এখনই স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণ চান না অর্থনীতিবিদ ও ব্যবসায়ী নেতারা
সরকার বাংলাদেশকে ২০২৬ সালের মধ্যে এলডিসি (স্বল্পোন্নত দেশ) থেকে উন্নত দেশে উত্তরণ করতে চায়। কিন্তু বিষয়টি পুনর্বিবেচনার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন অর্থনীতিবিদ ও ব্যবসায়ী নেতারা। তারা বলছেন, কয়েক মাসের বিশ্লেষণে দেখা গেছে দেশের বাণিজ্য, রাজস্ব, আর্থিক বা জিডিপি বিষয়ক নীতিগুলো ভুল রপ্তানি পরিসংখ্যানের ওপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে।
অর্থনীতিবিদ ও ব্যবসায়ী নেতারা আরও বলছেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ ব্যালেন্স অব পেমেন্টের তথ্য অনুযায়ী, সদ্য সমাপ্ত অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে রপ্তানি আয়ের পরিমাণ প্রায় ১০ বিলিয়ন ডলার বেড়েছে। কিন্তু এটি ভুল তথ্য। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) কর্তৃক রপ্তানি শিপমেন্টের একাধিক এন্ট্রির কারণে এমনটি হয়েছে বলে মনে করেন তারা।
বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, এ ধরনের ত্রুটিগুলোর তাত্ক্ষণিক সংশোধন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কারণ এই ভুলগুলো কেবল আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক ফোরামেই দেশের বিশ্বাসযোগ্যতা এবং নির্ভরযোগ্যতাকে ক্ষতিগ্রস্ত করে না, বরং এটি সরকারি নীতিপ্রণয়নে বিভ্রান্তির সৃষ্টির কারণও হতে পারে।
রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি ইন্টিগ্রেশন ফর ডেভেলপমেন্টের (র্যাপিড) চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আব্দুর রাজ্জাক বলেন, রপ্তানি আয় কমে যাওয়ায় ২০২৬ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে স্বল্পোন্নত দেশের মর্যাদা থেকে উত্তরণের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করা উচিত।
তিনি বলেন, রপ্তানি তথ্য সংশোধনের পর রপ্তানি-জিডিপি অনুপাত এবং নিট রপ্তানি প্রবৃদ্ধির মতো অন্যান্য প্রবৃদ্ধির মাপকাঠিও সংশোধন করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা এই তথ্য সংশোধনের জন্য ব্যবহৃত পদ্ধতি সম্পর্কে অবগত নই। তথ্যের সম্ভাব্য ভুলগুলো এড়াতে এটি আরও যাচাই করা উচিত।
বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, 'প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যখন বাংলাদেশকে স্বল্পোন্নত দেশের মর্যাদা থেকে উন্নত দেশে রূপান্তরের লক্ষ্য নিয়েছিলেন তখন দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ভিন্ন ছিল। তবে মহামারি, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং ইসরায়েল-ইরান সংঘাত- এই তিনটি বৈশ্বিক ইস্যুর কারণে পুরো অর্থনৈতিক দৃশ্যপট এখন বদলে গেছে।
বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পরিবর্তনের পরও আমরা যদি এলডিসি থেকে উত্তরণ চাই, তাহলে তা অর্থনীতির জন্য বিশেষ করে পোশাক শিল্পের জন্য বিপর্যয়ের কারণ হবে।
বাংলাদেশ তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সভাপতি এস এম মান্নান কচি বলেন, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতার কারণে এই শিল্পের অবস্থা ভালো নয়। সরকার যদি আমাদের পণ্যকে বিশ্ববাজারে প্রতিযোগিতামূলক রাখতে চায় তবে ২০২৯ সাল পর্যন্ত এ খাতে নগদ প্রণোদনা অব্যাহত রাখতে হবে। পাশাপাশি সরকারি কর্মকর্তাদের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী রপ্তানিকারকদের জন্য বিকল্প প্রণোদনা চালু করতে হবে।
এদিকে, পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর মনে করেন, ২০২৬ সালের মধ্যে স্বল্পোন্নত দেশের স্ট্যাটাস থেকে উন্নত দেশে উত্তরণের প্রক্রিয়া সংশোধন বা বিলম্বিত করার প্রয়োজন নেই।
তিনি বলেন, ২০২৭ সালের মধ্যে রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সরকারের উচিত রপ্তানিকারকদের সহায়তা করা।
তিনি আরও বলেন, এই লক্ষ্য অর্জনের জন্য এখন রপ্তানি দ্বিগুণ করতে হবে। সরকারের উচিত পর্যাপ্ত বন্দর সুবিধা নিশ্চিত করা, কাস্টমস পদ্ধতি সহজীকরণ করা, নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস ও বিদ্যুৎ সরবরাহ করা এবং রপ্তানির পরিমাণ বাড়াতে রপ্তানি বহুমুখীকরণ করা।
মন্তব্য করুন