ঘুমধুম দিয়ে অনুপ্রবেশের চেষ্টা করছে মিয়ানমারের চাকমা-রোহিঙ্গারা
মিয়ানমারের ক্ষমতাসীন জান্তা বাহিনী ও স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মির (এএ) মধ্যে চলমান সংঘর্ষের মধ্যে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের চেষ্টা করছে সেখানকার বাসিন্দারা। সর্বশেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত বাংলাদেশে ঢোকার জন্য বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম সীমান্তের ওপারে জড়ো হয়ে আছে চাকমা সম্প্রদায়ের অন্তত ৪০০ জন। পাশাপাশি কিছুসংখ্যক রোহিঙ্গাও তাদের সঙ্গে জড়ো হচ্ছেন।
সোমবার (৫ ফেব্রুয়ারি) কক্সবাজারের শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) মো. মিজানুর রহমান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
মো. মিজানুর রহমান বলেন, মিয়ানমারে দেশটির সরকারের জান্তা বাহিনীর সঙ্গে স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী আরকান আর্মির ভয়াবহ সংঘর্ষ চলছে। এতে মিয়ানমার সীমান্তে বসবাসকারীদের মধ্যে খাদ্যসংকট দেখা দিয়েছে। ঝুঁকির মধ্যে আছে তাদের জীবন। এই অবস্থায় তারা জীবন বাঁচাতে বাংলাদেশে ঢোকার চেষ্টা করছেন। তবে, সীমান্ত অতিক্রম করে মিয়ানমার থেকে কোনো রোহিঙ্গা অথবা অন্য কোনো সম্প্রদায়ের লোকজন যাতে অনুপ্রবেশ করতে না পারেন, সে জন্য সীমান্তে বিজিবির টহল জোরদার করা হয়েছে।
এদিকে একইদিন সকাল ১০টার পর থেকে মিয়ানমারের বাহিনী আরাকান আর্মির অবস্থান লক্ষ্য করে হেলিকপ্টার থেকে বোমা হামলা করছে। অন্যদিকে আরাকান আর্মির আক্রমণের মুখে এ পর্যন্ত ৯৮ জন মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিজিপি) সদস্য পালিয়ে এসে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছেন। অস্ত্র জমা দিয়ে বর্তমানে তারা সবাই বিজিবির হেফাজতে আছেন।
দুপুর পৌনে তিনটার দিকে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়নের জলপাইতলী গ্রামের একটি রান্নাঘরে মিয়ানমার থেকে ছোড়া মর্টার শেলের আঘাতে দুজনের প্রাণহানি ঘটেছে। নিহত দুজনের মধ্যে একজন বাংলাদেশি এবং অন্যজন রোহিঙ্গা।
বর্তমানে উখিয়া ও টেকনাফের ৩৩টি আশ্রয়শিবিরে নিবন্ধিত রোহিঙ্গার সংখ্যা সাড়ে ১২ লাখ। এর মধ্যে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পর কয়েক মাসেই মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে এসেছে ৮ লাখ। রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের এই ঢলের ছয় বছরেও একজন রোহিঙ্গাকে মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো সম্ভব হয়নি। এর আগে দুবার অবশ্য প্রত্যাবাসনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, কিন্তু সব উদ্যোগ ভণ্ডুল হয়ে যায় রোহিঙ্গাদের অনীহার কারণে।
অবশ্য মিয়ানমারের জান্তা সরকারের বিরুদ্ধে আরাকান আর্মি ও অন্যান্য বিদ্রোহী গোষ্ঠীর সাম্প্রতিক সফলতায় নতুন আশার আলো সঞ্চার হয়েছে এদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের মধ্যে। গত শুক্রবার (৩ ফেব্রুয়ারি) মিয়ানমারে দ্রুত ফিরে যাওয়ার জন্য উখিয়ার লম্বাশিয়া ক্যাম্পে সম্মেলন করেন এফডিএমএন রিপ্রেজেন্টেটিভ কমিটি। সেখানে সীমান্তের ওপারে অনুপ্রবেশের চেষ্টারত রোহিঙ্গাদের ঢুকতে দিতে চান না বলে জানিয়েছেন এপারের রোহিঙ্গারা। বরং, আরাকান আর্মির সংকেত পেলে রাখাইনে নিজেদের জন্মভূমিতে ফিরে যাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন তারা।
মন্তব্য করুন