তাহলে বিচারের রায় এমন হতো যে তাতে একটি অবৈধ কাজও আইনি বৈধতা পেত। আমাদের সন্দেহ সেটাই ছিল এবং নানা উদাহরণ থেকে আমরা সেরকম ইঙ্গিতই পেয়েছিলাম। ফলে, ওই ১২ বছর আমরা প্রবেশাধিকার পাইনি। অবশেষে গত মঙ্গলবার প্রধান উপদেষ্টা আমাদেরকে ডেকে পাঠালেন। শীর্ষ বাংলা দৈনিক প্রথম আলোকেও একই ভাগ্য বরণ করতে হয়েছিল। আমাদের একমাত্র অপরাধ ছিল, আমরা ক্ষমতাসীনদের জবাবদিহির আওতায় আনতে চেয়েছিলাম। আশা করা যায়, বাংলাদেশে চিরতরে এই অধ্যায়ের সমাপ্তি ঘটেছে। অবসান হয়েছে এক-ব্যক্তির শাসন, এক ব্যক্তির ব্যাংক লুট, এক ব্যক্তির নেতৃত্বে ঋণখেলাপির সংস্কৃতির—যে ব্যক্তি তার চেহারা ও বেশভূষা পাল্টে সাধু সাজার পাশাপাশি পুঁজিবাজার, বন্ডবাজার ইত্যাদি লুট করছিলেন এবং একইসঙ্গে আর্থিক খাতের শৃঙ্খলাভঙ্গ করেন—এসবের। আমরা আরও আশা করছি, ক্ষমতার অপব্যবহার, চাটুকারিতা, দুর্নীতি, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ও গুমেরও অবসান ঘটেছে। গত ১৫ বছরের জবাবদিহিতাহীন শাসনে এ ধরনের ক্ষয়ক্ষতির তালিকার যেন অন্ত নেই। গতকাল আমরা এই নিপীড়নমূলক শাসনের অবসান হওয়ার একমাস পূর্তি উদযাপন করেছি। যখন জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সব সম্প্রদায়ের মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে সম্মিলিত হয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মুক্তির সংগ্রামে যোগ দেয়, তা নিমিষেই একটি বিশেষ মুহূর্তে রূপ নেয়। প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে দুই ঘণ্টার আলোচনার শুরুতেই ছিল তার ব্যাপক আন্তরিকতা। 'আমি সব কিছু জানি, আমার কথা শুনুন, ভাবুন আর করতালি দিন' এর পরিবর্তে, তিনি দ্বিধাহীনভাবে জানালেন, অনেক কঠিন একটি দায়িত্বের মুখোমুখি হয়েছেন। এ দায়িত্ব পালনের জন্য খুবই কম সময় আছে তার হাতে, এ বিষয়ে তার এবং তার সহযোগীদের অভিজ্ঞতা প্রয়োজনের তুলনায় কম, সেটা উল্লেখের পাশাপাশি জানালেন, লক্ষ্য পূরণে দেশের আপামর জনসাধারণ এবং বিশেষ করে, গণমাধ্যমের অকুণ্ঠ সমর্থন প্রয়োজন। এ ধরনের আলোচনা আমাদের জন্য স্বস্তিদায়ক। বিশেষত, আমরা যারা গত ১৫ বছর ক্ষমতাসীনদের সামনে সত্য প্রকাশের চেষ্টা চালিয়ে গেছি। অন্তর্বর্তী সরকার পরিচালনায় ভুল-ত্রুটি ধরিয়ে দিতে গণমাধ্যমকে সোচ্চার থাকার আহ্বান জানান প্রধান উপদেষ্টা। 'আমি দেশের মানুষকে ভালোবাসি এবং যখনই আমি ও আমার দল ক্ষমতায় থাকি বা থাকে, তখন তা বাংলাদেশের উপকারে আসে'—এই সংস্কৃতি থেকে বের হয়ে এসে সরকারের সমালোচনা করার আন্তরিক আমন্ত্রণ জানিয়ে এটাই প্রমাণ করলেন যে, এ ধরনের মনোভাব জনগণের চাওয়া-পাওয়া পূরণে তাকে শুধু সহায়তাই করবে। এ বিষয়টি সাবেক প্রধানমন্ত্রী বুঝতে না পারলেও প্রধান উপদেষ্টা ভালো করেই বুঝতে পেরেছেন। এক্ষেত্রে ড. ইউনূসের বিনয়, উদারতা এবং সর্বোপরি আন্তরিকতা আমাদের হৃদয় ও মনকে ছুঁয়ে গেছে। সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং যে বিষয়ে তিনি আমাদের সহায়তা চেয়েছেন, তা হলো—জাতিকে একতাবদ্ধ করা। তিনি অনুভব করেছেন এবং আমরাও তার সঙ্গে একমত যে, আমরা এখন বিপজ্জনকভাবে বিভাজিত এবং শিগগির এই পরিস্থিতির পরিবর্তন দরকার। এই বিভাজনের কারণেই দেশকে সামনে এগিয়ে নেওয়ার আগের সব উদ্যোগগুলো মুখ থুবড়ে পড়েছিল। তিনি যেমন বিষয়টির বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেননি, তেমনি আমরাও পারিনি তা বিস্তারিতভাবে ব্যাখ্যা করতে। তবে আমরা সবাই এই সুনির্দিষ্ট সমস্যাটির গুরুত্ব গভীরভাবে অনুধাবন করেছি। সংবিধান সংস্কার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে, বিশেষত সংবিধানে সরকারপ্রধানকে কার্যত অসীম ক্ষমতা দেওয়ার যে বিষয়টি রয়েছে, তা রদ করা নিয়ে। বিচারবিভাগের স্বাধীনতা, দুর্নীতি দমন কমিশন (কমিশনের এক চেয়ারম্যানের ভাষায় যেটি একটি 'নখদন্তহীন বাঘ'), মানবাধিকার কমিশন ও বাকি সব সরকারি সংস্থাগুলোকে ক্ষমতায়ন করা, তাদেরকে আরও শক্তিশালী ও স্বাধীন করা, যাতে এই সংস্থাগুলো তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব সুষ্ঠুভাবে পালন করতে পারে—এসবও উঠে এসেছে আলোচনায়। আলোচনায় নির্বাচন কমিশনের বিষয়টি বিশেষ গুরুত্ব পেয়েছে। ২০১৪ সাল থেকে শুরু করে এই সংস্থাটির ধারাবাহিক ব্যর্থতা অন্তর্ভুক্তিমূলক সরকারের ধারণাকে পঙ্গু করেছে, সংসদকে অকার্যকর করেছে এবং ভোটারদের প্রতি 'পাঁচ বছরে একবার' জনপ্রতিনিধি বেছে নেওয়ার সুযোগের প্রতি আস্থা হারাতে বাধ্য করেছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার বিলুপ্তির পর যখনই একজন আত্মসম্মানজ্ঞান ও মর্যাদা সম্পন্ন নির্বাচন কমিশনার বুঝতে পারেন যে ক্ষমতাসীন সরকার জনগণের মত প্রকাশের স্বাধীনতা হরণ করেছে, তখন স্বাভাবিক প্রত্যাশা হলো, তিনি পদত্যাগ করবেন। কিন্তু ২০০৮ সালের পর থেকে একজন প্রধান নির্বাচন কমিশনারও সে পথে হাঁটেননি, যা প্রকারান্তরে আমাদের বুদ্ধিজীবীদের নৈতিক স্খলনকে প্রকাশ করেছে। ইতোমধ্যে অর্থনৈতিক সংস্কারের শ্বেতপত্র প্রকাশের জন্য ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য্যের নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। একইভাবে এসব জটিল আইনি প্রশ্ন মোকাবিলার জন্য একটি বিশেষ কমিটি গঠনের প্রস্তাব করা হয়, যাতে এটি সংবিধান ও আইনের প্রয়োজনীয় সংস্কার করে বর্তমান সময়ের চাহিদাগুলো মেটাতে পারে এবং প্রধান উপদেষ্টাকে তার আগামী দিনের কর্মসূচি সম্পর্কে আরও স্পষ্টতা এনে দিতে পারে। তথ্য উপদেষ্টা একটি তথ্য কমিশন গঠনের কথা বলেছেন। আলোচনায় সে বিষয়টিও এসেছে এবং একইসঙ্গে বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস), বাংলাদেশ টেলিভিশন (বিটিভি) ও বাংলাদেশ বেতারের কার্যক্রমকে স্বায়ত্তশাসন দেওয়ার বিষয়টি আলাদা করে উল্লেখ করা হয়, যাতে সরকারের পক্ষে প্রচারণা চালানোর কাজে জনগণের অর্থ অপচয়ের সুযোগ না থাকে। আলোচনার শুরুতেই অধ্যাপক ইউনূসের মন্তব্যে উঠে আসে অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদের বিষয়টি। তিনি জানান, যেসব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে মতবিনিময় করেছেন, তারা সার্বিকভাবে দুই ধরনের দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করেছে: 'আপনার যতদিন সময় লাগে' এবং 'গ্রহণযোগ্য সময়সীমা নির্ধারণ করুন'। তবে গ্রহণযোগ্য সময়সীমার বিষয়টি সংজ্ঞায়িত করা হয়নি। এ প্রসঙ্গে বেশিরভাগ সম্পাদকের মত হলো, অন্তর্বর্তী সরকারকে শুরুতে তাদের কার্যতালিকা নির্ধারণ করতে হবে। তারপর সে অনুযায়ী মেয়াদ নির্ধারণ করতে হবে। অল্প কয়েকজন সুনির্দিষ্ট করে এক থেকে তিন বছরের সময়সীমা উল্লেখ করে মন্তব্য করেন, 'মধুচন্দ্রিমার পর্যায়টি' বেশিদিন স্থায়ী নাও হতে পারে এবং অন্তর্বর্তী সরকার কতটুকু উপযোগিতা দেখাবেন, লক্ষ্যে স্থির থাকবেন এবং জনবান্ধব কর্মসূচি হাতে নেবেন, সে বিষয়ে মানুষের দৃষ্টিভঙ্গিই নির্ধারণ করবে তাদের মেয়াদ কতদিন হতে পারে। সম্পাদকরা উল্লেখ করেন যে মানুষের মনে এমন একটি ধারণা দানা বেঁধে উঠছে যে অন্তর্বর্তী সরকারের সব সদস্য সক্রিয়তা, উপযোগিতা, মনোবল ও সৃজনশীলতা বজায় রেখে কাজ করছেন না। কোনো দৃশ্যমান উদ্যোগ না দেখিয়ে বরং অনেকেই নিজ নিজ ডেস্কে মুখ গুঁজে বসে আছেন। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, তারা তাদের কাজের জটিলতা ও জনগণের বিপুল প্রত্যাশার মাত্রাকে পুরোপুরি অনুধাবন করতে পারছেন না। মোট কথা তারা দৃশ্যমান নন। সম্পাদক হিসেবে আমরা অবশ্যই সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে চলমান হয়রানির বিষয়ে বেশি জোর দিয়েছি। এই পেশার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে বিন্দুমাত্র প্রমাণ ছাড়াও যেভাবে হত্যা মামলা দায়ের করা হচ্ছে, সে বিষয়টির কড়া প্রতিবাদ জানিয়েছি। এই চর্চা গণমাধ্যম ও দেশের মানুষের কাছে ভুল বার্তা দিচ্ছে এবং সারা বিশ্বের কাছে অন্তর্বর্তী সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করছে। গণমাধ্যম ও অন্তর্বর্তী সরকারের মধ্যে সম্পর্কের কথা বলতে গেলে দেড় দশকের দমন-পীড়ন, হয়রানি, ভিত্তিহীন সন্দেহ ও দুর্বৃত্তায়নের পর নিঃসন্দেহে এটি একটি স্বস্তিদায়ক ও নতুন অধ্যায়ের সূচনা। দুর্ভাগ্যজনকভাবে সব নৈতিকতা ও বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতার রীতিনীতি বর্জন করে এ সম্প্রদায়েরই একটি শ্রেণি এতদিন বিপরীত ভূমিকা পালন করে এসেছে। তাদের এসব উদ্যোগ সব সাংবাদিকের লজ্জার কারণ। অন্তর্বর্তী সরকারকে প্রাথমিকভাবে দুইটি মূলধারার কাজে নিয়োজিত হতে হবে: একটি হলো—দৈনন্দিন কার্যক্রম পরিচালনা করা। অপরটি হলো—এর সংস্কার করা। প্রথমটি একটি সুবিশাল কর্মযজ্ঞ এবং এর পেছনেই যেকোনো দেশের পূর্ণাঙ্গ ও নির্বাচিত সরকারের উদ্যম ও সম্পদের সর্বোচ্চ ব্যবহার হতে পারে। এক্ষেত্রে কাজটিকে আরও জটিল করে তুলেছে উৎখাত হওয়া সাবেক সরকারের রেখে যাওয়া অন্যায্যতা, অনিয়ম ও দুর্নীতির নজির এবং সুশাসনের অভাব। দ্বিতীয় কাজটি হলো একটি উন্নত ভবিষ্যৎ গড়ে তোলার সুযোগকে কাজে লাগানো। আমরা যে কেউ অন্য সব কাজ বাদ দিয়ে এক মিনিট চিন্তা করলেই বুঝতে পারব, অন্তর্বর্তী সরকার এক্ষেত্রে কত বড় একটি চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। আসুন আমরা তাদেরকে সহযোগিতা করি। সময় দিই, ধৈর্যশীল হই, তাদেরকে বোঝার চেষ্টা করি এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, তাদের ওপর ভরসা রাখি।
হাসিনার ওপর থেকে পশ্চিমাদের সমর্থন গুঁড়িয়ে দেওয়া কে এই সাংবাদিক
গদি হারানো শেখ হাসিনা যখন দেশীয় গণমাধ্যমগুলোর গলা টিপে ধরেছিল এবং তার অপশাসনের কোন প্রকার তথ্য পরিবেশন করতে দিচ্ছিল না তখন আন্তর্জাতিক পরিসরে বাংলাদেশের গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও ন্যায়বিচার সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরে তৎকালীন ক্ষমতাসীন শেখ হাসিনা ও তার সরকারকে বরাবরই প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন সাংবাদিক মুশফিকুল ফজল আনসারী। জাতিসংঘ, হোয়াইট হাউস, পেন্টাগন, স্টেট ডিপার্টমেন্টসহ গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক দপ্তরগুলোতে বাংলাদেশের মানুষের ভোটাধিকার হরণ, গণহত্যা ও অপশাসনের কথা তুলে ধরার মাধ্যমে সবসময়ই ফ্যাসিস্ট সরকারকে প্রশ্নের মুখোমুখি করে রেখেছিলেন বাংলাদেশি এই সাংবাদিক। স্বৈরশাসক শেখ হাসিনার পতনের পেছনে যুক্তরাষ্ট্র ও জাতিসংঘের নীতি নির্ধারণীতে যে কজন মানুষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন তাদের একজন মুশফিকুল ফজল আনসারী। বাংলাদেশে ডেপুটি অ্যম্বাসেডর হিসাবে দায়িত্ব পালন করে যাওয়া যুক্তরাষ্ট্রের কূটনীতিক জন ড্যানিলোভিচ মুশফিকুল ফজল আনসারী সম্পর্কে এক টুইটে লিখেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের নীতিনির্ধারকদের সামনে বাংলাদেশের হুমকিসমূহ তুলে ধরার ক্ষেত্রে মুশফিকুল ফজলের অনন্য ভূমিকা ইতিহাস মনে রাখবে। শেখ হাসিনা সরকারের যন্ত্রণার কারণ এই সাংবাদিক, বাংলাদেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছিলেন। কূটনৈতিক প্রতিবেদক হিসেবে কাজ করেছেন দৈনিক ইত্তেফাকে। বেসরকারি টেলিভিশন এনটিভিতে কূটনৈতিকদের নিয়ে বিশেষ প্রোগ্রাম সঞ্চালনা করেছেন তিনি। এ ছাড়াও সংবাদ সংস্থা ইউ এন বি -তে বিশেষ প্রতিবেদক হিসেবে কাজ করেছেন তিনি। অন্যদিকে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমেও কাজের অভিজ্ঞতা রয়েছে তার। ওয়ার্ক এক্সিপিরিয়েন্স রিপোর্টার হিসাবে কাজ করেছেন বিশ্বের প্রভাবশালী পত্রিকা দ্য টাইমস ও সানডে টাইমসে। এ ছাড়া বিবিসি, আল-জাজিরা, সিএনএন, এনডিটিভিসহ আন্তর্জাতিক বিভিন্ন গণমাধ্যমে বাংলাদেশের গণমানুষের হয়ে দিয়েছেন একাধিক সাক্ষাৎকার।  শুধু সাংবাদিকতাই নয়, মানবাধিকার কর্মী হিসেবে কাজ করার পাশাপাশি বাংলাদেশের তখনকার অবস্থা তুলে ধরে বক্তব্য রেখেছেন ব্রিটেনের হাউস অব কমন্সে। গণতন্ত্র ও মানবাধিকার নিয়ে বক্তব্য রেখেছেন, হার্ভার্ড, অক্সফোর্ড, জর্জ ওয়াশিংটনসহ বিভিন্ন ইউনিভার্সিটিতে। বর্তমানে তিনি ওয়াশিংটন ভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা রাইট টু ফ্রিডমের নির্বাহী পরিচালক, জাস্ট নিউজ বিডির সম্পাদক ও ওয়াশিংটন থেকে প্রকাশিত ফরেন পলিসি বিষয়ক ম্যাগাজিন সাউথ এশিয়া পার্পেক্টিভসের নির্বাহী সম্পাদক হিসেবে ওয়াশিংটন থেকে কাজ করছেন।  গণতন্ত্র ও সুশাসনের জন্য লড়ে যাওয়া এই সাংবাদিক এখন বহুল চর্চিত নাম। সাম্প্রতিক ছাত্র জনতার গণ-অভ্যুত্থানের প্রতিটি ঘটনা জাতিসংঘের সদর দপ্তর, স্টেট ডিপার্টমেন্ট, পেন্টাগন ও হোয়াইট হাউসে তুলে ধরার মাধ্যমে আন্দোলনের আসল চিত্র বিশ্ব দরবারে পৌঁছে দেন এই সাংবাদিক।  বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী সাংবাদিকদের সংগঠন যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় প্রেসক্লাবের দুটি কমিটির নির্বাহী সদস্য তিনি। হোয়াইট হাউস করেসপন্ডেটস এসোসিয়েশন এবং ইউএনসি’র সদস্য মুশফিক। বাংলাদেশের জাতীয় প্রেসক্লাবের সদস্যও ছিলেন তিনি। তবে পদলেহী সাংবাদিকদের প্রতি ধিক্কার জানিয়ে, ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের সময় জাতীয় প্রেসক্লাবের সদস্য পদ থেকে পদত্যাগের সিদ্ধান্ত জানান।  ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকার নানাভাবে সাংবাদিক মুশফিকুল ফজল আনসারী ও তার পরিবারের সদস্যদের হেনস্থা করেছে। দীর্ঘ ৮ বছর  দেশে থাকা মায়ের সঙ্গে দেখা করতে পারেননি আলোচিত এই সাংবাদিক। সরকারের সৃষ্ট পার্সপোর্ট জটিলতার কারণে মুশফিকুল ফজল আনসারীর বাবা মাকেও ৮ বছর যাবত দুই দেশে থাকতে হয়েছে। বাবা লন্ডনে আর মাকে সিলেটে। এমন পরিস্থিতিতেও অসহনীয় নির্দয় আচরণের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের গণতন্ত্র, বাক স্বাধীনতা, সুশাসন ও ন্যায় বিচারের কথা বলে গেছেন তিনি।  নানা অর্জনে ভূষিত এই সাংবাদিক, বাংলাদেশে না থেকেও দেশের গণতন্ত্র ন্যায় বিচার ও সুশাসনের জন্য যেভাবে চেষ্টা চালিয়ে গেছেন, তা বাংলাদেশের সাংবাদিকতার ইতিহাসে অনন্য নজির হয়ে থাকবে। লেখক: সুফিয়ান ফারাবী, গণমাধ্যমকর্মী।
এই গল্পটা শুনে যান প্লিজ
ফেয়ারি টেল অর্থাৎ রূপকথার গল্প বলতে যা বোঝায়, এ গল্প তা-ই। গল্পের নাম অ্যানিমেল ফার্ম। ১৯৪৫ সালের ১৭ আগস্ট প্রকাশিত এই উপন্যাসটি লিখেছিলেন ইংলিশ সাংবাদিক ও লেখক জর্জ অরয়েল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরপরই প্রকাশিত বইটি বেস্ট সেলারের তকমা পায়। শুধু তাই নয়, এই বই রিপ্রিন্টের জন্য পরবর্তীতে কাগজ সংকটেও পড়তে হয় প্রকাশককে। তাহলে শুরু করা যাক। তার আগে বলে রাখি, কেন গল্পটা শোনার জন্য আপনাকে আহ্বান করছি। কারণ, এই গল্পে আপনিও আছেন। ইংল্যান্ডের পূর্ব সাসেক্সে অবস্থিত ‘অ্যানিমেল ফার্ম’। ফার্মে একইসঙ্গে বাস করে শূকর, গরু, ঘোড়া, হাঁস-মুরগিসহ নানান জাতের পশুপাখির বাস। ওই ফার্মের মালিক মি. জোন্স। তিনি নিয়মিত মদ্যপ থাকেন। এক রাতে জোন্স ঘুমিয়ে পড়ার পর ফার্মের সবচেয়ে প্রবীণ শূকর (মেজর যার নাম) অন্যদের ডেকে তুলল। মেজর নামের শূকরটি বলে উঠল ‘আমি জীবনের শেষ মুহূর্তে এসে পড়েছি। তোমাদের উদ্দেশে কিছু বলার আছে আমার।’ মেজর বলল, দু’পেয়ো মানুষেরা যুগের পর যুগ আমাদের ওপর অত্যাচার চালাচ্ছে। অথচ দেখো, মানুষ তার জীবন ধারণের জন্য আমাদের ওপর নির্ভরশীল। তারা নিজেরা কিছু করতে পারে না। আমাদের দুধ, আমাদের ডিম না হলে তাদের চলে না। কৃষিকাজের জন্য আমাদের ওপর তারা কী অত্যাচারটাই না করে! একটু থেমে পশু-পাখিদের দিকে তাকালো মেজর। সবাই আগ্রহ নিয়ে তার কথা শুনছে। ‘অথচ দেখো’, আবার শুরু করলো মেজর, মানুষের ওপর নির্ভর না করলেও আমাদের চলে। পৃথিবীতে যত ঘাস আছে, যত খাবার আছে, সারাজীবন খেয়েও আমরা কোনোদিন শেষ করতে পারব না। পশু-পাখিদের মধ্যে মৃদু রব উঠল, ‘ঠিক কথা!’ মেজর ফের শুরু করল, কিন্তু দেখো এই মানুষেরা আমাদের দাস বানিয়ে রেখেছে। অথচ, তাদেরই দাস হয়ে থাকার কথা ছিল। সবাই সমস্বরে বলে উঠল, ‘ঠিক, ঠিক!’ সভাশেষে মেজর বলল, আমি আর বেশিদিন বাঁচব না। কিন্তু এখন সময় এসেছে অভ্যুত্থানের। মানুষের বিরুদ্ধে আমাদের যুদ্ধ করতে হবে। দাসত্ব থেকে মুক্ত হতে হবে। আমাদের স্বাধীন হতে হবে। আরেকবার সমস্বরে সবাই ‘ঠিক ঠিক’ বলে সেদিনের মতো সভা শেষ করল। এর তিনদিন পর মেজর মারা যায়। কিন্তু শূকরটি যে সংগ্রামের বীজ বুনে দিয়ে গেল, তা বাকিদের রক্তে ঢুকে গেছে। সবাই অভ্যুত্থানের পরিকল্পনা করতে থাকে। এরমধ্যে মি. জোন্স একদিন মদ্যপ অবস্থায় বাড়ি ফিরে ফার্মের প্রাণীদের খেতে দিতে ভুলে যান। প্রাণীদের অভুক্ত রেখেই ঘুমিয়ে পড়েন তিনি। জোন্সের এই কাণ্ডজ্ঞানহীন কর্মে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে স্নোবল ও নেপোলিয়ন (দুই তরুণ শূকর) । সবাইকে ডেকে বলে, দেখেছো কী নির্মম পাষণ্ড! আমাদেরকে অভুক্ত রেখে ঘুমিয়ে গেল! বাকি পশু-পাখিও ক্ষিপ্ত হয়ে উঠল। তাদের রক্তে আগুন জ্বলে উঠল। তারা সিদ্ধান্ত নিলো তাৎক্ষণিক অভ্যুত্থানের। স্নোবল ও নেপোলিয়নের নেতৃত্বে তারা মি. জোন্সকে আক্রমণের সিদ্ধান্ত নিলো। এই প্রাণীগুলোকে এতদিন মি. জোন্স কখনোই না খাইয়ে ঘুমিয়ে পড়েননি। কিন্তু সবাই সে কথা ভুলে গেল। তাদের এতদিনের পুঞ্জীভূত ক্ষোভ, স্বাধীন হওয়ার আকাঙ্ক্ষা এতটাই বিস্ফোরিত হলো যে, সবাই মিলে জোন্সের বাসগৃহে আক্রমণ করলো। ফার্মের প্রাণীদের সম্মিলিত আক্রমণের মুখে জোন্স তার পরিবারসহ ফার্ম ছেড়ে পালিয়ে গেলেন। কাঙ্ক্ষিত স্বাধীনতা পেয়ে ফার্মের প্রাণীরা খুশি।  অল্প কিছুদিনের মধ্যেই স্বাধীন ফার্মের প্রাণীরা কিছু সমস্যার সম্মুখীন হলো। যেমন দুধ দোয়াতে না পারার কারণে গাভিরা সমস্যায় পড়লো। চাষ করার যন্ত্রগুলো ব্যবহার করতে না পারায় ফসল উৎপাদন ব্যাহত হতে লাগলো। স্নোবল এবং নেপোলিয়ন এই সমস্যার সমাধানে নেতৃত্ব দিলো। স্নোবল দায়িত্ব নিলো তরুণ প্রাণীদের লেখাপড়া শেখানোর। নেপোলিয়ন ফার্মে ‘অ্যানিমালিজম’ এর দীক্ষা দিতে আরম্ভ করলো। দুজনে মিলে একটা সংবিধানও দাঁড় করিয়ে ফেলল। সাত ধারা সে সংবিধানের মূল কথা- সব প্রাণীই সমান। অর্থাৎ এখানে কোনো বড়-ছোট থাকবে না। সবার সমান অধিকার। বিভিন্ন প্রতিকূলতা সত্বেও অ্যানিমেল ফার্ম এগিয়ে যেতে লাগলো। পাশের ফার্মগুলোতেও তাদের স্বাধীনতার খবর পৌঁছে গেল। কিন্তু সেখানকার ফার্ম মালিকেরা নানান কূটকৌশলে সেখানে অভ্যুত্থান ঘটাতে দিলো না। এর মধ্যে মি. জোন্স একদিন ফিরে এলেন। আরও কিছু লোকজন নিয়ে ফার্ম আক্রমণ করলেন। প্রতিবিপ্লব। কিন্তু লাভ হলো না। স্নোবল এবং নেপোলিয়নের নেতৃত্বে প্রাণীকূল তাদের প্রতিরোধ করলো। মি. জোন্স আবারও পালিয়ে গেলেন। এই যুদ্ধে বেশ কিছু প্রাণী আহত হলো। তাদের মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হলো। দেওয়া হলো সার্টিফিকেটও। এরপর বেশ আরামেই কাটছিল ফার্মের প্রাণীদের দিন। যদিও অল্প-বিস্তর বৈষম্য দেখা দিচ্ছিল। যেমন ভালো খাবারগুলো স্নোবল এবং নেপোলিয়নের জন্য বরাদ্দ থাকতো। অন্যরা মৃদু আপত্তি জানালে তারা বলল, এটা তোমাদের জন্যই করছি। আমরা তো সবাই সমান। কেউ বড়-ছোট নই। কিন্তু বহিঃশত্রুর আক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে আমাদের শারিরীক ও মানসিকভাবে সবল থাকতে হবে। এজন্যই এ খাবারগুলো আমরা খাচ্ছি। তোমাদের কথাই চিন্তা করে। না হলে এসব খাবার খেতে আমাদের ভালো লাগে না। সবাই যুক্তি মেনে নিলো। মি. জোন্সের প্রতিবিপ্লব ব্যর্থ হওয়ার পর ফার্মের আধুনিকায়নের জন্য একটি উইন্ডমিল স্থাপনের উদ্যোগ নিলো স্নোবল। তার এই উদ্যোগে বাধা দিলো নেপোলিয়ন। শুরু হলো স্বাধীন ফার্মে নেতৃত্বের দ্বন্দ্ব। কিছুদিনের মধ্যেই এই দ্বন্দ্ব প্রকট হয়ে উঠল। এই দ্বন্দ্বের জেরে স্নোবলকে একদিন ফার্ম ছেড়ে পালাতে হয়। মি. জোন্সের চারটি কুকুর ছিল। সেগুলো এখন নেপোলিয়নের সঙ্গেই ঘোরে। তারাই স্নোবলকে তাড়িয়ে দিলো। স্নোবল পালিয়ে পাশের ফার্মে আশ্রয় নিলো। ফার্মে এখন নেপোলিয়নের একচ্ছত্র নেতৃত্ব। সে নিজেকে সুপ্রিম কমান্ডার ঘোষণা দেয়। সুপ্রিম কমান্ডার হিসেবে বেশ কিছু সুযোগ-সুবিধাও ভোগ করে। যেমন সে আর এখন অন্য প্রাণীদের সঙ্গে ফার্মে ঘুমোয় না। সে থাকে মি. জোন্স এর বাসগৃহে। বিছানায়। যা অ্যানিমেল কিংডমের সংবিধানবিরোধী। স্নোবল ফার্ম ছেড়ে যাওয়ার পর সংবিধান ছিড়ে ফেলে নেপোলিয়ন। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে এই সংবিধান অকার্যকর বলে ঘোষণা করে।  কিছুদিন বাদেই নেপোলিয়নের আচরণে ব্যাপক পরিবর্তন চলে আসে। তার চারপাশে কিছু সুবিধাবাদী প্রাণী জুটে যায়। যারা সারাক্ষণ নেপোলিয়নের প্রসংশা ও গুণকীর্তন করে বেড়ায়। একটা গ্রুপকে দায়িত্ব দেওয়া হয় গুজব ছড়ানোর জন্য। যেমন—ফার্ম থেকে বিতাড়িত স্নোবল ষড়যন্ত্র করছে মি. জোন্সের সঙ্গে। তারা মিলে যেকোনো সময় ফার্ম আক্রমণ করতে চায়। আমাদের স্বাধীনতা ধুলিস্যাৎ করার চক্রান্তে লিপ্ত তারা। বেশ কয়েক বছর কেটে যায়। ফার্মে নানান ঘটনা ঘটে যায় এর মধ্যে। ছোট-খাটো যুদ্ধ হয়। অনেক প্রাণী শহীদ হয়। আর নেপোলিয়নের ক্ষমতা আরও বেড়ে যায়। ফার্মের প্রাণীদের মধ্যেও কিছু পরিবর্তন আসে। তারা এখন চারপায়ে হাঁটে না। দুই পায়ে হাঁটে। আগে ফার্মের স্লোগান ছিল—সমস্ত চারপেয়ো প্রাণী ভালো, দুপেয়োরা খারাপ। এখন সেই স্লোগান পরিবর্তন হয়ে গেছে। নতুন স্লোগান হলো—চারপেয়ো প্রাণীরা ভালো, দু’পেয়োরা তার চেয়ে ভালো। সবচেয়ে বড় পরিবর্তন হয়েছে যে স্লোগানে তা হলো—সকল প্রাণী সমান কিন্তু কিছু প্রাণী ব্যতিক্রম। সেই ব্যতিক্রম প্রাণীদের তালিকায় পড়ে নেপোলিয়ন এবং তার সাঙ্গপাঙ্গরা। যাদের খাবারের অভাব হয় না কখনো। যাদের কথা বলার পূর্ণ স্বাধীনতা আছে। যারা অন্যকে হুকুম করতে পারে। দণ্ডও দিতে পারে। ‘অ্যানিমেল ফার্ম’ গল্পের এখোনেই শেষ। গল্পের শেষ দৃশ্যে নিপোলিয়নকে একটা পার্টিতে দেখা যায়। যেখানে সভা-সদস্যদের নিয়ে হুইস্কি পান করে। ঠিক মি. জোন্সের মতো। মি. জোন্সের মেজাজে, ঢঙে। তার অন্দরমহলের প্রতিটি দরজায় দাঁড়িয়ে থাকে শক্তিশালী গার্ড। যাদের এড়িয়ে নেপোলিয়ানের কাছে ভিড়তে পারে না কোনো সাধারণ প্রাণী। ইংলিশ লেখক জর্জ অরয়েল ১৯১৭ সালের রুশ বিপ্লবকে পটভূমি করে লিখেছিলেন এই বই। লেনিনবাদ-স্টালিনবাদ প্রতিষ্ঠা ও তার ফলকে কটাক্ষ করে লিখেছিলেন এই রূপকথা। এ গল্পের মূল বক্তব্য কী? পৃথিবীতে কোনো অভ্যুত্থান, কোনো বিপ্লব সাধারণের জন্য স্থায়ী স্বাধীনতা এনে দিতে পারে না। সাধারণের স্বপ্ন ভাঙতে ইতিহাসের পরতে পরতে জন্ম নেয় ফ্যাসিস্ট।  সাম্যের গল্প আওড়াতে আওড়াতেই জন্ম হয় এসব ফ্যাসিস্টের। সোহেল অটল: সাংবাদিক ও সাহিত্যিক [email protected]