• ঢাকা শনিবার, ০৬ জুলাই ২০২৪, ২২ আষাঢ় ১৪৩১
logo

দুদকের অভিযোগপত্র

সাবেক অতিরিক্ত আইজিপির স্ত্রীর ব্যাংক হিসাবে জমা ৪১ কোটি টাকা

আরটিভি নিউজ

  ০৩ জুলাই ২০২৪, ০২:৩২
সাবেক অতিরিক্ত আইজিপি শামসুদ্দোহা খন্দকার
ছবি: সংগৃহীত

২০১৮ সালে পুলিশের সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক (আইজিপি) শামসুদ্দোহা খন্দকার ও তার স্ত্রী ফেরদৌসী সুলতানা খন্দকারের অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধান শুরু করে দুদক। অনুসন্ধান শেষে জ্ঞাত আয়–বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে ২০১৯ সালে মামলা করে দুদক।

পাঁচ বছর তদন্ত শেষে মঙ্গলবার (২ জুলাই) ঢাকা মহানগরের জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ আদালতে দুজনের বিরুদ্ধে পৃথক দুটি অভিযোগপত্র জমা দেওয়া হয়।

অভিযোগপত্রে দুদক বলেছে, শামসুদ্দোহা সরকারি কর্মকর্তা থাকাকালে ক্ষমতার অপব্যবহার করে দুর্নীতির আশ্রয় নেন। দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত অবৈধ আয়কে বৈধ করার পূর্বপরিকল্পনা করেন তিনি। তার নিজের বেতন–ভাতা বাবদ আয়ের চেয়ে অনেক বেশি অর্থ জমা হয় স্ত্রী ফেরদৌসী সুলতানার নামে খোলা বিভিন্ন ব্যাংকে হিসাবে (অ্যাকাউন্ট)।

তার স্ত্রী একজন গৃহিণী। তার বেতন–ভাতার চেয়ে স্ত্রীর ব্যাংক হিসাবে জমা হওয়া অর্থের পরিমাণ ৪১ কোটি ২৯ লাখ টাকা বেশি। আর শামসুদ্দোহার ব্যাংক হিসাবে জমা হয় ২১ কোটি ৫ লাখ টাকা।

জ্ঞাত আয়–বহির্ভূত সম্পদ অর্জন ও মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগে এই দুজনের বিরুদ্ধে মঙ্গলবার আদালতে অভিযোগপত্র দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। তাতে অপরাধলব্ধ আয়ের এই চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। আরও বলা হয়েছে, তাদের দুজনের ব্যাংক হিসাবে বিপুল পরিমাণ অর্থ জমা হয়েছে।

শামসুদ্দোহার তিনটি ব্যাংক হিসাবে প্রায় ২৯ কোটি টাকা জমা হওয়ার তথ্য পেয়েছে দুদক। এর মধ্যে অবসরে যাওয়ার দুই মাস আগে (২০১৫ সালের ৩০ ডিসেম্বর) ঢাকার একটি বেসরকারি ব্যাংকে হিসাব খোলেন শামসুদ্দোহা। ২০২২ সালের ২৮ এপ্রিল পর্যন্ত ওই হিসাবে জমা হয় প্রায় ১৪ কোটি ১৪ লাখ টাকা।

দুদক বলছে, একটি ব্যাংকের ঢাকার নবাবগঞ্জ শাখা থেকে শামসুদ্দোহা ও তার স্ত্রীর যৌথ মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান অর্গানিক অ্যাগ্রো ফার্মসের নামে ৭ কোটি ৯০ লাখ টাকা ঋণ নেওয়া হয়। প্রতিষ্ঠানটির অবকাঠামো তৈরির কাজে ব্যয় করা হয় ১ কোটি ৩০ লাখ টাকা। বাকি অর্থ তার স্ত্রীর ব্যাংক হিসাবে স্থানান্তর করা হয়।

অর্গানিক অ্যাগ্রো ফার্মস নামের কোনো প্রতিষ্ঠানের অস্তিত্ব পায়নি দুদক। যা আদালতকে জানানো হয়েছে। দুদক বলেছে, ২০১২ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত শামসুদ্দোহার ব্যাংক হিসাবে ঋণের অর্থ বাদ দিয়ে লেনদেনের পরিমাণ ২১ কোটি টাকার কিছু বেশি।

দুদকের অভিযোগপত্র বলা হয়েছে, এই লেনদেন একজন সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে তার বেতন-ভাতাদির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। ব্যাংক হিসাবে এই লেনদেনের অর্থের উৎসের সপক্ষে দুদকে তিনি কোনো প্রমাণ জমা দেননি।

দুদকের অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, শামসুদ্দোহার স্ত্রী ফেরদৌসী সুলতানার আয়ের কোনো উৎস নেই। অথচ তার ছয়টি ব্যাংক হিসাবে ৪১ কোটি ২৯ লাখ টাকা জমা হওয়ার তথ্য–প্রমাণ পাওয়া গেছে। তার নামে ২০১২ সালের ২৯ নভেম্বর একটি বেসরকারি ব্যাংকে হিসাব খোলা হয়। ২০২২ সালের ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত শুধু ওই হিসাবে প্রায় ৩৫ কোটি ২৮ লাখ টাকা জমা হয়।

অভিযোগপত্রে বলা হয়, ২০১২-১৩ থেকে ২০১৯-২০ করবর্ষ পর্যন্ত আয়কর নথিতে ফেরদৌসী সুলতানা যে হিসাব উল্লেখ করেছেন, তা গ্রহণযোগ্য নয়।

শামসুদ্দোহা ও ফেরদৌসীর চার সন্তান। দুদক বলছে, সন্তানদের তারা ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে পড়িয়েছেন। তিনজনকে পড়িয়েছেন যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডায়। সন্তানদের পড়াশোনা এবং সংসারের ব্যয় মিটিয়ে শামসুদ্দোহা ও তার স্ত্রী যে সম্পদ অর্জন করেছেন, তা জ্ঞাত আয়–বহির্ভূত।

ফেরদৌসী দুদকে দাখিল করা সম্পদ বিবরণীতে সম্পদের উৎস হিসেবে স্বামীর দেশে-বিদেশে চাকরি, যুক্তরাজ্যে নিজের তিন বছরের চাকরি, কৃষি খামার ও ব্যবসার আয় এবং মায়ের দান, জমি ও ফ্ল্যাট বিক্রির কথা উল্লেখ করেন। তবে দুদক আদালতে জানিয়েছে, এই উৎসগুলোর সপক্ষে ফেরদৌসী প্রমাণপত্র জমা দেননি। শামসুদ্দোহার কাছ থেকেও প্রমাণপত্র পাওয়া যায়নি।

দুদক আদালতকে জানিয়েছে, প্রমাণপত্র জমা দেওয়ার জন্য শামসুদ্দোহা ও ফেরদৌসীকে কয়েদ দফা নোটিশ দেওয়া হয়েছিল। তারা কোনো বক্তব্য দেননি, নথিপত্রও জমা দেননি। অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, ফেরদৌসীর ব্যাংক হিসাবে অস্বাভাবিক লেনদেন তার স্বামী শামসুদ্দোহার অবৈধ উপায়ে অর্জিত অর্থ বলে পরিলক্ষিত হয়।

দুদকের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) মীর আহমেদ আলী সালাম বলেন, সাবেক অতিরিক্ত আইজিপি পদমর্যাদার একজন সরকারি চাকরিজীবী ও তার স্ত্রীর ব্যাংক হিসাবে বিপুল অর্থের লেনদেনের ঘটনা অস্বাভাবিক। দুদক অভিযোগ প্রমাণের জন্য তথ্য–প্রমাণ আদালতে জমা দিয়েছে।

এদিকে শামসুদ্দোহা গুলশানের ১৩৫ নম্বর সড়কে একটি সরকারি বাড়ি দীর্ঘদিন ধরে দখল করে রেখেছেন। সাত দিনের মধ্যে বাড়িটি ছাড়ার জন্য তাকে গত ১৫ মে নোটিশ দেয় সরকারি আবাসন পরিদপ্তর। কিন্তু আবাসন পরিদপ্তর সূত্র বলছে, তিনি বাড়িটি ছাড়েননি।

১৯৮৬ সালে সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) হিসেবে পুলিশ বাহিনীতে যোগ দেন শামসুদ্দোহা। ২০১১ সালে অতিরিক্ত আইজিপি হিসেবে পদোন্নতি পান। তাকে ২০১১ সালে প্রেষণে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) চেয়ারম্যান পদে নিয়োগ দেয় সরকার। এ সময় তার বিরুদ্ধে সীমাহীন অনিয়ম, দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ ওঠে। এরপর ২০১৫ সালে বিআইডব্লিউটিএর চেয়ারম্যান পদ থেকে তাকে সরিয়ে দেওয়া হয়। ২০১৬ সালের ৩ মার্চ পুলিশ বাহিনী থেকে অবসরে যান তিনি।

অপরদিকে, পুলিশের সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ ও তার পরিবারের বিপুল সম্পদের খোঁজ পেয়েছে দুদক। সেসব সম্পদ আদালতের আদেশে জব্দ করা হয়েছে। এরই মধ্যে সাবেক অতিরিক্ত আইজিপি শামসুদ্দোহার বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেওয়া হলো।

মন্তব্য করুন

  • বাংলাদেশ এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
সিলেট কাস্টমস কমিশনার এনামুলের সম্পত্তি ক্রোকের নির্দেশ
মতিউর ও তার স্ত্রী-সন্তানদের জমি-ফ্ল্যাট জব্দের নির্দেশ
এবার নায়ক শান্ত খানের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা
কোটি টাকার সেই ‘উচ্চবংশীয়’ গরুসহ সাদিক এগ্রোর ৬ গরু জব্দ