সাবেক ভূমিমন্ত্রীর মানি লন্ডারিং যথাযথভাবে তদন্তের দাবি টিআইবির
সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীর মানি লন্ডারিংয়ের বিষয় দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর), বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইনটেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) এবং অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) মাধ্যমে যথাযথভাবে তদন্তের দাবি জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। একইসঙ্গে বিদেশে সম্পদ অর্জন ও নির্বাচনী হলফনামায় তথ্য গোপন প্রসঙ্গে সাবেক ভূমিমন্ত্রীর ব্যাখ্যা অযৌক্তিক, অবান্তর ও অগ্রহণযোগ্য বলে মন্তব্য সংস্থাটির।
রোববার (৩ মার্চ) এক সংবাদ বিবৃতিতে বিদেশে সম্পদ গোপন করার ঘটনায় একটি নয়, সাবেক ভূমিমন্ত্রী বেশ কয়েকটি আইন ভেঙেছেন উল্লেখ করে তদন্তের এ দাবি জানায় টিআইবি।
এর আগে শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে লন্ডনে নিজের ব্যবসা ও সম্পদের অস্তিত্ব স্বীকার করেন সাইফুজ্জামান চৌধুরী। তবে, দেশ থেকে টাকা নিয়ে বিদেশে সম্পদ গড়েননি বলে দাবি তার।
সংবাদ সম্মেলনে সাবেক এ মন্ত্রী অভিযোগ করেন, তাকে ও সরকারকে বিব্রত করতেই টিআইবি বিদেশে গড়া সম্পদের এ হিসাব এনে প্রতিবেদন করেছে। যদিও টিআইবি মনে করে এ ধরনের সঠিক তথ্য প্রকাশ হলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির বিব্রত হওয়াই স্বাভাবিক।
এ বিষয়ে সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, সর্বশেষ চারটি জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী ৬ হাজার ৭ জন প্রার্থীর হলফনামার ভিত্তিতে সার্বিক, আসন ও দলভিত্তিক তুলনামূলক চিত্র তুলে ধরতে একটি ড্যাশবোর্ড প্রস্তুত ও তথ্য বিশ্লেষণ করে টিআইবি। যার উদ্দেশ্য নির্বাচনের প্রার্থী সম্পর্কে তথ্য, প্রার্থীদের আয় ও সম্পদ বৃদ্ধি এবং হলফনামায় প্রদর্শিত আয় ও সম্পদের তুলনামূলক চিত্র জনস্বার্থে তুলে ধরা। কিন্তু সাবেক ভূমিমন্ত্রীর প্রদর্শিত সম্পদের সঙ্গে তার প্রকৃত সম্পদের গরমিল থাকায় তার বিদেশে সম্পদ অর্জনের বিষয়টি উঠে এসেছে।
হলফনামায় বিদেশে থাকা সম্পত্তি আলাদা করে ঘোষণা করার কোনও কলাম নেই এ অজুহাতে সেসব সম্পদের উল্লেখ করেননি— সাবেক ভূমিমন্ত্রীর এ ব্যাখ্যাকে অযৌক্তিক ও অগ্রহণযোগ্য উল্লেখ করে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, প্রথমত সাবেক ভূমিমন্ত্রী হলফনামায় তথ্য গোপন করেছেন। আর নির্বাচনী হলফনামায় মিথ্যা বা অপর্যাপ্ত তথ্য প্রকাশ করা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। হলফনামায় একজন প্রার্থীর সব সম্পদের বিবরণ প্রদানের বাধ্যবাধকতা রয়েছে, তা দেশে বা বিদেশে যেখানেই থাকুক না কেন। বিদেশে সম্পদের জন্য আলাদা কলাম নেই বলে খোঁড়া যুক্তি দিয়ে তিনি নিজেকে বাঁচানোর চেষ্টা করছেন। আয়কর বিবরণীতে না থাকায় হলফনামায়ও বিদেশে সম্পদের কথা উল্লেখ করেননি বলে যে দাবি তিনি করেছেন, তা নিতান্তই অবান্তর যুক্তি।
বিদেশে সম্পদ গোপন করার ঘটনায় একটি নয়, সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী বেশ কয়েকটি আইন ভেঙেছেন উল্লেখ করে ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, সংবিধানের ১৪৭(৩) ধারা অনুযায়ী, দেশের মন্ত্রীসহ আট ধরনের সাংবিধানিক পদাধিকারী কোনও লাভজনক পদ কিংবা বেতন-ভাতাদিযুক্ত পদ বা মর্যাদায় বহাল হবেন না কিংবা মুনাফা লাভের উদ্দেশ্যে যুক্ত কোনও কোম্পানি, সমিতি বা প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা বা পরিচালনায় কোনোভাবে অংশগ্রহণ করবেন না। অর্থাৎ, সাবেক ভূমিমন্ত্রী শপথ নিয়ে সাংবিধানিক এ বিধানকেও লঙ্ঘন করেছেন, যা কোনোভাবেই মেনে নেওয়ার সুযোগ নেই।
এছাড়া সাইফুজ্জামান চৌধুরী দেশ থেকে টাকা নিয়ে বিদেশে সম্পদ গড়েননি দাবি করে যে বক্তব্য দিয়েছেন এবং তা তদন্তে যে কমিটি করার প্রস্তাব করেছেন তা একেবারেই অবান্তর বলে মনে করে টিআইবি।
সংস্থাটির দাবি, অর্থপাচারসহ সাংবিধানিক ও আইনি বিধানের লঙ্ঘন কোনও তদন্ত কমিটির বিষয় নয়, বরং যথাযথ আইনি প্রক্রিয়ায় দুদক, এনবিআর, বিএফআইইউ এবং সিআইডিসহ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে যথাযথ জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে।
মন্তব্য করুন