• ঢাকা শনিবার, ০৬ জুলাই ২০২৪, ২২ আষাঢ় ১৪৩১
logo

দুর্নীতিবাজদের চিহ্নিত করার দাবি সংসদে, এমপিদের ক্ষোভ

আরটিভি নিউজ

  ২৭ জুন ২০২৪, ০২:৩১
জাতীয় সংসদের বাজেট অধিবেশন
ফাইল ছবি

দুর্নীতিবাজদের চিহ্নিত করার দাবি জানিয়েছেন সরকার ও বিরোধী দলের সংসদ সদস্যরা। বুধবার (২১ জুন) জাতীয় সংসদ অধিবেশনে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে এ দাবি জানান তারা।

আলোচনায় অংশ নিয়ে শেখ হাসিনার জন্য প্রাচীর গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছেন স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য লতিফ সিদ্দিকী। স্টেটমেন্ট নিয়ে সরকারি চাকরিতে আসা উচিত বলে মনে করেন জাতীয় সংসদের বিরোধী দলীয় উপনেতা আনিসুল ইসলাম মাহমুদ। এ সময় সরকারি দলের সংসদ সদস্য আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে থাকা মতিউরদের চিহ্নিত করতে সংশ্লিষ্ট সংস্থার প্রতি আহ্বান জানান।

বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, সরকারি বা বেসরকারি, আধা-সরকারি কিংবা সংস্থা বা আইন প্রয়োগকারী সংস্থার বিশেষ কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ আসলে ওই গোষ্ঠী বা অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে দুর্নীতিবাজের পক্ষে সাফাই বক্তৃতা-বিবৃতি দেয়।

নাছিম বলেন, দুর্নীতিবাজ ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান, সরকারি বা বেসরকারি যে কোনো দলের বা সংস্থার হোক না কেন তাদের বিরুদ্ধে কঠিন পদক্ষেপ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতিকে বাস্তবায়ন করতে হবে।

তিনি বলেন, যারা রাজস্ব আদায়ের দায়িত্বে থাকা মতিউরকে দুর্নীতি দমন কমিশন, গণমাধ্যম এমনকি আমরা রাজনীতিবিদরা চিহ্নিত করতে পারিনি। তাকে চিহ্নিত করেছে একটি বোবা প্রাণী ছাগল। এমন মতিউর আরো আছে কিনা, ছাগল বা অন্য কোনো বোবা প্রাণী চিহ্নিত করার আগে তাদের চিহ্নিত করার প্রয়োজন সংশ্লিষ্ট সংস্থার।

তিনি আরো বলেন, কোনো রাজনীতিবিদের বিরুদ্ধে যখন দুর্নীতি বা অপকর্মের অভিযোগ আসে তখন রাজনীতিবিদরা পদক্ষেপ নেয় বা পক্ষ নেয় না। বরং রাজনৈতিক পদক্ষেপ ও আইনি বিচারে সোচ্চার হয়। এটাই হল সৎ রাজনীতিবিদদের মহত্ত্ব। একইভাবে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, যারা অগ্রণী ভূমিকা পালন করে, সেক্ষেত্রে তারা যেন এ বোবা ছাগলের বিপক্ষে দাঁড়িয়ে কথা বলা, বিবৃতি দেওয়া, পক্ষ নিয়ে প্রকারান্তরে দুর্নীতিবাজ কোনো ব্যক্তিকে রক্ষার নামে তাদের সংস্থার সকলের ওপর দায়ভার না চাপায়। সেদিকে সকলের সজাগ থাকা প্রয়োজন।

নাছিম বলেন, ঋণ খেলাপিদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিয়ে ভবিষ্যতে ঋণ খেলাপি কমাতে হবে। তিনি বলেন, ঋণ খেলাপি, অর্থপাচারকারী, ব্যাংক লুটেরা, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির সিন্ডিকেট যারা করে তাদের চিহ্নিত করতে হবে। তাদের তালিকা প্রণয়ন করে জাতির সামনে প্রকাশ করতে হবে। বিশেষ টাস্কফোর্স গঠন করে এই দুষ্টচক্র, সর্বগ্রাসী, স্বার্থান্বেষী চক্রের হাত থেকে দেশের জনগণকে রক্ষা করতে হবে।

এদিকে দুর্নীতিবন্ধে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন কমিশন গঠনের আহ্বান জানান জাতীয় সংসদের বিরোধী দলীয় উপনেতা আনিসুল ইসলাম মাহমুদ। তিনি বলেন, গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে দুনীতির অভিযোগ এসেছে। দুর্নীতির অভিযোগ হাজার হাজার কোটি টাকার। উনারা এয়ারপোর্ট দিয়ে চলে গেছেন। কত লোককে এয়ারপোর্টে থামানো হয়েছে, যেতে দেওয়া হয়নি, পরে কোর্টের পারমিশন নিয়ে যেতে হয়েছে।
সংসদের বিরোধী দলীয় উপনেতা বলেন, কেন আপনারা এয়ারপোর্টে আটকাতে পারেননি? এ অবস্থায় একটি দেশ চলতে পারে না। বছরের পর বছর তারা এগুলো করেছে, এই সংস্থাগুলোর সামনে দুর্নীতির ছাপ পড়েছে। আজকে সময় এসেছে দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয়টি পর্যালোচনার।

সংসদের বিরোধী দলীয় উপনেতা আরও বলেন, যারা দুর্নীতি করেছে তাদের শাস্তি দিতে হবে। সঙ্গে সঙ্গে যে ব্যবস্থায় দুর্নীতি হতে পারে তার পর্যালোচনা দরকার। এ জন্য উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন কমিশন করা উচিত। যারা বিশেষ করে সরকারি কর্মকর্তা আছেন এবং আমরা যারা সংসদে আছি, আমাদের একটা স্টেটমেন্ট দিয়ে আসি। ভোটের আগে নির্বাচন কমিশনকে সম্পদের বিবরণী আমাদের দিতে হয়। ঠিক সেই রকম আজকে যারা সরকারি চাকরিতে আসবেন, তাদের সেই স্টেটমেন্ট নিয়ে সরকারি চাকরিতে আসা উচিত। তিনি যখন বের হয়ে যাবেন, তখন সেই স্টেটমেন্ট পর্যালোচনা করে দেখতে পাবেন।

আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেন, নিবন্ধিত হয়েও ১৭ হাজার লোক মায়য়েশিয়ায় যেতে পারেনি। ১০০ মিলিয়ন ডলার দিতে হয়েছে। এটা নিয়ে কোনো কথা নেই। এই লোকগুলো যারা জমি বিক্রি করে টাকা দিয়েছে, তাদের টাকা কোথায় গিয়েছে? এইভাবে একটা দেশ চলতে পারে না, এইভাবে একটা দেশের উন্নয়ন আসতে পারে না। দুনীতির কারণে এটা হচ্ছে। কালো টাকা সাদা করার সুযোগ প্রদানের মাধ্যমে দুর্নীতিবাজরা উত্সাহিত হবে বলেও মন্ত্মব্য করে, ওই প্রস্তাব বাতিলের দাবি জানান তিনি।

এদিকে দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়ে বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য হাফিজ উদ্দীন আহম্মেদ বলেন, ছোটরা ধরা পড়লেও রাঘব-বোয়ালরা ধরা পড়ে না। এখন সামনে এসেছে পুলিশের বড় কর্মকর্তা, এনবিআরের বড় কর্মকর্তা তারা দুর্নীতি করেন। কথায় আছে চোরের ১০ দিন মালিকের একদিন।

অপরদিকে আলোচনায় অংশ নিয়ে জাতিকে শেখ হাসিনার জন্য প্রাচীর গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়ে স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী বলেন, অনিশ্চয়তার অন্ধকার ও দিশেহারার আবর্তে যখন বাংলাদেশ আবর্তিত, তখনই শেখ হাসিনার আগমন। অনেক সংগ্রাম, অনেক রক্ত বিসর্জন, অনেক আত্মদান, কালবৈশাখী, মরুঝড় মোকাবেলা করে তার আজকের অবস্থান। গভীর দুঃখ, বেদনা, যন্ত্রণা নিয়ে বলতেই হচ্ছ্তে তার কৃতি মস্নান করছে কিছু লোভী, স্বার্থপর ও সুযোগ সন্ধানী।

আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী আরও বলেন, শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের সম্পদ নয়, বরং জাতীয় সম্পদ। সম্মান, গৌরব, অহংকার বাঙালির পরিচয়। তাকে প্রলয়াবর্তে নিক্ষেপ করলে জাতি আবার অন্ধকারে নিক্ষিপ্ত হবে। দিশেহারা ও পথহারা হয়ে পড়বে। তাই জাতীয় প্রয়োজনে দেশরত্ন শেখ হাসিনার জন্য প্রাচীর গড়ে তুলতে হবে।

সাবেক এই মন্ত্রী বলেন, টেকসই উন্নয়নের নামে আমরা যেসব কর্মকাল করে যাচ্ছি, তার জন্য আমাদের জনপরিষদ প্রস্তুত নয়। সে জন্য এসব কর্মকাল টেকসই নয়, দেশের এসব উন্নয়ন জনদুর্গতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ৩০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করেও সে কারণে আজ জনদুর্ভোগ মেটানো যাচ্ছে না। কারণ খুব স্পষ্ট, যাদেরকে জনগণের সেবার দায়িত্ব দেওয়া হয়, তারা ব্যক্তি স্বার্থ ও দুর্নীতিতে দুষ্ট। রাষ্ট্রীয় কর্মকর্তা ও জনপ্রতিনিধির চরিত্র এক ও অভিন্ন হয়ে দেখা যাচ্ছে।

মন্তব্য করুন

  • বাংলাদেশ এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
৩ আসামির স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রত্যাহারের আবেদন
ছয় মাসে ৯৯ হাজার শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে: শিক্ষামন্ত্রী
সর্বজনীন পেনশন স্কিম থাকবে আয়করমুক্ত
সাবেক সংসদ সদস্য নাদিম মোস্তফা মারা গেছেন