এমপি আনারের মরদেহ টুকরো করে লাগেজে ভরে বাইরে নেওয়া হয়!
ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কলকাতায় গিয়ে খুন হয়েছেন ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনার। তাকে হত্যার রহস্য আরও ঘনীভূত হচ্ছে। হত্যার পর এমপি আনোয়ারুলের মরদেহ ফ্ল্যাট থেকে লাগেজে ভরে নিউটাউনের অভিজাত আবাসন সঞ্জীবা গার্ডেনের বাইরে নেওয়া হয় বলে অনুমান করছে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ।
বুধবার (২২ মে) পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, গত ১৩ মে দুপুরের পর কলকাতার নিউটাউনের অভিজাত আবাসন সঞ্জীবা গার্ডেনের বি ইউ ব্লকের ৫৬ নম্বর ফ্ল্যাটে নেওয়া হয় আনোয়ারুল আজিমকে। তখন তার সঙ্গে এক নারীসহ ৪ জন ছিলেন।
ওই ফ্লাটে রক্তের দাগ ও একাধিক পায়ের চিহ্ন দেখে পুলিশ অনুমান করেছে, গত ১৩ মে রাতে বি ইউ ব্লকের ৫৬ নম্বর ফ্ল্যাটে তারা ৪ জন একসঙ্গে ছিলেন। এদিন রাতেই তাকে খুন করা হয়। হত্যাকারীদের পরিকল্পনা অনুযায়ী, মরদেহ টুকরো করে লাগেজে নিয়ে প্রতিদিন একজন করে বের হয়েছেন। প্রথম দিন ওই নারী এবং পরের দুই দিন ওই দুই পুরুষ বের হয়েছেন।
এ ঘটনায় দুই জনকে গ্রেপ্তার করেছে ভারতীয় পুলিশ। গ্রেপ্তাররা বাংলাদেশি নাকি ভারতীয় এ বিষয়ে কিছু জানায়নি দেশটির পুলিশ।
পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের আইজি সিআইডি অখিলেশ চতুর্বেদী জানিয়েছেন, তদন্তের স্বার্থে এখনই কিছু বলব না। সিসিটিভি ফুটেজ ও লিংকম্যানের মাধ্যমে তদন্ত শিগগিরই শেষ হবে।
তিনি জানান, সঞ্জীবা গার্ডেনের বি ইউ ব্লকের ৫৬ নম্বর ফ্ল্যাটটির মালিক রাজ্যের পশ্চিমবঙ্গ সরকারের আবগারি বিভাগে কর্মরত সন্দীপ রায়। আখতারুজ্জামান নামে যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী এক বাংলাদেশিকে তিনি ফ্ল্যাটটি ভাড়া দিয়েছিলেন।
যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী ওই বাংলাদেশি কোথায়?- প্রশ্নের জবাবে অখিলেশ চতুর্বেদী বলেন, এ বিষয়ে এখনই কোন তথ্য দেব না। পুলিশ নিশ্চিত, এটি নিখোঁজের ঘটনা নয়, পরিকল্পিত হত্যা। এখন ফ্ল্যাটে ফরেনসিক বিভাগের কর্মকর্তারা কাজ করছেন।
প্রসঙ্গত, গত ১২ মে চিকিৎসার জন্য এমপি আনোয়ারুল আজিম আনার দর্শনা-গেদে সীমান্ত দিয়ে ভারতে যান। সেখানে গিয়ে তিনি তার ভারতীয় ঘনিষ্ঠ বন্ধু পশ্চিমবঙ্গের উত্তর ২৪ পরগনা জেলার বরানগর থানার মলপাড়া লেনের বাসিন্দা স্বর্ণ ব্যবসায়ী গোপাল বিশ্বাসের বাড়িতে ওঠেন। পরদিন ১৩ মে দুপুরে চিকিৎসককে দেখানোর উদ্দেশে বেরিয়ে যান। কিন্তু সন্ধ্যায়় ফেরার কথা থাকলেও তিনি আর ফিরে আসেননি। উল্টো দিল্লি গিয়ে সেখান থেকে হোয়াটসঅ্যাপে মেসেজ পাঠিয়ে জানান, তাকে আর ফোন করতে হবে না। দরকার হলে তিনি তাকে (গোপাল বিশ্বাস) ফোন করবেন। কিন্তু এরপর থেকে আর কোনোভাবেই তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি। স্বাভাবিকভাবে উৎকণ্ঠা ছড়ায় তার বাংলাদেশের বাসায়। পাশাপাশি গোপাল বিশ্বাসও উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন। এরপরই কোনও উপায় না দেখে গত ১৮ মে শনিবার বরানগর থানায় একটি নিখোঁজের অভিযোগ দায়ের করেন গোপাল বিশ্বাস।
জিডিতে গোপাল বিশ্বাস লিখেছেন, গত ১৩ মে দুপুর দেড়টার পর ডাক্তার দেখানোর কথা বলে আমার বাড়ি থেকে বের হয়ে যান আনোয়ারুল আজীম আনার। যাওয়ার সময় বলে যান, দুপুরে খাবো না, সন্ধ্যায় ফিরে আসবো। যাওয়ার সময় নিজে গাড়ি ডেকে বরাহনগর বিধান পার্ক কলকাতা পাবলিক স্কুলের সামনে থেকে গাড়িতে উঠে চলে যান। এরপর তিনি সন্ধ্যায় বরাহনগর থানার অন্তর্গত মণ্ডলপাড়া লেনে বাড়িতে না ফিরে হোয়াটসঅ্যাপে মেসেজ করেন, আমি বিশেষ কাজে দিল্লি যাচ্ছি। গিয়ে ফোন করবো, তোমাদের ফোন করার দরকার নেই।
গোপাল বিশ্বাস মিসিং ডায়েরিতে আরও লিখেছেন, গত ১৫ মে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনার হোয়াটসঅ্যাপে মেসেজ করে জানান, আমি দিল্লি পৌঁছালাম, আমার সঙ্গে ভিআইপিরা আছে, ফোন করার দরকার নেই।
মন্তব্য করুন