উপজেলা নির্বাচন
হলফনামা বিশ্লেষণ টিআইবির, যা বলছেন আ.লীগ নেতারা
চলমান চার ধাপের উপজেলা নির্বাচনের প্রথম দুই ধাপের প্রার্থীদের হলফনামার তথ্য বিশ্লেষণ ও পর্যবেক্ষণের ফলাফল প্রকাশ করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।
হলফনামার তথ্য বিশ্লেষণে জনপ্রতিনিধি ও প্রার্থীদের অনেকের আয়-সম্পদের অবিশ্বাস্য বৃদ্ধির তথ্য উঠে এসেছে। প্রার্থীদের ৫৬ থেকে ৭০ শতাংশই ব্যবসায়ী, কোটিপতি প্রার্থীর ছড়াছড়ি এবং জনপ্রতিনিধি হওয়ার অসুস্থ প্রতিযোগিতার কথাও তুলে ধরেছে সংস্থাটি।
তবে তাদের এই বিশ্লেষণের উদ্দেশ্য এবং পর্যবেক্ষণের নানা দিক নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন আওয়ামী লীগের নেতারা। তারা বলছেন, জনপ্রতিনিধি ও প্রার্থীদের আয়-সম্পদ বৃদ্ধি স্বাভাবিক, ব্যবসায়ী ও কোটিপতি প্রার্থীদের ছড়াছড়িকেও অসুস্থ প্রতিযোগিতা বলা যাবে না। এ ক্ষেত্রে অনিয়ম হলে সেটি ভিন্ন কথা।
উপজেলা নির্বাচনের প্রথম ধাপের ১৪৪টি উপজেলার দেড় হাজারের বেশি হলফনামা এবং দ্বিতীয় ধাপের ১৫৭টি উপজেলার ১৮০০-এর বেশি হলফনামার ৮ ধরনের তথ্য বহুমাত্রিক ও তুলনামূলক বিশ্লেষণ করে টিআইবি।
সংস্থাটি বলেছে, প্রথম ধাপে ১১৭ জন কোটিপতি প্রার্থী রয়েছেন, দ্বিতীয় ধাপে আছেন ১১৬ জন। এর মধ্যে চেয়ারম্যান পদেই প্রথম ধাপে ৯৪ জন, দ্বিতীয় ধাপে ১০৫ জন কোটিপতি। গত উপজেলা নির্বাচনের তুলনায় এবার উভয় ধাপেই কোটিপতি প্রার্থীর সংখ্যা বেড়েছে তিন গুণ।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা বলছেন, রাজনীতিবিদদের টাকা উপার্জন করা তো অপরাধ নয়। তিনি সৎভাবে করছেন কিনা সেটি দেখার বিষয়। একজন সৎ কিনা, সেটি প্রমাণ করার মাধ্যম তো তার টাকা না থাকা নয়। টাকার মালিক হওয়া মানেই চুরি করে, অনিয়ম করেও করা নয়।
নেতারা আরও বলছেন বিভিন্ন দেশে রাজনীতিবিদরা টাকার মালিক হচ্ছেন, ব্যবসায়ীরা জনপ্রতিনিধি হচ্ছেন। রাজনীতিবিদ সৎ যেমন আছেন, তেমন অসৎও আছেন। ঢালাওভাবে এভাবে রাজনীতিবিদদের চরিত্র হনন কিংবা কালিমা লেপন ঠিক নয়।
টিআইবির তথ্যমতে, প্রথম ধাপে চেয়ারম্যান প্রার্থীদের ৬৯ দশমিক ৮৬ শতাংশ ব্যবসায়ী, ১১ দশমিক ১৯ শতাংশ কৃষিজীবী, আইনজীবী ৬ দশমিক ৩২ শতাংশ ও শিক্ষক ৪ দশমিক ১৫ শতাংশ।
ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রায় ৬৯ দশমিক ৫৯ শতাংশ ব্যবসায়ী, নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৫২ শতাংশ গৃহিণী, গৃহস্থালির কাজ করলেও ২৪ শতাংশ ব্যবসায়ী।
দ্বিতীয় ধাপে চেয়ারম্যান প্রার্থীদের ৭০ দশমিক ৫১ শতাংশ ব্যবসায়ী, ১২ দশমিক ১৭ শতাংশ কৃষিকাজ, আইনজীবী ৪ দশমিক ১৭ শতাংশ ও শিক্ষক ৪ দশমিক ১৭ শতাংশ। ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রায় ৬৮ দশমিক ৭৩ শতাংশ ব্যবসায়ী, নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৫২ শতাংশই গৃহিণী, গৃহস্থালির কাজ করলেও ২৯ শতাংশ ব্যবসায়ী।
টিআইবি বলছে, অস্থাবর সম্পদ বৃদ্ধির হারে সংসদ সদস্যদের পেছনে ফেলেছেন উপজেলা পরিষদের জনপ্রতিনিধিরা। ৫ বছরে সংসদ সদস্যদের অস্থাবর সম্পদ বৃদ্ধির হার সর্বোচ্চ ছিল ৩ হাজার ৬৫ শতাংশ। সেখানে প্রথম ধাপের একজন উপজেলা চেয়ারম্যানের সম্পদ বেড়েছে ৪ হাজার ২০০ শতাংশের বেশি।
দ্বিতীয় ধাপে ৫ বছরে একজন প্রার্থীর আয় বেড়েছে সর্বোচ্চ ১০ হাজার ৯০০ শতাংশ। উপজেলা নির্বাচনে ১০ বছরে একজন প্রার্থীর আয় বৃদ্ধির হার সর্বোচ্চ ৫ হাজার ৩৩৬ শতাংশ।
সংস্থাটির পর্যবেক্ষণে বলা হয়, ক্ষমতায় থাকার সঙ্গে দ্রুত আয় ও সম্পদ বৃদ্ধির প্রবণতা স্পষ্ট। শুধু নির্বাচিত ব্যক্তি নন, তাদের স্ত্রী, স্বামী ও নির্ভরশীলদের আয় ও সম্পদ বেড়েছে। যারা দীর্ঘ সময় ধরে ক্ষমতায় আছেন, তাদের আয় ও সম্পদ বেশি বৃদ্ধি পাওয়ার প্রবণতাও স্পষ্ট।
অপরদিকে আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, রাজনীতিতে ব্যবসায়ীদের আগমন নতুন নয়। ‘৭৫ এ বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর এটি শুরু হয়, যা ধীরে ধীরে বেড়েছে। শুধু বাংলাদেশের রাজনীতিতেই হচ্ছে না, বিশ্বব্যাপী একই অবস্থা। টাকার উপযোগিতা অস্বীকার করার সুযোগ নেই। মানুষ নিজের সুবিধাটা চাইবে, এটাই স্বাভাবিক। ব্যবসায়ীদের মাঝে বর্তমানে জনপ্রতিনিধি হওয়ার প্রবণতা বেড়েছে, এটাও সত্য।
মন্তব্য করুন