প্রতারণার কামাই খোয়ালেন জুয়ার সাইটে
আব্দুর রউফ ওরফে বাপ্পি। বায়িং হাউজে আকর্ষণীয় বেতনে চাকরি দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে গত চার বছর ধরে করে আসছিলেন প্রতারণা। এ সময়ে অন্তত ৫০০ মানুষ শিকার হয়েছে তার প্রতারণার। তাদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিয়েছেন কোটি কোটি টাকা। কিন্তু সে টাকা ধরেও রাখতে পারেননি, খুয়েছেন অনলাইন সাইটে জুয়া খেলে। অবশেষে গ্রেফতার হয়েছেন পুলিশের বিশেষ টিমের হাতে।
পুলিশ জানায়, আব্দুর রউফ পড়াশোনা করেছেন এইচএসসি পর্যন্ত। পারিবারিক অভাব-অনটনের কারণে এরপর ঢাকায় এসেছিলেন গার্মেন্টসে চাকরির জন্য। ভর্তি হয়েছিলেন বিজেএমইএ-এর ট্রেনিং প্রতিষ্ঠান কিউসি ম্যানেজমেন্টের ওপর ৬ মাসের কোর্সে। তবে শারীরিক অসুস্থতার জন্য কোর্সটা সম্পন্ন করতে পারেননি। চলে যান গ্রামের বাড়ি শেরপুর। কোর্স সম্পন্ন না করতে পারলেও বায়িং হাউজ সম্পর্কে অর্জিত যৎসামান্য জ্ঞানই পুঁজি করে নেমে পড়েন প্রতারণায়।
বাড়িতে গিয়ে গ্রামীনফোনের সিম বিক্রেতার কাছ থেকে সংগ্রহ করেন কয়েকটা বেনামি রেজিস্ট্রেশন করা সিম। এসব সিম দিয়ে শুরু করেন বায়িং হাউজে চাকরি দেওয়ার নাম করে প্রতারণা। বায়িং হাউজের চাকরি সম্পর্কে ধারণা থাকায় বিভিন্ন কৌশলে একাধিক ব্যক্তির কাছ থেকে সিভি সংগ্রহ করেন এবং সেইসব সিভির রেফারেন্সে থাকা নম্বরগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করে আরও নতুন সিভি সংগ্রহ করেন।
এরপর সংগৃহীত সিভির চাকরি প্রার্থীদের ফোন করে নিজেকে বিভিন্ন নামিদামি বিদেশি কোম্পানির বাংলাদেশি প্রতিনিধি বলে পরিচয় দেন, আকর্ষণীয় বেতনে বায়িং হাউজের চাকরির অফার করেন। এরপর হোয়াটসঅ্যাপে কান্ট্রি ম্যানেজারের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন।
কন্ঠ পরিবর্তন করে কখনও ভারতীয় নাগরিক, কখনও শ্রীলঙ্কান নাগরিক পরিচয়ে কান্ট্রি ম্যানেজার হিসেবে কথা বলেন। হোয়াটসঅ্যাপে ইন্টারভিউ নিয়ে কনফার্ম করেন চাকরি। পরে বাংলাদেশি প্রতিনিধির সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন। বাংলাদেশি প্রতিনিধি পরিচয়দানকারী ব্যক্তি কান্ট্রি ম্যানেজারকে তার দেশে যাওয়ার জন্য বিমানের টিকিট কেনার জন্য কিছু টাকা দিতে বলেন। কেউ একবার এই ফাঁদে পা দিলে শুরু হয় তার নতুন ফাঁদ।
চাকরি কনফার্ম করে মূল কোম্পানিতে মেইল করা হয়েছে বলে জানান। বিদেশি কোম্পানির বেতন নিতে হবে নেটেলার বা পেপাল অ্যাকাউন্টে, অ্যাকাউন্ট তৈরি এবং চালু করার জন্য বিভিন্ন ধাপে টাকা হাতিয়ে নেন প্রতারক।
টাকা দিতে না চাইলে ক্যারিয়ার ধ্বংসের হুমকি দেওয়া হয়। টাকা হাতানোর কৌশলও অভিনব। প্রতারক নিজের কোনো বিকাশ, নগদ অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করেন না। প্রতারণার মাধ্যমে হাতিয়ে নেওয়া টাকা ডিপোজিট করেন অনলাইন জুয়াসাইট ‘1XBET’ এ। এভাবে আব্দুর রউফ নামে এ প্রতারক গত ৪ বছরে পাঁচ শতাধিক চাকরিপ্রার্থীর সঙ্গে প্রতারণার মাধ্যমে হাতিয়েছেন দুই কোটি টাকা। প্রতারণার মাধ্যমে হাতিয়ে নেওয়া এই টাকার বেশিরভাগই পরে তিনি হারিয়েছেন জুয়ার সাইট ‘1XBET’ এ বেটিং করে।
তার প্রতারণার শিকার একজন ভুক্তভোগী গত বছরের ৩০ ডিসেম্বর রাজধানীর উত্তরখান থানায় বাদি হয়ে একটি মামলা করেন। পরবর্তী সময়ে মামলাটি তদন্ত করে পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন বিভাগ।
তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই অজয় দাস জানান, তথ্য-প্রযুক্তির সহায়তায় প্রতারক আব্দুর রউফ ওরফে বাপ্পিকে শেরপুরের সদর থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে গ্রেফতার করা হয়। তার কাছ থেকে প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত মোবাইল সিমকার্ড, মোবাইল ফোন, হোয়াটসঅ্যাপ নম্বর উদ্ধার করা হয়। উদ্ধার করা আলামত বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, গ্রেফতার আসামি শুধু গত দুই মাসেই একটি ‘1XBET’ অ্যাকাউন্ট থেকে জুয়া খেলে খুইয়েছেন ২১ লাখ টাকা।
মন্তব্য করুন