যুদ্ধাপরাধী মুঈনুদ্দীনের বিষয়ে ব্রিটিশ আদালতের রায়ে ঢাকায় উদ্বেগ
একাত্তরের যুদ্ধাপরাধী চৌধুরী মুঈনুদ্দীনের করা একটি মামলায় তার পক্ষে ব্রিটিশ আদালতের রায়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের সংগঠন একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি, প্রজন্ম ৭১ ও সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট।
সংগঠন তিনটি যুক্তরাজ্যের সুপ্রিম কোর্টের রায়ে হতাশা ও উদ্বেগ প্রকাশ করে বিবৃতি দিয়েছে।
২০২০ সালে যুক্তরাজ্যের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিরুদ্ধে চৌধুরী মুঈনুদ্দীনের করা মানহানির মামলার রায় গত ২০ জুন ঘোষণা করেন দেশটির সুপ্রিম কোর্ট। রায়ে মুঈনুদ্দীনকে মানহানির মামলা চালিয়ে যাওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়।
এ রায়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে তিন সংগঠনের যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় আমাদের বরেণ্য বুদ্ধিজীবীদের পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ডে চৌধুরী মুঈনুদ্দীনের জড়িত থাকার প্রামাণিক দলিল রয়েছে। তা সত্ত্বেও তাকে ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বিরুদ্ধে মানহানির ক্ষতিপূরণ চেয়ে মামলা করার অনুমতি দেওয়া, বাংলাদেশে সংঘটিত যুদ্ধাপরাধের বিচারের প্রতি একটি মারাত্মক আঘাত।
এতে আরও বলা হয়, বিশ্বের প্রতিটি দেশের নিজস্ব বিচার ব্যবস্থা আছে, যা স্বাধীন ও সার্বভৌম হিসেবে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত। বাংলাদেশ যেমন যুক্তরাজ্যের আদালতের রায়ের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকবে, তেমনি যুক্তরাজ্যও বাংলাদেশের নিজস্ব আইনি প্রক্রিয়ায় চৌধুরী মুঈনুদ্দীনের মামলার রায়ের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করবে। ব্রিটিশ সরকারকে সদ্য প্রদত্ত রায়ের প্রভাব পুনর্বিবেচনা করার জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি।
বিবৃতিতে সরকারের কাছে চৌধুরী মুঈনুদ্দীনসহ প্রবাসে পলাতক সব যুদ্ধাপরাধীর বিচার ও রায় কার্যকর করার জন্য আইনি ও কূটনৈতিক তৎপরতার মাধ্যমে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে দৃশ্যমান পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।
এদিকে মুঈনুদ্দীনের করা মামলার বিষয়ে যুক্তরাজ্যের সুপ্রিম কোর্ট ‘সব তথ্য বিবেচনা না করে’ রায় দিয়েছেন বলে মন্তব্য করেছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।
রায়ে সঠিক তথ্য পুরোপুরি উঠে আসেনি দাবি করে এ রায়কে ‘পক্ষপাতমূলক’ বলেও অভিহিত করেছেন আইনমন্ত্রী।
এর আগে, ২০১৯ সালে মুঈনুদ্দীনের ফৌজদারি অপরাধের বিবরণসহ একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে যুক্তরাজ্যের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। সেখানে তাকে ‘মানবতাবিরোধী অপরাধে দোষী সাব্যস্ত’ উল্লেখ করা হয়। সেই প্রতিবেদন টুইটারে (বর্তমানে এক্স) শেয়ার করেন তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী প্রীতি প্যাটেল। পরে নিজেকে ‘নির্দোষ’ দাবি করে যুদ্ধাপরাধী বলায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের রিরুদ্ধে ৬০ হাজার পাউন্ড ক্ষতিপূরণ চেয়ে দেশটির হাইকোর্টে মামলা করেন মুঈনুদ্দীন। পরে তা দুই দফায় খারিজ হলেও সুপ্রিম কোর্টে ফের মামলা করার আবেদন করেন এ যুদ্ধাপরাধী। গত ২০ জুন যুক্তরাজ্যের সুপ্রিম কোর্ট মুঈনুদ্দীনকে মামলা করার সুযোগ দিয়ে রায় দেয়।
উল্লেখ্য, একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ডের সাজা নিয়ে বর্তমানে যুক্তরাজ্যে পলাতক মুঈনুদ্দীন। ১৯৭৩ সাল থেকে তিনি যুক্তরাজ্যে বসবাস করছেন।
মন্তব্য করুন