ভারতে নিতে মোস্তাফিজুর-ফয়সালকে রোগী সাজানো হয়: ডিবি প্রধান
ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীমকে খুনের ঘটনায় যারা অংশ নিয়েছেন তাদের মধ্যে মো. মোস্তাফিজুর রহমানকে কিডনি রোগী ও ফয়সাল আলী ওরফে সাজীকে হৃদ্রোগের রোগী সাজানো হয়। এমনকি তাদের ভুয়া পরিচয়ও ব্যবহার করা হয়। ইজিবাইকচালক মোস্তাফিজুরকে ‘জিএস ফুড প্রোডাক্টস’ নামের একটি কোম্পানির প্রকৌশলী এবং ট্রাকচালক ফয়সালকে এই প্রতিষ্ঠানের কর্মী পরিচয় দেওয়া হয়।
বৃহস্পতিবার (৪ জুলাই) এক ভিডিও বার্তায় এসব তথ্য জানান ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।
তিনি বলেন, আনোয়ারুল আজীম আনার হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় সর্বশেষ দুর্গম পাহাড়ে অভিযান চালিয়ে মোস্তাফিজ ও ফয়সালকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারের পর আদালত তাদের ছয় দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। সেই রিমান্ডের পরিপ্রেক্ষিতে জিজ্ঞাসাবাদে মোস্তাফিজ ও ফয়সাল জানান, আক্তারুজ্জামান শাহীন তাদেরকে ভারতে যাওয়ার জন্য পাসপোর্টের ব্যবস্থা করে দেন। ঢাকায় আক্তারুজ্জামান শাহীনের বাসায় থেকে ফয়সালকে হৃদরোগের রোগী ও মোস্তাফিজকে কিডনি রোগীর ভুয়া কাগজপত্র, ভুয়া ব্যাংক স্টেটমেন্ট এবং বিভিন্ন ভুয়া কাগজপত্র দেখিয়ে ভারতের ভিসা করা হয়। যতদিন পর্যন্ত তাদের ভিসা হয়নি ততদিন তারা শাহীনের ঢাকার বাসায় ছিলেন।
হারুন অর রশীদ বলেন, ভিসা হওয়ার পরে আক্তারুজ্জামান শাহীন ২০ হাজার টাকা দিয়েছিলেন মোস্তাফিজ ও ফয়সালকে রেলযোগে ভারতে চলে যাওয়ার জন্য। ভারতে গিয়ে তারা ১০ এপ্রিল কলকাতার সঞ্জীবা গার্ডেনসে প্রবেশ করেন। ১৩ মে বন্ধু গোপাল বিশ্বাসের বাসা থেকে বেরিয়ে লাল গাড়িতে করে এমপি আনারকে সঞ্জীবা গার্ডেনসে নিয়ে আসেন ফয়সাল। এরপর শাহীনের পিএস পিন্টুর কাছে থেকে অচেতন করার জন্য ক্লোরোফর্ম ও চাপাতি নিয়ে আসার দায়িত্ব পালন করেন মোস্তাফিজ, ফয়সাল ও জিহাদ।
জিজ্ঞাসাবাদে মোস্তাফিজ ও ফয়সাল আরও বলেছেন, হত্যাকাণ্ড শেষে যখন সবাই চলে যান তখন সর্বশেষ মোস্তাফিজ ও ফয়সাল সঞ্জীবা গার্ডেনসের ওই ফ্ল্যাটে ছিলেন। সেখানেও শাহীনের সঙ্গে কথা হয় তাদের। শাহীন তাদের নির্দেশ দেন, ফ্ল্যাটটিতে যেন কোনও চুল এবং রক্তের দাগ না থাকে, সবকিছু গুছিয়ে ঠিকঠাকভাবে রাখতে বলা হয় তাদের। এরপর ১৯ মে মোস্তাফিজ ও ফয়সাল বাংলাদেশে চলে আসেন। বাংলাদেশে আসার টিকিটও কেটে দেন শাহীন। বাংলাদেশে এসে শাহীনের ঢাকার বাসার তিনতলায় ওঠেন মোস্তাফিজ ও ফয়সাল।
ডিবি প্রধান হারুন বলেন, আনার হত্যাকাণ্ডের ঘাতক আমানুল্লাহ আমান ওরফে শিমুল ভূঁইয়া যখন ডিবির হাতে গ্রেপ্তার হন তখন শাহীনের দেওয়া ৩০ হাজার টাকা নিয়ে মোস্তাফিজ ও ফয়সাল বিভিন্ন জায়গা আত্মগোপন করেন। এরপর তারা পরিকল্পনা করেন দুর্গম পাহাড়ে কোনও মন্দিরে গিয়ে হিন্দু সেজে সেখানে লুকিয়ে থাকবে।
পরিকল্পনা অনুযায়ী, খাগড়াছড়ির দুর্গম পাহাড়ের পাতাল কালীমন্দিরে হিন্দুদের ধুতি পরে পূজা শুরু করেন এবং নাম পরিবর্তন করেন।
ডিবি প্রধান হারুন বলেন, এ পর্যন্ত আনোয়ারুল আজীম আনার হত্যাকাণ্ডে মোট সাতজন গ্রেপ্তার রয়েছে। সাতজনের মধ্যে ছয়জন আনার হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। এছাড়া আরও যাদের নাম এসেছে তাদের গ্রেপ্তারে পুলিশ কাজ করছে। শিগগিরই তাদেরও গ্রেপ্তার করা হবে।
উল্লেখ্য, এমপি আনার ১২ মে ভারতে যান। পরদিন ১৩ মে কলকাতার নিউটাউন এলাকার সঞ্জীবা গার্ডেনের একটি ফ্ল্যাটে খুন হন তিনি। ঘটনাটি প্রকাশ্যে আসে ২২ মে। ওইদিন রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানায় আনারের মেয়ে ডরিন অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে অপহরণ মামলা করেন। এছাড়া ভারতে একটি হত্যা মামলা হয়। দুই দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার দায়ে নয়জনকে গ্রেপ্তার করেছে।
মন্তব্য করুন