• ঢাকা শনিবার, ০৬ জুলাই ২০২৪, ২২ আষাঢ় ১৪৩১
logo

এমপি আনার হত্যাকাণ্ড

কলকাতা ছাড়ার আগে যা জানালেন ডিবিপ্রধান

আরটিভি নিউজ

  ৩০ মে ২০২৪, ১৫:৩৪
কলকাতা ছাড়ার আগে যা জানালেন ডিবিপ্রধান
ছবি : সংগৃহীত

ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনার হত্যারহস্য তদন্তে কলকাতায় গিয়ে সেপটিক ট্যাংক থেকে ‘টুকরো করা মাংস’ উদ্ধারের পর দেশে ফিরে আসছেন ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদসহ তিন কর্মকর্তা।

বৃহস্পতিবার (৩০ মে) বেলা ১১টা ৪০ মিনিটের দিকে ছয়টি গাড়ি বহর নিয়ে ডিবিপ্রধান হারুন নিউটাউনের দ্য ওয়েস্টিন হোটেল থেকে বেরিয়ে সোজা চলে যান কলকাতার নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে। সেখানে আগে থেকেই অপেক্ষায় ছিলেন সাংবাদিকরা। ফ্লাইটে ওঠার আগে তাদের সঙ্গে তদন্তের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলেন ডিবিপ্রধান।

তদন্তের অগ্রগতি নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করে সাংবাদিকদের হারুন জানান, এমপি আনার হত্যার অন্যতম দুই আসামি ফয়জুল ওরফে সিয়াম ও আখতারুজ্জামান শাহীন। দুজনই দেশে নেই। সিয়াম নেপালে ও শাহীন আছেন যুক্তরাষ্ট্রে। পশ্চিমবঙ্গের সিআইডি ও কলকাতা পুলিশের সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষের কাছে তাদের গ্রেপ্তারের আবেদন জানানো হয়েছে। পাশাপাশি উদ্ধারকৃত মাংস দ্রুত ফরেনসিক পরীক্ষা করে ডিএনএ টেস্টের রিপোর্ট পাঠানোর অনুরোধও জানানো হয়েছে ভারতীয় প্রশাসনের কাছে।

এ সময় অপরাধীদের প্রতি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশ থেকে কলকাতায় ঢুকে নিশ্চিন্তে অপরাধ করে পার পেয়ে যাবে, অপরাধীরা এমনটা মনে করলে ভুল করবে। কলকাতা পা দিয়ে বিভিন্ন দপ্তরের সঙ্গে কথা বলে যেরকম সহযোগিতা পেয়েছি, কলকাতা পুলিশের সঙ্গে যে সৌহার্দ্যপূর্ণ ও পারস্পরিক সম্পর্ক তৈরি হলো, আগামী দিনগুলোতে কোন অপরাধী বাংলাদেশ থেকে অপরাধ করে কলকাতাকে স্বর্গীয় ভুবন বলে মনে করার কোন যুক্তি খুঁজে পাবে না। আমরা আরো দ্রুততার সঙ্গে কলকাতায় পলাতক অপরাধীদের গ্রেপ্তার করতে পারবো।

ডিবিপ্রধান বলেন, এমপি আনার হত্যাকাণ্ডে কলকাতায় এবং বাংলাদেশে দুটি জায়গায় মামলা হয়েছে এবং সে কারণেই তদন্ত করতে আমরা কলকাতায় এসেছি এবং তারাও তদন্তের স্বার্থে বাংলাদেশে যাবে। আমরা ইতিমধ্যে মূল ঘাতকদের গ্রেপ্তার করেছি, তারা অনেক কিছু স্বীকার করেছে। কীভাবে তারা প্ল্যান করেছিল, বাংলাদেশের কোথায় কোথায় তারা বৈঠক করেছে, কলকাতায় এসে কোন কোন বাসায় ছিল, তারা কি কি কাজ করেছিল এগুলো যাচাই-বাছাই করার দরকার ছিল।

তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের পেনাল কোড অনুসারে বলা রয়েছে খুনির ঘড়ি বা অন্য কোন অংশ বিশেষ উদ্ধার করা না গেলে মামলা নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে একটু সমস্যা হয়; আর সেই কারণে আমরা এসেছি। ঝড়-বৃষ্টির মধ্যেও আমরা বিভিন্ন জায়গায় তল্লাশি অভিযান চালিয়েছি। এখানে যে আসামি গ্রেপ্তার হয়েছিলো তাকে নিয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করি। পাশাপাশি যে যে জায়গাগুলোতে তারা গিয়েছিল সেই সমস্ত জায়গায় আমরা অপারেশন অভিযান চালাই।

হারুন বলেন, এমপি আনারের লাশ বা লাশের টুকরো যাতে পাওয়া যায় সেই কারণেই আমাদের এই তদন্ত চালাই। একটা মামলার নিষ্পত্তি করতে গেলে যে সুরতহাল, মেডিকেল রিপোর্ট, ভিসেরা রিপোর্ট, আলামতের দরকার হয়, তা উদ্ধারই মূল উদ্দেশ্য ছিল। আমাদের কাজ ছিল আসামিদের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্য কলকাতা পুলিশকে শেয়ার করা এবং তাদের কাজে সহযোগিতা করা। আমরা মনে করি, আমরা সহযোগিতা করতে পেরেছি এবং যে উদ্দেশ্যে এসেছিলাম, অর্থাৎ একদিকে আলামত সংগ্রহ করা, সিআইডিকে সহযোগিতা করা, ডিজিটাল এভিডেন্স নিজে চোখে দেখা, কলকাতায় গ্রেপ্তার হওয়া জিহাদ হাওলাদার সঙ্গে কথা বলে আমাদের দেশে গ্রেপ্তার হওয়া আসামিদের বয়ান মিলিয়ে নেওয়া, কোথায় কোথায় গেছে সেগুলো খোঁজখবর নেওয়া- এসব কাজে আমরা শতভাগ সফল হয়েছি।

ডিবিপ্রধান বলেন, এই হত্যাকাণ্ডের মূল মাস্টারমাইন্ড আখতারুজ্জামান শাহীন বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছে। এ বিষয়টি নিয়েও আমরা সিআইডি কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেছি। আমরা বলেছি, যেহেতু ভারতের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্যার্পণ চুক্তি রয়েছে এবং যেহেতু তার বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা দায়ের আছে, তাই শাহীনকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফিরিয়ে আনতে যেন তারা কথা বলে। পাশাপাশি আমরাও বাংলাদেশের পুলিশের আইজি মহোদয়ের সাথে কথা বলেছি। বাংলাদেশে যে আমেরিকান অ্যামবেসি আছে সেখানেও চিঠি দিয়ে অবগত করেছি।

তিনি আরও বলেন, পারিপার্শ্বিক অবস্থা বিবেচনা করে আমরা সিআইডিকে অনুরোধ করেছিলাম যেন তারা কমোড, সেপটিক ট্যাংক, সুয়ারেজ লাইনগুলোকে একটু পরীক্ষা করেন। এরপরেই সেপটিক ট্যাঙ্ক থেকে বেশ কিছু মাংস উদ্ধার হয়। প্রাথমিকভাবে এই মাংস এমপি আনারের মনে করা হলেও এ ব্যাপারে শতভাগ নিশ্চিত হতে ফরেনসিক এবং ডিএনএ টেস্ট জরুরি। আমরা সিআইডিকে অনুরোধ জানিয়েছি এই পরীক্ষাগুলো যেন খুব দ্রুততার সঙ্গে করা হয়। ডিএনএ টেস্ট করার জন্য এমপি আনারের কন্যা খুব শিগগিরই কলকাতা আসবেন। পাশাপাশি আনুষ্ঠানিকভাবে সিআইডিকে চিঠি দিয়ে এখানকার লাশের টুকরো নিয়ে যাওয়া হবে।

হারুন বলেন, এছাড়া বাংলাদেশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে আমরা ইতিমধ্যে একটি চিঠি নেপালে পাঠিয়েছি। এবং নেপালের সব সংস্থাকে আমরা অবগত করেছি যে সিয়াম বর্তমানে নেপালে অবস্থান করছে। আমরা মনে করছি খুব শিগগিরই একটা ভালো খবর আসবে।

মন্তব্য করুন

  • বাংলাদেশ এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
জিহাদ ও সিয়ামের ফের ১৪ দিনের জেল হেফাজত
তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের তারিখ পেছাল 
এমপি আনার হত্যা: এবার ফয়সালের দায় স্বীকার
এমপি আনার হত্যায় এবার স্বীকারোক্তি দিচ্ছেন মোস্তাফিজ