• ঢাকা মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
logo

এমভি আবদুল্লাহর কাছাকাছি ইইউ যুদ্ধজাহাজ, চক্কর কাটছে হেলিকপ্টার

আরটিভি নিউজ

  ২২ মার্চ ২০২৪, ১১:৪৬
এমভি আবদুল্লাহ ঘিরে ঘন ঘন চক্কর কাটছে ইইউ নেভীর হেলিকপ্টার। এক্স হ্যান্ডেলে 'অপারেশন আটালান্টা'র প্রকাশ করা ছবি।

ভারত মহাসাগরে সোমালিয়ান জলদস্যুদের হাইজ্যাক করা বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহর ওপর নজর রাখছে ইউরোপীয়ান ইউনিয়ন নেভাল ফোর্সের (ইইউএনএভিএফওআর) একটি যুদ্ধজাহাজ। এই মুহূর্তে জলদস্যুদের হাতে জিম্মি জাহাজটির বেশ কাছাকাছি অবস্থান করছে ইইউ নেভাল ফোর্সের জাহাজটি। পাশাপাশি তাদের হেলিকপ্টার ঘন ঘন চক্কর কাটছে জিম্মি জাহাজটি ঘিরে।

প্রসঙ্গত, সোমালিয়া উপকূলে জলদস্যুদের দমনে ‘অপারেশন আটলান্টা’ নামে কার্যক্রম পরিচালনা করছে ইইউএনএভিএফওআর।

বৃহস্পতিবার (২১ মার্চ) দিবাগত মধ্যরাতে নিজেদের এক্স অ্যাকাউন্টে বাংলাদেশি ২৩ নাবিকসহ জিম্মি এমভি আবদুল্লাহকে ঘিরে তাদের কার্যক্রমের তিনটি ছবি ও একটি ভিডিও প্রকাশ করেছে ‘অপারেশন আটলান্টা’। তার মধ্যে একটি ছবিতে ইইউ নেভাল ফোর্সের অপারেশন আটলান্টার মোতায়েন করা যুদ্ধজাহাজটি থেকে বাংলাদেশের জিম্মি জাহাজটিকে দেখা যাচ্ছে। জাহাজটির দিকে তাকিয়ে আছেন ইইউ নেভাল ফোর্সের দুই সদস্য। যা যুদ্ধজাহাজটি থেকে এমভি আবদুল্লাহ’র খুব কম দূরত্বকেই নির্দেশ করে।

অপর দুটি ছবি ও একটি ভিডিওতে যুদ্ধজাহাজ থেকে ইইউ নেভাল ফোর্সের একটি হেলিকপ্টারকে জিম্মি এমভি আবদুল্লাহর ওপর দিয়ে উড়ে যেতে দেখা যায়।

এর আগেই গত ১৪ মার্চ এক বিবৃতিতে ইইউ নেভাল ফোর্স জানায়, ‘অপারেশন আটলান্টা’র আওতায় তাদের একটি যুদ্ধজাহাজ বাংলাদেশি জাহাজটিকে অনুসরণ করছে। বাংলাদেশি ও সোমালিয়ান কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছে তারা।

এরপর ১৮ মার্চ রয়টার্স তাদের এক প্রতিবেদনে জানায়, সোমালিয়ার জলদস্যুদের হাতে জিম্মি এমভি আবদুল্লাহকে উদ্ধারে একযোগে অভিযান চালানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে দেশটির পুলিশ ও বিভিন্ন দেশের নৌবাহিনীর সদস্যরা।

তবে, নাবিকদের নিরাপত্তাকেই সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে জাহাজের মালিকপক্ষ কবির গ্রুপ এবং সরকার। তাই এর আগে ইইউ নেভাল ফোর্স জিম্মি জাহাজটি উদ্ধারে অভিযানের প্রস্তাব দিলেও বাংলাদেশের পক্ষ থেকে সম্মতি দেওয়া হয়নি।

এ বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মেরিটাইম অ্যাফেয়ার্স সচিব রিয়ার অ্যাডমিরাল (অব.) মো. খুরশেদ আলম তখন বলেছিলেন, ‘আমরা ইইউ নেভাল ফোর্সকে অভিযান পরিচালনার অনুমতি দিইনি। তাদের সঙ্গে নেগোসিয়েশন করছি, কীভাবে শান্তিপূর্ণ উপায়ে নাবিক ও ক্রুদের কোনো ক্ষতি ছাড়াই জাহাজটি উদ্ধার করা যায়।’

এ ছাড়া ছিনতাই হওয়া জাহাজ ও জিম্মি নাবিকদের উদ্ধারে ‘মধ্যস্থতাকারী’ নিয়োগের পরিকল্পনার কথা জানিয়েছিল জাহাজের মালিক কবির গ্রুপ।

এরই মধ্যে জানা গেছে, ইইউ নৌবাহিনীকে অভিযান পরিচালনা থেকে বিরত রাখতে জিম্মি নাবিকদের ওপর চাপ বাড়াচ্ছে জলদস্যুরা।

বিষয়টি নিশ্চিত করে দেশের সিনিয়র নাবিক ক্যাপ্টেন আতিক ইউএ খান জানান, ইইউ নৌবাহিনীর চাপে নাবিকদের এখন ২৪ ঘণ্টাই জাহাজের ব্রিজে অবস্থান করতে হচ্ছে। এছাড়া মাঝেমধ্যে ভিএইচএফ (ওয়াকি-টকি) ব্যবহার করে নৌবাহিনীকে অনুরোধও জানাতে হচ্ছে যেন কাছে না আসে তারা।

সর্বশেষ বুধবার প্রথমবারের মতো জলদস্যুরা জিম্মি জাহাজের মালিকপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে বলে জানান কবির গ্রুপের মিডিয়া উপদেষ্টা মিজানুল ইসলাম। তিনি জানান, তৃতীয়পক্ষের মাধ্যমে জিম্মি জাহাজ থেকে যোগাযোগ করেছে জলদস্যুরা। সেইসঙ্গে কথা হয়েছে এমভি আবদুল্লাহর ক্যাপ্টেনের সঙ্গেও। তবে, কী আলাপ হয়েছে, তা জানাতে রাজি হননি কবির গ্রুপের এ কর্মকর্তা। শুধু বলেছেন, জলদস্যুরা যেহেতু যোগাযোগ শুরু করেছে, সুতরাং সমঝোতার সুযোগ তৈরি হয়েছে।

এদিকে অভিযান পরিচালনা করে জিম্মি নাবিকদের উদ্ধার প্রসঙ্গে বাংলাদেশি মার্চেন্ট মেরিন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ক্যাপ্টেন এম আনাম চৌধুরী বলেন, ‘সোমালিয়া কোস্ট লাইনের ভেতরে এমন অভিযান খুব ঝুঁকিপূর্ণ হবে। সোমালিয়া কোস্টের ভেতর যতগুলো জাহাজ ছিল আজ পর্যন্ত কোনো জাহাজ শান্তিপূর্ণ নেগোসিয়েশন ছাড়া মুক্ত করা সম্ভব হয়নি। মাল্টিজ জাহাজ রুয়েন, যেটি ভারতীয় বাহিনী কয়েকদিন আগে উদ্ধার করেছে, সেটিও যদি তাদের কোস্ট থেকে বের না হতো, তবে উদ্ধার করা সম্ভব হতো না।’

‘অপারেশন আটলান্টা’ তাদের এক্স অ্যাকাউন্টে প্রকাশিত জলদস্যুতার ঝুঁকি প্রতিবেদনে জানিয়েছে, গত ২৪ নভেম্বর থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ২৫টি নৌযানে ছিনতাই ও ছিনতাইয়ের চেষ্টা চালিয়েছে দস্যুরা। এর মধ্যে বেশিরভাগই ছোট নৌযান। বাণিজ্যিক জাহাজ রয়েছে তিনটি। তবে সর্বশেষ শুধু বাংলাদেশি জাহাজটিই এখন সোমালিয়ার দস্যুদের কাছে জিম্মি রয়েছে।

উল্লেখ্য, গত ১২ মার্চ মোজাম্বিক থেকে ৫৫ হাজার টন কয়লা বোঝাই করে সংযুক্ত আরব আমিরাতে উদ্দেশে রওনা হয় চট্টগ্রামভিত্তিক ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান কবির গ্রুপের জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ। পথে ভারত মহাসাগরে সোমালিয়ার জলদস্যুদের কবলে পড়ে জাহাজটি।

মোগাদিসু থেকে এক হাজার ১১১ কিলোমিটার পূর্বে ভারত মহাসাগর থেকে ছিনতাই করে বাণিজ্যিক কার্গো জাহাজটিকে প্রথমে নেওয়া হয় সোমালিয়ার গারাকাড এলাকায়। উপকূল থেকে প্রায় ৩৭ কিলোমিটার দূরে নোঙর করা হয় সেটিকে। এরপর আবার অবস্থান বদলে আবদুল্লাহকে নেওয়া হয় গদবজিরান উপকূল এলাকায়। সেখান থেকে সরিয়ে নোঙর করা হয় উপকূলের মাত্র সাড়ে ৭ কিলোমিটার দূরে। তারপর আরও এগিয়ে উপকূলের পৌনে তিন কিলোমিটার দূরত্বে নেওয়া হয়েছে। জাহাজটিতে জিম্মি আছেন ২৩ জন বাংলাদেশি নাবিক ও ক্রু।

সর্বশেষ প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশি জাহাজটি গত তিনদিন ধরে সেখানেই নোঙর করা আছে।

মন্তব্য করুন

Bangal
rtv Drama
Radhuni
  • বাংলাদেশ এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
বঙ্গোপসাগরে জলদস্যুদের গুলিতে ১ জেলে নিহত, ১৯ জনকে অপহরণ
জলদস্যুতা জীবনে কখনও শান্তি ফিরিয়ে আনবে না: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে আত্মসমর্পণ করলেন ১২ বাহিনীর ৫০ জলদস্যু
সোমালি জলদস্যুদের কবলে এমভি ব্যাসিলিস্ক